ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট নিয়ে ইউজিসির আপত্তি

ফারুক ছিদ্দিক, ঢাবি 
প্রকাশ : ০৭ জুলাই ২০২২, ০৬: ৩২
আপডেট : ০৭ জুলাই ২০২২, ০৯: ১৭

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) বাজেট পরীক্ষক দল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ অর্থবছরের সংশোধিত ও ২০২২-২৩ অর্থবছরের মূল বাজেটের ২১টি খাত নিয়ে আপত্তি তুলেছে। যেসব খাত নিয়ে আপত্তি তোলা হয়েছে, তাতে ৩৩ কোটি ২১ লাখ টাকা ব্যয়ের হিসাব রয়েছে।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, ‘বিষয়টি এখনো আমার নজরে আসেনি। এলে আমি কথা বলতে পারব।’

ইউজিসি থেকে পাওয়া পরিপত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন যেসব আপত্তি দিয়েছে সেগুলো হলো, কর্মকর্তাদের অবসর গ্রহণের নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে ৫ কোটি ৫ লাখ, সেশন বেনিফিট বাবদ প্রদান করা অর্থ আদায় করে ২ কোটি ১০ লাখ, জাতীয় বেতন স্কেল লঙ্ঘন করে ১ কোটি ১০ লাখ, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসনে বসবাসরত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পূর্ণ বাড়িভাড়া ভাতা প্রদানে ১ কোটি ৫০ লাখ, বিধিবহির্ভূতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষককে মাসিক পাঁচ হাজার টাকা করে গবেষণা ভাতা দিয়ে ৯ কোটি ৬০ লাখ, বহিঃক্যাম্পাস ভাতা প্রদান ১ কোটি ৫ লাখ, বিধিবহির্ভূতভাবে শিক্ষকদের বইখাতা বাবদ ৭৬ লাখ প্রদান, অসমন্বিত অগ্রিম ১২ কোটি ২ লাখ, ড্রাইভারদের টেকনিক্যাল অফিসার হিসেবে নিয়োগ ও ভাতা প্রদানে ৩ লাখ টাকাসহ মোট ৩৩ কোটি ২১ লাখ টাকা।

এ ছাড়া গবেষণা খাতে প্রকল্প নির্ধারণ করে বরাদ্দ না করা, ক্রয়পরিকল্পনা না থাকায় বরাদ্দ করা অর্থ যথাসময়ে ব্যয় করতে না পারা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রশাসনিক ও একাডেমিক দায়িত্ব পালনের জন্য টাকা দেওয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পদে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পালনের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত পদের মূল বেতনের মাসিক ২০ শতাংশ দেওয়া, মাসিক বিলের সঙ্গে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ভাতা দেওয়া, বিজ্ঞাপন বিলের ওপর ২ শতাংশ সার্ভিস চার্জ না কাটা, অর্থবছর শেষ হওয়ার পরও খরচ দেখানো, বাজেট সেটে জনবল ও আর্থিক তথ্য সঠিকভাবে উপস্থাপন না করা, অভিন্ন শিক্ষক নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদোন্নয়ন নীতিমালা না মানা, BdRen-এর সংযোগ থাকা সত্ত্বেও অন্য প্রতিষ্ঠানের ইন্টারনেট সেবা ক্রয় করা এবং কর্মচারীদের অধিকাল ভাতা নগদ প্রদান করাকে নিয়মের ব্যত্যয় বলে উল্লেখ করেছে ইউজিসি।

২১ খাত নিয়ে আপত্তি তুলে সরকারি বিধি মোতাবেক কর্মকর্তাদের ৬০ বছর পূর্তিতে অবসর প্রদান, সেশন বেনিফিট বন্ধ করা, বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং সে অনুযায়ী কাজ করা, বেতন-ভাতাদির ক্ষেত্রে জাতীয় বেতন স্কেল অনুসরণ করা, বেতন বিলের সঙ্গে বিদ্যুৎ-জ্বালানি ভাতা না দেওয়া, ড্রাইভারদের বিশেষ ভাতা প্রদান না করা, বিজ্ঞাপন বিলের নিয়ম মেনে চলা, বাজেট সেট ও সঠিক জনবলের উপস্থাপন করা, অভিন্ন শিক্ষক নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদোন্নয়ন নীতিমালা অনুসরণ করা, কমিশনের নির্দেশনানুযায়ী BdREN ছাড়া অন্য কোনো ইন্টারনেট সেবা ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনাপত্তি গ্রহণ সাপেক্ষে কমিশনের অনুমোদন গ্রহণ করা এবং কর্মচারীদের অধিকাল ভাতা ইএফটির মাধ্যমে প্রদান করার সুপারিশ করেছে ইউজিসির বাজেট পরিদর্শন দল।

ইউজিসির আপত্তির ব্যাপারে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক উচ্চ পর্যায়ে দায়িত্বরত এক প্রবীণ অধ্যাপক আজকের পত্রিকাকে বলেন, প্রতিবছর ইউজিসি আপত্তি তোলে, কিন্তু কোনো শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেয় না। তাহলে এগুলো কমবে কীভাবে?

ইউজিসির অর্থ ও হিসাব বিভাগের পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. শাহ আলম বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয়কে সতর্ক করি এসব বিষয় নিয়ে যেন তারা খুব সতর্ক থাকে। সতর্ক করার পরও যদি সংশোধন না হয় তাহলে অডিট টিম আরও কড়া সতর্কবাণী দেয়, আপত্তি তোলে।’

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়কে আমরা যেসব সুপারিশ করি, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেগুলো মেনে চলার চেষ্টা করে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত