গাছের নাম লায়লা-মজনু

চয়ন বিকাশ ভদ্র
প্রকাশ : ২৯ নভেম্বর ২০২২, ০৮: ৪৬

ঢাকার ওয়ারীর বলধা গার্ডেনের সিবিলি অংশ সবার জন্য উন্মুক্ত। এর প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকে সোজা এগিয়ে গেলে বাঁ দিকে চোখে পড়বে শঙ্খ নদ পুকুর। এই পুকুরের সিঁড়িতে কংক্রিটের টবে রয়েছে লায়লা-মজনুগাছ। নুহাশপল্লিতেও একটা লায়লা-মজনুগাছ আমি দেখেছি। সবার পরিচিত কিংবদন্তির এক জুটির নামে এই উদ্ভিদের নামকরণ করা হয়েছে। এ গাছের পাতার ওপরের দিক গাঢ় সবুজ। কিন্তু নিচের দিকটি রক্ত লাল। মূলত ওপর থেকে দেখলে সহজে বোঝাই যায় না, নিচের দিকটা অদ্ভুত রকম ভিন্ন রঙের! প্রকৃতিতে দুইরঙা এমন পাতা কখনো চোখে পড়ে না। পাতার কোন দিক মজনু আর কোন দিক লায়লা, তা নিয়ে স্থির সিদ্ধান্তে আসা যায়নি। সবুজ ও লাল অংশ ঠিক যেন ছায়ার মতো। এটিকে আমরা বন্ধন বলি। বন্ধন বা প্রেমের প্রতীক হিসেবে লাইলি-মজনুর কথা বলা হয়। সেই হিসেবে এই উদ্ভিদের নামকরণ হতে পারে।

গুল্মজাতীয় এ উদ্ভিদ এক থেকে দুই মিটার লম্বা হতে পারে। লায়লা-মজনুগাছের বৈজ্ঞানিক নাম এক্সকোকেরিয়া কোচিনকাইনেনসিস। এটি ইউফরবিয়েসি পরিবারের উদ্ভিদ। ইংরেজিতে এটি চায়নিজ ক্রোটন, ব্লাইন্ডনেস ট্রি, জাঙ্গল ফায়ার প্ল্যান্ট ইত্যাদি নামে পরিচিত। প্রজাতিক পদ কোচিনচাইনেন্সিস বলতে কোচিন-চায়নাকে বোঝায়, যা বর্তমানের ভিয়েতনাম, লাওস, কম্বোডিয়া প্রভৃতি অঞ্চলকে চিহ্নিত করে। পাতার সৌন্দর্যের কাছে এর ফুলের সৌন্দর্য হার মেনেছে। এর পাতার ঊর্ধ্ব ত্বক এবং এর সংলগ্ন প্যালিসেড টিস্যুতে ক্লোরোফিল থাকায় ওপরের পৃষ্ঠ সবুজ দেখায়। এর পাতার সংলগ্ন স্পঞ্জি টিস্যুতে লালচে বর্ণের রঞ্জক থাকায় নিচের পৃষ্ঠ লালচে দেখায়।

এ গাছের অনেক ইংরেজি নামের একটি হলো ব্লাইন্ডনেস ট্রি বা অন্ধত্ব গাছ। শব্দটি এসেছে লাতিন শব্দ এক্সকোকেরিয়া থেকে, যার অর্থ অন্ধ করা। গাছটির কষ বা ল্যাটেক্স চোখে লাগলে মানুষ অন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাই এমন নামকরণ। এই ডিটারপিন বিষ মৎস্যনাশক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। অনেকে একে উষ্ণ অঞ্চলের গৃহের গাছ, আলংকারিক গাছ হিসেবে ব্যবহার করে বাগান বা বাড়ি সজ্জার কাজে ব্যবহার করে।

লায়লা-মজনু গাছ ভারত উপমহাদেশ ও চীনের দেশীয় গাছ। তবে আফ্রিকা, মাদাগাস্কার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ায়ও এটি বিস্তার লাভ করেছে। লায়লা-মজনুগাছ সহজেই ইনডোরে রাখা যায়। মাঝে মাঝে রোদে দিলেই চলে। দুই বছর পরপর টব বদলে দিতে হয়। এ গাছের পাতায় রং তৈরি হয় অ্যান্থোসায়ানিনের উপস্থিতির কারণে। যেমনটা দেখা যায় শিবঝুল, কৈলাস বা মিষ্টি আলুর উদ্ভিদের পাতায়। এই রং ও কটু স্বাদযুক্ত বলে কীটপতঙ্গ দূরে রাখে।

ইনডোর প্ল্যান্ট হিসেবে ও বেড়া তৈরিতে লায়লা-মজনু উদ্ভিদের ব্যবহার রয়েছে। এই উদ্ভিদের বিষাক্ত কষ সফলভাবে চুলকানি ও একজিমায় বহুকাল আগে থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ক্ষতিকর জীবাণুর বিরুদ্ধে অ্যান্টিপ্যারাসাইট হিসেবে এবং রক্ত জমাট বাঁধার বিরুদ্ধে একে ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা যায়। কলম মাধ্যমে এর চাষ করা যায়। 

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ, ময়মনসিংহ।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আবু সাঈদকে ৪–৫ ঘণ্টা পরে হাসপাতালে নেওয়া হয়—শেখ হাসিনার দাবির সত্যতা কতটুকু

মেট্রোরেল থেকে আমলাদের বিদায়, অগ্রাধিকার প্রকৌশলীদের

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

বিমানবন্দরে সাংবাদিক নূরুল কবীরকে হয়রানির তদন্তের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ৩৫ কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত