জলবায়ু পরিবর্তনে ডেঙ্গু এখন বছরব্যাপী রোগ

রাশেদ রাব্বি, ঢাকা
প্রকাশ : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০: ০২

এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বর এখন মৌসুমি রোগ থেকে বছরব্যাপী রোগে পরিণত হয়েছে। চলতি বছরের ১২ মাসের ১১ মাসেই রোগটিতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রোববার পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে ৩ লাখ ২০ হাজার ৪৬০ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৬৯৭ জনের।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু সারা বছর থাকার প্রধান কারণ জলবায়ু পরিবর্তন এবং অপরিকল্পিত নগরায়ণ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ইরেটিক রেইনফল (কখনো অতিবৃষ্টি, কখনো অনাবৃষ্টি, অসময়ে বৃষ্টিপাত), তাপমাত্রা ও বাতাসের আর্দ্রতা বেড়েছে। এ ধরনের আবহাওয়া ডেঙ্গুর জীবাণু বাহক এডিস মশার প্রজননের জন্য সহায়ক। এই ধারা অব্যাহত থাকলে অচিরেই দেশে এডিস মশাবাহিত জিকা ও ইয়েলো ফিভারের মতো ভয়াবহ রোগের সংক্রমণ ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা তাঁদের।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড হেলথ প্রমোশন ইউনিটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. ইকবাল কবীর বলেন, ২০০০ সাল থেকে ডেঙ্গুর প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে।

এর প্রধান কারণ জলবায়ু পরিবর্তন, বিশেষ করে ‘ইরেটিক রেইনফল’। আগে দুই থেকে তিন মাসে টানা বৃষ্টি হতো, বর্তমানে সারা বছরই কম-বেশি বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহক এডিস মশা দীর্ঘ সময় ধরে প্রজননের সুযোগ পাচ্ছে।

দেশে শূন্য দশমিক ১ ডিগ্রি তাপমাত্রা বাড়লে এডিস মশার প্রজননক্ষমতা শতগুণ বৃদ্ধি পায় জানিয়ে ইকবাল কবীর বলেন, ‘তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে ও বাতাসের আর্দ্রতা যদি ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ থাকে, তাহলে এডিস মশার সর্বোচ্চ প্রজনন সুবিধা ভোগ করে, যা কয়েক বছর ধরে আমাদের দেশে বিরাজ করছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অপরিকল্পিত নগরায়ণ।’

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত এই পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলে অচিরেই দেশে জিকা এবং ইয়েলা ফিভারের মতো জটিল মশাবাহিত রোগ জায়গা করে নেবে বলেও সতর্ক করেন অধ্যাপক ইকবাল। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কেস বেস সার্ভেল্যান্সে জোর দিতে হবে। যা এখনো শুরু হয়নি। যেখানে কেস শুরু হবে, সেখানেই কোকিলের মতো আইসোলেশন করে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। এটিকে ছড়াতে দেওয়া যাবে না। হাসপাতালভিত্তিক তথ্য ও নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিতে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যে দেখা যায়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আগস্ট, সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবর মাসে ডেঙ্গুর প্রকোপ সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। আগস্ট মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয় ৭১ হাজার ৯৭৬ জন; সেপ্টেম্বর মাসে ৭৯ হাজার ৫৯৮ জন এবং অক্টোবর মাসে ৬৭ হাজার ৭৬৯ জন। ২০২২ সালে এটি ছিল যথাক্রমে ৩ হাজার ৫২১ জন, ৯ হাজার ৯১১ জন এবং ২১ হাজার ৯৩২ জন। 
চলতি বছর দেশের মানুষ ডেঙ্গুর চারটি ধরনের সংক্রমণের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ডেন-২-এর প্রভাব ছিল সবচেয়ে বেশি, মোট আক্রান্তের ৬৮ দশমিক ২ শতাংশই আক্রান্ত হয়েছে এই ধরনটিতে। এ ছাড়া ডেন-৩-এ আক্রান্ত হয়েছে ২৫ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ; ডেন-১-এ আক্রান্ত হয়েছে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ এবং ডেন ২ + ৩-এ আক্রান্ত হয়েছে ২ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘বৈশ্বিক উষ্ণায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে আমাদের দেশে ডেঙ্গুর মতো এনটিডি (ন্যাগলেক্টেড ট্রপিক্যাল ডিজিজ) রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। আগামী দিলগুলোত এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগ বছরব্যাপী রোগে পরিণত হবে, যা দেশের সামগ্রিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার জন্য হুমকি। এ ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত হ্রাস এবং এডিস নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে না পারলে এই ভয়াবহতা থেকে মুক্তি মিলবে না।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত