বিদ্যুৎ গিলছে রিকশার ব্যাটারি

নাঈম ইসলাম, ধামরাই
প্রকাশ : ০১ আগস্ট ২০২২, ০৭: ৩৭
আপডেট : ০১ আগস্ট ২০২২, ১১: ৪৮

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সারা দেশের মতো ঢাকার ধামরাইয়েও নিয়মিত লোডশেডিং হয়। রাত ৮টার পর দোকানপাট ও শপিং মলও বন্ধ থাকছে। তবে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চার্জের গ্যারেজগুলো চলছে। লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে ধামরাইয়ের সচেতন নাগরিকেরা বলছেন, ব্যাটারিচালিত এসব যানবাহন বন্ধ করা গেলে বিদ্যুৎ বেঁচে যাবে। ফলে লোডশেডিংও কমে যাবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও অনেকে এসব মন্তব্য করেন।

ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩-এর ধামরাই জোনাল অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের জুলাই মাসের হিসাব অনুযায়ী ধামরাইয়ে ১২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা থাকলেও পাওয়া যেত ১১৭ মেগাওয়াট। এক বছরে অনেক ঘরবাড়ি ও শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে। সেই তুলনায় চাহিদাও বেড়েছে।

ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩-এর ধামরাই ও কালামপুর জোনাল অফিসের তথ্যমতে, ধামরাইয়ে প্রায় ২০০ অটোরিকশা ও ইজিবাইক চার্জ দেওয়ার গ্যারেজ রয়েছে। একেকটি গ্যারেজে সর্বনিম্ন ১৫টি এবং সর্বোচ্চ ৮০টি অটোরিকশা বা ইজিবাইক চার্জ দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। এর বাইরেও কয়েক হাজার অটোরিকশা ও ইজিবাইকের মালিক তাঁদের বাড়ির আবাসিক মিটার থেকে চার্জ দিয়ে থাকেন। আবার অনেকেই দোকান ভাড়া নিয়ে সেখানে একসঙ্গে ৪ থেকে ৫টি অটোরিকশা চার্জ দেন।

জানা যায়, একটি অটোরিকশায় ১২ ভোল্টের ৪টি অর্থাৎ মোট ৪৮ ভোল্টের ব্যাটারির প্রয়োজন হয়। এ ছাড়া ইজিবাইকে প্রয়োজন হয় ১২ ভোল্টের ৫টি বা মোট ৬০ ভোল্টের ব্যাটারি। আর এসব অটোরিকশা ও ইজিবাইকে চার্জ দিতে ব্যবহার করা হয় ৪৮ থেকে ৬০ অ্যাম্পিয়ারের চার্জার। একটি অটোরিকশা সম্পূর্ণ চার্জ হতে সময় লাগে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা। আর এতে একটি অটোরিকশা প্রতিদিন বিদ্যুৎ সংগ্রহ করে ১০ থেকে ১২ ইউনিট। এক মাসে ৩০০ থেকে ৩৬০ ইউনিট বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয় একটি অটোরিকশায়।

ধামরাই-কালামপুর সড়কের সিএনজি সমিতির সভাপতি মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘ধামরাইয়ে ইজিবাইক, অটোরিকশা ও অটো ভ্যান মিলিয়ে ১৬ থেকে ১৮ হাজার হবে, যা প্রতিদিন হাজার হাজার ইউনিট বিদ্যুৎ নষ্ট করছে। এই অটোরিকশা ও ইজিবাইক বন্ধ করা গেলে বিদ্যুৎ বেঁচে যাবে। লোডশেডিং কমে যাবে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ধামরাই পৌরসভার এক অটোরিকশা চার্জের গ্যারেজ মালিক জানান, ধামরাই পৌরসভার তালতলা, চন্দ্রাইল, বড় চন্দ্রাইল, থানা রোড, ইসলামপুর, কুমরাইল, ঢুলিভিটা, আইঙ্গন মোড়সহ কয়েকটি স্থানে ৯০টির বেশি অটোরিকশা গ্যারেজ রয়েছে। আর প্রতিটি গ্যারেজে ২০ থেকে ১০০ বা ১২০টির মতো অটোরিকশা চার্জ দেওয়া যায়। আবার অনেকেই নিজের বাড়িতে নিয়ে রিকশার ব্যাটারি চার্জ করে থাকেন। তিনি আরও বলেন, ‘শুধু পৌরসভার মধ্যেই ৫ হাজারের মতো অটোরিকশা রয়েছে। প্রতিটি রিকশার ব্যাটারি চার্জ করতে প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০ টাকা বিদ্যুৎ বিল আসে। আর আমরা গ্যারেজ মালিকেরা রিকশামালিকদের কাছ থেকে প্রতিদিন ১০০ বা ১২০ টাকা করে নিয়ে থাকি।’

এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মো. আলতাফ হোসেন বলেন, ‘ধামরাইয়ে প্রায় ২০ হাজার অটোরিকশা ও ইজিবাইক রয়েছে। একটি রিকশায় যদি ১০ ইউনিট বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয়, তাহলে শুধু এই ধামরাইয়ে প্রতিদিন ২০ হাজার রিকশার বিপরীতে ২ লাখ ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ করা হচ্ছে। সারা দেশেই আছে এসব যানবাহন। বিদ্যুতের অপচয় রোধ করতে সরকারের এদিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন।’

ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩-এর ধামরাই জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার আল মাহমুদ ফয়সাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ধামরাই জোনাল অফিসের আওতায় ১৩৭টি অটোরিকশা চার্জের গ্যারেজ রয়েছে। আবাসিক মিটার দিয়ে বা অবৈধভাবে কেউ কোনো গ্যারেজ করে থাকলে আমরা ব্যবস্থা নিই।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত