আজকের পত্রিকা: আন্তর্জাতিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ‘নামবিও’র প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ট্রাফিক ইনডেক্স-২০২৩-এর মতে, যানজটের শহর হিসেবে বিশ্বে পঞ্চম স্থানে রয়েছে ঢাকা। ২০২১ সালে ছিল নবম। দিন দিন পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। কারণ কী?
ড. মো. হাদিউজ্জামান: ‘নামবিও’র গবেষণা অনুযায়ী, আমাদের যানজটের অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে, অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। এর প্রথম ও প্রধান কারণ, আমাদের সড়ক ব্যবস্থাপনা কোনো বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে হচ্ছে না। ঢাকা শহরে প্রতিদিন সড়কে যানবাহনের সংখ্যা বাড়ছে। এর জন্য হিসাব-নিকাশের দরকার ছিল। সড়কের সক্ষমতা কতটুকু, সে অনুযায়ী কতগুলো গাড়ি চলা দরকার, সেটা আমরা কোনোভাবেই বিবেচনায় নিচ্ছি না। একই সঙ্গে যানবাহন চলাচলের গড় গতিবেগ প্রতিনিয়ত কমছে। ২০০৫ সালের গবেষণামতে, প্রতি ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার গড় গতিবেগ ছিল। সেটা কমতে কমতে ২০১৭ সালে ৮ কিলোমিটারে দাঁড়িয়েছে। এ থেকে স্পষ্টই বোঝা যায়, ঢাকা শহরের সড়কের হৃৎস্পন্দন ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। কারণ যানবাহনের সংখ্যা সড়কের সক্ষমতার চেয়ে চার-পাঁচ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ সক্ষমতার বাইরে চলে গেলে সেটা আর নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে না।
এই শহর নিয়ে পরিকল্পনার যে দৈন্যের কথা আমরা সব সময় বলি, এর সঙ্গে ব্যবস্থাপনারও ব্যাপক দুর্বলতা আছে। শহরের সড়কগুলোর সঙ্গে দুই পাশের ভূমি ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার মিথস্ক্রিয়া দরকার। কিন্তু আমাদের সড়কগুলোর পাশে উঁচু ভবন অনিয়ন্ত্রিতভাবে গড়ে উঠেছে। সড়কের সঙ্গে ভূমি ব্যবস্থাপনা না থাকার কারণে সড়ক শর্টসার্কিটের মতো হয়ে আছে। যদিও ভূমি ব্যবস্থাপনার আর কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু গাড়ি নিয়ন্ত্রণ তো করা যায়। ভবনের সঙ্গে সরাসরি মূল সড়কের সংযোগ করা হয়েছে। পৃথিবীর কোথাও এভাবে সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠে না। পৃথিবীর উন্নত দেশের সড়ক ব্যবস্থাপনা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পরিচালিত হয়। আর আমরা একটা বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে আছি।
আজকের পত্রিকা: ঢাকার যানজট নিরসনে মেগা প্রকল্প—যেমন মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে করার পরেও যানজট না কমে বরং দিন দিন বাড়ছে। মূল সমস্যা কোথায়?
ড. মো. হাদিউজ্জামান: পৃথিবীর কোনো দেশের কোনো শহর শুধু অবকাঠামো নির্মাণ করে যানজট নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। যানজট নিয়ন্ত্রণের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ‘পলিসি’। এখানে পলিসি লাগবেই। প্রথম পলিসি হওয়া দরকার যানবাহনের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ। এটা নিয়ন্ত্রণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যখন গাড়ির সংখ্যা সড়কের সক্ষমতার বাইরে চলে যায়, তখন শুধু অবকাঠামো দিয়ে যানজট কমানো যায় না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সম্প্রতি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে আংশিকভাবে চালু হয়েছে। এক্সপ্রেসওয়ের নিচের সড়ক ধীরগতির আর এর ওপরের দিক ৬০-৮০ কিলোমিটার গতিবেগের।
পৃথিবীর উন্নত দেশে এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে এক্সপ্রেসওয়ের অথবা মহাসড়কের সংযোগ করা হয়। এটাই বিজ্ঞানভিত্তিক নিয়ম। আর আমরা এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে নিচের একটা পাঁচ কিলোমিটার গতির সড়কের সংযোগ করলাম। যখন ৬০-৮০ কিলোমিটার গতির সঙ্গে পাঁচ কিলোমিটারের গতির সংযোগ হবে, তখন সেখানে শর্টসার্কিট হবেই। এখন দেখা যাচ্ছে, যেখানে ট্রাফিক সিগন্যাল, সেখানেই জটলা তৈরি
হচ্ছে। তাই পলিসি হওয়া দরকার ছিল নিচের সড়কের গতি কীভাবে বাড়ানো যায়।
আমরা আবার বড় বিনিয়োগে খুবই আগ্রহী। যেখানে বিনিয়োগ বেশি, সেখানে আমাদের মনোযোগ বেশি। নিচের সড়কের জন্য তো ব্যবস্থাপনা খুব জরুরি বিষয়। যেহেতু এখানে বিনিয়োগ নেই, সেহেতু আমাদের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে এসব দিকে খুব বেশি আগ্রহ দেখা যায় না।
নিচের সড়কের গতি বাড়ানো অসম্ভব কোনো ব্যাপার নয়। প্রথমত, অবৈধ ও যত্রতত্র পার্কিং হলো এসবের জন্য বিষফোড়ার মতো। গবেষণায় দেখা গেছে, ৩০ শতাংশ যানজট তৈরি হয় অবৈধ পার্কিংয়ের কারণে। পৃথিবীর কোনো শহরে একই সড়কে একসঙ্গে ১৮ সংস্করণের গাড়ি চলে কি না? যেমন দ্রুত ও ধীরগতি, ভারী-হালকা, ঘোড়ার গাড়ি, ভ্যান ও ঠেলাগাড়ি—সবই এক সড়ক দিয়ে চলছে। এসব যদি নিয়মের মধ্যে এনে অযান্ত্রিক যানবাহনগুলোকে মূল সড়ক থেকে সরিয়ে পাশের সড়কে একটা পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে ঢেলে সাজানো হতো, তাহলে সড়কের গতি অনেকাংশেই বাড়ানো সম্ভব হতো।
যে ৫ শতাংশ মানুষ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করছে, তারা দ্রুতগতিতে নিচের সড়কে এসে প্রচণ্ড যানজটের সৃষ্টি করছে। তাদের কারণে বেশির ভাগ মানুষ সমস্যায় পড়ছে।
আবার নিচের সড়কের অধিকাংশ মানুষই গণপরিবহনের ওপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল। তাদের যাত্রা এমনিতেই নানা বিড়ম্বনায় জর্জরিত। আর গণপরিবহনে ন্যূনতম সেবার ব্যাপারটি নেই বললে চলে। সিট নেই আর বাদুড়ঝোলার মতো করে তাদের অফিসে বা অন্য কোনো কাজে যেতে হচ্ছে। এটা তো উন্নয়নের দর্শন হতে পারে না। নিচের সড়কের গতি বাড়িয়েই আধুনিক অবকাঠামো নির্মাণ করা যৌক্তিক ছিল।
আর যেখানে বেশির ভাগ মানুষ গণপরিবহনে যাতায়াত করে, সেখানে তেমন কোনো বিনিয়োগ নেই। বেশির ভাগ বিনিয়োগ করা হচ্ছে উচ্চবিত্তদের সুবিধার জন্য, যারা টোল দিয়ে দ্রুতগতিতে যেতে পারে। এ কারণে এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে উপস্থিত হচ্ছে।
মেগা প্রকল্প লাগবে। কিন্তু তার আগে উন্নয়নের কিছু ধাপ আছে। আগে ফুটপাত ব্যবস্থাপনা এবং গণপরিবহনে শৃঙ্খলা নিয়ে আসতে হবে। এরপর উচ্চ ধারণ ও উচ্চগতিসম্পন্ন অবকাঠামোর দিকে যেতে হবে। এই ধাপগুলো ডিঙিয়ে যদি ওপরের দিকে যাওয়া হয়, তাহলে উন্নয়নের এই সুবিধা গুটিকয়েক মানুষ পাবে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের দুর্ভোগে পড়ার আশঙ্কা আছে। তাই শুধু মেগা প্রকল্প দিয়ে যানজট নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।
আজকের পত্রিকা: আসলে যানজটের জন্য কারা দায়ী?
ড. মো. হাদিউজ্জামান: এ ক্ষেত্রে গণমানুষের জন্য পরিবহন ব্যবস্থাপনায় গুরুত্ব দিতে হবে। ২০০৫ সালের কৌশলগত পরিকল্পনায় সেটা বলা আছে। ঢাকা শহরে যেসব লক্কড়ঝক্কড় বাস চলে, সেগুলো সরিয়ে ভালো মানের এবং যাত্রীর চাহিদা অনুযায়ী বাস চালু করতে হবে। এসব কোম্পানিভিত্তিক ব্যবস্থাপনায় করতে হবে। কেন এসব হচ্ছে না? এবং কারা এসব করতে বাধা দিচ্ছে?
আমাদের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা আছে, তাদের আগ্রহের প্রধান কেন্দ্র হচ্ছে মেগা প্রকল্প। মেগা প্রকল্প মানে মেগা বিনিয়োগ। এসবে আবার মিডিয়ায় বেশি প্রচার পাওয়া যায়। এখানে জনগণের দৃষ্টি বেশি আকর্ষণ করা যায়। পাশাপাশি এখানে বাস সার্ভিস যারা নিয়ন্ত্রণ করে, তাদের মধ্যেও প্রতিরোধমূলক আচরণ দেখা যায়। গণপরিবহনকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনার জন্য তাদের আগ্রহ নেই। কারণ যখনই এটা শৃঙ্খলায় আসবে, তখন এর নিয়ন্ত্রণ তাদের কাছে থাকবে না। বাসমালিক এবং পরিবহন সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য থাকবে না। ফলে তারা কোনোভাবেই এ অবস্থার পরিবর্তন চায় না।
ঢাকা শহরে প্রতিদিন চার থেকে সাড়ে চার হাজার গণপরিবহন চলছে। আর এসব যানবাহনের মালিক প্রায় দুই হাজার। পৃথিবীর কোনো দেশে এভাবে গণপরিবহন পরিচালিত হয় না।
আমাদের কৌশলগত পরিকল্পনায় বলা আছে, গণপরিবহনগুলো অবশ্যই চার-পাঁচটি কোম্পানির মাধ্যমে পরিচালিত হতে হবে। সেটা অবশ্যই রুটভিত্তিক, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে। এখন এখানে এসব চলছে বড় বড় নেতা তথা পরিবহন সিন্ডিকেট দ্বারা। তাদের উদ্দেশ্যই হচ্ছে, একবার রুট পারমিট নিতে পারলে সারা জীবন তা দিয়ে ব্যবসা করা। কারণ ওই রুটে কাউকে বাস চালাতে হলে তার অধীনেই চালাতে হবে। এটা তো বিরাট ব্যবসা। এখানে তো কোনো বিনিয়োগের প্রয়োজন নেই।
তাই জনগণের কথা চিন্তা করে, নীতিনির্ধারকদের অবশ্যই বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজিং এবং বাস রুটের রেশনালাইজেশন করতে হবে; যেটা হচ্ছে পুরো বিশ্বের বাস পরিচালনার একটা চমৎকার মডেল। যদি গণমানুষের জন্য গণপরিবহনবান্ধব যোগাযোগব্যবস্থা আমরা গড়ে তুলতে চাই, তাহলে এর অন্য কোনো বিকল্প আমার জানা নেই। এভাবে ‘ফ্র্যাগমেন্টেড ওনারশিপ’ দিয়ে যাত্রীর সেবা বা যানজট নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।
আজকের পত্রিকা: যানজটমুক্ত নগর করতে আপনার পরামর্শ কী?
ড. মো. হাদিউজ্জামান: যানজটমুক্ত নগর করতে হলে ফুটপাত ও গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনা সবচেয়ে বেশি জরুরি। এটা রাজনৈতিক সদিচ্ছার ব্যাপার। আমাদের গণপরিবহনব্যবস্থা একটা মহা দুষ্টচক্রের হাতে বন্দী। আগে এই দুষ্টচক্র ভাঙতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। সড়কের প্রধান রোগটাই হলো রাজনৈতিক। এটা টেকনিক্যাল কোনো সমস্যা নয়। এটা রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় সমাধান করতে হবে।
যাঁরা আসলে গণপরিবহন-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য বিভিন্ন কমিটিতে আছেন, তাঁরাই আবার গণপরিবহনের মালিক। আমরা যখন সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য কমিটিগুলো গঠন করি, সেখানে অবশ্যই গণপরিবহনের যাত্রীদের প্রতিনিধিত্ব বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অনেক ক্ষেত্রেই তাঁদের কোনো প্রতিনিধিত্ব থাকে না। ভাড়া বা রুট নির্ধারণের ক্ষেত্রে তাঁদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। এই প্রতিনিধিত্ব আগে তৈরি করতে হবে।
ঢাকা শহরে লন্ডনের মতো ভালো মানের গণপরিবহন সুবিধা নিয়ে আসতে হলে এর জন্য মাত্র ৮-১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের দরকার। পাশাপাশি ফুটপাতগুলো পথচারী ও পরিবেশবান্ধব করতে ৩-৪ হাজার কোটি টাকা হলেই চলবে। সামগ্রিকভাবে আমরা যদি ১৪ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করি, তাহলে গণপরিবহনের একটা দৃষ্টান্তমূলক পরিবর্তন করা সম্ভব। যে মেগা প্রকল্পে মেগা বিনিয়োগ করেছি, তার তুলনায় এটা সামান্য টাকা। তাহলে কেন এত সামান্য বিনিয়োগ সরকার করছে না?
অনেক দেশে গণপরিবহনের সংখ্যা ও রুট নির্ধারণ একটি টেকনিক্যাল সমস্যা হলেও আমাদের জন্য এটি রাজনৈতিক সমস্যা। অতএব সরকারকে এই মহা দুষ্টচক্র ভাঙতে হবে। এটা করলে সরকারের ভাবমূর্তি আরও বেশি উজ্জ্বল হবে।
আজকের পত্রিকা: আন্তর্জাতিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ‘নামবিও’র প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ট্রাফিক ইনডেক্স-২০২৩-এর মতে, যানজটের শহর হিসেবে বিশ্বে পঞ্চম স্থানে রয়েছে ঢাকা। ২০২১ সালে ছিল নবম। দিন দিন পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। কারণ কী?
ড. মো. হাদিউজ্জামান: ‘নামবিও’র গবেষণা অনুযায়ী, আমাদের যানজটের অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে, অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। এর প্রথম ও প্রধান কারণ, আমাদের সড়ক ব্যবস্থাপনা কোনো বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে হচ্ছে না। ঢাকা শহরে প্রতিদিন সড়কে যানবাহনের সংখ্যা বাড়ছে। এর জন্য হিসাব-নিকাশের দরকার ছিল। সড়কের সক্ষমতা কতটুকু, সে অনুযায়ী কতগুলো গাড়ি চলা দরকার, সেটা আমরা কোনোভাবেই বিবেচনায় নিচ্ছি না। একই সঙ্গে যানবাহন চলাচলের গড় গতিবেগ প্রতিনিয়ত কমছে। ২০০৫ সালের গবেষণামতে, প্রতি ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার গড় গতিবেগ ছিল। সেটা কমতে কমতে ২০১৭ সালে ৮ কিলোমিটারে দাঁড়িয়েছে। এ থেকে স্পষ্টই বোঝা যায়, ঢাকা শহরের সড়কের হৃৎস্পন্দন ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। কারণ যানবাহনের সংখ্যা সড়কের সক্ষমতার চেয়ে চার-পাঁচ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ সক্ষমতার বাইরে চলে গেলে সেটা আর নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে না।
এই শহর নিয়ে পরিকল্পনার যে দৈন্যের কথা আমরা সব সময় বলি, এর সঙ্গে ব্যবস্থাপনারও ব্যাপক দুর্বলতা আছে। শহরের সড়কগুলোর সঙ্গে দুই পাশের ভূমি ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার মিথস্ক্রিয়া দরকার। কিন্তু আমাদের সড়কগুলোর পাশে উঁচু ভবন অনিয়ন্ত্রিতভাবে গড়ে উঠেছে। সড়কের সঙ্গে ভূমি ব্যবস্থাপনা না থাকার কারণে সড়ক শর্টসার্কিটের মতো হয়ে আছে। যদিও ভূমি ব্যবস্থাপনার আর কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু গাড়ি নিয়ন্ত্রণ তো করা যায়। ভবনের সঙ্গে সরাসরি মূল সড়কের সংযোগ করা হয়েছে। পৃথিবীর কোথাও এভাবে সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠে না। পৃথিবীর উন্নত দেশের সড়ক ব্যবস্থাপনা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পরিচালিত হয়। আর আমরা একটা বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে আছি।
আজকের পত্রিকা: ঢাকার যানজট নিরসনে মেগা প্রকল্প—যেমন মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে করার পরেও যানজট না কমে বরং দিন দিন বাড়ছে। মূল সমস্যা কোথায়?
ড. মো. হাদিউজ্জামান: পৃথিবীর কোনো দেশের কোনো শহর শুধু অবকাঠামো নির্মাণ করে যানজট নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। যানজট নিয়ন্ত্রণের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ‘পলিসি’। এখানে পলিসি লাগবেই। প্রথম পলিসি হওয়া দরকার যানবাহনের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ। এটা নিয়ন্ত্রণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যখন গাড়ির সংখ্যা সড়কের সক্ষমতার বাইরে চলে যায়, তখন শুধু অবকাঠামো দিয়ে যানজট কমানো যায় না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সম্প্রতি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে আংশিকভাবে চালু হয়েছে। এক্সপ্রেসওয়ের নিচের সড়ক ধীরগতির আর এর ওপরের দিক ৬০-৮০ কিলোমিটার গতিবেগের।
পৃথিবীর উন্নত দেশে এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে এক্সপ্রেসওয়ের অথবা মহাসড়কের সংযোগ করা হয়। এটাই বিজ্ঞানভিত্তিক নিয়ম। আর আমরা এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে নিচের একটা পাঁচ কিলোমিটার গতির সড়কের সংযোগ করলাম। যখন ৬০-৮০ কিলোমিটার গতির সঙ্গে পাঁচ কিলোমিটারের গতির সংযোগ হবে, তখন সেখানে শর্টসার্কিট হবেই। এখন দেখা যাচ্ছে, যেখানে ট্রাফিক সিগন্যাল, সেখানেই জটলা তৈরি
হচ্ছে। তাই পলিসি হওয়া দরকার ছিল নিচের সড়কের গতি কীভাবে বাড়ানো যায়।
আমরা আবার বড় বিনিয়োগে খুবই আগ্রহী। যেখানে বিনিয়োগ বেশি, সেখানে আমাদের মনোযোগ বেশি। নিচের সড়কের জন্য তো ব্যবস্থাপনা খুব জরুরি বিষয়। যেহেতু এখানে বিনিয়োগ নেই, সেহেতু আমাদের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে এসব দিকে খুব বেশি আগ্রহ দেখা যায় না।
নিচের সড়কের গতি বাড়ানো অসম্ভব কোনো ব্যাপার নয়। প্রথমত, অবৈধ ও যত্রতত্র পার্কিং হলো এসবের জন্য বিষফোড়ার মতো। গবেষণায় দেখা গেছে, ৩০ শতাংশ যানজট তৈরি হয় অবৈধ পার্কিংয়ের কারণে। পৃথিবীর কোনো শহরে একই সড়কে একসঙ্গে ১৮ সংস্করণের গাড়ি চলে কি না? যেমন দ্রুত ও ধীরগতি, ভারী-হালকা, ঘোড়ার গাড়ি, ভ্যান ও ঠেলাগাড়ি—সবই এক সড়ক দিয়ে চলছে। এসব যদি নিয়মের মধ্যে এনে অযান্ত্রিক যানবাহনগুলোকে মূল সড়ক থেকে সরিয়ে পাশের সড়কে একটা পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে ঢেলে সাজানো হতো, তাহলে সড়কের গতি অনেকাংশেই বাড়ানো সম্ভব হতো।
যে ৫ শতাংশ মানুষ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করছে, তারা দ্রুতগতিতে নিচের সড়কে এসে প্রচণ্ড যানজটের সৃষ্টি করছে। তাদের কারণে বেশির ভাগ মানুষ সমস্যায় পড়ছে।
আবার নিচের সড়কের অধিকাংশ মানুষই গণপরিবহনের ওপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল। তাদের যাত্রা এমনিতেই নানা বিড়ম্বনায় জর্জরিত। আর গণপরিবহনে ন্যূনতম সেবার ব্যাপারটি নেই বললে চলে। সিট নেই আর বাদুড়ঝোলার মতো করে তাদের অফিসে বা অন্য কোনো কাজে যেতে হচ্ছে। এটা তো উন্নয়নের দর্শন হতে পারে না। নিচের সড়কের গতি বাড়িয়েই আধুনিক অবকাঠামো নির্মাণ করা যৌক্তিক ছিল।
আর যেখানে বেশির ভাগ মানুষ গণপরিবহনে যাতায়াত করে, সেখানে তেমন কোনো বিনিয়োগ নেই। বেশির ভাগ বিনিয়োগ করা হচ্ছে উচ্চবিত্তদের সুবিধার জন্য, যারা টোল দিয়ে দ্রুতগতিতে যেতে পারে। এ কারণে এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে উপস্থিত হচ্ছে।
মেগা প্রকল্প লাগবে। কিন্তু তার আগে উন্নয়নের কিছু ধাপ আছে। আগে ফুটপাত ব্যবস্থাপনা এবং গণপরিবহনে শৃঙ্খলা নিয়ে আসতে হবে। এরপর উচ্চ ধারণ ও উচ্চগতিসম্পন্ন অবকাঠামোর দিকে যেতে হবে। এই ধাপগুলো ডিঙিয়ে যদি ওপরের দিকে যাওয়া হয়, তাহলে উন্নয়নের এই সুবিধা গুটিকয়েক মানুষ পাবে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের দুর্ভোগে পড়ার আশঙ্কা আছে। তাই শুধু মেগা প্রকল্প দিয়ে যানজট নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।
আজকের পত্রিকা: আসলে যানজটের জন্য কারা দায়ী?
ড. মো. হাদিউজ্জামান: এ ক্ষেত্রে গণমানুষের জন্য পরিবহন ব্যবস্থাপনায় গুরুত্ব দিতে হবে। ২০০৫ সালের কৌশলগত পরিকল্পনায় সেটা বলা আছে। ঢাকা শহরে যেসব লক্কড়ঝক্কড় বাস চলে, সেগুলো সরিয়ে ভালো মানের এবং যাত্রীর চাহিদা অনুযায়ী বাস চালু করতে হবে। এসব কোম্পানিভিত্তিক ব্যবস্থাপনায় করতে হবে। কেন এসব হচ্ছে না? এবং কারা এসব করতে বাধা দিচ্ছে?
আমাদের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা আছে, তাদের আগ্রহের প্রধান কেন্দ্র হচ্ছে মেগা প্রকল্প। মেগা প্রকল্প মানে মেগা বিনিয়োগ। এসবে আবার মিডিয়ায় বেশি প্রচার পাওয়া যায়। এখানে জনগণের দৃষ্টি বেশি আকর্ষণ করা যায়। পাশাপাশি এখানে বাস সার্ভিস যারা নিয়ন্ত্রণ করে, তাদের মধ্যেও প্রতিরোধমূলক আচরণ দেখা যায়। গণপরিবহনকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনার জন্য তাদের আগ্রহ নেই। কারণ যখনই এটা শৃঙ্খলায় আসবে, তখন এর নিয়ন্ত্রণ তাদের কাছে থাকবে না। বাসমালিক এবং পরিবহন সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য থাকবে না। ফলে তারা কোনোভাবেই এ অবস্থার পরিবর্তন চায় না।
ঢাকা শহরে প্রতিদিন চার থেকে সাড়ে চার হাজার গণপরিবহন চলছে। আর এসব যানবাহনের মালিক প্রায় দুই হাজার। পৃথিবীর কোনো দেশে এভাবে গণপরিবহন পরিচালিত হয় না।
আমাদের কৌশলগত পরিকল্পনায় বলা আছে, গণপরিবহনগুলো অবশ্যই চার-পাঁচটি কোম্পানির মাধ্যমে পরিচালিত হতে হবে। সেটা অবশ্যই রুটভিত্তিক, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে। এখন এখানে এসব চলছে বড় বড় নেতা তথা পরিবহন সিন্ডিকেট দ্বারা। তাদের উদ্দেশ্যই হচ্ছে, একবার রুট পারমিট নিতে পারলে সারা জীবন তা দিয়ে ব্যবসা করা। কারণ ওই রুটে কাউকে বাস চালাতে হলে তার অধীনেই চালাতে হবে। এটা তো বিরাট ব্যবসা। এখানে তো কোনো বিনিয়োগের প্রয়োজন নেই।
তাই জনগণের কথা চিন্তা করে, নীতিনির্ধারকদের অবশ্যই বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজিং এবং বাস রুটের রেশনালাইজেশন করতে হবে; যেটা হচ্ছে পুরো বিশ্বের বাস পরিচালনার একটা চমৎকার মডেল। যদি গণমানুষের জন্য গণপরিবহনবান্ধব যোগাযোগব্যবস্থা আমরা গড়ে তুলতে চাই, তাহলে এর অন্য কোনো বিকল্প আমার জানা নেই। এভাবে ‘ফ্র্যাগমেন্টেড ওনারশিপ’ দিয়ে যাত্রীর সেবা বা যানজট নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।
আজকের পত্রিকা: যানজটমুক্ত নগর করতে আপনার পরামর্শ কী?
ড. মো. হাদিউজ্জামান: যানজটমুক্ত নগর করতে হলে ফুটপাত ও গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনা সবচেয়ে বেশি জরুরি। এটা রাজনৈতিক সদিচ্ছার ব্যাপার। আমাদের গণপরিবহনব্যবস্থা একটা মহা দুষ্টচক্রের হাতে বন্দী। আগে এই দুষ্টচক্র ভাঙতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। সড়কের প্রধান রোগটাই হলো রাজনৈতিক। এটা টেকনিক্যাল কোনো সমস্যা নয়। এটা রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় সমাধান করতে হবে।
যাঁরা আসলে গণপরিবহন-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য বিভিন্ন কমিটিতে আছেন, তাঁরাই আবার গণপরিবহনের মালিক। আমরা যখন সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য কমিটিগুলো গঠন করি, সেখানে অবশ্যই গণপরিবহনের যাত্রীদের প্রতিনিধিত্ব বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অনেক ক্ষেত্রেই তাঁদের কোনো প্রতিনিধিত্ব থাকে না। ভাড়া বা রুট নির্ধারণের ক্ষেত্রে তাঁদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। এই প্রতিনিধিত্ব আগে তৈরি করতে হবে।
ঢাকা শহরে লন্ডনের মতো ভালো মানের গণপরিবহন সুবিধা নিয়ে আসতে হলে এর জন্য মাত্র ৮-১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের দরকার। পাশাপাশি ফুটপাতগুলো পথচারী ও পরিবেশবান্ধব করতে ৩-৪ হাজার কোটি টাকা হলেই চলবে। সামগ্রিকভাবে আমরা যদি ১৪ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করি, তাহলে গণপরিবহনের একটা দৃষ্টান্তমূলক পরিবর্তন করা সম্ভব। যে মেগা প্রকল্পে মেগা বিনিয়োগ করেছি, তার তুলনায় এটা সামান্য টাকা। তাহলে কেন এত সামান্য বিনিয়োগ সরকার করছে না?
অনেক দেশে গণপরিবহনের সংখ্যা ও রুট নির্ধারণ একটি টেকনিক্যাল সমস্যা হলেও আমাদের জন্য এটি রাজনৈতিক সমস্যা। অতএব সরকারকে এই মহা দুষ্টচক্র ভাঙতে হবে। এটা করলে সরকারের ভাবমূর্তি আরও বেশি উজ্জ্বল হবে।
পর্দার নায়িকারা নিজেদের বয়স আড়ালে রাখা পছন্দ করেন। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম আজমেরী হক বাঁধন। প্রতিবছর নিজের জন্মদিনে জানান দেন তাঁর বয়স। গতকাল ছিল বাঁধনের ৪১তম জন্মদিন। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেই জানালেন এই তথ্য।
২ দিন আগে১০ বছরের বেশি সময় ধরে শোবিজে কাজ করছেন অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া। নাটকের পাশাপাশি ওটিটিতে দেখা গেছে তাঁকে। সরকারি অনুদানের ‘দেবী’ নামের একটি সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন। প্রশংসিত হলেও সিনেমায় আর দেখা মেলেনি তাঁর। ছোট পর্দাতেও অনেক দিন ধরে অনিয়মিত তিনি। এবার শবনম ফারিয়া হাজির হচ্ছেন নতুন পরিচয়ে। কমেডি রিয়েলিটি
২ দিন আগেআমাদের লোকসংস্কৃতির অন্যতম ঐতিহ্য যাত্রাপালা। গণমানুষের সংস্কৃতি হিসেবে বিবেচিত এই যাত্রাপালা নিয়ে শিল্পকলা একাডেমি আয়োজন করছে ‘যাত্রা উৎসব-২০২৪’। আগামী ১ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে শুরু হবে ৭ দিনব্যাপী এই উৎসব।
২ দিন আগে‘বঙ্গবন্ধু’ পদবি বিলীন হবে না। হতে পারে না। যেমনটি ‘দেশবন্ধু’ চিত্তরঞ্জন দাশের পদবি বিলীন হয়নি। ইতিহাসে এসব পদবি অম্লান ও অক্ষয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিত্ব ছিল অনন্যসাধারণ। আপনজনকে তো অবশ্যই, শত্রুপক্ষের লোকেরাও ব্যক্তিগত পর্যায়ে তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হতেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর উচ্চপদের
২ দিন আগে