১৫ লাখ টাকা ঘুষ না দেওয়ায় চাকরি হয়নি

জমির উদ্দিন, চট্টগ্রাম
Thumbnail image

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) নিয়োগ পরীক্ষায় মেধাতালিকায় উত্তীর্ণ হয়েও ১৫ লাখ টাকা না দেওয়ায় চাকরি মেলেনি শরীফ আহমেদ নামের এক প্রার্থীর। এমনই অভিযোগ তাঁর।

উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদের ওই পরীক্ষায় শরীফ ১০০-তে ৯২ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এমনকি মৌখিক পরীক্ষায় তিনটি প্রশ্নের তিনটিতে উত্তর দিয়েছেন। পরে কেজিডিসিএলের এক কর্মকর্তা যোগাযোগ করে ১৫ লাখ টাকা ঘুষ চান। টাকা না দেওয়ায়, তাঁর চাকরি হয়নি।

সম্প্রতি কেজিডিসিএল নিয়ে নিয়োগসহ নানান দুর্নীতির বিষয়ে ‘তদন্তে ১২ কর্মকর্তার নাম’ শিরোনামে আজকের পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর এ প্রতিবেদকের কাছে যোগাযোগ করে শরীফ আহমেদ এ দাবি করেন। তিনি সঙ্গে কিছু প্রমাণপত্রও দিয়েছেন। শুধু শরীফ নন, আরও কয়েকজন প্রার্থী যোগাযোগ করে বলেছেন, ঘুষ না দিলে চাকরি না হওয়ায় অনেকে এ কোম্পানিতে বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় অংশও নেন না। যারা পরীক্ষা দেন, মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ হন ঘুষ ছাড়া তাঁদের চাকরি হয় না।

শরীফকে দেওয়া মৌখিক পরীক্ষার ওই চিঠিটি দেওয়া হয় ২০১১ সালের ১২ ডিসেম্বর। শরীফের রোল নম্বর ছিল এস-ইসি-১৩৫। মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার বাসিন্দা শরীফ। ওই চিঠিতে স্বাক্ষর ছিল ব্যবস্থাপক (পার্সোনাল) আব্দুল্লাহ-আল-মামুনের। ২০১১ সালের ২৪ জুন উপসহকারী প্রকৌশলী পদের ওই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদ ভবনে। পরীক্ষার ৬ মাস পর ২০১২ সালে ১ জানুয়ারি তাঁর কাছে মৌখিক পরীক্ষার জন্য চিঠি পাঠায় কেজিডিসিএল। ওই দিন ষোলশহরের কেজিডিসিএলে অফিসে তাঁরসহ আরও ২০ জনের মৌখিক পরীক্ষা হয়।

শরীফ আহমেদ জানান, মৌখিক পরীক্ষার আগে যে তালিকা ছিল, সেখানে আমার লিখিত পরীক্ষার নম্বর ছিল ৯২। এর মধ্যে অনেকের ৮০-৯০ এর মধ্যে। ওই সময় কেজিডিসিএলের এমডি ও পেট্রোবাংলার দুজন কর্মকর্তা মৌখিক পরীক্ষা নেন। তিনটি প্রশ্নের তিনটির সঠিক উত্তর দেন শরীফ। দুই মাস পর কেজিডিসিএলের এক কর্মকর্তা যোগাযোগ করে ১৫ লাখ টাকা ঘুষ চান। অন্যথায় চাকরি হবে না বলে জানান।

শরীফ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরও ১৫ লাখ টাকা দিয়ে কেন চাকরি নেব? সে জন্য ওই কর্মকর্তার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছি। তিনি দুই মাস ধরে যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু টাকা দিয়ে চাকরি নেওয়ার মানসিকতা ছিল না। চাকরি পাইনি, দুঃখ থাকলেও আমি দুর্নীতি বন্ধ চাই।’

এ ছাড়া ২০১১ সালে সহকারী ব্যবস্থাপক পদেও দুর্নীতির অভিযোগ ছিল। লিখিত পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে মৌখিক পরীক্ষা হয়। কিন্তু এরপর মৌখিক পরীক্ষার ফল এবং সার্বিকভাবে নির্বাচিতদের কোনো তালিকা পত্রপত্রিকায় প্রকাশ করা হয়নি। কেজিডিসিএলের সাবেক কর্মকর্তা আইয়ুব খানের ছেলে মহিউদ্দিন চৌধুরী ২০১১ সালে অনার্স পাস না করে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে সহকারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পান বলেও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তে উঠে আসে।

শুধু এসব ঘটনা নয়, চলতি বছরে কেজিডিসিএলের একটি প্রকল্পের নিয়োগে মেধা তালিকা থেকে না নিয়ে নিজেদের পছন্দের ৬ প্রার্থীকে নিয়োগ দিয়েছেন কেজিডিসিএলের মহাব্যবস্থাপক ফিরোজ খান।

কেজিডিসিএলের মহাব্যবস্থাপক ফিরোজ খান বলেন, ‘যা বলার তদন্ত কমিটিকে বলেছি। পত্রিকায় কোনো কমেন্ট দিতে পারব না।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত