প্রকল্পের ৭০% লোপাট

মমিনুল ইসলাম বাবু, চিলমারী (কুড়িগ্রাম)
প্রকাশ : ০৪ জানুয়ারি ২০২৩, ১৩: ৪২

কুড়িগ্রামের চিলমারীতে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) প্রকল্পের প্রায় ১ কোটি ৪১ লাখ টাকার কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। কিছু ক্ষেত্রে কোনো কাজ না করেও পুরো বিল উত্তোলনের ঘটনা ঘটেছে।

উপজেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, চিলমারীতে ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩৩টি প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ১ কোটি ৪১ লাখ ৭৪ হাজার ১০ টাকা। এর মধ্যে বিআইডব্লিউটিএর পাইলট বিশ্রামাগার ভবনের সুরক্ষায় কাজ না করেই ৪ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হয়। একই চিত্র দেখা গেছে চিলমারী নৌবন্দরের যাত্রীছাউনিতে ২ লাখ টাকার মাটি ভরাটের কাজে।

রমনা ইউনিয়নে রাস্তা সংস্কার ও দুটি উচ্চবিদ্যালয় মেরামত প্রকল্পের কাজও শেষ হয়নি। নামমাত্র কাজ দেখিয়ে টাকা লোপাট করা হয়েছে। চিলমারী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশিক ইকবাল বলেন, প্রায় ৯ লাখ টাকার কাজের ৩০ শতাংশও হয়নি।

কাজ সম্পন্ন করা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান আজাদ বলেন, ‘কাজ করেই বিল নিয়েছি। প্রায় ৯ লাখ টাকার কাজ ঠিকাদারের কাছ থেকে কিনেছি ২ লাখ টাকায়। ভ্যাট ও ইনকাম ট্যাক্স বাদ দিলে থাকে কত? দর কম ধরা ছিল। অথচ নির্মাণসামগ্রীর বাজারমূল্য বেশি। এসব বাস্তবতার হিসাব করলে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকার কাজ হয়েছে। এটাকে অনিয়ম বলার সুযোগ নেই।’
থানাহাট পাইলট সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেফাউন নাহার বলেন, অর্থবছর শেষ হলেও কাজ না করেই পুরো অর্থ লোপাট করা হয়েছে।

জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি এ কে এম সামিউল হক নান্টু বলেন, সরকারি কাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে দুর্নীতি আর অনিয়ম হচ্ছে। ফলে সরকারের নেওয়া উন্নয়ন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এসবের প্রতিকার প্রয়োজন।

যোগাযোগ করা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ঢালাওভাবে করা সব অভিযোগ সঠিক নয়। তিনটি প্রকল্পের কাজ শেষ না করে ৬ লাখ টাকার বিল উত্তোলনের ঘটনা নজরে এসেছে। ইতিমধ্যে ওই টাকা ফেরত দিতে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর বাইরেও কিছু কাজ অসম্পূর্ণ রয়েছে। বিল উত্তোলিত হলেও ঠিকাদারের কাছ থেকে অসম্পূর্ণ কাজের টাকার চেক প্রকৌশল বিভাগে জমা আছে। কাজ শেষ হলে পুরো টাকা পরিশোধ করা হবে।’

ইউএনও আরও বলেন, ‘এডিপি বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আর সদস্যসচিব উপজেলা প্রকৌশলী। সেখানে আমি একজন সদস্যমাত্র। কাজেই এর দায়ভার আমার ওপর বর্তায় না।’

জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী ফিরোজুর রহমান বলেন, ‘আমি নতুন এসেছি। এসব কাজের বিষয়ে কিছু জানা নেই। খোঁজখবর নেওয়ার চেষ্টা করছি।’

এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান রুকুনুজ্জামান শাহীন জানান, সব অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত