আরিফুজ্জামান তুহিন, ঢাকা
আবার শুরু হয়েছে লোডশেডিং। রাজধানীতেই এলাকাভেদে দিনরাত মিলিয়ে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। গভীর রাতেও বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। রাজধানীর বাইরের পরিস্থিতি আরও খারাপ।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্র বলছে, গ্যাস-কয়লাসহ জ্বালানি সংকটে উৎপাদন কমে যাওয়ায় এই ব্যাপক লোডশেডিং।
কয়লাভিত্তিক আরও তিনটি বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লার মজুতও কমেছে। এগুলো হলো বাঁশখালীর এসএস বিদ্যুৎকেন্দ্র (এস আলম গ্রুপের), রামপাল ও মাতারবাড়ী। কয়লার ব্যবস্থা করতে না পারলে এসব কেন্দ্র আগামী (অক্টোবর) মাসে বন্ধ হয়ে যাবে। তখন লোডশেডিং আরও বাড়বে।
বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি যে শিগগির হচ্ছে না, এমন আভাস মিলেছে গতকাল মঙ্গলবার অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের কথায়ও। সচিবালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, বিদ্যুতের ঘাটতি মেটাতে সরকার চেষ্টা করছে। এ জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জ্বালানি, কয়লা আমদানি করা হচ্ছে।
পিডিবি সূত্র বলছে, কয়লাভিত্তিক এসএস বিদ্যুৎকেন্দ্র, রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র ও মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে থাকা কয়লা দিয়ে টেনেটুনে এ মাস চলবে। নতুন সরবরাহ না এলে তিনটি কেন্দ্রই আগামী মাসে বন্ধ হয়ে যাবে। এ জন্য কয়লা আমদানির অর্থ পরিশোধে দ্রুত তৎপর হতে হবে। পাশাপাশি এলএনজি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
দেশে স্থাপিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের মোট উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ২৮ হাজার মেগাওয়াট। সূত্র বলেছে, বর্তমানে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত প্রতি ঘণ্টায় বিদ্যুতের চাহিদা ১৬ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট থেকে ১৭ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। কিন্তু উৎপাদন হচ্ছে সর্বোচ্চ ১৪ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। ঘাটতি কমপক্ষে ২ হাজার মেগাওয়াট। ফলে লোডশেডিং করতে হচ্ছে। গ্যাসের অভাবে গ্যাসভিত্তিক অন্তত ৪ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। পাশাপাশি মেরামতে গেছে ২ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটের বেশি ক্ষমতার কেন্দ্র।
দেশে ১২ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্র রয়েছে। এসব কেন্দ্রে উৎপাদিত প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম পড়ে গড়ে ২ থেকে ৪ টাকা। কিন্তু গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলো চালাতে দৈনিক ১৭০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের প্রয়োজন হলেও মিলছে ৫০ থেকে ৫৫ কোটি ঘনফুট। ফার্নেস তেলভিত্তিক কেন্দ্রে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় ১৭ টাকার বেশি, ডিজেলভিত্তিক কেন্দ্রে তা ৩০ টাকার বেশি। কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রে উৎপাদন খরচ ফার্নেস ও ডিজেলের চেয়ে বেশ কম।
পেট্রোবাংলার সূত্র বলেছে, দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৩৩০ থেকে ৩৫০ কোটি ঘনফুট। এর অর্ধেকটাই বিদ্যুৎকেন্দ্রের চাহিদা। কিন্তু পেট্রোবাংলা আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ও দেশীয় গ্যাস মিলিয়ে দিনে সর্বোচ্চ ২৫০ কোটি ঘনফুট সরবরাহ করতে পারছে। এর মধ্যে দেশে দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল দিয়ে দিনে ১০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করার কথা থাকলেও মিলছে ৫০ থেকে ৫৫ কোটি ঘনফুট। কারণ, এলএনজির মজুতও তলানিতে। বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে হলে গ্যাসের সরবরাহ বাড়াতে হবে।
পেট্রোবাংলার এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ৪ সেপ্টেম্বর অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানির নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে পেট্রোবাংলা স্পট মার্কেট থেকে ২৩টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ২০ কার্গো এলএনজি আমদানি করবে। এই এলএনজি আনা হচ্ছে চলতি সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চার মাসের জন্য। এর মধ্যে এ মাসে ৬ কার্গো এলএনজি আমদানি করা হবে। এতে বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি হবে। অক্টোবরে ৫ কার্গো, নভেম্বরে ৫ কার্গো এবং ডিসেম্বরে ৪ কার্গো এলএনজি আসবে।
মজুত কমছে কয়লাভিত্তিক তিন বিদ্যুৎকেন্দ্রে: চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে এস আলম গ্রুপের কয়লাভিত্তিক এসএস বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ১২২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার। কেন্দ্রটি বর্তমানে বিদ্যুৎ দিচ্ছে ৬০০ মেগাওয়াট। পূর্ণ ক্ষমতায় চালালে কেন্দ্রটিতে কয়লা আছে মাত্র ১০ দিনের।
৬০০ মেগাওয়াট বা অর্ধেক উৎপাদন করলে চলবে ২০ দিন। ১০০ ভাগ মার্জিনে খোলা এলসির মাধ্যমে এ কেন্দ্রের জন্য দুটি জাহাজে কয়লা এসেছে গত ৭ ও ১২ আগস্ট। জাহাজ দুটি বহির্নোঙরে আছে। কারণ, ইসলামী ব্যাংক এসব জাহাজের এলসি সমাধান করছে না। জাহাজ আটকে থাকায় ইতিমধ্যে প্রায় ১২ কোটি টাকা ক্ষতির মুখে পড়েছে কেন্দ্রটি।
নতুন এলসিও খুলছে না ইসলামী ব্যাংক। বিষয়টি জানিয়ে কেন্দ্রটি ১৪ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়ে সংকট সমাধানের দাবি জানায়। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক এখনো কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
বাগেরহাটের রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের শুধু কয়লার বকেয়া প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। কেন্দ্রটিতে ৬৫ হাজার টন কয়লা মজুত আছে, যা দিয়ে চলবে ১০-১২ দিন। পাঁচটি জাহাজে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টন কয়লা আমদানির এলসি করা হয়েছে। কিন্তু এলসির সমাধান না হওয়ায় বহির্নোঙরে কয়লা নিয়ে চারটি জাহাজ দাঁড়িয়ে আছে। এসব জাহাজে দিনে ২০ হাজার ডলার করে লোকসান দিতে হচ্ছে রামপাল কেন্দ্রকে।
কক্সবাজারের ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন কয়লার অভাবে নেমেছে ৬০০-৭০০ মেগাওয়াটে। কয়লার যে মজুত আছে, তা দিয়ে বড়জোর ১০ থেকে ১৫ দিন চলবে। ডলার-সংকটে কেন্দ্রটির জন্য কয়লা আমদানির খরচ দিতে পারছে না পিডিবি।
আদানি সরবরাহ কমিয়েছে, ভরসা পায়রা: সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো পিডিবির কাছে বকেয়া বিদ্যুতের দাম পাবে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ভারতের প্রতিষ্ঠান আদানি একাই পাবে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা। বকেয়া চেয়ে ইতিমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে চিঠি দিয়েছেন আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানি। ভারতের গণমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দ্রুত ৮০ কোটি ডলারের বকেয়া পরিশোধের জন্য চিঠিতে সরকারপ্রধানের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন গৌতম আদানি।
আদানি গ্রুপ দিনে প্রায় দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করছিল। কিন্তু বকেয়া বেড়ে যাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। ভারতের ঝাড়খন্ডের গোড্ডার আদানির কেন্দ্রটি গতকাল ৪৫০ থেকে ৫৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দিয়েছে। আমদানির এই বিদ্যুতের বড় অংশ দেওয়া হয় উত্তরাঞ্চলে। এর সঙ্গে বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হওয়ায় উত্তরাঞ্চলে লোডশেডিং বেড়েছে।
তবে পিডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশ এবং চীনের সমান মালিকানার ১২৪৪ মেগাওয়াট ক্ষমতার পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র শতভাগ উৎপাদনে রয়েছে। কেন্দ্রটির আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত কয়লা আমদানি করা রয়েছে। ফলে অন্তত ডিসেম্বর পর্যন্ত এ কেন্দ্রে কোনো সংকট হবে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিগত সরকার দেশে গ্যাস উৎপাদনে জোর না দিয়ে আমদানি করা জ্বালানি যেমন এলএনজি, কয়লা ও তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে জোর দিয়েছে। এতে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা আগেই ভেঙে পড়েছে। এ পরিস্থিতি থেকে দ্রুত বের হতে চাইলে জরুরি ভিত্তিতে জ্বালানি কেনার ব্যবস্থা করতে হবে।
এ বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগ অতীতে যা করেছে, তারই খেসারত দিতে হচ্ছে এখন দেশবাসীকে। এই সরকারের উচিত দেশীয় গ্যাস উৎপাদনে বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা গ্রহণ করা। এ মুহূর্তে বিদ্যুৎ ও জ্বালানিকে অগ্রাধিকার দেওয়াই হবে সরকারের সবচেয়ে বড় কাজ।
আবার শুরু হয়েছে লোডশেডিং। রাজধানীতেই এলাকাভেদে দিনরাত মিলিয়ে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। গভীর রাতেও বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। রাজধানীর বাইরের পরিস্থিতি আরও খারাপ।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্র বলছে, গ্যাস-কয়লাসহ জ্বালানি সংকটে উৎপাদন কমে যাওয়ায় এই ব্যাপক লোডশেডিং।
কয়লাভিত্তিক আরও তিনটি বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লার মজুতও কমেছে। এগুলো হলো বাঁশখালীর এসএস বিদ্যুৎকেন্দ্র (এস আলম গ্রুপের), রামপাল ও মাতারবাড়ী। কয়লার ব্যবস্থা করতে না পারলে এসব কেন্দ্র আগামী (অক্টোবর) মাসে বন্ধ হয়ে যাবে। তখন লোডশেডিং আরও বাড়বে।
বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি যে শিগগির হচ্ছে না, এমন আভাস মিলেছে গতকাল মঙ্গলবার অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের কথায়ও। সচিবালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, বিদ্যুতের ঘাটতি মেটাতে সরকার চেষ্টা করছে। এ জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জ্বালানি, কয়লা আমদানি করা হচ্ছে।
পিডিবি সূত্র বলছে, কয়লাভিত্তিক এসএস বিদ্যুৎকেন্দ্র, রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র ও মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে থাকা কয়লা দিয়ে টেনেটুনে এ মাস চলবে। নতুন সরবরাহ না এলে তিনটি কেন্দ্রই আগামী মাসে বন্ধ হয়ে যাবে। এ জন্য কয়লা আমদানির অর্থ পরিশোধে দ্রুত তৎপর হতে হবে। পাশাপাশি এলএনজি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
দেশে স্থাপিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের মোট উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ২৮ হাজার মেগাওয়াট। সূত্র বলেছে, বর্তমানে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত প্রতি ঘণ্টায় বিদ্যুতের চাহিদা ১৬ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট থেকে ১৭ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। কিন্তু উৎপাদন হচ্ছে সর্বোচ্চ ১৪ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। ঘাটতি কমপক্ষে ২ হাজার মেগাওয়াট। ফলে লোডশেডিং করতে হচ্ছে। গ্যাসের অভাবে গ্যাসভিত্তিক অন্তত ৪ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। পাশাপাশি মেরামতে গেছে ২ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটের বেশি ক্ষমতার কেন্দ্র।
দেশে ১২ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্র রয়েছে। এসব কেন্দ্রে উৎপাদিত প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম পড়ে গড়ে ২ থেকে ৪ টাকা। কিন্তু গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলো চালাতে দৈনিক ১৭০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের প্রয়োজন হলেও মিলছে ৫০ থেকে ৫৫ কোটি ঘনফুট। ফার্নেস তেলভিত্তিক কেন্দ্রে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় ১৭ টাকার বেশি, ডিজেলভিত্তিক কেন্দ্রে তা ৩০ টাকার বেশি। কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রে উৎপাদন খরচ ফার্নেস ও ডিজেলের চেয়ে বেশ কম।
পেট্রোবাংলার সূত্র বলেছে, দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৩৩০ থেকে ৩৫০ কোটি ঘনফুট। এর অর্ধেকটাই বিদ্যুৎকেন্দ্রের চাহিদা। কিন্তু পেট্রোবাংলা আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ও দেশীয় গ্যাস মিলিয়ে দিনে সর্বোচ্চ ২৫০ কোটি ঘনফুট সরবরাহ করতে পারছে। এর মধ্যে দেশে দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল দিয়ে দিনে ১০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করার কথা থাকলেও মিলছে ৫০ থেকে ৫৫ কোটি ঘনফুট। কারণ, এলএনজির মজুতও তলানিতে। বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে হলে গ্যাসের সরবরাহ বাড়াতে হবে।
পেট্রোবাংলার এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ৪ সেপ্টেম্বর অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানির নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে পেট্রোবাংলা স্পট মার্কেট থেকে ২৩টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ২০ কার্গো এলএনজি আমদানি করবে। এই এলএনজি আনা হচ্ছে চলতি সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চার মাসের জন্য। এর মধ্যে এ মাসে ৬ কার্গো এলএনজি আমদানি করা হবে। এতে বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি হবে। অক্টোবরে ৫ কার্গো, নভেম্বরে ৫ কার্গো এবং ডিসেম্বরে ৪ কার্গো এলএনজি আসবে।
মজুত কমছে কয়লাভিত্তিক তিন বিদ্যুৎকেন্দ্রে: চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে এস আলম গ্রুপের কয়লাভিত্তিক এসএস বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ১২২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার। কেন্দ্রটি বর্তমানে বিদ্যুৎ দিচ্ছে ৬০০ মেগাওয়াট। পূর্ণ ক্ষমতায় চালালে কেন্দ্রটিতে কয়লা আছে মাত্র ১০ দিনের।
৬০০ মেগাওয়াট বা অর্ধেক উৎপাদন করলে চলবে ২০ দিন। ১০০ ভাগ মার্জিনে খোলা এলসির মাধ্যমে এ কেন্দ্রের জন্য দুটি জাহাজে কয়লা এসেছে গত ৭ ও ১২ আগস্ট। জাহাজ দুটি বহির্নোঙরে আছে। কারণ, ইসলামী ব্যাংক এসব জাহাজের এলসি সমাধান করছে না। জাহাজ আটকে থাকায় ইতিমধ্যে প্রায় ১২ কোটি টাকা ক্ষতির মুখে পড়েছে কেন্দ্রটি।
নতুন এলসিও খুলছে না ইসলামী ব্যাংক। বিষয়টি জানিয়ে কেন্দ্রটি ১৪ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়ে সংকট সমাধানের দাবি জানায়। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক এখনো কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
বাগেরহাটের রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের শুধু কয়লার বকেয়া প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। কেন্দ্রটিতে ৬৫ হাজার টন কয়লা মজুত আছে, যা দিয়ে চলবে ১০-১২ দিন। পাঁচটি জাহাজে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টন কয়লা আমদানির এলসি করা হয়েছে। কিন্তু এলসির সমাধান না হওয়ায় বহির্নোঙরে কয়লা নিয়ে চারটি জাহাজ দাঁড়িয়ে আছে। এসব জাহাজে দিনে ২০ হাজার ডলার করে লোকসান দিতে হচ্ছে রামপাল কেন্দ্রকে।
কক্সবাজারের ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন কয়লার অভাবে নেমেছে ৬০০-৭০০ মেগাওয়াটে। কয়লার যে মজুত আছে, তা দিয়ে বড়জোর ১০ থেকে ১৫ দিন চলবে। ডলার-সংকটে কেন্দ্রটির জন্য কয়লা আমদানির খরচ দিতে পারছে না পিডিবি।
আদানি সরবরাহ কমিয়েছে, ভরসা পায়রা: সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো পিডিবির কাছে বকেয়া বিদ্যুতের দাম পাবে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ভারতের প্রতিষ্ঠান আদানি একাই পাবে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা। বকেয়া চেয়ে ইতিমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে চিঠি দিয়েছেন আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানি। ভারতের গণমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দ্রুত ৮০ কোটি ডলারের বকেয়া পরিশোধের জন্য চিঠিতে সরকারপ্রধানের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন গৌতম আদানি।
আদানি গ্রুপ দিনে প্রায় দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করছিল। কিন্তু বকেয়া বেড়ে যাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। ভারতের ঝাড়খন্ডের গোড্ডার আদানির কেন্দ্রটি গতকাল ৪৫০ থেকে ৫৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দিয়েছে। আমদানির এই বিদ্যুতের বড় অংশ দেওয়া হয় উত্তরাঞ্চলে। এর সঙ্গে বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হওয়ায় উত্তরাঞ্চলে লোডশেডিং বেড়েছে।
তবে পিডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশ এবং চীনের সমান মালিকানার ১২৪৪ মেগাওয়াট ক্ষমতার পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র শতভাগ উৎপাদনে রয়েছে। কেন্দ্রটির আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত কয়লা আমদানি করা রয়েছে। ফলে অন্তত ডিসেম্বর পর্যন্ত এ কেন্দ্রে কোনো সংকট হবে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিগত সরকার দেশে গ্যাস উৎপাদনে জোর না দিয়ে আমদানি করা জ্বালানি যেমন এলএনজি, কয়লা ও তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে জোর দিয়েছে। এতে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা আগেই ভেঙে পড়েছে। এ পরিস্থিতি থেকে দ্রুত বের হতে চাইলে জরুরি ভিত্তিতে জ্বালানি কেনার ব্যবস্থা করতে হবে।
এ বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগ অতীতে যা করেছে, তারই খেসারত দিতে হচ্ছে এখন দেশবাসীকে। এই সরকারের উচিত দেশীয় গ্যাস উৎপাদনে বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা গ্রহণ করা। এ মুহূর্তে বিদ্যুৎ ও জ্বালানিকে অগ্রাধিকার দেওয়াই হবে সরকারের সবচেয়ে বড় কাজ।
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
২ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
২ দিন আগে