জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলায় করোনার টিকাদান কেন্দ্র উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। সেখানে স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে টিকা নিতে আসা মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। গায়ে গা লাগিয়ে টিকা নিচ্ছেন নারী-পুরুষেরা। টিকা নিতে আসা মানুষের জন্য স্থাপন করা হয়নি টয়লেট। হাত ধোয়ার বেসিন থাকলেও তা ব্যবহারের অনুপযোগী। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখে টিকা প্রদান করতে সংশ্লিষ্টদের তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

গতকাল রোববার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবন সংলগ্ন টিকা প্রদান কেন্দ্রে দুইটি বুথ খোলা হয়েছে। নারীদের জন্য খোলা হয়নি আলাদা কোনো বুথ।

বুথকে ঘিরে টিকা নিতে আসা মানুষের ভিড় ছিল বেশি। টিকা নিতে আসা বাকিরা যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে জটলা করছিলেন। কিন্তু টিকা নিতে আসা মানুষ কোথায় অবস্থান করবে তার কোনো নির্দেশনা দেওয়া ছিল না। একজন আরেকজনের গায়ে গা লাগিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকার কার্ড স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে জমা দিচ্ছে। পরে সেই কার্ড দেখে স্বাস্থ্যকর্মীরা একে একে নাম ধরে টিকা দিচ্ছিলেন।

টিকা নিতে আসা নাপিতেরচর গ্রামের আকবর আলী বলেন, ‘টিকা নিতে এসে আবার না করোনায় আক্রান্ত হই, সেই চিন্তায় আছি।’ পাটনীপাড়া গ্রামের সোহেল বলেন, ‘টিকা কেন্দ্রে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। মানুষের ভিড় ঠেলে কোনো রকম টিকা নিয়েছি। এতে করোনা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’

চিনারচর গ্রামের বিলকিস বেগম বলেন, ‘শিশু সন্তান নিয়ে টিকা নিতে এসেছি। ভিড় ঠেলে টিকা নিতে পারলেও টিকাদান কেন্দ্রে নেই টয়লেট। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার পর্যন্ত ২ হাজার ৫৪৫ জনের নমুনা পরীক্ষাগারে পাঠালে তাঁদের মধ্যে ৩৯৮ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। গত শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর পর্যন্ত টিকা প্রদান করা হয়।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত পরিসংখ্যানবিদ সাইফুল ইসলাম জানান, এ উপজেলায় করোনা প্রতিষেধক টিকা প্রথম শুরু করা হয় গত ৭ ফেব্রুয়ারি। দ্বিতীয় দফায় শুরু করা হয়েছে গত ১২ জুলাই। গতকাল রোববার পর্যন্ত টিকার ১ম ডোজ দেওয়া হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার মানুষকে। টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন অন্তত ২৫ হাজার মানুষ।

করোনা নির্মূল, নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে মাঠে বিশৃঙ্খলা রোধে দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. রোকনুজ্জামান খান বলেন, ‘টিকাদান কেন্দ্রে স্বাস্থ্যবিধি না মানার কথা নয়। স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখে টিকা প্রদান করতে সংশ্লিষ্টদের তাগিদ দেওয়া হয়েছে।’

ইসলামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাজেদুর রহমান বলেন, ‘টিকাদান কেন্দ্রে শৃঙ্খলা ফিরাতে নিয়মিত পুলিশ পাঠানো হয়।’

করোনা নির্মূল, নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কমিটির সদস্যসচিব উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এ এ এম আবু তাহের বলেন, ‘টিকাদান কেন্দ্রে মানুষ বেশি হওয়ায় একটু ভিড় হতে পারে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই টিকা প্রদান কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।’

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহিদুর রহমান বলেন, ‘টিকাদান কেন্দ্রে স্বাস্থ্যবিধি না মানার বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’