গরম পড়তেই বাড়ছে শিশুর জ্বর, শ্বাসকষ্ট

আজাদুল আদনান, ঢাকা
প্রকাশ : ২২ মার্চ ২০২২, ০৭: ০৪

জন্মের পর কোনো জটিলতা না থাকলেও চার দিন ধরে শ্বাসকষ্ট ও তীব্র জ্বরে ভুগছে আট দিনের সিজদা। শুরুতে পাবনার একটি হাসপাতালে নেওয়া হলে দ্রুত তাকে ঢাকায় নিতে বলা হয়। পরে গত বৃহস্পতিবার ঢাকা শিশু হাসপাতালে আনা হলেও প্রথম দিনেই নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা ইউনিট (এনআইসিইউ) পায়নি। গতকাল সোমবার এনআইসিইউতে নেওয়া হয় সিজদাকে।

অন্যদিকে জন্মের পর থেকেই ঠান্ডা জ্বরের পাশাপাশি শ্বাসকষ্টে ভুগছে তিন বছরের নাফিসা। শ্বাসকষ্ট কখনো কমছে, কখনো বাড়ছে। শুরুতে বাড়ির পাশের ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে খেলেও ক্রমেই সেটি স্থায়ী রূপ নেয়। ফলে অক্সিজেনের প্রয়োজন হলে নেওয়া হয় রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে। বর্তমানে আরেক রোগীর সঙ্গে শয্যা ভাগ করে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে বলে জানান নাফিসার মা আবিদা বেগম।

শুধু এই দুই শিশু নয়, শ্বাসকষ্ট, জ্বর, ডায়রিয়াসহ ঠান্ডাজনিত রোগ নিয়ে প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিশুদের নিয়ে রাজধানীতে ছুটে আসছেন অভিভাবকেরা। গত আড়াই মাস ধরে এসব হাসপাতালে শিশু রোগীর ভিড় লেগেই থাকছে। বছরে শুরুতে এ জন্য শীতকে কারণ হিসেবে বলা হলেও মার্চে এসে একই অবস্থার জন্য আবহাওয়ার পরিবর্তন, করোনার স্বাভাবিক পরিস্থিতি ও পরিবারের অসচেতনতা দায়ী করছেন চিকিসৎকেরা।

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল মান্নান আজকের পত্রিকাকে বলেন, গরমের সময়ে দিনে প্রচণ্ড তাপ থাকলেও রাতে ঠান্ডা পড়ে। ফলে এটি বয়স্ক ও শিশুদের ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে। কারণ, তারা রাতে কাঁথা গায়ে দেন না, বাচ্চারাও সবকিছু ফেলে দেয়। যার কারণে এটি ইনফ্লুয়েঞ্জা হয়ে যায়। একই সঙ্গে যাদের অ্যাজমা, অ্যালার্জির প্রবণতা আছে, তাঁরাও এটির শিকার হচ্ছেন।

অধ্যাপক মান্নান বলেন, বর্ষার দিনেও দেখা যায় শিশুদের সর্দি, কাশি হচ্ছে। প্রচণ্ড গরমের পরে যখন কয়েক দিন ধরে বৃষ্টি হয়, তখনো বাচ্চাদের হাঁচি-কাশি বেড়ে যায়। পরিবেশ ঠান্ডা হলেও তারা ফ্যান চালায়। ফলে সব সময়ই আমাদের বাচ্চা ও বয়স্কদের ঠান্ডা লেগে থাকে। করোনার সঙ্গে এর সম্পর্ক নেই। উন্নত দেশে শীত শুরু হওয়ার আগে ও গরমে ফ্লুর টিকা দেওয়া হয়। তারা এটি ছাড়া চলতে পারে না। তবে এর নেতিবাচক দিক আছে। এই টিকা দেওয়ায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে সেসব দেশে করোনার প্রকোপ সবচেয়ে বেশি।

শিশুদের চিকিৎসায় দেশের একমাত্র বিশেষায়িত শিশু হাসপাতালে নির্ধারিত শয্যার বেশি রোগী ভর্তি করা হয় না। এই হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে প্রায় দেড় হাজার রোগী বহির্বিভাগে সেবা নিতে আসছে। যাদের অধিকাংশই নাক, কান, গলা, মেডিসিনসহ ঠান্ডাজনিত রোগী। সম্প্রতি জ্বর ও শ্বাসকষ্টের রোগী পরিমাণ আগের তুলনায় বেড়েছে। অনেকের প্রয়োজন হচ্ছে অক্সিজেনের। আছে ডায়রিয়ার প্রকোপও।

গতকাল সোমবার শিশু হাসপাতালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিশু নিয়ে আসছেন অভিভাবকেরা। অনেকের এনআইসিইউ প্রয়োজন হলেও শয্যা সংকটে দিতে পারছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ফলে বাধ্য হয়ে অন্য হাসপাতালে যেতে হচ্ছে।

সিজদার মা ঈশিতা আক্তার আজকের পত্রিকাকে বলেন, জন্মের চার দিন পর ঠান্ডা লাগা শুরু হয়। একপর্যায়ে শ্বাস নিতে খুবই সমস্যা হচ্ছিল। দ্রুত প্রাইভেট একটি হাসপাতালে নেওয়া হলে অবস্থা গুরুতর বলে এখানে পাঠায়।

শিশু হাসপাতালের তিন নম্বর ওয়ার্ডে স্ক্যাবুতে ২৮টি শয্যা। বর্তমানে রোগীদের অধিকাংশই ঠান্ডাজনিত কারণে ভর্তি। খালি নেই কোনো এনআইসিইউ। দায়িত্বরত চিকিৎসক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তন হওয়ার প্রভাব পড়ছে। একই সঙ্গে অভিভাবকদের অসচেতনতা রয়েছে। অনেকে এখনো বাচ্চাদের ভারী জামা পড়াচ্ছেন, ভাবছেন বাচ্চার ঠান্ডা লাগবে, অথচ এতে করে বাচ্চা ঘেমে যাচ্ছে, অসুস্থ হচ্ছে। অনেকের জ্বর হচ্ছে, শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাচ্ছে। অভিভাবকদের সতর্ক হওয়ার বিকল্প নেই।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ৭৫টি শয্যা। যেখানে ভর্তি শতাধিক শিশু। চলতি বছরের শুরু থেকেই রোগীদের চাপ রয়েছে বলে জানালেন দায়িত্বরত চিকিৎসক-নার্সরা। জানুয়ারিতে ঠান্ডার কারণে বেড়েছিল। ফেব্রুয়ারিতে সেটি কিছুটা স্থিতিশীল হয়। চলতি মাস থেকে আবার তীব্র গরমে শিশুদের নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে। ভর্তি শিশুদের অধিকাংশই ডায়রিয়া ও শ্বাসতন্ত্রের রোগী। জায়গা না হওয়ায় একই শয্যায় দুই থেকে তিনজন রোগীও রাখা হয়েছে।

এদিকে দেশের সবচেয়ে বড় চিকিৎসা কেন্দ্র ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চারটি ওয়ার্ড মিলে শিশুদের চিকিৎসায় শয্যা মাত্র ৭০টি। কিন্তু রোগী প্রায় তিনগুণ। ওয়ার্ডের বাইরে বারান্দায় অনেকে চিকিৎসা নিচ্ছে।

ঢামেক হাসপাতালের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) আশরাফুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের এখানে সব সময় ধারণ ক্ষমতার দু-তিন গুণের বেশি রোগী থাকে। করোনার উচ্চ মাত্রার সময়ে অনেকে ঘর থেকে বের হননি। বাচ্চারাও ঘরে ছিল। অনেকের বাচ্চা অসুস্থ হলেও নিজের মতো করে চিকিৎসা দিয়েছেন। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় হাসপাতালে আসার সংখ্যা বেড়েছে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত