এ কে এম শামসুদ্দিন
এপ্রিলের শেষে ইসরায়েলের বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে, সে দেশের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুসহ আরও কিছু ইসরায়েলি শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে যাচ্ছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। খবরে আরও বলা হয়েছে, হেগের বিশ্ব আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আশঙ্কায় নেতানিয়াহু ‘অস্বাভাবিক চাপে’ রয়েছেন।
নেতানিয়াহুর ধারণা, আইসিসির কৌঁসুলি করিম খান অচিরেই তাঁকেসহ তাঁর সরকারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট এবং আইডিএফপ্রধানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে পারেন। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রতিরোধে নেতানিহুয়া ‘সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন। এ বিষয়ে মার্কিন প্রশাসনের সহায়তা কামনা করেছেন।
তিনি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আইসিসির যেকোনো পদক্ষেপে হস্তক্ষেপ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ব্যক্তিগতভাবে অনুরোধ করেছেন। নেতানিয়াহু এবং অন্যান্য ইসরায়েলি নেতার বিরুদ্ধে যদি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়, তাহলে তা হবে ইসরায়েলের জন্য বড় ধরনের আঘাত। নেতানিয়াহুর অনুরোধ যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যাখ্যান করে কী করে! তারা ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ঠেকানোর জন্য সর্বাত্মক জোর কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।
গ্রেপ্তার হতে পারেন—এমন খবর জানার পর গত ৩০ এপ্রিল এক ভিডিও বার্তায় আইসিসির বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছেন নেতানিয়াহু।আইসিসি যদি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে, তাহলে তা হবে নেতানিয়াহুর ভাষায়, ইসরায়েলের ওপর আইসিসির ‘জঘন্য হামলা’। তিনি ইসরায়েলের মিত্রদেশগুলোর ওপর আস্থা প্রকাশ করে বলেছেন, ইসরায়েল আশা করে, মুক্ত বিশ্বের নেতারা ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারের বিরুদ্ধে আইসিসির ‘জঘন্য হামলার’ বিরুদ্ধেও দৃঢ়ভাবে রুখে দাঁড়াবেন।
নেতানিয়াহু আইসিসির কৌঁসুলিদের ওপর প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয়েছেন। তিনি বলেছেন, ইসরায়েল তার আত্মনিয়ন্ত্রণের সহজাত অধিকার ক্ষুণ্ন করে—আইসিসির এমন কোনো চেষ্টা মেনে নেবে না। তিনি তাঁর বক্তব্যের মাধ্যমে আইসিসির কৌঁসুলিদের ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করেছেন বলে আইসিসির কৌঁসুলির দপ্তর অভিযোগ করেছে। গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ নিয়ে নেতানিয়াহুসহ সে দেশের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানার বিষয়ে আইসিসিকে সতর্ক করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল। ওদিকে যুক্তরাষ্ট্রের কিছুসংখ্যক ইহুদিপন্থী আইনপ্রণেতা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আইসিসির যেকোনো পদক্ষেপে হস্তক্ষেপ করা এবং তা ব্যর্থ করে দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের প্রতি অনুরোধ করেছেন।
অবশ্য আইসিসির কৌঁসুলি এবং কর্মকর্তাদের ধমক দেওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম নয়। এর আগে ২০২০ সালে আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদেশগুলোর সেনা ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধ বিষয়ে আইসিসির কর্মকর্তারা যখন তদন্ত করছিলেন, তখন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আইসিসির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন। পরে ২০২১ সালে বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাইডেন সেটি তুলে নেন।
আইসিসি সম্পর্কে নেতানিয়াহুর নেতিবাচক বিভিন্ন বক্তব্য ও বিবৃতিতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন আইসিসির কর্মকর্তারা। এক বিবৃতিতে তাঁরা বলেছেন, আইসিসির কর্মকর্তাদের কাজে বাধার সৃষ্টি করা, তাঁদের ভয়ভীতি দেখানো অথবা তাঁদের ওপর অবৈধ প্রভাব খাটানোর সব ধরনের চেষ্টা অবশ্যই অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। এ ধরনের হুমকি বিশ্বের এই স্থায়ী যুদ্ধাপরাধ আদালতের ‘বিচার প্রশাসন’-এর বিরুদ্ধে অপরাধের শামিল হতে পারে। এ কথা ঠিক, যখন কোনো পক্ষ থেকে আদালত বা আদালতের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধের হুমকি দেওয়া হয়, তখন আদালতের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন হয়।
তবে রোম সনদের অধীন আইসিসির স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করার বৈধ ক্ষমতা আছে। আদালতের এখন উচিত সেই বৈধ ক্ষমতা প্রয়োগ করে যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগে সংশ্লিষ্ট সব অপরাধীকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো।আইসিসি সাধারণত গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং আগ্রাসনমূলক যুদ্ধ পরিচালনা—এ চারটি মূল অপরাধের মধ্যে কারও বিরুদ্ধে যদি একটি অপরাধ করেছেন বলে সন্দেহ করা হয়, তখন তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে পারে। নেতানিয়াহু ও তাঁর শীর্ষ নেতাদের ওপরোল্লিখিত একাধিক অপরাধের জন্য দায়ী করার যথেষ্ট প্রমাণ আছে। কাজেই আদালত তাঁদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিতে পারেন। প্রশ্ন হচ্ছে, ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় নেতানিয়াহুর নির্দেশে ইসরায়েলি বাহিনী নারকীয় অভিযান চালিয়ে যে ৩৫ হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে এবং হাজার হাজার টন বোমা মেরে গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে, সেই অপরাধের অপরাধী নেতানিয়াহুকে আইসিসি কি আদৌ গ্রেপ্তার করাতে পারবে?
গাজায় গণহত্যা চালানোর জন্য শুধু নেতানিয়াহু দায়ী নন, ফিলিস্তিনিদের রক্তের দাগ পশ্চিমাদের হাতেও লেগে আছে। পশ্চিমা দেশগুলোর সরকার ভালো করেই জানে, ইসরায়েল প্রকৃতপক্ষে গাজায় কতটা গণহত্যা চালিয়েছে। পশ্চিমা সরকারগুলো দশকের পর দশক ধরে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েল যে জাতিগত শুদ্ধি অভিযানের নামে হত্যাকাণ্ড চালিয়ে আসছে, তাতে তারা অকৃপণভাবে সমর্থন দিয়ে আসছে। ফিলিস্তিনিদের জন্মভূমি থেকে বিতাড়ন এবং এখনো যারা বেঁচে আছে, তাদের নিজ বসতিতে বন্দী করে রাখার ঘটনায় পশ্চিমা সরকারগুলো সমর্থন দিয়ে আসছে।
আজ ফিলিস্তিনিরা যে মহাবিপর্যয় মোকাবিলা করছে, এর জন্য দায়ী পশ্চিমা শক্তির উদাসীনতা, পক্ষপাতিত্ব ও বছরের পর বছর ধরে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে চালানো ইসরায়েলি নৃশংসতার পক্ষে কূটনৈতিক সমর্থন। ফিলিস্তিনিরা সব দুর্ভোগ সহ্য করে যাবে, সেটাই পশ্চিমারা প্রত্যাশা করে। বর্তমানে গাজা থেকে ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীর শেষ অস্তিত্বটুকু ধীরে ধীরে মুছে ফেলা হচ্ছে। এ জন্য পশ্চিমারা তাদের দায় এড়াতে পারবে না। শুধু ইসরায়েল নয়, গাজায় ফিলিস্তিনি অসহায় মানুষের রক্তে পশ্চিমারাও তাদের হাত রাঙিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের আশ্রয়ে ও প্রশ্রয়ে বড় হয়ে ওঠা ইসরায়েল এখন এমন রূপ ধারণ করেছে যে তারা তাদের মিত্রদেরও পাত্তা দিচ্ছে না। তাই তো সবার অনুরোধ উপেক্ষা করে নেতানিয়াহু রাফাহে স্থল অভিযান শুরু করেছেন। ইসরায়েলের একতরফা অভিযানে মার খেতে খেতে উত্তর ও মধ্য গাজা থেকে বাস্তুচ্যুত প্রায় ১৫ লাখ মানুষ যখন রাফাহে আশ্রয় নিয়েছে, ঠিক তখনই ইসরায়েল তার বন্ধুরাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধও রক্ষা না করে এই অভিযান চালাচ্ছে। রাফাহ গাজার দক্ষিণের সর্বশেষ শহর। এখানে আশ্রয়গ্রহণকারী ফিলিস্তিনিরা গাদাগাদি করে থাকতে বাধ্য হচ্ছে। রাফাহর মূল বসবাসকারীর সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৭০ হাজার।
কিন্তু এখন পাঁচ গুণের বেশি মানুষ বসবাস করে। এই মানুষগুলো ইতিমধ্যে সাতবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এখন যদি এই রাফাহকেই গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়, তখন গাজায় আর কি অবশিষ্ট থাকবে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেন থেকে শুরু করে ইসরায়েলের ইউরোপীয় মিত্রদেশগুলো রাফাহে অভিযান না চালানোর জন্য ইসরায়েলকে সতর্ক করে দিয়েছিল। নেতানিয়াহু তাদের সেই সতর্কবাণী কর্ণপাত না করে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন। যদিও ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রীর ভাষায়, রাফাহে শুধু অভিযান চালানো হবে না, এই অভিযান হবে ‘নির্মূল অভিযান’। ইসরায়েলি নেতাদের বক্তব্যই বলে দেয় রাফাহে কী ঘটতে যাচ্ছে। ইসরায়েলি আগ্রাসনে ফিলিস্তিনিরা নিরাপদ আশ্রয় খুঁজতে খুঁজতে শেষ পর্যন্ত রাফাহে এসে ঠাঁই নিয়েছিল।
এখন তাহলে কোথায় যাবে? গাজায় আর কোনো নিরাপদ জায়গা অবশেষ নেই। মিসরও তাদের নিতে প্রস্তুত নয়। এসব অসহায় মানুষ যে পুনরায় উত্তর গাজার ফিরে যাবে, সে উপায়ও নেই। পথে পথে নানা স্তরে মিলিটারি চেকপোস্ট বসিয়েছে ইসরায়েলি সৈন্যরা। তা ছাড়া, উত্তরে যাওয়া নিরাপদ নয়। যত্রতত্র অবিস্ফোরিত বিস্ফোরকে বিপজ্জনক হয়ে আছে সেই সব জায়গা। কাজেই আশঙ্কা করা হচ্ছে রাফাহে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর হাতে ফিলিস্তিনির মৃত্যুর সংখ্যাই শুধু বাড়বে। যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিচারিত্রিক বৈশিষ্ট্য আবারও দৃশ্যমান হয়েছে।
রাফাহে আক্রমণ না করার কথা প্রকাশ্যে তারা যা-ই বলুক না কেন, ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের সম্মতিতেই রাফাহে আক্রমণ শুরু করেছে। বাইডেনের এক মুখপাত্রও স্বীকার করেছেন যে রাফাহে সীমিত পরিসরে হামলা চালানোর জন্য ইসরায়েলকে সবুজ সংকেত দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন অনুমোদন পেয়েই ইসরায়েল দৃশ্যত রাফাহ সীমান্ত ক্রসিংয়ের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।
ইসরায়েল বারবার বলছে, তাদের মূল লক্ষ্য হামাস। হামাসকে নিশ্চিহ্ন না করা পর্যন্ত এই যুদ্ধ থামবে না। কিন্তু বাস্তবে তা কি সম্ভব? হামাস ইসরায়েল ও তার পশ্চিমা মিত্রদের চোখে সন্ত্রাসী সংগঠন হলেও ফিলিস্তিনি মুক্তিকামী মানুষের কাছে একটি আদর্শের নাম। কারণ হামাসের একমাত্র উদ্দেশ্য হলো ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা এবং ইসরায়েলের দখলদারির অবসান ঘটানো। ইসরায়েলের এত নৃশংসতার পর ফিলিস্তিনি মানুষ তাই হামাসকে আজও বুকে ধারণ করে আছে। হামাসের অস্তিত্ব কেবল গাজাজুড়েই নয়; তাদের অস্তিত্ব অনুভব করা যায় মধ্যপ্রাচ্যের একটা বড় অংশজুড়েই। সবচেয়ে বড় কথা, কোনো একটি জনগোষ্ঠী যখন একটি আদর্শকে বুকে ধারণ করে থাকে, তখন তাকে নিশ্চিহ্ন করা প্রায় অসম্ভ হয়ে পড়ে। কাজেই, রাফাহে আক্রমণ করে নেতানিয়াহু শুধু রক্তপাত ঘটাতেই পারবেন, হামাসকে ধ্বংস করতে পারবেন না।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ও কলাম লেখক
এপ্রিলের শেষে ইসরায়েলের বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে, সে দেশের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুসহ আরও কিছু ইসরায়েলি শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে যাচ্ছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। খবরে আরও বলা হয়েছে, হেগের বিশ্ব আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আশঙ্কায় নেতানিয়াহু ‘অস্বাভাবিক চাপে’ রয়েছেন।
নেতানিয়াহুর ধারণা, আইসিসির কৌঁসুলি করিম খান অচিরেই তাঁকেসহ তাঁর সরকারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট এবং আইডিএফপ্রধানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে পারেন। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রতিরোধে নেতানিহুয়া ‘সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন। এ বিষয়ে মার্কিন প্রশাসনের সহায়তা কামনা করেছেন।
তিনি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আইসিসির যেকোনো পদক্ষেপে হস্তক্ষেপ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ব্যক্তিগতভাবে অনুরোধ করেছেন। নেতানিয়াহু এবং অন্যান্য ইসরায়েলি নেতার বিরুদ্ধে যদি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়, তাহলে তা হবে ইসরায়েলের জন্য বড় ধরনের আঘাত। নেতানিয়াহুর অনুরোধ যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যাখ্যান করে কী করে! তারা ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ঠেকানোর জন্য সর্বাত্মক জোর কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।
গ্রেপ্তার হতে পারেন—এমন খবর জানার পর গত ৩০ এপ্রিল এক ভিডিও বার্তায় আইসিসির বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছেন নেতানিয়াহু।আইসিসি যদি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে, তাহলে তা হবে নেতানিয়াহুর ভাষায়, ইসরায়েলের ওপর আইসিসির ‘জঘন্য হামলা’। তিনি ইসরায়েলের মিত্রদেশগুলোর ওপর আস্থা প্রকাশ করে বলেছেন, ইসরায়েল আশা করে, মুক্ত বিশ্বের নেতারা ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারের বিরুদ্ধে আইসিসির ‘জঘন্য হামলার’ বিরুদ্ধেও দৃঢ়ভাবে রুখে দাঁড়াবেন।
নেতানিয়াহু আইসিসির কৌঁসুলিদের ওপর প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয়েছেন। তিনি বলেছেন, ইসরায়েল তার আত্মনিয়ন্ত্রণের সহজাত অধিকার ক্ষুণ্ন করে—আইসিসির এমন কোনো চেষ্টা মেনে নেবে না। তিনি তাঁর বক্তব্যের মাধ্যমে আইসিসির কৌঁসুলিদের ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করেছেন বলে আইসিসির কৌঁসুলির দপ্তর অভিযোগ করেছে। গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ নিয়ে নেতানিয়াহুসহ সে দেশের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানার বিষয়ে আইসিসিকে সতর্ক করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল। ওদিকে যুক্তরাষ্ট্রের কিছুসংখ্যক ইহুদিপন্থী আইনপ্রণেতা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আইসিসির যেকোনো পদক্ষেপে হস্তক্ষেপ করা এবং তা ব্যর্থ করে দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের প্রতি অনুরোধ করেছেন।
অবশ্য আইসিসির কৌঁসুলি এবং কর্মকর্তাদের ধমক দেওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম নয়। এর আগে ২০২০ সালে আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদেশগুলোর সেনা ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধ বিষয়ে আইসিসির কর্মকর্তারা যখন তদন্ত করছিলেন, তখন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আইসিসির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন। পরে ২০২১ সালে বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাইডেন সেটি তুলে নেন।
আইসিসি সম্পর্কে নেতানিয়াহুর নেতিবাচক বিভিন্ন বক্তব্য ও বিবৃতিতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন আইসিসির কর্মকর্তারা। এক বিবৃতিতে তাঁরা বলেছেন, আইসিসির কর্মকর্তাদের কাজে বাধার সৃষ্টি করা, তাঁদের ভয়ভীতি দেখানো অথবা তাঁদের ওপর অবৈধ প্রভাব খাটানোর সব ধরনের চেষ্টা অবশ্যই অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। এ ধরনের হুমকি বিশ্বের এই স্থায়ী যুদ্ধাপরাধ আদালতের ‘বিচার প্রশাসন’-এর বিরুদ্ধে অপরাধের শামিল হতে পারে। এ কথা ঠিক, যখন কোনো পক্ষ থেকে আদালত বা আদালতের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধের হুমকি দেওয়া হয়, তখন আদালতের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন হয়।
তবে রোম সনদের অধীন আইসিসির স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করার বৈধ ক্ষমতা আছে। আদালতের এখন উচিত সেই বৈধ ক্ষমতা প্রয়োগ করে যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগে সংশ্লিষ্ট সব অপরাধীকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো।আইসিসি সাধারণত গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং আগ্রাসনমূলক যুদ্ধ পরিচালনা—এ চারটি মূল অপরাধের মধ্যে কারও বিরুদ্ধে যদি একটি অপরাধ করেছেন বলে সন্দেহ করা হয়, তখন তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে পারে। নেতানিয়াহু ও তাঁর শীর্ষ নেতাদের ওপরোল্লিখিত একাধিক অপরাধের জন্য দায়ী করার যথেষ্ট প্রমাণ আছে। কাজেই আদালত তাঁদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিতে পারেন। প্রশ্ন হচ্ছে, ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় নেতানিয়াহুর নির্দেশে ইসরায়েলি বাহিনী নারকীয় অভিযান চালিয়ে যে ৩৫ হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে এবং হাজার হাজার টন বোমা মেরে গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে, সেই অপরাধের অপরাধী নেতানিয়াহুকে আইসিসি কি আদৌ গ্রেপ্তার করাতে পারবে?
গাজায় গণহত্যা চালানোর জন্য শুধু নেতানিয়াহু দায়ী নন, ফিলিস্তিনিদের রক্তের দাগ পশ্চিমাদের হাতেও লেগে আছে। পশ্চিমা দেশগুলোর সরকার ভালো করেই জানে, ইসরায়েল প্রকৃতপক্ষে গাজায় কতটা গণহত্যা চালিয়েছে। পশ্চিমা সরকারগুলো দশকের পর দশক ধরে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েল যে জাতিগত শুদ্ধি অভিযানের নামে হত্যাকাণ্ড চালিয়ে আসছে, তাতে তারা অকৃপণভাবে সমর্থন দিয়ে আসছে। ফিলিস্তিনিদের জন্মভূমি থেকে বিতাড়ন এবং এখনো যারা বেঁচে আছে, তাদের নিজ বসতিতে বন্দী করে রাখার ঘটনায় পশ্চিমা সরকারগুলো সমর্থন দিয়ে আসছে।
আজ ফিলিস্তিনিরা যে মহাবিপর্যয় মোকাবিলা করছে, এর জন্য দায়ী পশ্চিমা শক্তির উদাসীনতা, পক্ষপাতিত্ব ও বছরের পর বছর ধরে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে চালানো ইসরায়েলি নৃশংসতার পক্ষে কূটনৈতিক সমর্থন। ফিলিস্তিনিরা সব দুর্ভোগ সহ্য করে যাবে, সেটাই পশ্চিমারা প্রত্যাশা করে। বর্তমানে গাজা থেকে ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীর শেষ অস্তিত্বটুকু ধীরে ধীরে মুছে ফেলা হচ্ছে। এ জন্য পশ্চিমারা তাদের দায় এড়াতে পারবে না। শুধু ইসরায়েল নয়, গাজায় ফিলিস্তিনি অসহায় মানুষের রক্তে পশ্চিমারাও তাদের হাত রাঙিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের আশ্রয়ে ও প্রশ্রয়ে বড় হয়ে ওঠা ইসরায়েল এখন এমন রূপ ধারণ করেছে যে তারা তাদের মিত্রদেরও পাত্তা দিচ্ছে না। তাই তো সবার অনুরোধ উপেক্ষা করে নেতানিয়াহু রাফাহে স্থল অভিযান শুরু করেছেন। ইসরায়েলের একতরফা অভিযানে মার খেতে খেতে উত্তর ও মধ্য গাজা থেকে বাস্তুচ্যুত প্রায় ১৫ লাখ মানুষ যখন রাফাহে আশ্রয় নিয়েছে, ঠিক তখনই ইসরায়েল তার বন্ধুরাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধও রক্ষা না করে এই অভিযান চালাচ্ছে। রাফাহ গাজার দক্ষিণের সর্বশেষ শহর। এখানে আশ্রয়গ্রহণকারী ফিলিস্তিনিরা গাদাগাদি করে থাকতে বাধ্য হচ্ছে। রাফাহর মূল বসবাসকারীর সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৭০ হাজার।
কিন্তু এখন পাঁচ গুণের বেশি মানুষ বসবাস করে। এই মানুষগুলো ইতিমধ্যে সাতবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এখন যদি এই রাফাহকেই গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়, তখন গাজায় আর কি অবশিষ্ট থাকবে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেন থেকে শুরু করে ইসরায়েলের ইউরোপীয় মিত্রদেশগুলো রাফাহে অভিযান না চালানোর জন্য ইসরায়েলকে সতর্ক করে দিয়েছিল। নেতানিয়াহু তাদের সেই সতর্কবাণী কর্ণপাত না করে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন। যদিও ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রীর ভাষায়, রাফাহে শুধু অভিযান চালানো হবে না, এই অভিযান হবে ‘নির্মূল অভিযান’। ইসরায়েলি নেতাদের বক্তব্যই বলে দেয় রাফাহে কী ঘটতে যাচ্ছে। ইসরায়েলি আগ্রাসনে ফিলিস্তিনিরা নিরাপদ আশ্রয় খুঁজতে খুঁজতে শেষ পর্যন্ত রাফাহে এসে ঠাঁই নিয়েছিল।
এখন তাহলে কোথায় যাবে? গাজায় আর কোনো নিরাপদ জায়গা অবশেষ নেই। মিসরও তাদের নিতে প্রস্তুত নয়। এসব অসহায় মানুষ যে পুনরায় উত্তর গাজার ফিরে যাবে, সে উপায়ও নেই। পথে পথে নানা স্তরে মিলিটারি চেকপোস্ট বসিয়েছে ইসরায়েলি সৈন্যরা। তা ছাড়া, উত্তরে যাওয়া নিরাপদ নয়। যত্রতত্র অবিস্ফোরিত বিস্ফোরকে বিপজ্জনক হয়ে আছে সেই সব জায়গা। কাজেই আশঙ্কা করা হচ্ছে রাফাহে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর হাতে ফিলিস্তিনির মৃত্যুর সংখ্যাই শুধু বাড়বে। যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিচারিত্রিক বৈশিষ্ট্য আবারও দৃশ্যমান হয়েছে।
রাফাহে আক্রমণ না করার কথা প্রকাশ্যে তারা যা-ই বলুক না কেন, ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের সম্মতিতেই রাফাহে আক্রমণ শুরু করেছে। বাইডেনের এক মুখপাত্রও স্বীকার করেছেন যে রাফাহে সীমিত পরিসরে হামলা চালানোর জন্য ইসরায়েলকে সবুজ সংকেত দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন অনুমোদন পেয়েই ইসরায়েল দৃশ্যত রাফাহ সীমান্ত ক্রসিংয়ের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।
ইসরায়েল বারবার বলছে, তাদের মূল লক্ষ্য হামাস। হামাসকে নিশ্চিহ্ন না করা পর্যন্ত এই যুদ্ধ থামবে না। কিন্তু বাস্তবে তা কি সম্ভব? হামাস ইসরায়েল ও তার পশ্চিমা মিত্রদের চোখে সন্ত্রাসী সংগঠন হলেও ফিলিস্তিনি মুক্তিকামী মানুষের কাছে একটি আদর্শের নাম। কারণ হামাসের একমাত্র উদ্দেশ্য হলো ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা এবং ইসরায়েলের দখলদারির অবসান ঘটানো। ইসরায়েলের এত নৃশংসতার পর ফিলিস্তিনি মানুষ তাই হামাসকে আজও বুকে ধারণ করে আছে। হামাসের অস্তিত্ব কেবল গাজাজুড়েই নয়; তাদের অস্তিত্ব অনুভব করা যায় মধ্যপ্রাচ্যের একটা বড় অংশজুড়েই। সবচেয়ে বড় কথা, কোনো একটি জনগোষ্ঠী যখন একটি আদর্শকে বুকে ধারণ করে থাকে, তখন তাকে নিশ্চিহ্ন করা প্রায় অসম্ভ হয়ে পড়ে। কাজেই, রাফাহে আক্রমণ করে নেতানিয়াহু শুধু রক্তপাত ঘটাতেই পারবেন, হামাসকে ধ্বংস করতে পারবেন না।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ও কলাম লেখক
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
৩ দিন আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৭ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৭ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৭ দিন আগে