‘সবকিছুর দাম বাড়ে খালি মজুরি বাড়ে না’

কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৫ মার্চ ২০২২, ০৯: ৩৩
আপডেট : ২৫ মার্চ ২০২২, ১৪: ০১

জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার দিনমজুর মজিদ মিয়া (৪৫)। তাঁর আয়েই চলে সংসার। তিনি বলেন, ছয় সদস্যের সংসার তাঁর আয়েই চলে। সারা দিনের কাজের মজুরি পান ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। সেই টাকা দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। কাজ না থাকলে ধারদেনা করতে হয়। যে হারে তেল-সবজির দাম বাড়ছে, তাতে বেঁচে থাকায় দায় হয়ে পড়েছে। আক্ষেপ করে বলেন, সবকিছুর দাম বাড়ে, খালি মজুরি বাড়ে না।

এক বছর আগে তিনি বোতলজাত ভোজ্যতেল কিনলেও এখন দাম প্রায় দ্বিগুণ হওয়ায় খোলা তেলই কিনছেন। শুধু মজিদ মিয়া নয়। ভোজ্যতেল, সবজি আর নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তাঁর মতো কালাই উপজেলার হাজারো মানুষ।

গতকাল বৃহস্পতিবার উপজেলার সবচেয়ে বড় ঐতিহ্যবাহী পুনট হাটে দেখা গেছে, খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ টাকা কেজি। বোতলজাত তেল প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ টাকায়। নির্ধারিত দামের চেয়েও বেশিতে বিক্রি হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

প্যাকেটজাত আটা প্রতি কেজি ৩৫ টাকা ও খোলা আটা ৩৪ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। চিনি প্রতি কেজি ৮০, প্রতি কেজি মাঝারি মসুর ডাল ৯৫-১০০, প্রতি কেজি ছোলা বুট ৭০-৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এক সপ্তাহের ব্যবধানের সবজিতে ১৫-২০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। এক সপ্তাহ আগে ছিল পেঁয়াজ দেশি প্রতি কেজি ৪০, বিদেশি ৩০, বেগুন ৪০, পটল ৮০, করলা ৮০, ঢ্যাঁড়স ১০০, শসা ৩৫-৫০, টমেটো ৩০, কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ৮০ টাকায় বিক্রি হয়।

বর্তমানে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৩৫ টাকা, বিদেশি ২৫, বেগুন ৩০, পটল ৬০, করলা ৬০, ঢ্যাঁড়স ৮০, শসা ৩৫-৫০, টমেটো ২০, কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কাঁচাবাজারে আসা ক্রেতা হাবিবুল হাসান স্বপন বলেন, ‘দিন দিন সবকিছুর দাম বাড়ে, কিন্তু আয় রোজগার বাড়ে না। শাক-সবজির ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। গরুর মাংস প্রতি কেজি ৬০০ টাকা বিক্রি করছে দেখে মুরগি কিনে নিয়ে বাড়ি যাচ্ছি।’

পরিবারের ৪ জন সদস্য। তাঁর আয়ে সংসার চলে। সারা দিনে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা রোজগার করেন। বাধ্য হয়ে ধার করে ৫০০ টাকা খরচ করেছেন। দিন দিন যে হারে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, এখন সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। বাজার করতে এসে এমন কথা বলেন ব্যাটারিচালিত অটো ভ্যানচালক রুবেল হোসেন।

ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় খেটে খাওয়া মানুষ রয়েছেন বিপদে। অপরদিকে দোকানে মূল্যতালিকা টানানোর কথা থাকলেও ব্যবসায়ীরা তা মানছেন না। ফলে প্রতিদিনই দামের পার্থক্য দেখতে হয় সাধারণ ক্রেতাদের।

এদিকে দাম কিছুটা নাগালে থাকায় ক্রেতারা ব্রয়লার মুরগি এবং ডিম কিনছেন বেশি। ব্রয়লার প্রতি কেজি ১৫০ টাকা, সোনালি মুরগি ২৬০ টাকা ও দেশি ৩৫০-৪৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর ফার্মের ডিম বিক্রি হচ্ছে প্রতি হালি ৩৫-৪০ টাকায়।

উপজেলার খুচরা সবজি ব্যবসায়ী আমিরুল ইসলাম বলেন, প্রতিনিয়ত বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। তবে এই সপ্তাহে কাঁচামালের দাম কিছুটা কমেছে। আমরা বেশি দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করি। এ কারণে সব সময় ক্রেতাদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়।

মাছ বিক্রেতা বাবুল চন্দ্র মালী বলেন, প্রতি কেজি রুই মাছ ২২ টাকা, সিলভার কার্প ১৫০, মাগুর মাছ ৫০০-৫৫০, শিং মাছ ৩৫০, কই মাছ ২০০, পাঙাশ মাছ ১১০, তেলাপিয়া ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

জয়পুরহাট জেলা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ফজলে এলাহী বলেন, বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। প্রত্যেক দোকান বা প্রতিষ্ঠানে পণ্যের মূল্য তালিকা সহজে দৃশ্যমান স্থানে প্রদর্শন করতে হবে। রমজান মাস উপলক্ষে বাজার মনিটরিং আরও জোরদার করা হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত