Ajker Patrika

আবার বাড়ল চালের দাম

হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম
আপডেট : ২২ জুলাই ২০২২, ১০: ৪৩
আবার বাড়ল চালের দাম

মে মাস, বোরো ধানের ভরা মৌসুম। প্রতিবছর মে থেকে জুলাই পর্যন্ত চালের দাম কমতির দিকেই থাকে। অথচ এবার মে মাসের শেষে এসে জাতভেদে প্রতি কেজি চালের দাম ৩ থেকে ৮ টাকা বেড়ে গিয়েছিল। কোরবানির ঈদের আগেও কয়েক দফা দাম বাড়ে চালের। কৃষকের ঘরে ধান উঠতে না উঠতেই আবার বাড়তে শুরু করেছে চালের দাম। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা চালের দাম সর্বনিম্ন ৩ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। কেজিপ্রতি ৬ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে চালের দাম।

নিত্যপ্রয়োজনীয় অন্য পণ্যের মতো চালের দাম বাড়ায় ভোগান্তি বেড়েছে মানুষের। আড়তদারেরা বলছেন, উত্তরবঙ্গের কিছু মিলমালিক চালের দাম নিয়ন্ত্রণ করেন। ভরা মৌসুমে কৃষকের কাছ থেকে ইচ্ছেমতো ধান কিনে মজুত করে রেখেছেন তাঁরা। এদিকে কৃষকের হাতেও ধান নেই। বাজারে একচেটিয়া আধিপত্য তাঁদের। চালের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাজারে দাম বাড়ানো হয়েছে।

দেশের অন্যতম চট্টগ্রাম নগরের পাহাড়তলী চালের আড়তে ৩৫ বছর ধরে ব্যবসা করেন রেজা খান। মেসার্স সোনালি স্টোরের মালিক রেজা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সারা জীবন দেখে আসছি, ধান ওঠার পর জুন-জুলাইয়ে চালের দাম কমে। বছরের শেষ দিকে যখন বাজারে চালের সংকট তৈরি হয়, তখন দাম বাড়ে। কিন্তু এবার উল্টো চিত্র। ধান ঘরে ওঠার এক মাস না যেতেই দাম বাড়ছে।’

রেজা খান আরও বলেন, উত্তরবঙ্গের অসাধু কিছু মিলমালিকদের সঙ্গে গত দু-এক বছরে বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানও যোগ হয়েছে। তারা কৃষকের কাছ থেকে ভরা মৌসুমে কিনে নিয়ে ধান মজুত করে রাখে। পরে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে দেয়। এক দিন অর্ডার নেওয়া বন্ধ রেখে পরদিনই তারা বস্তাপ্রতি ৫০-১০০ টাকা বাড়িয়ে দেয়।

পাহাড়তলী আড়ত সূত্রে জানা গেছে, বাজারে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ২৫০ টাকায়; যা ঈদের আগে ছিল ১ হাজার ৯৫০ থেকে ২ হাজার টাকায়। বস্তায় ৩ টাকা বেড়ে প্রতি বস্তা স্বর্ণা চাল বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৩৫০ টাকায়। ২০০ টাকা বেড়ে পাইজাম চাল প্রতি বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৪৫০ টাকায়। মিনিকেট সিদ্ধ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৬০০ টাকায়; যা ঈদের আগে ছিল ২ হাজার ৪৫০ টাকা। ৩০০ টাকা বেড়ে প্রতি বস্তা জিরাশাইল বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৪০০ টাকায়। নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৬৫০ টাকায়। অথচ দুই সপ্তাহ আগেও এ চাল ৩ হাজার ২৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।

আতপ চালের মধ্যে মিনিকেট আতপ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৬০০ টাকায়। যা ঈদের আগে ছিল ২ হাজার ৪৫০ টাকা। বস্তায় ২০০ টাকা বেড়ে কাটারি আতপ বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৬০০ টাকায়। ২০০ টাকা বেড়ে প্রতি বস্তা ইরি আতপ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৯৫০ টাকায়।

দেশের মোট চাহিদার কাছাকাছি উৎপাদন থাকার পরও চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভোক্তারা। তাঁরা বলছেন, সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর পর্যাপ্ত মনিটরিংয়ের অভাবে মিলমালিক ও অসাধু ব্যবসায়ীরা এমনটা করতে পারছেন। তাঁদের মধ্যে কার কতটুকু চাল মজুতের লাইসেন্স রয়েছে, সেটা বের করতে পারলেই কারসাজি ধরা পড়বে।

দেশে চালের চাহিদা বছরে প্রায় ৩ কোটি ৮০ লাখ টন। কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী এবার চাহিদার চেয়ে ৭ লাখ টন কম উৎপাদন হয়ে থাকতে পারে। তাই ঘাটতি মেটাতে জুন-জুলাই মাসে ২২০টি প্রতিষ্ঠানকে সাড়ে ছয় লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি দেয় সরকার। কিন্তু এরপরও কমছে না চালের দাম।

পাহাড়তলী বাজার চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এস এম নিজাম উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, বাজারে চালের সংকট নেই। কিন্তু এরপরও দাম বাড়ছে। মিলমালিকদের কারসাজি নিয়ন্ত্রণ করা না যাওয়ায় দাম বাড়ছে।

চালের দাম নিয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম রাইস মিল মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি শান্ত দাশগুপ্ত আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘চালের দাম বাড়ান আসলে বড় মিলমালিকেরা। ধান মজুত করে তাঁরা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে। আমরা ধান সংগ্রহের পর চাল উৎপাদন করে বাজারে ছেড়ে দিই। কিন্তু বড় মিলের মালিকেরা তা করেন না। বেশি লাভের আশায় তাঁরা অবৈধভাবে ধান মজুত করে রাখেন।’

শান্ত দাশগুপ্ত আরও বলেন, সরকার চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে। আমদানি শুরু হলে চালের দাম আবার কমে যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চার মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানের সেবা ডিজিটাইজ করার নির্দেশ দিল সরকার

গত দশ বছর ভিসা না পাওয়ার কারণে বাংলাদেশে আসতে পারিনি: মাইলাম

মাগুরার শিশুটি এখনো অচেতন, চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন তারেক রহমান

ঈদে পুলিশের সহযোগী ফোর্স হবে বেসরকারি নিরাপত্তাকর্মী, পাবে গ্রেপ্তারের ক্ষমতা

তিন নারী আমার জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ: তারেক রহমান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত