কুয়াশার ভেদ করে তখনো কাপ্তাইয়ে পুব আকাশে সূর্য ওঠেনি। এর মধ্যেই রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে জড়ো হয়েছেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ২০০ ম্যারাথন প্রতিযোগী। নারী-পুরুষ, শিশুসহ ৫০ বছরের বেশি বয়সী প্রতিযোগীও ছিলের এই দলে। তাঁদের ১০ কিলোমিটার এবং হাফ ম্যারাথন ২১ দশমিক ১ কিমি দৌড়ে অংশ নেওয়া।

‘চেজ কাপ্তাই হাফ ম্যারাথন’ নামে এই প্রতিযোগিতা গতকাল শুক্রবার কাপ্তাইয়ে অনুষ্ঠিত হয়। ‘সেভ ওয়াইল্ড লাইফ, সেভ নেচার’ স্লোগানে এই ইভেন্টের আয়োজন করে চেজ ট্র্যাক। কাপ্তাইয়ের শিলছড়ি ৮ আনসার ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর এলাকায় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। আয়োজক সংস্থা চেজ ট্র্যাকের কর্ণধার নাজিম শাহেদ বলেন, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে এই ম্যারাথনের আয়োজন করা হয়েছে।

গতকাল সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে আনসার সদর দপ্তরের সামনে থেকে প্রথমে হাফ ম্যারাথন প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এতে অংশ নেন ৭০ প্রতিযোগী। এতে চ্যাম্পিয়ন হন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক মোহাম্মদ রাজন মিয়া। তিনি সময় নেন ১ ঘণ্টা ২৮ মিনিট ১০ সেকেন্ড। এই বিভাগে প্রথম রানার আপ হন গাজীপুর সদরের আব্দুল মমিন ও দ্বিতীয় রানার আপ হন এ এফ এম ইমামুল হক বাপ্পি।

এই ইভেন্টে মহিলা দলে ২ ঘণ্টা ১১ মিনিট ৩৯ সেকেন্ড সময় নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হন বগুড়ার সান্তাহারের মেয়ে মৌসুমি আক্তার এপি। এতে প্রথম রানার আপ হন শিল্পী জান্নাত এবং দ্বিতীয় রানার আপ হন আইরিন আক্তার।

প্রতিযোগিতা শেষে রাজন মিয়া জানান, ‘২০১৩ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা অ্যাথলেট ছিলাম। আবার ২০২১ সালে এসে দৌড় শুরু করি। জীবন যাপনে সুস্থ, সুন্দর ও কর্মঠ থাকার জন্য এবং ডাক্তারের কাছে না যাওয়ার জন্য দৌড়াই।’

অপরদিকে সকাল ৬টা ৪৯ মিনিটে আনসার ক্যাম্প থেকে ১০ কিলোমিটার ম্যারাথনে দৌড় শুরু করেন ১৩০ জন। এতে ৩৮ মিনিট ২২ সেকেন্ড সময় নিয়ে সিলেট কুলাউড়ার আশরাফুল আলম চ্যাম্পিয়ন হন। এই বিভাগে প্রথম রানার আপ হন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া থেকে আসা মঈনুল আহমদ ও দ্বিতীয় রানার আপ হন চট্টগ্রামের টাইগারপাস এলাকার শেখ নাহিদ। এই ইভেন্টে মহিলা দলে ৫৭ মিনিট সময় নিয়ে প্রথম হন শবনম আক্তার। এতে প্রথম রানার আপ হন মুবি সূত্রধর ও দ্বিতীয় রানার আপ হন কিশোরগঞ্জের মেয়ে জান্নাত নাহার বীথি।

এ ছাড়া পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সীদের ১০ কিলোমিটার ইভেন্টে ১ ঘণ্টা ১৭ মিনিট ৪৪ সেকেন্ড সময় নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হন সাইফুল আক্তার। এতে প্রথম রানার আপ হন জেসমিন আক্তার ও দ্বিতীয় রানার আপ হন এম ডি এ সালাম। এ ছাড়া পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সীদের ২১ কিলোমিটার ইভেন্টে ২ ঘণ্টা ৩৭ মিনিট ২১ সেকেন্ড সময় নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হন মো. আব্দুল আল রশিদ। এতে প্রথম রানার আপ হন মো. দিদারুল ইসলাম।

ম্যারাথনে অংশ নেওয়া চিকিৎসক ডা. জাহাঙ্গীর কবির জানান, ‘তরুণ সমাজকে মাদক, সন্ত্রাস থেকে দূরে থাকতে হলে এই ম্যারাথন প্রতিযোগিতার বিকল্প নেই। সুস্থ থাকতে হলে অবশ্যই দৌড়াতে হবে।’

ম্যারাথনে অংশ নেওয়া কাপ্তাই থানার ওসি মো. নাসির উদ্দীন বলেন, ‘মাদক, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসসহ খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখতে এই প্রতিযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। শরীর এবং মনকে সুস্থ রাখতে মানুষের হাঁটা বা দৌড়ের বিকল্প নেই।’

রাজধানী উত্তরা থেকে ম্যারাথনে অংশ নেওয়া আয়েশা পারভিন, বসুন্ধরার খাদিজা বাপ্পি ও জেসমিন আক্তার জানান, সচেতনতা সৃষ্টি ও সুস্থ থাকার জন্য পরবর্তী প্রজন্মকে উৎসাহিত করতে এবং পরিবেশ সংরক্ষণ রাখতে তাঁরা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন।

শিলছড়ি আনসার ক্যাম্প মাঠে বিজয়ীদের মধ্যে প্রাইজমানি বিতরণ করেন কাপ্তাই থানার ওসি মো. নাসির উদ্দীন, জে কে লাইফ স্টাইলের প্রতিষ্ঠাতা ডা. মো. জাহাঙ্গীর কবির প্রমুখ