বিদেশনীতির ধারা বদলই চ্যালেঞ্জ হবে সরকারের

সাহিদুল ইসলাম চৌধুরী, ঢাকা
প্রকাশ : ১৮ আগস্ট ২০২৪, ০৮: ৩৫
আপডেট : ১৮ আগস্ট ২০২৪, ০৯: ৩০

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে আসা অন্তর্বর্তী সরকার দেশের স্বার্থের ভিত্তিতে বৈদেশিক সম্পর্ক রক্ষার কথা বলছে। দায়িত্ব নেওয়ার চার দিন পর ১২ আগস্ট বিদেশি দূতদের এমন বার্তা দেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। এরপর সপ্তাহ না গড়াতেই আজ রোববার আবার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে তাঁদের। এবার কথা বলবেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। কী বলবেন তিনি?

এ প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গেলে সরকারের ভেতরে ও বাইরের বিশ্লেষকেরা বলছেন, অনেক ঘটনা দ্রুত ঘটে যাচ্ছে। দেশের ভেতরেও নতুন নতুন পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে দেশের জন্য ঝামেলার বিষয় হয়ে দাঁড়াতে পারে। অন্যদিকে দেশের বাইরের শক্তিগুলোও বসে নেই। যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মতো প্রভাবশালী দেশগুলো নিজেদের মধ্যে কথা বলছে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারপ্রধান হয়তো বিদেশি দূতদের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নির্দিষ্ট কিছু বার্তা দিতে চাইতে পারেন।

ভারতে আশ্রয় নেওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিযুক্ত করে মামলা করা হচ্ছে একের পর এক। তাঁকে বিচারের আওতায় আনা ও জাতিসংঘের তদন্তে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের বিষয়গুলো সামনের দিকে বৈদেশিক সম্পর্কে বড় ইস্যু হয়ে দেখা দিতে পারে, এমনটি মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশের কূটনীতিকেরা বলছেন, কূটনীতিকেরা মূলত দেশের ভেতরকার নীতি ও পরিস্থিতিই বাইরে তুলে ধরেন। তাই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ক্ষমতার নানা কেন্দ্রের চাপ সামলে দেশে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এ মুহূর্তে সরকারের জন্য জরুরি। এটা করা গেলে বৈদেশিক বাণিজ্যসহ দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় সম্পর্কের অন্যদিকগুলো মোকাবিলা করা সহজ হতে পারে।

সরকারের ক্ষুদ্র একটি অংশ মনে করে, উন্নয়ন অংশীদারেরা কত দিন একটি অনির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় দেখতে চাইবে, সেটিও একটি বিষয়।

অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচিত নয়, এমন পরিচিতি ও সরকারের সাংবিধানিক বৈধতার প্রসঙ্গ কি বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে, এমন প্রশ্নে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বতন গবেষণা ফেলো ও সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সুফিউর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ সরকারের বৈধতা প্রমাণের সময় এখনো আসেনি। আর প্রাতিষ্ঠানিক সাংবিধানিক ব্যবস্থায় নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেও সরকার স্বৈরাচারী আচরণ করে থাকে। এমন উদাহরণ এ দেশেই আছে।’

সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও মিয়ানমারে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করা এই কূটনীতিক বলেন, ‘ভোটের মাধ্যমে না এলেও ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্রের দায়িত্ব নেওয়ায় জনগণের প্রত্যাশার প্রতিফলন হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেখা হতে পারে।’

দেশের কূটনীতিকেরা মনে করছেন, ভারত, চীন ও রাশিয়াকে কেন্দ্র করে গত ১৫ বছর যে ধারায় বৈদেশিক সম্পর্ক চলেছে, তাতে এই তিনটি দেশ ছাড়া আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রায় সবার সঙ্গে বাংলাদেশের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। সম্পর্কের সে ধারাগুলো অনেক ক্ষেত্রে সংশোধন করতে হবে। কোথাও কোথাও নতুন ধারা তৈরি করতে হবে। এ বিষয়টিতে অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। 

রাষ্ট্র হিসেবে এ চ্যালেঞ্জের বিষয়গুলো বাধা হিসেবে না দেখে নতুন সুযোগ হিসেবে গ্রহণ এবং তা কাজে লাগাতে দ্রুত ও সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার, এমনটিই মনে করেন তাঁরা।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, গত ১০ বছরে বিদেশে দেশের ভাবমূর্তির ক্ষেত্রে যে নেতিবাচকতা সৃষ্টি হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার অনেকটা বিনা বিনিয়োগেই তা কাটিয়ে ওঠার সুযোগ পেতে পারে। দেশের ভেতরে সুশাসন ও মানবাধিকারের দিকগুলো ঠিক রাখার পাশাপাশি ধীরে হলেও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চালুর উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। এতে দেশের কূটনীতিকেরা বিদেশে মূল্যবোধভিত্তিক কূটনৈতিক তৎপরতা পরিচালনার সুযোগ পেতে পারেন।

এক্ষেত্রে সরকারের জন্য সঠিক নির্দেশনা দেওয়ার পাশাপাশি দক্ষ ও সৃষ্টিশীল ব্যক্তিদের কাজে লাগানোর ওপর জোর দেন তাঁরা। 
শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেওয়ায় দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক ভবিষ্যতে কোন পথে এগোতে পারে, এমন প্রশ্নে একজন কূটনীতিক বলেন, বিচারিকপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য তাঁকে ফেরত চাইলে বিষয়টি ভারতের জন্য বিব্রতকর হতে পারে। ভারত এখানে অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক না রেখে কার্যত সব ডিম আওয়ামী লীগের ঝুড়িতে রাখায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, এমনটি মনে করেন তিনি। 
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর বলপ্রয়োগের বিষয়ে জাতিসংঘ স্বাধীন তদন্তের কথা বলছে। অন্যদিকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলছেন, এক্ষেত্রে সরকারের সম্পৃক্ততা দরকার হবে। এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর সহযোগিতা জাতিসংঘ কতটা পেতে পারে, এমন প্রশ্নও সামনে আছে বিশ্ব সংস্থাটির ঢাকায় কর্মরত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের মধ্যে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত