বিস্ফোরক দ্রব্য সংকটের কারণে দিনাজপুরের মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনি থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়ে গেছে। গতকাল শনিবার সকাল থেকে পাথর উত্তোলন কাজ বন্ধ রেখে খনি শ্রমিকদের সাময়িক ছুটিতে পাঠিয়েছে খনিটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জার্মানিয়া ট্রাস্ট কনসোর্টিয়াম (জিটিসি)। এদিকে, পাথর উত্তোলন বন্ধ হওয়ায় প্রতিদিন বিপুল পরিমাণে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

খনিটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিটিসির একটি সূত্র জানায়, চুক্তি অনুযায়ী পাথর উত্তোলনের কাজে ব্যবহৃত বিস্ফোরক দ্রব্য খনি কর্তৃপক্ষের সরবরাহ করার কথা। কিন্তু সময় মতো তা সরবরাহ না করায় উৎপাদন বন্ধ করতে হয়েছে তাদের।

শ্রমিকেরা জানান, বিস্ফোরক দ্রব্য না থাকায় খনির অভ্যন্তরে বোমা টেস্টিং কাজ বন্ধ থাকায় উৎপাদন কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিটিসি। শ্রমিকদের সাময়িক ছুটি দিয়েছে।

অপরদিকে খনির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে বিষয়টি নিশ্চিত করলেও বিস্তারিত কথা বলতে রাজি হননি।

মধ্যপাড়া মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড (এমজিএমসিএল) কর্তৃপক্ষ জানায়, কোভিড-১৯ পরিস্থিতি ও সাম্প্রতিক ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সময় মতো বিস্ফোরক দ্রব্য অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট আমদানি করা সম্ভব হয়নি।

খনি কর্তৃপক্ষ জানায়, স্বাভাবিকভাবে কোরিয়া, থাইল্যান্ড ও ভারত থেকে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট আমদানি করা হয়ে থাকে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে গত ছয় মাস ধরে চেষ্টা করেও সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। খনিতে থাকা সর্বশেষ মজুতটি দিয়ে গত বৃহস্পতিবার পাথর উত্তোলনকাজ চালানো হয়। পরে শনিবার থেকে উৎপাদন বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

জানা গেছে, মধ্যপাড়া পাথর খনি থেকে পাথর উত্তোলনের জন্য ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বেলারুশ ভিত্তিক জার্মানিয়া ট্রাস্ট কনসোডিয়ামের (জিটিসি) সঙ্গে ছয় বছরের চুক্তি করে মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড। চুক্তি অনুযায়ী প্রতিদিন গড়ে সাড়ে পাঁচ হাজার মেট্রিক টন পাথর উত্তোলন করার কথা।

মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (মাইনিং) আবু তালহা ফরাজি বলেন, খনি কর্তৃপক্ষ টেন্ডার আহ্বান করে এবং সরাসরি সংগ্রহের চেষ্টা করেও অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট সংগ্রহ করতে পারেনি। জিটিসিও চেষ্টা করেছে, তারাও ব্যর্থ হয়েছে। তবে থাইল্যান্ড থেকে একটি শিপ চার কন্টেইনার অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট (বিস্ফোরক দ্রব্য) নিয়ে গত শুক্রবার বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে, যেটি আগামী ২২ মার্চ চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছার কথা রয়েছে। এর পর আবার উৎপাদন শুরু হবে।

এদিকে, পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মধ্যপাড়ার পাথরের ওপর নির্ভরশীল উন্নয়নকাজ বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। খনি সূত্র জানায়, খনিতে বর্তমানে ৬০ হাজার মেট্রিক টনের মতো পাথর মজুত রয়েছে। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৪০ হাজার মেট্রিক টন পাথর বিক্রি হয়ে গেছে।