অভিযানের আগে স্ত্রী-সন্তানের সঙ্গে শেষ কথা হাবিবুরের

পটুয়াখালী প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৭: ০৯
আপডেট : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৯: ৫৫

‘বাবা একটা অভিযানে যাইতেছি দোয়া কইরো। দায় দাবি রাইখো না। হায়াত মৌয়ত আল্লাহর হাতে। ভুল করলে ক্ষমা করে দিও বাবা।’ কথাগুলো বলেছিলেন বান্দরবানের রুমার দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে সেনাবাহিনীর সঙ্গে জেএসএস সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের গোলাগুলিতে নিহত সেনা সদস্য হাবিবুর রহমান (৫২)। গত বুধবার দুপুরে মোবাইল ফোনে কথাগুলো বলেন তাঁর বড় ছেলে হাসিবুর রহমানের (২২) সঙ্গে। একই সময় কথা বলেন তাঁর স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনের সঙ্গে। কে বা বুঝেছিলেন এই হয়তো তাঁর শেষ কথা।

গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ৩টায় চট্টগ্রাম সেনাকুঞ্জে প্রথম জানাজা শেষ করে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার যোগে তাঁর মরদেহ সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় পটুয়াখালী নিয়ে আসা হয়। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় তাঁর বাড়ির সামনের যুবকের মাঠে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। গাজীবাড়ি বায়তুল মামুর জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মনোয়ার হোসেন হুমায়দি জানাজায় ইমামতি করেন। পরে বাড়ির দক্ষিণ পূর্ব কোণে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়। নিহত হাবিবুর রহমানের বাবা-মা, স্ত্রী ও দুই ছেলে রয়েছে। এর মধ্যে ছোট ছেলেও সেনাবাহিনীর সৈনিক পদে কর্মরত আছেন।

জানা গেছে, হাবিবুর রহমান পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মহিপুরের লতিফপুর গ্রামের আবদুল মজিদ সরদারের ছেলে। পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। হাবিবুর রহমান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সিনিয়র ওয়ারেন্ট কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৯৯৯ সালে তিনি সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে যোগদান করেন। চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার জন্য খুব বেশি দেরি ছিল না তার এক বছরের কিছু বেশি সময় চাকরির মেয়াদ ছিল।

নিহত হাবিবুর রহমানের পটুয়াখালী শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বহালগাছিয়ায় বাড়ি করেছেন। তৈরি করা বাড়ির নাম দিয়েছিলেন ‘সেনা নিকেতন’। আর সেই বাড়ির উঠানেই এখন চলছে শোকের মাতম। স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে পুরো এলাকা।

নিহত হাবিবুর রহমানের বোন খাদিজা বেগম বলেন, ‘আমার ভাই আর ফিররা আইবো না। কী দোষ করছে আমার ভাই, আমার ভাইরে কিল্লাইজ্ঞা মারলো ওরা।’

নিহত হাবিবুর রহমানের বড় ছেলে হাসিবুর রহমান বলেন, ‘আব্বার সঙ্গে সব সময় কথা বলতে পারতাম না। সে যখন ফোন করত তখনই কথা বলতে পারতাম। মোবাইলে নেটওয়ার্ক সমস্যা ছিল। গত রাতে আব্বার সঙ্গে কথা হয়েছে। আব্বা বলছে কোনো ভুল করলে ক্ষমা করে দিও, একটা অভিযানে যাচ্ছি। এর পর আজ সকালে খবর আসলো বাবা আর নেই।’

ওই এলাকার বাসিন্দা সেলিম গাজী বলেন, ‘হাবিব ভাই ভালো মানুষ ছিলেন। বাড়িতে আসলে তাঁর ছেলেদের নিয়ে মসজিদে যেতেন। কিছুদিন আগে যখন বাড়িতে আসেন আমাদের সঙ্গে কত কথা বলে গেলেন। ওনার শূন্যতা আমরা এলাকাবাসী কখনো পূরণ করতে পারব না।’

উল্লেখ্য, সেনাবাহিনীর সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা গেছে, গত বুধবার রাতে বান্দরবানের রুমা জোনের একটি টহল দলের সঙ্গে সন্তু লারমা সমর্থিত জেএসএস মূল দলের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের গুলি বিনিময়ের ঘটনায় সেনাবাহিনীর সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার হাবিবুর রহমান নিহত হন। এ সময় জেএসএসের তিনজন সশস্ত্র সন্ত্রাসী নিহত হন। এ ছাড়া একজন সেনাসদস্য গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত