আলুখেত রক্ষায় ব্যস্ত চাষিরা

মো. মিজানুর রহমান, কাউনিয়া
প্রকাশ : ০১ জানুয়ারি ২০২২, ০৭: ৪১
আপডেট : ০১ জানুয়ারি ২০২২, ১৭: ৫৪

কাউনিয়ায় তীব্র শীতে আলুগাছে পচন ও ছত্রাক রোগ ‘আর্লিব্রাইট’ ও ‘লেটব্রাইট’ রোধে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। তাঁরা তিস্তার চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন গ্রামে কনকনে ঠান্ডা উপেক্ষা করে খেতে বালাইনাশক প্রয়োগসহ পরিচর্যা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় এবারও আলু চাষে খুব একটা লাভ না দেখার আশঙ্কা করছেন তাঁরা।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, হারাগাছ পৌরসভাসহ ছয় ইউনিয়নে ৪ হাজার ৬৩০ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। হিরা, ডায়মন্ড, কার্ডিনাল, কুফরি সিন্দুরী ও গ্রানোলার পাশাপাশি দেশি জাতের আলু চাষ করা হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা রোগবালাই না হলে ১৫ লাখ ৩২ হাজার ১২ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ।

গতকাল শুক্রবার উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শীতে রোগবালাই থেকে ফসল রক্ষা এবং ভালো ফলন পাওয়ার আশায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আলুখেত পরিচর্যা করছেন চাষি ও কৃষিশ্রমিকেরা। তাঁদের কেউবা আলুগাছের গোড়ায় মাটি দিচ্ছেন, কেউবা সার প্রয়োগ করে সেচ দিচ্ছেন আবার কেউ ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করছেন। তাঁরা গত বছরের মতো এবারও আলুর ভালো ফলন পাওয়ার আশা করছেন।

বেইলি ব্রিজ গ্রামের আলুচাষি শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘ঘরত হাত-পা গুটিয়া বসি থাকলে চলিবার নয়। এবার বেশি দামে বীজ ও সার কিনে আলু রোপণ করছি। শীতত তো রোগবালাই থাকি আলুখেত রক্ষা করতে হবে। এ সময় খেত সঠিকভাবে পরিচর্যা না করলে রোগবালাই আক্রমণ করতে পারে। একবার ছত্রাক রোগ আক্রমণ করলে ফলন কমে যাবে। তাহলে লোকসানের মুখে পড়তে হবে।’

টেপামধুপুরের রাজিব গ্রামের কৃষক আবদুল হালিম জানান, গেল বছরের অক্টোবরে হঠাৎ তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধিতে সৃষ্ট বন্যায় ছয় বিঘা জমির রোপা আমন, বাদাম ও মরিচখেত নষ্ট হয়ে হয়ে যায়। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবার ঋণ করে পাঁচ বিঘা জমিতে কার্ডিনাল আলু রোপণ করেছেন। শীতে আলুখেতে পচন রোগ দেখা দিতে পারে। তাই কৃষি বিভাগের পরামর্শে ছত্রাকনাশক ছিটিয়ে দিচ্ছেন।

পৌষ ও মাঘ মাসে আলুখেতে আর্লিব্রাইট ও লেটব্রাইটসহ নানা রোগবালাই দেখা দেয় বলে জানান চরপল্লীমারী গ্রামের আবদুল মান্নান। তিনি বলেন, এবার এক দোন (২৪ শতাংশ) জমিতে আলুর আবাদে ৩০ থেকে ৩২ হাজার টাকা খচর হবে। আর এতে ৮৪ কেজির ২৬ থেকে ২৮ বস্তা আলু পাওয়া যেতে পারে। এবার সার ও শ্রমিকসহ কৃষি উপকরণের দাম বৃদ্ধির কারণে গত বছরের তুলনায় আবাদে খরচ অনেকটা বেশি হবে।

মীরবাগ চণ্ডীপুর গ্রামের আলতাফ হোসেন এবার ১৫ বিঘা জমিতে আলু রোপণ করেছেন। তিনি বলেন, জমিতে গজিয়ে ওঠা গাছ দেখে এবারও আলুর ফলন ভালো হবে মনে করছেন। প্রতিদিন তাই ৮ থেকে ১০ জন শ্রমিক দিয়ে খেত পরিচর্যা করছেন।

সারাই আলুটারী গ্রামের মতিয়ার রহমান বলেন, ‘আবাদের শুরুতে আলু নিয়ে ভালোই ছিলাম। কিন্তু গত কয়েক দিন ধরে বৈরী আবহাওয়ায় কারণে রোগবালাইয়ের আশঙ্কা করছি। প্রতিদিনই ওষুধ স্প্রেসহ পরিচর্যা করতে হচ্ছে।’

মতিয়ার রহমান আরও বলেন, ‘প্রতিবছর ভরা মৌসুমে আলুর ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় ক্ষুদ্র ও বর্গা চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এবারও ভরা মৌসুমে দাম নিয়ে শঙ্কা আছে। কারণ এখনো উপজেলার দুটি হিমাগারে অবিক্রীত অনেক আলু রয়ে গেছে। তবে নতুন বছর যদি কৃষকেরা আলুর ন্যায্যমূল্য পায় তাহলে গেল বছরের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা কিছুটা পুষিয়ে উঠতে পারবে।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানাজ পারভিন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আলুখেতে রোগবালাই হ্যাম্পার করতে না পারে নাই। তবে পশ্চিমা বা পূবাল হাওয়া বেশি বইতে থাকলে আলুতে পচন বা লেটব্রাইট রোগ হবে। বেশি শীত হলে ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে হবে। আর্লিব্রাইট বা লেটব্রাইটসহ কোনো রোগই যেন আলু আবাদের হ্যাম্পার করতে না পারে সে জন্য কৃষি বিভাগের লোকজন শুরু থেকে মাঠ পর্যায়ে নিবিড় তত্ত্বাবধান করছে এবং চাষিদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত