মামুনুর রশীদ
আজ লিপ ইয়ার, অর্থাৎ অধিবর্ষ। চার বছর পর পর ফেব্রুয়ারি মাসটি একটা দিন বেশি নিয়ে আসে। এই দিনেই আমার জন্ম। ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসটাও লিপ ইয়ারে ছিল। সেই মাসে কক্ষপথে ঘুরতে ঘুরতে পৃথিবীরও এক দিন বয়স বেড়ে গিয়েছিল। হিসাব করে দেখেছি, তখন আমার চার বছর বয়স। ‘বাপের বাড়িতে’ আমার মায়ের ছিল অবাধ যাতায়াত। মামাবাড়িতে ছিলাম তখন। দাঁতের ব্যথা হয়েছিল। দাঁতের ব্যথার উপশম ঘটাতে গিয়ে মা আমাকে কোলে করে এবাড়ি-ওবাড়ি ঘুরছিল। একসময় নিয়ে এসেছিল গ্রামের জরাজীর্ণ প্রাইমারি স্কুলটির সামনে। হঠাৎ করে সেই প্রাইমারি স্কুল দপ করে জ্বলে উঠেছিল, যখন স্লোগানে স্লোগানে চারদিক মুখরিত। এখনো মনে আছে, আমার ছোট মামা চোঙা মুখে নিয়ে স্লোগান দিচ্ছিলেন—‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’, ‘নুরুল আমিনের কল্লা চাই’।
আমার দাঁতের ব্যথার কতটা উপশম হয়েছিল জানি না, তবে স্মৃতিতে যে বড় একটা আঁক কেটেছিল, তাতে সন্দেহ নেই। নইলে এত বছর মস্তিষ্ক তা মনে রাখার কোনো কারণ নেই। বরং এর পরের স্মৃতিগুলো অনেকটাই ঝাপসা। সে সময় নির্বাচন হয়েছিল চুয়ান্ন সালে। তা নিয়ে গ্রামবাংলায় ঝড় উঠেছিল। তখন আমি ক্লাস টুয়ের ছাত্র। বহু দূর থেকে মওলানা ভাসানীর কণ্ঠস্বর শুনতে পেয়েছিলাম। বাড়িতে জ্বালানি খড়ির ওপর দাঁড়িয়ে একটা গ্লাস মুখে নিয়ে ওই রকম বক্তৃতা দেওয়ার চেষ্টা করছিলাম একদিন। আমার ছোট বোন ও ভাইটা ছিল দর্শক-শ্রোতা।
তারপর হলো কাগমারী সম্মেলন, ১৯৫৭ সালে। বয়স ৯ বছর। খুব ইচ্ছা করত, যদি যেতে পারতাম...! কিন্তু পারিনি। তখন খুব বন্যা হতো, দুর্ভিক্ষও হতো। রেশনের চাল খেতে হতো। সেই সঙ্গে কখনো একবেলা রুটি। এমনও বন্যা হতো যে বাড়ি-ঘর ছেড়ে নৌকায় থাকতে হতো। এর মধ্যেই ১৯৫৮ সালে মার্শাল ল এসে গেল। আইয়ুব খান প্রেসিডেন্ট। নিষ্ঠুর সেই শাসন। যাঁরা রাজনীতি করতেন, তাঁদের চাবুক মারা হতো। জেল তো রাজনীতিবিদদের জন্য ছিল ডাল-ভাত।
রাষ্ট্রভাষাটা উর্দু করতে পারেনি, কিন্তু সিলেবাসে উর্দু ছিল বাধ্যতামূলক বিষয়। নানাভাবে উর্দু পড়ার চাপ। আমরা পড়তে চাইতাম না। মনে হতো, অত্যাচারী শাসকগোষ্ঠীর ভাষা উর্দু। ইংরেজিটাই রয়ে গিয়েছিল রাষ্ট্রভাষা হিসেবে। অফিস-আদালতে সর্বত্রই ইংরেজি। উচ্চমাধ্যমিক থেকে মাস্টার্স, চিকিৎসাবিদ্যা, প্রকৌশলবিদ্যা, আইন—সর্বত্রই ইংরেজি। ইংরেজি আর উর্দুর এই দাপটে বাঙালিদের মধ্যে একটা নতুন সংস্কৃতির সূচনা হতে শুরু করেছিল। একুশে ফেব্রুয়ারির প্রভাতফেরির কলেবর বাড়তে থাকল। একেবারেই নগ্নপদে ভোরে শহীদ মিনারে যাওয়ার রেওয়াজ শুরু হয়। সামরিক শাসক, তাদের অনুগত রাজনীতিকেরা নিপীড়ন বাড়িয়ে দিয়েছিল।
যতই নিপীড়ন বাড়ে, ততই বাঙালির সংস্কৃতি চিন্তার পরিধিও বাড়তে থাকে।
কারাগারে রাজনৈতিক নেতৃত্ব, কিন্তু তাদের কণ্ঠস্বর কারাগারের চার দেওয়াল ভেদ করে বাইরে এসে পড়ছিল। দিনে দিনে যতই দুঃশাসন বাড়ছিল, ততই আন্দোলনও বেগবান হচ্ছিল। বড় বড় কৃষক সমাবেশ হচ্ছিল। শ্রমিকেরা সংগঠিত হচ্ছিলেন। ছাত্ররা একেকজন অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মতো জ্বলছিল। একদিকে পাকিস্তানের দুই অংশের বৈষম্য, শোষণ, অন্যদিকে সাংস্কৃতিক সংকোচন—এসবের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যাচ্ছিল ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন।
প্রতি একুশে ফেব্রুয়ারিতে গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত একুশে সংকলন ছাপা হতো। সেসবেও থাকত কালজয়ী সব কবিতা। নাট্যপ্রিয় বাঙালির নাট্যাভিনয়ে ছিল ১৮৭৬ সালের কালাকানুন। পুলিশের সেনসর নিয়ে অভিনয় করতে হতো, তা—ও পুলিশের একজন সাব-ইন্সপেক্টরের কর্তৃত্বে। শুধু কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে নাটক করা যেত, তা—ও ছাত্র-শিক্ষকদের গায়ের জোরে। ক্লাবের বা পাড়া-মহল্লার নাটকের ওপরও খবরদারি চলত—রবীন্দ্রনাথ চলবে না, নজরুলের জ্বালাময়ী গানও চলবে না। এর বিরুদ্ধেও আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। এর মধ্যে পয়লা বৈশাখ নিয়েও নেতিবাচক কত কথা! কিন্তু মধ্যবিত্তের চেতনা তখন বাঙালি সংস্কৃতির পক্ষে। আবিষ্কৃত হচ্ছিল অতীতের সব আন্দোলন। সূর্য সেন, তিতুমীর তখন বাঙালির নায়ক। প্রীতিলতার আত্মত্যাগ তখন গর্বের বিষয়। এমন এক সময়েই সংগঠিত হয়েছিল উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান—ছাত্ররা যেখানে মূল শক্তি। বিভিন্ন আদর্শের ছাত্রছাত্রীরা তখন ঐক্যবদ্ধ হয় এক জায়গায়।
একটা সময় শাসকের সব অস্ত্র ব্যর্থ হওয়ার পর জারি করা হয়েছিল কারফিউ। কারফিউ কিছু প্রাণনাশ করেছিল বটে, কিন্তু বাঙালি সেই কারফিউ ভেঙে ফেলেছিল অমিত সাহসে। রাজবন্দীরা মুক্ত হয়েছিলেন। একটা নির্বাচন হয়েছিল বটে, কিন্তু তাতেও জিতেছিল বাঙালিরা। দুর্দমনীয় বাঙালির সামনে শেষ পরীক্ষা ছিল সশস্ত্র আক্রমণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। সেই যুদ্ধেও জয়ী হলো বাঙালিরা।
তারপর স্বাধীন দেশে বাংলা ভাষাকে সর্বস্তরে প্রয়োগের ঘোষণা হলো। কিন্তু রয়ে গিয়েছিল একটা বড় ষড়যন্ত্র। ইংরেজির সব জায়গা কিন্তু পরিত্যক্ত হলো না। ইংরেজির একটা চর্চাকে একেবারে ত্যাগ করা ওই সময় উচিত হয়নি। শিক্ষাব্যবস্থাটাও একটা শিথিল ধারায় পরিচালিত হওয়া ঠিক ছিল না। এর মাত্র ২৪ বছর আগেও ব্রিটিশ ছিল, ২৪ বছরেও পাকিস্তানিরা সেই ধারা মেনে চলেছে। কিন্তু অনেক প্রতিষ্ঠানে তখনো ইংরেজি জাগ্রত থাকা অবস্থায় তাকে রাতারাতি ত্যাগ করা যায়? কিন্তু তা হয়ে গেল!
বাংলার শত্রুরা পঁচাত্তরের মধ্য আগস্টের পর ভাষাকে হত্যা, সংস্কৃতিকে হত্যা এবং আরবি ও ইংরেজিকে আলিঙ্গন করার একটা ব্রতে ঝাঁপিয়ে পড়ল। দ্রুতই মাদ্রাসা ও ইংরেজি স্কুলের দ্বার খুলে গেল। যারা ইংরেজি ভালো জানে, তাদের জন্য চাকরিবাকরি, বিদেশযাত্রা সহজ হয়ে যায়। এ লড়াইয়ে শুধু বাংলা জানা শিক্ষার্থীরাই মহাবিপদে পড়ে যায়। অথচ এই সংকটে কখনোই জাপানি বা চীনারা পড়েনি। তারা তাদের মাতৃভাষায় প্রযুক্তির বড় বড় বিষয়কে জেনেছে। এখন তারা ব্যবসা-বাণিজ্যের চরম শিখরে পৌঁছে বিদেশি ভাষাকে জানছে।
দেশে এখন কত মাদ্রাসা, কত কিন্ডারগার্টেন স্কুল, কত ইংরেজি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়। ইংরেজি একটু ভালো জানলেই অভিবাসনের চেষ্টা। আমাদের দেশের বড় একটা অংশের মেধার সুবিধা পাচ্ছে বিদেশিরা। তার ফলে আমাদের দেশটা ক্রমেই নিম্নমুখী মেধার জায়গা হয়ে যাচ্ছে। হয়তো তাদের স্বপ্নের দেশ এখন আর বাংলাদেশ নয়, কিন্তু এই বাংলার আলো-বাতাস নিয়ে জন্ম নেওয়া একটা শিশুর দেশ হতে পারল না এই ভূমি। একুশে ফেব্রুয়ারি আসে এই সব কথা মনে করিয়ে দিতে। কিন্তু আমরা কি মনে করি?
প্রচুর জনসমাগমে ধন্য হয় আমাদের বইমেলা। কিন্তু আজকের প্রজন্মকে কে এই কথাগুলো মনে করিয়ে দেবে?
আজ লিপ ইয়ার, অর্থাৎ অধিবর্ষ। চার বছর পর পর ফেব্রুয়ারি মাসটি একটা দিন বেশি নিয়ে আসে। এই দিনেই আমার জন্ম। ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসটাও লিপ ইয়ারে ছিল। সেই মাসে কক্ষপথে ঘুরতে ঘুরতে পৃথিবীরও এক দিন বয়স বেড়ে গিয়েছিল। হিসাব করে দেখেছি, তখন আমার চার বছর বয়স। ‘বাপের বাড়িতে’ আমার মায়ের ছিল অবাধ যাতায়াত। মামাবাড়িতে ছিলাম তখন। দাঁতের ব্যথা হয়েছিল। দাঁতের ব্যথার উপশম ঘটাতে গিয়ে মা আমাকে কোলে করে এবাড়ি-ওবাড়ি ঘুরছিল। একসময় নিয়ে এসেছিল গ্রামের জরাজীর্ণ প্রাইমারি স্কুলটির সামনে। হঠাৎ করে সেই প্রাইমারি স্কুল দপ করে জ্বলে উঠেছিল, যখন স্লোগানে স্লোগানে চারদিক মুখরিত। এখনো মনে আছে, আমার ছোট মামা চোঙা মুখে নিয়ে স্লোগান দিচ্ছিলেন—‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’, ‘নুরুল আমিনের কল্লা চাই’।
আমার দাঁতের ব্যথার কতটা উপশম হয়েছিল জানি না, তবে স্মৃতিতে যে বড় একটা আঁক কেটেছিল, তাতে সন্দেহ নেই। নইলে এত বছর মস্তিষ্ক তা মনে রাখার কোনো কারণ নেই। বরং এর পরের স্মৃতিগুলো অনেকটাই ঝাপসা। সে সময় নির্বাচন হয়েছিল চুয়ান্ন সালে। তা নিয়ে গ্রামবাংলায় ঝড় উঠেছিল। তখন আমি ক্লাস টুয়ের ছাত্র। বহু দূর থেকে মওলানা ভাসানীর কণ্ঠস্বর শুনতে পেয়েছিলাম। বাড়িতে জ্বালানি খড়ির ওপর দাঁড়িয়ে একটা গ্লাস মুখে নিয়ে ওই রকম বক্তৃতা দেওয়ার চেষ্টা করছিলাম একদিন। আমার ছোট বোন ও ভাইটা ছিল দর্শক-শ্রোতা।
তারপর হলো কাগমারী সম্মেলন, ১৯৫৭ সালে। বয়স ৯ বছর। খুব ইচ্ছা করত, যদি যেতে পারতাম...! কিন্তু পারিনি। তখন খুব বন্যা হতো, দুর্ভিক্ষও হতো। রেশনের চাল খেতে হতো। সেই সঙ্গে কখনো একবেলা রুটি। এমনও বন্যা হতো যে বাড়ি-ঘর ছেড়ে নৌকায় থাকতে হতো। এর মধ্যেই ১৯৫৮ সালে মার্শাল ল এসে গেল। আইয়ুব খান প্রেসিডেন্ট। নিষ্ঠুর সেই শাসন। যাঁরা রাজনীতি করতেন, তাঁদের চাবুক মারা হতো। জেল তো রাজনীতিবিদদের জন্য ছিল ডাল-ভাত।
রাষ্ট্রভাষাটা উর্দু করতে পারেনি, কিন্তু সিলেবাসে উর্দু ছিল বাধ্যতামূলক বিষয়। নানাভাবে উর্দু পড়ার চাপ। আমরা পড়তে চাইতাম না। মনে হতো, অত্যাচারী শাসকগোষ্ঠীর ভাষা উর্দু। ইংরেজিটাই রয়ে গিয়েছিল রাষ্ট্রভাষা হিসেবে। অফিস-আদালতে সর্বত্রই ইংরেজি। উচ্চমাধ্যমিক থেকে মাস্টার্স, চিকিৎসাবিদ্যা, প্রকৌশলবিদ্যা, আইন—সর্বত্রই ইংরেজি। ইংরেজি আর উর্দুর এই দাপটে বাঙালিদের মধ্যে একটা নতুন সংস্কৃতির সূচনা হতে শুরু করেছিল। একুশে ফেব্রুয়ারির প্রভাতফেরির কলেবর বাড়তে থাকল। একেবারেই নগ্নপদে ভোরে শহীদ মিনারে যাওয়ার রেওয়াজ শুরু হয়। সামরিক শাসক, তাদের অনুগত রাজনীতিকেরা নিপীড়ন বাড়িয়ে দিয়েছিল।
যতই নিপীড়ন বাড়ে, ততই বাঙালির সংস্কৃতি চিন্তার পরিধিও বাড়তে থাকে।
কারাগারে রাজনৈতিক নেতৃত্ব, কিন্তু তাদের কণ্ঠস্বর কারাগারের চার দেওয়াল ভেদ করে বাইরে এসে পড়ছিল। দিনে দিনে যতই দুঃশাসন বাড়ছিল, ততই আন্দোলনও বেগবান হচ্ছিল। বড় বড় কৃষক সমাবেশ হচ্ছিল। শ্রমিকেরা সংগঠিত হচ্ছিলেন। ছাত্ররা একেকজন অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মতো জ্বলছিল। একদিকে পাকিস্তানের দুই অংশের বৈষম্য, শোষণ, অন্যদিকে সাংস্কৃতিক সংকোচন—এসবের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যাচ্ছিল ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন।
প্রতি একুশে ফেব্রুয়ারিতে গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত একুশে সংকলন ছাপা হতো। সেসবেও থাকত কালজয়ী সব কবিতা। নাট্যপ্রিয় বাঙালির নাট্যাভিনয়ে ছিল ১৮৭৬ সালের কালাকানুন। পুলিশের সেনসর নিয়ে অভিনয় করতে হতো, তা—ও পুলিশের একজন সাব-ইন্সপেক্টরের কর্তৃত্বে। শুধু কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে নাটক করা যেত, তা—ও ছাত্র-শিক্ষকদের গায়ের জোরে। ক্লাবের বা পাড়া-মহল্লার নাটকের ওপরও খবরদারি চলত—রবীন্দ্রনাথ চলবে না, নজরুলের জ্বালাময়ী গানও চলবে না। এর বিরুদ্ধেও আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। এর মধ্যে পয়লা বৈশাখ নিয়েও নেতিবাচক কত কথা! কিন্তু মধ্যবিত্তের চেতনা তখন বাঙালি সংস্কৃতির পক্ষে। আবিষ্কৃত হচ্ছিল অতীতের সব আন্দোলন। সূর্য সেন, তিতুমীর তখন বাঙালির নায়ক। প্রীতিলতার আত্মত্যাগ তখন গর্বের বিষয়। এমন এক সময়েই সংগঠিত হয়েছিল উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান—ছাত্ররা যেখানে মূল শক্তি। বিভিন্ন আদর্শের ছাত্রছাত্রীরা তখন ঐক্যবদ্ধ হয় এক জায়গায়।
একটা সময় শাসকের সব অস্ত্র ব্যর্থ হওয়ার পর জারি করা হয়েছিল কারফিউ। কারফিউ কিছু প্রাণনাশ করেছিল বটে, কিন্তু বাঙালি সেই কারফিউ ভেঙে ফেলেছিল অমিত সাহসে। রাজবন্দীরা মুক্ত হয়েছিলেন। একটা নির্বাচন হয়েছিল বটে, কিন্তু তাতেও জিতেছিল বাঙালিরা। দুর্দমনীয় বাঙালির সামনে শেষ পরীক্ষা ছিল সশস্ত্র আক্রমণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। সেই যুদ্ধেও জয়ী হলো বাঙালিরা।
তারপর স্বাধীন দেশে বাংলা ভাষাকে সর্বস্তরে প্রয়োগের ঘোষণা হলো। কিন্তু রয়ে গিয়েছিল একটা বড় ষড়যন্ত্র। ইংরেজির সব জায়গা কিন্তু পরিত্যক্ত হলো না। ইংরেজির একটা চর্চাকে একেবারে ত্যাগ করা ওই সময় উচিত হয়নি। শিক্ষাব্যবস্থাটাও একটা শিথিল ধারায় পরিচালিত হওয়া ঠিক ছিল না। এর মাত্র ২৪ বছর আগেও ব্রিটিশ ছিল, ২৪ বছরেও পাকিস্তানিরা সেই ধারা মেনে চলেছে। কিন্তু অনেক প্রতিষ্ঠানে তখনো ইংরেজি জাগ্রত থাকা অবস্থায় তাকে রাতারাতি ত্যাগ করা যায়? কিন্তু তা হয়ে গেল!
বাংলার শত্রুরা পঁচাত্তরের মধ্য আগস্টের পর ভাষাকে হত্যা, সংস্কৃতিকে হত্যা এবং আরবি ও ইংরেজিকে আলিঙ্গন করার একটা ব্রতে ঝাঁপিয়ে পড়ল। দ্রুতই মাদ্রাসা ও ইংরেজি স্কুলের দ্বার খুলে গেল। যারা ইংরেজি ভালো জানে, তাদের জন্য চাকরিবাকরি, বিদেশযাত্রা সহজ হয়ে যায়। এ লড়াইয়ে শুধু বাংলা জানা শিক্ষার্থীরাই মহাবিপদে পড়ে যায়। অথচ এই সংকটে কখনোই জাপানি বা চীনারা পড়েনি। তারা তাদের মাতৃভাষায় প্রযুক্তির বড় বড় বিষয়কে জেনেছে। এখন তারা ব্যবসা-বাণিজ্যের চরম শিখরে পৌঁছে বিদেশি ভাষাকে জানছে।
দেশে এখন কত মাদ্রাসা, কত কিন্ডারগার্টেন স্কুল, কত ইংরেজি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়। ইংরেজি একটু ভালো জানলেই অভিবাসনের চেষ্টা। আমাদের দেশের বড় একটা অংশের মেধার সুবিধা পাচ্ছে বিদেশিরা। তার ফলে আমাদের দেশটা ক্রমেই নিম্নমুখী মেধার জায়গা হয়ে যাচ্ছে। হয়তো তাদের স্বপ্নের দেশ এখন আর বাংলাদেশ নয়, কিন্তু এই বাংলার আলো-বাতাস নিয়ে জন্ম নেওয়া একটা শিশুর দেশ হতে পারল না এই ভূমি। একুশে ফেব্রুয়ারি আসে এই সব কথা মনে করিয়ে দিতে। কিন্তু আমরা কি মনে করি?
প্রচুর জনসমাগমে ধন্য হয় আমাদের বইমেলা। কিন্তু আজকের প্রজন্মকে কে এই কথাগুলো মনে করিয়ে দেবে?
পর্দার নায়িকারা নিজেদের বয়স আড়ালে রাখা পছন্দ করেন। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম আজমেরী হক বাঁধন। প্রতিবছর নিজের জন্মদিনে জানান দেন তাঁর বয়স। গতকাল ছিল বাঁধনের ৪১তম জন্মদিন। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেই জানালেন এই তথ্য।
২ দিন আগে১০ বছরের বেশি সময় ধরে শোবিজে কাজ করছেন অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া। নাটকের পাশাপাশি ওটিটিতে দেখা গেছে তাঁকে। সরকারি অনুদানের ‘দেবী’ নামের একটি সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন। প্রশংসিত হলেও সিনেমায় আর দেখা মেলেনি তাঁর। ছোট পর্দাতেও অনেক দিন ধরে অনিয়মিত তিনি। এবার শবনম ফারিয়া হাজির হচ্ছেন নতুন পরিচয়ে। কমেডি রিয়েলিটি
২ দিন আগেআমাদের লোকসংস্কৃতির অন্যতম ঐতিহ্য যাত্রাপালা। গণমানুষের সংস্কৃতি হিসেবে বিবেচিত এই যাত্রাপালা নিয়ে শিল্পকলা একাডেমি আয়োজন করছে ‘যাত্রা উৎসব-২০২৪’। আগামী ১ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে শুরু হবে ৭ দিনব্যাপী এই উৎসব।
২ দিন আগে‘বঙ্গবন্ধু’ পদবি বিলীন হবে না। হতে পারে না। যেমনটি ‘দেশবন্ধু’ চিত্তরঞ্জন দাশের পদবি বিলীন হয়নি। ইতিহাসে এসব পদবি অম্লান ও অক্ষয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিত্ব ছিল অনন্যসাধারণ। আপনজনকে তো অবশ্যই, শত্রুপক্ষের লোকেরাও ব্যক্তিগত পর্যায়ে তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হতেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর উচ্চপদের
২ দিন আগে