রুমা মোদক
আমি দুজন নারীকে ঘনিষ্ঠভাবে চিনি। প্রথমজন ক্লাসে কোনো দিন দ্বিতীয় হয়নি। ঢামেক থেকে এমবিবিএস পাস করে, বিসিএস কোয়ালিফাই করে উপজেলা পর্যায়ের একটা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কাজ করেন, শ্বশুর-শাশুড়ি, বাচ্চা নিয়ে শহরেই থাকেন। তাঁর স্বামীও ডাক্তার। স্কুলে মাঝারি মানের ছাত্র ছিলেন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করে তিনিও বিসিএস কোয়ালিফাই করেছেন। ঢাকায় পোস্টিং নিয়ে আইপিজিএমআরে একের পর এক উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে এখন নামকরা ডাক্তার। আমি মাঝে মাঝে নারীটিকে দেখি বাচ্চাদের স্কুলে পৌঁছে দিয়ে কিংবা ছুটির পর নেওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে আছেন স্কুলের সামনে।
আরেকজন নারী, উচ্চশিক্ষিত। ব্যাংকের বড় কর্মকর্তা। বাসায় গেলেই তার শাশুড়ি একগাদা অভিযোগ নিয়ে বসেন, বউ বাচ্চাকে সময় দেয় না, বউ রাঁধতে জানে না ইত্যাদি ইত্যাদি।
আমি একটু বেয়াদবের মতো বলে ফেলি, ‘তো এ রকম শিক্ষিত মেয়ে বিয়ে করালেন কেন? ঘরকন্না জানা একটা মেয়ে বিয়ে করালেই হতো!’ শাশুড়ি ভীষণ বিরক্ত হন আমার ওপর।
এই সমাজ এখনো কর্মজীবী নারীকে স্বীকৃতি, সম্মান কিংবা মর্যাদা দিতে শেখেনি। এই সময়ে এ এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়—সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং মানসিক দিক থেকে। সমাজে একজন কর্মজীবী মা পরিবারের অর্থনৈতিক প্রয়োজনেই ঘরের বাইরে যান কিংবা নিজের ইচ্ছাতেই যান। পরিবার কিংবা সমাজ কেউ তাঁকে সম্মানের চোখে না হোক, স্বাভাবিক ছাড় দেওয়ার মানসিকতাও দেখায় না। সংসার এবং পরিবারের দায়িত্ব ষোলো আনা পালন করে তারপর পেশাগত দায়িত্ব পালনে যেতে হয় নারীকে।
এই সমাজে এমন পরিবার খুব কম পাবেন, যেখানে একজন কর্মজীবী নারীকে তাঁর জীবনসঙ্গী পুরুষ কিংবা পরিবারের অন্য কেউ বিনা বাক্য ব্যয়ে পারিবারিক দায়িত্ব পালনে সাহায্য করেন। ঘরের নারীটির মতো পরিবারের দায়িত্বকে নিজের দায়িত্ব মনে করেন; বরং সারাক্ষণ এই সাংসারিক দায়িত্ব পালনে ত্রুটির কারণে তাঁকে বাস করতে হয় মানসিকভাবে অস্বাস্থ্যকর এক আতঙ্কময় পরিবেশে। আর সবচেয়ে বড় সমস্যাটার মুখোমুখি তাঁকে হতে হয় সন্তান নিয়ে। সন্তান লালনপালনের কোনো উদ্যোগ এই সমাজে নেই। সামাজিকভাবেও নেই, রাষ্ট্রীয়ভাবেও নেই। ফলে কোথায় বড় হবে আগামীর নাগরিকেরা? আজকের প্রতিটি সন্তান জাতির ভবিষ্যৎ নাগরিক। আর এই নাগরিকদের জন্য কত উচ্চশিক্ষিত নারীকে দেখলাম পেশা বিসর্জন দিতে! এমএ, বিএ তো কোন ছার। কত ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার নারীকেই দেখলাম যাবতীয় মেধা এবং যোগ্যতা বিসর্জন দিয়েছেন শুধু সন্তানের জন্য। কোনো পুরুষকে আজও আমি পাইনি সন্তানের জন্য ক্যারিয়ার বিসর্জন দিতে।
তবে সন্তানের জন্য নারীর ক্যারিয়ার বিসর্জন মোটেই দোষের নয়। যে নারী নিজের ক্যারিয়ার বিসর্জন দিলেন, তিনি দেশের ভবিষ্যৎ নাগরিক জীবনের জন্য দিলেন। নিশ্চয়ই অনাগত ভবিষ্যৎ তাঁর সন্তান, নির্বিশেষে তাকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণের জন্য সর্বতোভাবে প্রস্তুত থাকবে। সময়ের চাকা সামনের দিকেই তো যায়।
আমি ঘরোয়া আলোচনায় প্রায়ই বলি, স্বামীর সংসারে প্রাচুর্য কিংবা স্বাচ্ছন্দ্য থাকলে কোনো নারীর পেশাগত কাজে জড়িত হওয়ার দরকার নেই। কথাটা রাগে বলি, ক্ষোভে বলি, আক্ষেপ আর অভিজ্ঞতায় বলি। কারণ আমার চারপাশের অভিজ্ঞতায় দেখেছি এই পেশা নারীর জন্য বোঝার ওপর শাকের আঁটি। না সে তার কর্মস্থলে বিন্দুমাত্র ছাড় পায়, না পরিবারে ছাড় পায়। ফলে প্রতিটি কর্মজীবী নারীর জীবন এক দুঃসহ সংগ্রামময় জীবন।
পৃথিবীর সব উন্নত দেশ উন্নত হয়েছে নারী-পুরুষ উভয়ের সমান অংশগ্রহণে। অথচ আমাদের পারিবারিক কাঠামো এখনো কর্মজীবী নারীর ব্যস্ততাকে মেনে নেওয়ার জন্য তৈরি হয়নি। অন্যদিকে পরিবারের অর্থনৈতিক প্রয়োজনও হয়ে উঠেছে অনস্বীকার্য। এ দুইয়ের চাপে পড়ে অসহনীয় যাপন হয়ে উঠছে নারীর আর তাঁর ভবিষ্যৎ নাগরিক সন্তানের।
তবু প্রত্যাশায় থাকি উত্তরণের, থাকি নারীর মেধা, যোগ্যতা আর পেশাগত জীবনকে স্বাভাবিকভাবে নেওয়ার এক উদার সমাজের প্রত্যাশায়।
আমি দুজন নারীকে ঘনিষ্ঠভাবে চিনি। প্রথমজন ক্লাসে কোনো দিন দ্বিতীয় হয়নি। ঢামেক থেকে এমবিবিএস পাস করে, বিসিএস কোয়ালিফাই করে উপজেলা পর্যায়ের একটা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কাজ করেন, শ্বশুর-শাশুড়ি, বাচ্চা নিয়ে শহরেই থাকেন। তাঁর স্বামীও ডাক্তার। স্কুলে মাঝারি মানের ছাত্র ছিলেন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করে তিনিও বিসিএস কোয়ালিফাই করেছেন। ঢাকায় পোস্টিং নিয়ে আইপিজিএমআরে একের পর এক উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে এখন নামকরা ডাক্তার। আমি মাঝে মাঝে নারীটিকে দেখি বাচ্চাদের স্কুলে পৌঁছে দিয়ে কিংবা ছুটির পর নেওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে আছেন স্কুলের সামনে।
আরেকজন নারী, উচ্চশিক্ষিত। ব্যাংকের বড় কর্মকর্তা। বাসায় গেলেই তার শাশুড়ি একগাদা অভিযোগ নিয়ে বসেন, বউ বাচ্চাকে সময় দেয় না, বউ রাঁধতে জানে না ইত্যাদি ইত্যাদি।
আমি একটু বেয়াদবের মতো বলে ফেলি, ‘তো এ রকম শিক্ষিত মেয়ে বিয়ে করালেন কেন? ঘরকন্না জানা একটা মেয়ে বিয়ে করালেই হতো!’ শাশুড়ি ভীষণ বিরক্ত হন আমার ওপর।
এই সমাজ এখনো কর্মজীবী নারীকে স্বীকৃতি, সম্মান কিংবা মর্যাদা দিতে শেখেনি। এই সময়ে এ এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়—সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং মানসিক দিক থেকে। সমাজে একজন কর্মজীবী মা পরিবারের অর্থনৈতিক প্রয়োজনেই ঘরের বাইরে যান কিংবা নিজের ইচ্ছাতেই যান। পরিবার কিংবা সমাজ কেউ তাঁকে সম্মানের চোখে না হোক, স্বাভাবিক ছাড় দেওয়ার মানসিকতাও দেখায় না। সংসার এবং পরিবারের দায়িত্ব ষোলো আনা পালন করে তারপর পেশাগত দায়িত্ব পালনে যেতে হয় নারীকে।
এই সমাজে এমন পরিবার খুব কম পাবেন, যেখানে একজন কর্মজীবী নারীকে তাঁর জীবনসঙ্গী পুরুষ কিংবা পরিবারের অন্য কেউ বিনা বাক্য ব্যয়ে পারিবারিক দায়িত্ব পালনে সাহায্য করেন। ঘরের নারীটির মতো পরিবারের দায়িত্বকে নিজের দায়িত্ব মনে করেন; বরং সারাক্ষণ এই সাংসারিক দায়িত্ব পালনে ত্রুটির কারণে তাঁকে বাস করতে হয় মানসিকভাবে অস্বাস্থ্যকর এক আতঙ্কময় পরিবেশে। আর সবচেয়ে বড় সমস্যাটার মুখোমুখি তাঁকে হতে হয় সন্তান নিয়ে। সন্তান লালনপালনের কোনো উদ্যোগ এই সমাজে নেই। সামাজিকভাবেও নেই, রাষ্ট্রীয়ভাবেও নেই। ফলে কোথায় বড় হবে আগামীর নাগরিকেরা? আজকের প্রতিটি সন্তান জাতির ভবিষ্যৎ নাগরিক। আর এই নাগরিকদের জন্য কত উচ্চশিক্ষিত নারীকে দেখলাম পেশা বিসর্জন দিতে! এমএ, বিএ তো কোন ছার। কত ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার নারীকেই দেখলাম যাবতীয় মেধা এবং যোগ্যতা বিসর্জন দিয়েছেন শুধু সন্তানের জন্য। কোনো পুরুষকে আজও আমি পাইনি সন্তানের জন্য ক্যারিয়ার বিসর্জন দিতে।
তবে সন্তানের জন্য নারীর ক্যারিয়ার বিসর্জন মোটেই দোষের নয়। যে নারী নিজের ক্যারিয়ার বিসর্জন দিলেন, তিনি দেশের ভবিষ্যৎ নাগরিক জীবনের জন্য দিলেন। নিশ্চয়ই অনাগত ভবিষ্যৎ তাঁর সন্তান, নির্বিশেষে তাকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণের জন্য সর্বতোভাবে প্রস্তুত থাকবে। সময়ের চাকা সামনের দিকেই তো যায়।
আমি ঘরোয়া আলোচনায় প্রায়ই বলি, স্বামীর সংসারে প্রাচুর্য কিংবা স্বাচ্ছন্দ্য থাকলে কোনো নারীর পেশাগত কাজে জড়িত হওয়ার দরকার নেই। কথাটা রাগে বলি, ক্ষোভে বলি, আক্ষেপ আর অভিজ্ঞতায় বলি। কারণ আমার চারপাশের অভিজ্ঞতায় দেখেছি এই পেশা নারীর জন্য বোঝার ওপর শাকের আঁটি। না সে তার কর্মস্থলে বিন্দুমাত্র ছাড় পায়, না পরিবারে ছাড় পায়। ফলে প্রতিটি কর্মজীবী নারীর জীবন এক দুঃসহ সংগ্রামময় জীবন।
পৃথিবীর সব উন্নত দেশ উন্নত হয়েছে নারী-পুরুষ উভয়ের সমান অংশগ্রহণে। অথচ আমাদের পারিবারিক কাঠামো এখনো কর্মজীবী নারীর ব্যস্ততাকে মেনে নেওয়ার জন্য তৈরি হয়নি। অন্যদিকে পরিবারের অর্থনৈতিক প্রয়োজনও হয়ে উঠেছে অনস্বীকার্য। এ দুইয়ের চাপে পড়ে অসহনীয় যাপন হয়ে উঠছে নারীর আর তাঁর ভবিষ্যৎ নাগরিক সন্তানের।
তবু প্রত্যাশায় থাকি উত্তরণের, থাকি নারীর মেধা, যোগ্যতা আর পেশাগত জীবনকে স্বাভাবিকভাবে নেওয়ার এক উদার সমাজের প্রত্যাশায়।
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
৬ ঘণ্টা আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৪ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৪ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৪ দিন আগে