Ajker Patrika

প্রো-প্যালেস্টাইন প্রতিবাদ ও ছাত্ররাজনীতি

ড. মঞ্জুরে খোদা
প্রো-প্যালেস্টাইন প্রতিবাদ ও ছাত্ররাজনীতি

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি থাকবে কি থাকবে না, সেটা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে তুমুল বিতর্ক চলমান। সর্বোচ্চ আদালত সংবিধানের আলোকে বাক ও ব্যক্তিস্বাধীনতা এবং নাগরিকের সংগঠন করার অধিকারের বিষয়টি সামনে এনে বুয়েটে সংগঠন করতে বাধা নেই বলে রায় দিয়েছে। সেটা নিয়ে আপিল পর্যন্ত হয়েছেন। বাংলাদেশে যখন বিষয়টি অমীমাংসিত, ঠিক সেই সময়েই আমেরিকাসহ বিশ্বের নামকরা শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফিলিস্তিনের গাজায় গণহত্যা বন্ধ, যুদ্ধবিরতি ও ইহুদিবাদের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে উঠেছে এবং তা ছড়িয়ে পড়ছে।

এই যে বিশ্বের খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আন্দোলন হচ্ছে, তা ছাত্ররাজনীতির কারণেই সংগঠিত হচ্ছে এবং ছড়িয়ে পড়ছে। ছাত্ররাজনীতি আছে বলেই আজ আমেরিকা, কানাডা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অন্যায়ের প্রতিবাদ হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের একশ্রেণির শিক্ষিত নাগরিকের কাছ থেকে প্রায়ই শোনা যায় যে, উন্নত দেশ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কোনো ছাত্ররাজনীতি নেই, সেখানে ছাত্ররা রাজনীতি করে না ইত্যাদি। তাদের এমন মন্তব্য ও দাবির জবাব চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ছাত্ররা। শুধু দেখিয়ে দিচ্ছেন তা-ই নয়, ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদের মাধ্যমে বুঝিয়েও দিচ্ছে তাঁরা কতটা প্রভাব সৃষ্টি করতে পারেন।

বছরের শুরুতে কানাডার বৃহত্তম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়েও গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে সপ্তাহকাল ধরে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানকার ছাত্র ইউনিয়ন এই প্রতিবাদের আয়োজন করে। প্রো-প্যালেস্টাইন প্রতিবাদের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইহুদি সম্প্রদায়ের ডোনার ও বিভিন্ন ইহুদি সংগঠন এর প্রতিবাদ করে এবং এই আন্দোলন বন্ধের দাবি জানায়। প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের দাবি আমলে নিলেও পরে শিক্ষার্থীদের ‘যেকোনো অন্যায়ের প্রতিবাদ করার অধিকার আছে’ বলে স্বীকার করে। কানাডার বৃহত্তম সংগঠন ছাত্র ফেডারেশনের আন্তর্জাতিক সম্পাদক ব্র্যান্ডন রিয়েল নিপীড়নের বিরুদ্ধে ছাত্রদের ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘অবশ্যই দখলদারিত্ব ও ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে ছাত্রদের সংগ্রাম করতে হবে। ফিলিস্তিনে যে মানবতা লঙ্ঘিত ও গণহত্যা হচ্ছে, তার প্রতিবাদ সব ছাত্রের করা উচিত।’

বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসরায়েলবিরোধী আন্দোলন অব্যাহত থাকলে ইহুদিদের বিভিন্ন সংস্থা-প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেয় যে, এই প্রতিবাদ বন্ধ না করলে তারা তাদের তহবিল প্রত্যাহার করবে এবং নতুন করে কোনো অর্থ প্রদান করবে না। দাতাদের এমন হুমকির প্রেক্ষাপটে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয় যে, তারা মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। শান্তিপূর্ণ উপায়ে শিক্ষার্থীরা তাঁদের মতপ্রকাশ ও সংগঠন করার অধিকার রাখেন। সে ক্ষেত্রে তারা বাধা প্রদান করতে পারে না। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি ও মূল্যবোধের পরিপন্থী।

যাঁরা ছাত্ররাজনীতির বিরোধিতা করেন, তাঁদের বলি, এগুলো কি ছাত্ররাজনীতি ও ছাত্র আন্দোলন নয়? বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীরা যে প্রতিবাদ করছেন, সেটা কি আপনারা সমর্থন করেন না? তারা কি লেখাপড়া-গবেষণা করছেন না? সেখানে কি পেশাদারত্ব ও সৃষ্টিশীলতা গড়ে উঠছে না? এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেই সেরা ছাত্ররা তাঁদের জীবনের সর্বোচ্চ মেধা ও সামর্থ্য ব্যয় করেন। তাঁরা শুধু তাঁদের ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবেন না, বিশ্বমানবতা নিয়েও ভাবেন, দায়িত্ব পালন করেন। আত্মকেন্দ্রিক চিন্তা-চেতনা থেকে তথাকথিত নিরাপদ ও সুন্দর ভবিষ্যতের তোয়াক্কা করে না। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সরকারের শাস্তি এবং রক্তচক্ষু অগ্রাহ্য করেই প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করছেন।

আমেরিকা-কানাডার যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আন্দোলন হচ্ছে, এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান র‍্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে। বিভিন্ন দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন থাকে এসব প্রতিষ্ঠানে পড়ার। তাঁদের মধ্যে এই অহংকার-বড়াই কাজ করে না যে, ‘আমরা সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করি, অতএব আমাদের আন্দোলন-সংগ্রাম করা ঠিক হবে না।’ বইয়ের মধ্যে, ল্যাবে মুখ গুঁজে থাকাই শিক্ষা নয়। দুনিয়ার কোথায়, কী হচ্ছে, সেটাও জানতে হবে। আমাদের দেশের আত্মকেন্দ্রিক ও স্বার্থপর শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই দায়িত্ববোধ তৈরি হচ্ছে না। শুধু বলি, অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হয়, তা দেশ-বিদেশের যে প্রান্তেই হোক।

বলতে পারেন, আমাদের দেশের ছাত্ররাজনীতির মতো অবস্থা তো তাঁদের নয়। সেটা অস্বীকার করছি না। কিন্তু দায় কার? এককভাবে কি শুধু ছাত্রদের? ভালো-মন্দ, শুভ-অশুভের দ্বন্দ্ব সর্বত্রই আছে, থাকবে। কিন্তু অশুভকে প্রতিহত করে, অগ্রাহ্য করে এগিয়ে যেতে হবে। কারও প্রতিবাদ করার অধিকার কেড়ে নেওয়াকে কোনোভাবেই সমর্থন করি না, তা সংখ্যায় যত নগণ্যই হোক। ভালোভাবে লেখাপড়া করে পাস করলেই ভালো মানুষ হবে, সেই নিশ্চয়তা কোথায়? বাংলাদেশে দুর্নীতি-লুটপাট-পাচার-সন্ত্রাস কারা করছে? তারাও একদা কি ছাত্র ছিল না? তাহলে তাদের শিক্ষা কী?

এপ্রিলের শুরুতে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজার প্রতি সংহতি এবং ইসরায়েলের ইহুদি আগ্রাসনের প্রতিবাদ প্রথমে আমেরিকার কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়। তাঁরা গাজায় নারী-শিশু ও গণহত্যা বন্ধের কথা বলেন। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘গাজা সলিডারিটি এনক্যাম্পমেন্ট’ নামে একটি আন্দোলন গড়ে ওঠে। সেই আন্দোলনে প্রথমে শত শত, পরে হাজার হাজার শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। ছাত্রদের এই আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাও যোগ দেন।

শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করলে কর্তৃপক্ষ ক্লাস স্থগিত করে। পরিস্থিতি বিবেচনায় কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে চূড়ান্ত পরীক্ষাও স্থগিত করে। বিক্ষোভকারীরা বিশ্ববিদ্যালয় ভবনগুলো দখল করে নেন। তাঁরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে, ক্যাম্পাসে তাঁবু টানিয়ে ঠান্ডা ও বৃষ্টিতে অবস্থান করছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই আন্দোলন দমনের লক্ষ্যে পুলিশ মোতায়েন করে। বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করতে তারা কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে, লাঠিপেটা করে। পুলিশি নির্যাতনে অনেকে আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় শত শত শিক্ষার্থী ও অধ্যাপক কারাবরণ করেন।

এই প্রতিবাদ আমেরিকা-কানাডার অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়ে। এমআইটি, নিউইয়র্ক, মিশিগান, ইয়েল, মেট্রোপলিটন, কানাডার ম্যাকগিলসহ ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে। বোস্টনে, নর্থইস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তাঁবু থেকে উচ্ছেদের প্রতিবাদ করায় পুলিশ ১০০ শিক্ষার্থীকে আটক করেছে। মিডওয়েস্টের ব্লুমিংটনে, ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসের একটি তাঁবু তুলে ফেলার সময় পুলিশ ২৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে তাঁবু তৈরি করায় ৬৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। বিক্ষোভের মুখে ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট পলিটেকনিক ইউনিভার্সিটির হামবোল্ড ক্যাম্পাসসহ কয়েকটি ক্যাম্পাস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, সেন্ট লুইসের ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জিল স্টেইন, তাঁর প্রচার ব্যবস্থাপকসহ কমপক্ষে ৮০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ইয়েল, সাউদার্ন, ক্যালিফোর্নিয়া, ভ্যান্ডারবিল্ট ও মিনেসোটাসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারও করা হয়েছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে বিরল ঘটনা। 
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়েও ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কর্তৃপক্ষের বাক্‌স্বাধীনতার প্রশ্ন নিয়ে তীব্র বিতর্ক ও বিরোধ তৈরি হলেও ছাত্রদের প্রতিবাদের কারণে কর্তৃপক্ষ নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয়। তারা ছাত্রদের সঙ্গে পুলিশের অসহিষ্ণু আচরণের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে।

আল জাজিরার এক প্রতিবেদন শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ আন্দোলন হিসেবে অভিহিত করেছে। কেননা, বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হলে তা তাঁদের শিক্ষা ও পেশাগত জীবনে প্রভাব ফেলতে পারে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়তে গড়ে প্রতিবছর একজন ছাত্রকে ব্যয় করতে হয় ৫০ হাজার ডলার বা প্রায় ৫৫ লাখ টাকা।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই আন্দোলনের সমালোচনা করেছেন। শিক্ষার্থীরা এসব কথায় কর্ণপাত না করে দাবি জানাচ্ছেন—গাজায় অবিলম্বে গণহত্যা বন্ধ ও যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে হবে। ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা বন্ধ এবং ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়া পর্যন্ত তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। কলাম্বিয়া, ম্যাকগিল, কনকর্ডিয়াসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভকারীরা ‘জায়নিস্ট’ রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কিত শিক্ষা তহবিল বাতিল করার পাশাপাশি ইহুদিবাদী একাডেমিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি জানান। সেখানে ফিলিস্তিনের পতাকা নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছেন। আমেরিকার ইতিহাসে ভিয়েতনাম যুদ্ধের পর ইসরায়েলবিরোধী চলমান এই আন্দোলনকে দেশটির সর্ববৃহৎ প্রতিবাদ হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে।

লেখক: লেখক, গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত, যুদ্ধ চলমান: আইএসপিআর

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত, যুদ্ধ চলমান: আইএসপিআর

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত, যুদ্ধ চলমান: আইএসপিআর

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত, যুদ্ধ চলমান: আইএসপিআর

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত, যুদ্ধ চলমান: আইএসপিআর

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত