বিভুরঞ্জন সরকার
আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ দেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন। নতুন যে নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে, সেই কমিশনের অধীনেই পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সে জন্য কাদের দিয়ে পরবর্তী নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে, সে ব্যাপারে রাজনীতিসচেতন মানুষের মধ্যে যে ধরনের আগ্রহ ও কৌতূহল থাকার কথা, বাস্তবে তা নেই।
যেন ধরেই নেওয়া হচ্ছে, সংলাপ বা আলোচনা যা-ই হোক না কেন, শেষ পর্যন্ত সরকারের ইচ্ছামতোই একটি নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করা হবে।
দেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা চলছে বলে দাবি করা হলেও বাস্তবে যাঁরা ক্ষমতায় থাকেন, তাঁরা জনমত বা বিরোধী মতকে কোনো গুরুত্ব না দিয়ে একতরফাভাবে সবকিছু করতে পছন্দ করেন। একবার কোনোভাবে ক্ষমতায় যেতে পারলে অন্যদের পাত্তা না দেওয়ার প্রবণতা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ক্ষমতার শক্তি কখনো কখনো মদমত্ত করে তোলে বলে যে কথাটি চালু আছে, সেটা আমাদের দেশে বেশি সত্য বলে মনে হয়।
গণতন্ত্র হচ্ছে সংখ্যাধিক্যের শাসন। ৫১ জন একদিকে হলেই ৪৯ জনকে উপেক্ষা করার অধিকার পাওয়া যায়। এই ৫১ জন কোন প্রক্রিয়ায় একদিকে হয়, তাদের সমর্থন কীভাবে বা কোন কৌশলে আদায় করা হয়, সেটাও আর বড় প্রশ্ন বা দেখার বিষয় থাকে না। ফলে আমরা প্রকৃতপক্ষে গণতান্ত্রিক শাসনের নামে একপ্রকার স্বেচ্ছাচারী ও কর্তৃত্ববাদী শাসনের জালে জড়িয়ে আছি।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে। তারা মনে করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বা ভোটের মাধ্যমেই তারা ক্ষমতার অধিকারী হয়েছে। কথা মিথ্যা নয়। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় প্রায় ফাঁকা মাঠে গোল দিয়েছে আওয়ামী লীগ। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেয়েছেন অর্ধেকের বেশি সংসদ সদস্য। বলা যায়, একধরনের পাতানো নির্বাচনব্যবস্থা। কিন্তু সাংবিধানিকভাবে ওই নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। কারণ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনে জেতার বিষয়ে সংবিধানে কোনো বিধিনিষেধ নেই। কিন্তু নীতি-নৈতিকতার দিক থেকে এ রকম নির্বাচন মেনে নিতে কষ্ট হওয়াই স্বাভাবিক। অথচ রাজনীতি আবার সব সময় নীতি-নৈতিকতার পথ ধরে অগ্রসর হয় না।
২০১৯ সালের নির্বাচন ছিল অংশগ্রহণমূলক। কিন্তু অনেক ভোটারই ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে নিজের ভোট দিতে পারেননি। বলা হয়, অনেক জায়গায়ই আগের রাতে ব্যালটে সিল মেরে ভোটের বাক্স ভরে রাখা হয়েছিল। তাই ওই নির্বাচন নিয়ে অনেক কথা আছে, প্রশ্ন আছে, বিতর্ক আছে।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের অজানা নেই যে কীভাবে তারা বিজয়ী হয়ে সরকার গঠনের সুযোগ পেয়েছেন। তাই এটাই প্রত্যাশিত ছিল যে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় জনমত বা বিরোধী মতকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। কিন্তু সেটা না হয়ে উল্টোটাই হচ্ছে। সরকার খুশিমতো দেশ চালাচ্ছে। বাইরে কে কী বলছে, তা বিবেচনায় নেওয়ার গরজ নেই।
নতুন নির্বাচন কমিশনও সরকারের ইচ্ছাপূরণের যন্ত্র ছাড়া আর কিছু হবে বলে মনে হয় না। এর মধ্যে অনেকেই এটা বলেছেন যে রাষ্ট্রপতির আলোচনার উদ্যোগ লোকদেখানো বা নিয়ম রক্ষার। এর ফলে ভালো কিছু হবে না। এর আগেও দুবার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপের পর নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছিল।
কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ কমিশন এবং কে এম নূরুল হুদা কমিশন কি মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পেরেছে? এ দুই কমিশনের অধীন যে দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, তা নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। নির্বাচনব্যবস্থার যে ক্ষতি এই দুই কমিশনের সময় হয়েছে, তার তুলনা চলে না।
এবারও আগের থেকে আলাদা কিছু হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। ইসি নিয়ে ছি ছি এবার কমবে বলে মনে করার কোনো কারণ দেখা যায় না। এবার আগের দুই সংলাপের অভিজ্ঞতায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও বঙ্গভবনে যাওয়ার আগ্রহ কম। আগে দুবার যারা যে প্রস্তাব দিয়েছিল, তার কোনোটি বাস্তবায়ন হয়নি। দলগুলোর পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়, রাষ্ট্রপতি সব মনোযোগ দিয়ে শোনেন এবং তাঁর সীমাবদ্ধতার কথা সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে যথাযথ আপ্যায়ন ও ফটোসেশনের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটে সংলাপের। শেষ পর্যন্ত সরকার যা চায় তা-ই হয়। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে যে নামের তালিকা বঙ্গভবনে যায়, সেটাই রাষ্ট্রপতি অনুমোদন করেন। এবারও ব্যতিক্রম কিছু হবে না।
নির্বাচন কমিশন গঠনের ব্যাপারে সংবিধানে আইন করার কথা থাকলেও কোনো সরকারের আমলেই আইন করার বিষয়টি গুরুত্ব পায়নি। পুরোনো কমিশনের মেয়াদ শেষে নতুন কমিশন গঠনের সময় এলে আইনের কথা অনেকের মনে পড়ে। কিন্তু তখন সময়ের অজুহাতে তা এড়িয়ে যাওয়া হয়। একবার এড়িয়ে গেলেই পাঁচ বছর চিন্তামুক্ত।
প্রশ্ন হলো, ইসি গঠন নিয়ে এই উদাসীনতা, অবহেলা কিংবা দায়সারা ভাব আর কত দিন চলবে? কত দিন ক্ষমতাসীনদের ইচ্ছানির্ভর নির্বাচন কমিশন দিয়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা শক্তিশালী করার কাজ আমরা চালিয়ে যাব? এখানে বড় বিষয় হলো সরকারের সদিচ্ছা। সরকার চাইলে আইন করার জন্য সময় কোনো বাধা হতে পারে না। সব সরকারই চায় অনুগত নির্বাচন কমিশন। রাজনৈতিক দলগুলো তালগাছ নিজের ভাগে রেখে সালিস মানতে চায়। সে কারণেই আমাদের দেশে নির্বাচনকমিশন গঠনের জন্য সংবিধানে বর্ণিত আইন প্রণয়ন হয় না। সবার সঙ্গে কথা বলে নিজের মতো করে নির্বাচন কমিশন গঠনের এই ধারারও অবসান হওয়া দরকার।
নির্বাচন কমিশন গঠনের পর সমালোচনা আমাদের দেশে নতুন নয়। এটাও সত্য যে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন দেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় খুব সহজ কাজও নয়। আমাদের সমাজ রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত। কোনো জাতীয় ইস্যুতেই আমরা একমত হতে পারি না। ভিন্নমত পোষণ করা এবং কলহ-বিবাদে জড়িয়ে পড়াই যেন আমাদের জাতীয় বৈশিষ্ট্য। রাজনৈতিক জোট গঠিত হয় মূলত কিছু নির্দিষ্ট রাজনৈতিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সামনে রেখে। কিন্তু সেই জোটের মধ্যেও মতৈক্যের চেয়ে মতপার্থক্যের কথাই শোনা যায় বেশি। আমাদের দেশের রাজনীতিতে আস্থা-বিশ্বাসের সংকট এখন চরমে। শুধু ভিন্ন দলের প্রতি অবিশ্বাস বা অনাস্থা আছে তা নয়, এক দলের মধ্যেও এখন গ্রুপিং নিয়মিত ঘটনা। দ্বন্দ্ব-কোন্দলে রাজনীতির পরিবেশ বিষাক্ত।
এখন প্রশ্ন হলো, দেশের মানুষের প্রত্যাশামতো একটি ‘শক্তিশালী’ বা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠিত না হলে কি পরবর্তী নির্বাচনও বিতর্কিত হবে? একটি ভালো নির্বাচনের আশা কি দুরাশাই থেকে যাবে? ভোটাররা কি নির্ভয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন না? আইনগতভাবে নির্বাচন কমিশনের কিন্তু এখনো ‘শক্তি’ কম নয়। নির্বাচনের সময় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ অনেক কিছুই নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকে। কিন্তু নির্বাচন কমিশনকে কি কখনো তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ করতে দেখা গেছে? নির্বাচনী বিধিবিধান অমান্য করলে কারও প্রার্থিতা বাতিল করার সাহস আজ পর্যন্ত কোনো কমিশনেরই দেখা যায়নি। সরকারের সন্তুষ্টি বিধান করে চলার নির্দেশনা তো কাগজপত্রে থাকে না। তার পরও নতজানু হয়ে চলতে ভুল না করাটা কি অভ্যাস, না অন্য কিছু? এটা কি দুর্বল মেরুদণ্ডের ব্যক্তিত্বের কারণে হয়, নাকি এর পেছনে আরও কোনো প্রাপ্তির আশা থাকে?
এ প্রশ্নও অনেকের মনে আসে যে, একটি ভালো নির্বাচনের জন্য কি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন জরুরি, নাকি সরকারের সদিচ্ছাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ? ক্ষমতাসীনদের মন জুগিয়ে চলার কথা নয় কোনো সাংবিধানিক পদাধিকারী ব্যক্তির। তার পরও কেন কর্তার ইচ্ছায় কীর্তন হয়? এটা কেন মনে করা হয় যে সরকার না চাইলে কোনো নির্বাচন কমিশনই ভালো নির্বাচন নিশ্চিত করতে পারবে না?
নির্বাচন এক দলের খেলা নয়, নির্বাচনের মাঠে একাধিক দল বা একাধিক প্রতিদ্বন্দ্বী থাকবে, সেটাই রীতি। আর একাধিক ব্যক্তি লড়লেও জয় তো পাবেন একজনই। অর্থাৎ, নির্বাচনে হার-জিত বা জয়-পরাজয় একটি স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু আমাদের দেশে এখন ভোটে দাঁড়িয়ে সবাই শুধু জয় চায়। যেকোনো উপায়ে বিজয়ী হওয়ার উদগ্র বাসনাই প্রার্থীদের বেপরোয়া করে তোলে। সে জন্য শান্তি বিঘ্নিত হয়, মারামারি ও খুনোখুনি হয়। অর্থ ও মাস্তান ভোটের মাঠ নিয়ন্ত্রণ করায় সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার পথ সীমিত হয়ে যায়।
অর্থ ও মাস্তান সরকারি দলের পক্ষে বেশি থাকে বলে ভারসাম্য রক্ষা করা যায় না। আর নির্বাচন কমিশন সব বিষয়ে সাক্ষীগোপালের ভূমিকা পালন করায় নির্বাচনটাই শেষ পর্যন্ত তামাশায় পরিণত হয়।
নতুন বছরের শুরুতে আমাদের প্রতিজ্ঞা হোক—গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করে এমন নির্বাচনের আয়োজন করি, যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বীরা জয় কিংবা পরাজয় দুটোকেই স্বাভাবিকভাবে মেনে নেওয়ার মানসিকতা নিয়ে অংশ নেবেন। আমাদের সব রাজনৈতিক দলেরই হারার অভিজ্ঞতা আছে। এক নির্বাচনে হারা মানে সবকিছু শেষ হয়ে যাওয়া নয়। প্রমত্তা পদ্মা নদী শাসন করে এবং সব বাধা-ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আমরা যদি সেতু বানাতে পারি, তাহলে সৎ ও সাহসী কয়েকজন মানুষ বাছাই করে এমন একটি নির্বাচন কমিশন কেন গঠন করতে পারব না, যে কমিশন ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব’—এটা নিশ্চিত করতে পারবে না? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরবর্তী নির্বাচন কমিশন গঠন ও ভালো নির্বাচনের ব্যাপারে আন্তরিক সদিচ্ছা দেখালে নিশ্চয়ই আমরা এবার ভরসা রাখার মতো একটি নির্বাচন কমিশন পাওয়ার আশা আমরা করতে পারি।
বিভুরঞ্জন সরকার: সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ দেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন। নতুন যে নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে, সেই কমিশনের অধীনেই পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সে জন্য কাদের দিয়ে পরবর্তী নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে, সে ব্যাপারে রাজনীতিসচেতন মানুষের মধ্যে যে ধরনের আগ্রহ ও কৌতূহল থাকার কথা, বাস্তবে তা নেই।
যেন ধরেই নেওয়া হচ্ছে, সংলাপ বা আলোচনা যা-ই হোক না কেন, শেষ পর্যন্ত সরকারের ইচ্ছামতোই একটি নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করা হবে।
দেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা চলছে বলে দাবি করা হলেও বাস্তবে যাঁরা ক্ষমতায় থাকেন, তাঁরা জনমত বা বিরোধী মতকে কোনো গুরুত্ব না দিয়ে একতরফাভাবে সবকিছু করতে পছন্দ করেন। একবার কোনোভাবে ক্ষমতায় যেতে পারলে অন্যদের পাত্তা না দেওয়ার প্রবণতা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ক্ষমতার শক্তি কখনো কখনো মদমত্ত করে তোলে বলে যে কথাটি চালু আছে, সেটা আমাদের দেশে বেশি সত্য বলে মনে হয়।
গণতন্ত্র হচ্ছে সংখ্যাধিক্যের শাসন। ৫১ জন একদিকে হলেই ৪৯ জনকে উপেক্ষা করার অধিকার পাওয়া যায়। এই ৫১ জন কোন প্রক্রিয়ায় একদিকে হয়, তাদের সমর্থন কীভাবে বা কোন কৌশলে আদায় করা হয়, সেটাও আর বড় প্রশ্ন বা দেখার বিষয় থাকে না। ফলে আমরা প্রকৃতপক্ষে গণতান্ত্রিক শাসনের নামে একপ্রকার স্বেচ্ছাচারী ও কর্তৃত্ববাদী শাসনের জালে জড়িয়ে আছি।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে। তারা মনে করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বা ভোটের মাধ্যমেই তারা ক্ষমতার অধিকারী হয়েছে। কথা মিথ্যা নয়। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় প্রায় ফাঁকা মাঠে গোল দিয়েছে আওয়ামী লীগ। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেয়েছেন অর্ধেকের বেশি সংসদ সদস্য। বলা যায়, একধরনের পাতানো নির্বাচনব্যবস্থা। কিন্তু সাংবিধানিকভাবে ওই নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। কারণ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনে জেতার বিষয়ে সংবিধানে কোনো বিধিনিষেধ নেই। কিন্তু নীতি-নৈতিকতার দিক থেকে এ রকম নির্বাচন মেনে নিতে কষ্ট হওয়াই স্বাভাবিক। অথচ রাজনীতি আবার সব সময় নীতি-নৈতিকতার পথ ধরে অগ্রসর হয় না।
২০১৯ সালের নির্বাচন ছিল অংশগ্রহণমূলক। কিন্তু অনেক ভোটারই ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে নিজের ভোট দিতে পারেননি। বলা হয়, অনেক জায়গায়ই আগের রাতে ব্যালটে সিল মেরে ভোটের বাক্স ভরে রাখা হয়েছিল। তাই ওই নির্বাচন নিয়ে অনেক কথা আছে, প্রশ্ন আছে, বিতর্ক আছে।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের অজানা নেই যে কীভাবে তারা বিজয়ী হয়ে সরকার গঠনের সুযোগ পেয়েছেন। তাই এটাই প্রত্যাশিত ছিল যে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় জনমত বা বিরোধী মতকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। কিন্তু সেটা না হয়ে উল্টোটাই হচ্ছে। সরকার খুশিমতো দেশ চালাচ্ছে। বাইরে কে কী বলছে, তা বিবেচনায় নেওয়ার গরজ নেই।
নতুন নির্বাচন কমিশনও সরকারের ইচ্ছাপূরণের যন্ত্র ছাড়া আর কিছু হবে বলে মনে হয় না। এর মধ্যে অনেকেই এটা বলেছেন যে রাষ্ট্রপতির আলোচনার উদ্যোগ লোকদেখানো বা নিয়ম রক্ষার। এর ফলে ভালো কিছু হবে না। এর আগেও দুবার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপের পর নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছিল।
কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ কমিশন এবং কে এম নূরুল হুদা কমিশন কি মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পেরেছে? এ দুই কমিশনের অধীন যে দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, তা নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। নির্বাচনব্যবস্থার যে ক্ষতি এই দুই কমিশনের সময় হয়েছে, তার তুলনা চলে না।
এবারও আগের থেকে আলাদা কিছু হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। ইসি নিয়ে ছি ছি এবার কমবে বলে মনে করার কোনো কারণ দেখা যায় না। এবার আগের দুই সংলাপের অভিজ্ঞতায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও বঙ্গভবনে যাওয়ার আগ্রহ কম। আগে দুবার যারা যে প্রস্তাব দিয়েছিল, তার কোনোটি বাস্তবায়ন হয়নি। দলগুলোর পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়, রাষ্ট্রপতি সব মনোযোগ দিয়ে শোনেন এবং তাঁর সীমাবদ্ধতার কথা সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে যথাযথ আপ্যায়ন ও ফটোসেশনের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটে সংলাপের। শেষ পর্যন্ত সরকার যা চায় তা-ই হয়। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে যে নামের তালিকা বঙ্গভবনে যায়, সেটাই রাষ্ট্রপতি অনুমোদন করেন। এবারও ব্যতিক্রম কিছু হবে না।
নির্বাচন কমিশন গঠনের ব্যাপারে সংবিধানে আইন করার কথা থাকলেও কোনো সরকারের আমলেই আইন করার বিষয়টি গুরুত্ব পায়নি। পুরোনো কমিশনের মেয়াদ শেষে নতুন কমিশন গঠনের সময় এলে আইনের কথা অনেকের মনে পড়ে। কিন্তু তখন সময়ের অজুহাতে তা এড়িয়ে যাওয়া হয়। একবার এড়িয়ে গেলেই পাঁচ বছর চিন্তামুক্ত।
প্রশ্ন হলো, ইসি গঠন নিয়ে এই উদাসীনতা, অবহেলা কিংবা দায়সারা ভাব আর কত দিন চলবে? কত দিন ক্ষমতাসীনদের ইচ্ছানির্ভর নির্বাচন কমিশন দিয়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা শক্তিশালী করার কাজ আমরা চালিয়ে যাব? এখানে বড় বিষয় হলো সরকারের সদিচ্ছা। সরকার চাইলে আইন করার জন্য সময় কোনো বাধা হতে পারে না। সব সরকারই চায় অনুগত নির্বাচন কমিশন। রাজনৈতিক দলগুলো তালগাছ নিজের ভাগে রেখে সালিস মানতে চায়। সে কারণেই আমাদের দেশে নির্বাচনকমিশন গঠনের জন্য সংবিধানে বর্ণিত আইন প্রণয়ন হয় না। সবার সঙ্গে কথা বলে নিজের মতো করে নির্বাচন কমিশন গঠনের এই ধারারও অবসান হওয়া দরকার।
নির্বাচন কমিশন গঠনের পর সমালোচনা আমাদের দেশে নতুন নয়। এটাও সত্য যে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন দেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় খুব সহজ কাজও নয়। আমাদের সমাজ রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত। কোনো জাতীয় ইস্যুতেই আমরা একমত হতে পারি না। ভিন্নমত পোষণ করা এবং কলহ-বিবাদে জড়িয়ে পড়াই যেন আমাদের জাতীয় বৈশিষ্ট্য। রাজনৈতিক জোট গঠিত হয় মূলত কিছু নির্দিষ্ট রাজনৈতিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সামনে রেখে। কিন্তু সেই জোটের মধ্যেও মতৈক্যের চেয়ে মতপার্থক্যের কথাই শোনা যায় বেশি। আমাদের দেশের রাজনীতিতে আস্থা-বিশ্বাসের সংকট এখন চরমে। শুধু ভিন্ন দলের প্রতি অবিশ্বাস বা অনাস্থা আছে তা নয়, এক দলের মধ্যেও এখন গ্রুপিং নিয়মিত ঘটনা। দ্বন্দ্ব-কোন্দলে রাজনীতির পরিবেশ বিষাক্ত।
এখন প্রশ্ন হলো, দেশের মানুষের প্রত্যাশামতো একটি ‘শক্তিশালী’ বা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠিত না হলে কি পরবর্তী নির্বাচনও বিতর্কিত হবে? একটি ভালো নির্বাচনের আশা কি দুরাশাই থেকে যাবে? ভোটাররা কি নির্ভয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন না? আইনগতভাবে নির্বাচন কমিশনের কিন্তু এখনো ‘শক্তি’ কম নয়। নির্বাচনের সময় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ অনেক কিছুই নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকে। কিন্তু নির্বাচন কমিশনকে কি কখনো তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ করতে দেখা গেছে? নির্বাচনী বিধিবিধান অমান্য করলে কারও প্রার্থিতা বাতিল করার সাহস আজ পর্যন্ত কোনো কমিশনেরই দেখা যায়নি। সরকারের সন্তুষ্টি বিধান করে চলার নির্দেশনা তো কাগজপত্রে থাকে না। তার পরও নতজানু হয়ে চলতে ভুল না করাটা কি অভ্যাস, না অন্য কিছু? এটা কি দুর্বল মেরুদণ্ডের ব্যক্তিত্বের কারণে হয়, নাকি এর পেছনে আরও কোনো প্রাপ্তির আশা থাকে?
এ প্রশ্নও অনেকের মনে আসে যে, একটি ভালো নির্বাচনের জন্য কি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন জরুরি, নাকি সরকারের সদিচ্ছাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ? ক্ষমতাসীনদের মন জুগিয়ে চলার কথা নয় কোনো সাংবিধানিক পদাধিকারী ব্যক্তির। তার পরও কেন কর্তার ইচ্ছায় কীর্তন হয়? এটা কেন মনে করা হয় যে সরকার না চাইলে কোনো নির্বাচন কমিশনই ভালো নির্বাচন নিশ্চিত করতে পারবে না?
নির্বাচন এক দলের খেলা নয়, নির্বাচনের মাঠে একাধিক দল বা একাধিক প্রতিদ্বন্দ্বী থাকবে, সেটাই রীতি। আর একাধিক ব্যক্তি লড়লেও জয় তো পাবেন একজনই। অর্থাৎ, নির্বাচনে হার-জিত বা জয়-পরাজয় একটি স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু আমাদের দেশে এখন ভোটে দাঁড়িয়ে সবাই শুধু জয় চায়। যেকোনো উপায়ে বিজয়ী হওয়ার উদগ্র বাসনাই প্রার্থীদের বেপরোয়া করে তোলে। সে জন্য শান্তি বিঘ্নিত হয়, মারামারি ও খুনোখুনি হয়। অর্থ ও মাস্তান ভোটের মাঠ নিয়ন্ত্রণ করায় সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার পথ সীমিত হয়ে যায়।
অর্থ ও মাস্তান সরকারি দলের পক্ষে বেশি থাকে বলে ভারসাম্য রক্ষা করা যায় না। আর নির্বাচন কমিশন সব বিষয়ে সাক্ষীগোপালের ভূমিকা পালন করায় নির্বাচনটাই শেষ পর্যন্ত তামাশায় পরিণত হয়।
নতুন বছরের শুরুতে আমাদের প্রতিজ্ঞা হোক—গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করে এমন নির্বাচনের আয়োজন করি, যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বীরা জয় কিংবা পরাজয় দুটোকেই স্বাভাবিকভাবে মেনে নেওয়ার মানসিকতা নিয়ে অংশ নেবেন। আমাদের সব রাজনৈতিক দলেরই হারার অভিজ্ঞতা আছে। এক নির্বাচনে হারা মানে সবকিছু শেষ হয়ে যাওয়া নয়। প্রমত্তা পদ্মা নদী শাসন করে এবং সব বাধা-ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আমরা যদি সেতু বানাতে পারি, তাহলে সৎ ও সাহসী কয়েকজন মানুষ বাছাই করে এমন একটি নির্বাচন কমিশন কেন গঠন করতে পারব না, যে কমিশন ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব’—এটা নিশ্চিত করতে পারবে না? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরবর্তী নির্বাচন কমিশন গঠন ও ভালো নির্বাচনের ব্যাপারে আন্তরিক সদিচ্ছা দেখালে নিশ্চয়ই আমরা এবার ভরসা রাখার মতো একটি নির্বাচন কমিশন পাওয়ার আশা আমরা করতে পারি।
বিভুরঞ্জন সরকার: সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
পর্দার নায়িকারা নিজেদের বয়স আড়ালে রাখা পছন্দ করেন। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম আজমেরী হক বাঁধন। প্রতিবছর নিজের জন্মদিনে জানান দেন তাঁর বয়স। গতকাল ছিল বাঁধনের ৪১তম জন্মদিন। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেই জানালেন এই তথ্য।
২ দিন আগে১০ বছরের বেশি সময় ধরে শোবিজে কাজ করছেন অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া। নাটকের পাশাপাশি ওটিটিতে দেখা গেছে তাঁকে। সরকারি অনুদানের ‘দেবী’ নামের একটি সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন। প্রশংসিত হলেও সিনেমায় আর দেখা মেলেনি তাঁর। ছোট পর্দাতেও অনেক দিন ধরে অনিয়মিত তিনি। এবার শবনম ফারিয়া হাজির হচ্ছেন নতুন পরিচয়ে। কমেডি রিয়েলিটি
২ দিন আগেআমাদের লোকসংস্কৃতির অন্যতম ঐতিহ্য যাত্রাপালা। গণমানুষের সংস্কৃতি হিসেবে বিবেচিত এই যাত্রাপালা নিয়ে শিল্পকলা একাডেমি আয়োজন করছে ‘যাত্রা উৎসব-২০২৪’। আগামী ১ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে শুরু হবে ৭ দিনব্যাপী এই উৎসব।
২ দিন আগে‘বঙ্গবন্ধু’ পদবি বিলীন হবে না। হতে পারে না। যেমনটি ‘দেশবন্ধু’ চিত্তরঞ্জন দাশের পদবি বিলীন হয়নি। ইতিহাসে এসব পদবি অম্লান ও অক্ষয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিত্ব ছিল অনন্যসাধারণ। আপনজনকে তো অবশ্যই, শত্রুপক্ষের লোকেরাও ব্যক্তিগত পর্যায়ে তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হতেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর উচ্চপদের
২ দিন আগে