ঢাকার দুই সিটিই এখন মশার দখলে

আয়নাল হোসেন, ঢাকা
আপডেট : ০৭ মার্চ ২০২৪, ১০: ১৮
Thumbnail image

শীত বিদায় নিয়ে সবে উষ্ণতা ছড়াতে শুরু করেছে প্রকৃতি। এর মধ্যেই রাজধানীতে মশার উপদ্রব ব্যাপকভাবে বেড়েছে। মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ নগরবাসী। সন্ধ্যা নামার আগেই মশার আক্রমণ বেড়ে যায়। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, এবার কিউলেক্স মশার পরিমাণ অনেক কম। তারা নিয়মিত মশার ওষুধ প্রয়োগ করছে। যদিও সে ওষুধ প্রয়োগের কোনো ফল নগরবাসী পায়নি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মার্চে মশার উপদ্রব বাড়বে বলে আগাম সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ সে বিষয়ে ব্যবস্থা না নেওয়ায় মশার পরিমাণ বেড়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠান ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তর। এই দপ্তর রাজধানীর মশা ও মশার ডিম মারার কাজে নিয়োজিত। এই দপ্তরে জনবলের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। গত ৩১ জানুয়ারির মাসিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, দপ্তরে অনুমোদিত পদ রয়েছে ৩৯৬টি। এর মধ্যে খালি ১৭৪টি। খালি পদগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় শ্রেণির ১টি, তৃতীয় শ্রেণির ২৫টি ও চতুর্থ শ্রেণির ১৪৭টি।

নগরবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবার শীত বিদায় নেওয়ার আগেই মশার উপদ্রব বেড়েছে। তবে কয়েক দিন আগে বৃষ্টি হওয়ার পর এই যন্ত্রণা আরও বেড়েছে। বিকেল হতেই মশার উৎপাত শুরু হয়। সন্ধ্যা নামলে বাইরে থাকাই দায় হয়ে যায়। এমনকি ঘরের ভেতর কয়েল জ্বালিয়েও রেহাই পাওয়া মুশকিল হয়ে উঠেছে।

আজিমপুর কলোনির বাসিন্দা কাজী তাইজুদ্দিন আহমেদ প্রতিদিন রাতে কলোনির ভেতরে ব্যাটমিন্টন খেলেন। তিনি বলেন, মাঠের পাশে বসে থাকলে প্রচুর মশা আক্রমণ করে। দুই হাত দিয়ে মেরেও তাড়ানো যায় না।

রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার ৮/এ রোডের বাসিন্দা জাকির হোসেন বলেন, তাঁর এলাকায় বিকেল থেকে মশার উপদ্রব শুরু হয়। সন্ধ্যায় উপদ্রব আরও বাড়ে। মশার ওষুধ ছিটানো হলেও আক্রমণ থেকেই যাচ্ছে। সন্ধ্যার দিকে লার্ভিসাইড প্রয়োগের অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

রাজধানীর মিরপুর-২-এর সনি সিনেমা হলের পেছনের বাসিন্দা সাইদুল হক বলেন, গত এক মাস ধরে মশার উপদ্রব অনেক বেড়েছে। তাঁদের এলাকায় নিয়মিত মশার ওষুধ প্রয়োগ হচ্ছে না। সপ্তাহে তো দূরে থাক, মাসেও এক দিন ওষুধ ছিটানো হচ্ছে না। মশার আক্রমণ থেকে বাঁচতে সন্ধ্যার আগেই দরজা-জানালা বন্ধ করে দিতে হচ্ছে।রাজধানীর মাতুয়াইল মুসলিমনগর এলাকার বাসিন্দা ফজলুর রহমান বলেন, কয়েক দিন আগে বৃষ্টি হওয়ার পর মশার উপদ্রব অনেক বেড়েছে।

জানতে চাইলে কীটতত্ত্ববিদ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যায়ের অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, তিন মাস আগে এক গবেষণা করে তিনি বলেছিলেন, মার্চের প্রথম সপ্তাহে কিউলেক্স মশার ঘনত্ব অনেক বাড়বে। সেটিই হয়েছে। মার্চে ড্রেন ও ডোবার পানি ঘন হয়। তখন পানিতে মশার খাবার হিসেবে ব্যবহৃত জৈব উপাদান বাড়ে। মার্চের তাপমাত্রাও কিউলেক্স মশার জন্মের উপযুক্ত সময়। তিনি আরও বলেন, নর্দমা ও ডোবাগুলো আগেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে সেখানে লার্ভিসাইড প্রয়োগ করা উচিত ছিল। এখন যেহেতু মশা উড়ন্ত হয়েছে, এই মুহূর্তে ফগিং করে তাদের মারতে হবে।

তবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল কবির আজকের পত্রিকাকে বলেন, ফেব্রুয়ারি-মার্চে কিউলেক্স মশার পিক আওয়ার। তবে অতীতের তুলনায় এবার কিউলেক্স মশার পরিমাণ অনেক কম। তিনি বলেন, চার দিন পরপর ৭৫টি ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় সকালে লার্ভিসাইড ও বিকেলে এডাল্টিসাইড প্রয়োগ করা হচ্ছে। এসব প্রয়োগ হচ্ছে ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের নেতৃত্বে। তাদের লোকবলেও সংকট নেই।

মশার উপদ্রব প্রসঙ্গে কথা বলতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরীর মুঠোফোনে গতকাল দুপুরে কল দেওয়া হলে তিনি কিছুক্ষণ পরে কল করবেন বলে জানান। পরে আর তিনি কল করেননি। সন্ধ্যায় কয়েক দফা কল দেওয়া হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত