২ বছর ধরে নেই কার্ড বরাদ্দ

আশিস রহমান, দোয়ারাবাজার
প্রকাশ : ০৫ জুন ২০২২, ০৮: ৫২
আপডেট : ০৫ জুন ২০২২, ১৪: ৪৫

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের বাসিন্দা লিপি আক্তার। স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকেই ছয় সন্তান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তিনি। পরিবারে কর্মক্ষম কেউ না থাকায় বিভিন্ন বাড়িতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। বিধবা ভাতার কার্ডের করা জন্য আসছিলেন ইউপি কার্যালয়ে। পরে কার্ড না করতে পেরে শূন্য হাতে বাড়ি ফিরতে হয়েছে তাঁকে।

শুধু লিপি আক্তার একাই নন, বরং বয়স্ক ও বিধবা ভাতার কার্ড না পেয়ে এমন হতাশা ব্যক্ত করেন বয়স্ক অসহায় স্বপন মিয়া, বিধবা আয়েশা আক্তারসহ আরও অনেকে।

জানতে চাইলে লিপি আক্তার বলেন, ‘শুনেছি সরকার অসহায় বিধবা নারীদের বিধবা ভাতা দেয়। এ জন্য কার্ড করতে ইউপি কার্যালয়ে আসি। তবে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন বিধবা ভাতার কার্ড নাকি দুই বছর ধরে বন্ধ।’

তিনি আরও বলেন, ‘অনেক আশা করে আসছিলাম। এই ভাতাটুকু পেলেও আমার সংসারে উপকার হতো। এখন কবে এই ভাতা আবার চালু হবে তাও জানি না। এত বছর ধরে অনেকেই ভাতা পাচ্ছে। আমরা কী দোষ করলাম।’

এদিকে গত দুই বছর ধরে নতুন করে বয়স্ক ও বিধবা ভাতা দেওয়া বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন এই উপজেলার অনেক অসহায় মানুষ। এতে করে সমাজের অসহায় মানুষগুলো মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এর ফলে দারিদ্র্যপীড়িত উপজেলাটি শতভাগ ভাতার আওতায় না আসায় ভাতা প্রত্যাশীদের অপেক্ষা দিন দিন বাড়ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ২০২০-২১ অর্থ বছরে সারা দেশের ১১২টি উপজেলা শতভাগ ভাতার আওতায় আসে। পরবর্তী সময়ে ২০২১-২২ অর্থবছরে নতুন করে আরও ১৫০টি উপজেলা এই তালিকায় যুক্ত হয়। সব মিলিয়ে দেশের মোট ২৬২টি উপজেলা শতভাগ ভাতার আওতায় এসেছে। তবে এই তালিকা থেকে বাদ পড়েছে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার নাম। সরকারিভাবে ঘোষিত দেশের দুর্গম উপজেলাগুলোর মধ্যে এটি একটি।

উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরের পর থেকে গত দুই বছর ধরে বয়স্ক, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা ভাতার কার্ড বরাদ্দ বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে দোয়ারাবাজারে ১১ হাজার ১৭৫ জন উপকারভোগী ভাতা পাচ্ছেন। এর মধ্যে প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন ২ হাজার ৭০৪ জন, বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন ৬ হাজার ৩৪৪ জন, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা ভাতা পাচ্ছেন ২ হাজার ১৩ জন, প্রতিবন্ধী শিক্ষা উপবৃত্তি পাচ্ছেন ৭৪ জন, অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর বিশেষ ভাতা পাচ্ছেন ২৬ জন ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর শিক্ষা উপবৃত্তি পাচ্ছেন ১৪ জন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, উপজেলায় দুই বছর ধরে বন্ধ রয়েছে নতুন করে বয়স্ক ও বিধবা ভাতার বরাদ্দ। এতে করে উপজেলার অনেক বয়স্ক মানুষ ও বিধবা নারী ভাতার আওতাভুক্ত হতে পারছেন না। এ কারণে দ্রুত সময়ের মধ্যে উপজেলাটিকে শতভাগ ভাতার আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ উপজেলার অনেক অসহায় মানুষ।

জানতে চাইলে সুরমা ইউপি চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হালিম বীরপ্রতীক বলেন, ‘ইউনিয়নের হতদরিদ্র, অসহায়, বয়স্ক ও বিধবারা প্রায় প্রতিদিনই আমার কাছে আসেন। তাঁদের ভাতার কার্ড করে দেওয়ার অনুরোধ জানান। অনেকে স্থানীয় ইউপি সদস্যদেরও দ্বারস্থ হন। কিন্তু ভাতার বরাদ্দ বন্ধ থাকায় তাদের নতুন করে কার্ড করে দিতে পারছি না।’

আব্দুল হালিম আরও বলেন, শুধু আমার ইউনিয়নই নয়, বরং উপজেলার সবকটি ইউনিয়নের একই অবস্থা। দেশের ২৬২ উপজেলার মানুষ শতভাগ ভাতা পাচ্ছেন। কিন্তু আমাদের উপজেলার এসব অসহায় মানুষ বঞ্চিত। এ কারণে আমাদের উপজেলাকেও শতভাগ ভাতার আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।’

দোয়ারাবাজার উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম বলেন, ‘যাদের কার্ড আছে তাঁরা ভাতা পাচ্ছেন। কিন্তু ২০১৯-২০ অর্থবছরের পর থেকে বয়স্ক, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা ভাতার কার্ড বরাদ্দ আসছে না। ফলে নতুন করে অন্য কাউকে ভাতার অন্তর্ভুক্ত করা যাচ্ছে না। প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে অনেক মানুষ অফিসে ভাতার আবেদন নিয়ে আসেন। রাস্তাঘাটে দেখলে এসব মানুষ আমাদের ধরে। তবে ২৬২টি উপজেলা শতভাগ ভাতার আওতায় আসার পর থেকে আমাদের উপজেলার বরাদ্দ বন্ধ রয়েছে।’

এ সময় আশাবাদ ব্যক্ত করে কামরুল ইসলাম বলেন, ‘চলতি অর্থবছরে সরকার আরও ১০০ উপজেলাকে শতভাগ ভাতার আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। আমরা আশাবাদী এই তালিকায় দোয়ারাবাজার উপজেলার নাম থাকবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত