বিমানবন্দরের জমি দখল করে সামিটের কনটেইনার ডিপো

আবু বকর ছিদ্দিক, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৮: ১১

সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেড (এসএপিএল)। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান। তিনি আবার সিঙ্গাপুরের ৪১তম ধনীও। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সদ্য সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান তাঁর ভাই। এসএপিএলকে আর ঠেকায় কে? ক্ষমতার দাপট ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ১২ একর জমি দখলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। দখলের পর ৬০০ কোটি টাকা মূল্যের এই সরকারি জমিতে বেসরকারি কনটেইনার ডিপো গড়ে তুলেছে সামিট।

এক বা দুই বছর নয়, সরকারি এই জায়গা ১৫ বছর ধরে দখলে রেখেছে এসএপিএল। চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা থানার নাজিরপাড়ায় (চড়ি হলদা) অবস্থিত সেই জায়গায় কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ করে ব্যবসা করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। অবৈধভাবে দখলে রাখা জায়গাটি ছেড়ে দিতে প্রতিষ্ঠানটিকে কয়েক দফা নোটিশ দিয়েছিল বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। এমনকি উচ্ছেদের জন্য সেখানে ম্যাজিস্ট্রেটও পাঠিয়েছিলেন সংস্থাটি। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে ম্যাজিস্ট্রেট উচ্ছেদ না করে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জায়গাটি পুনরুদ্ধারে তৎপর হয়েছে।

তথ্যমতে, ২০০৭ সালে সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেড দখল করা জমিতে কনটেইনার ডিপো স্থাপন করে। সে সময় শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বাধা দিলেও ক্ষমতার প্রভাবে এসএপিএল কর্তৃপক্ষ কনটেইনার টার্মিনাল করে। পরে টার্মিনালটি মূল স্থাপনার বাইরে টিন দিয়ে আরও সম্প্রসারণ করে তারা।

বিমানবন্দরের দখল করা জমি ছেড়ে দেওয়ার জন্য ২০১৯ সালের ১৮ জুলাই বেবিচকের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যালয় থেকে সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেডকে একটি নোটিশ দেওয়া হয়। নোটিশে সাত দিনের মধ্যে সেখানে নির্মিত স্থাপনা অপসারণের জন্য বলা হয়। এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আহাম্মেদ জামিল নোটিশটি স্বাক্ষর করেন। ২০১৯ সালের ৭ আগস্ট সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেডের পক্ষে নোটিশ গ্রহণ করেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক (অপারেশন) ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম মজুমদার।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম মজুমদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেড অবৈধ দখলদার নয়। প্রতিষ্ঠানের কেনা সম্পত্তির ওপর কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেড বিমানবন্দরের কোনো জায়গা দখল করেনি। অবৈধ দখলদার হিসেবে বেবিচক থেকে দেওয়া নোটিশের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে হাইকোর্টে মামলা চলমান রয়েছে।’

চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তথ্য বলছে, ১৯৯২ সালে বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের অধীন টার্মিনাল ভবনসহ অন্যান্য স্থাপনা তৈরির কারণে তৎকালীন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে পতেঙ্গা থানার দক্ষিণ পতেঙ্গা মৌজায় সাগরপাড়ে ২৭ দশমিক ৮১৫ একর জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা অধিগ্রহণকৃত জায়গায় পুনর্বাসিত হতে অনীহা প্রকাশ করলে পরে তাদের জন্য আবার বিমানবন্দরসংলগ্ন বিজয়নগর এলাকায় জায়গা অধিগ্রহণ করা হয় এবং সেখানেই তাদের পুনর্বাসন করা হয়। অন্যদিকে আগে ক্রয় করা ২৭ দশমিক ৮১৫ একর জায়গায় বিমানবন্দরের নতুন আবাসিক কলোনি নির্মাণের প্রস্তাব নেওয়া হয়। কিন্তু বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানের অভাবে সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেড সেখান থেকে ১২ একর জায়গা দখল করে নেয়। বিভিন্ন সময়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিমানবন্দর ব্যবস্থাপকেরা জমিটি উদ্ধারে চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে তাঁরা এ জমি উদ্ধার করতে পারেননি। শুধু তা-ই নয়, ২০১৯ সালের জুলাই মাসে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গিয়েও এই জায়গা উদ্ধার করতে পারেননি।

শাহ আমানত বিমানবন্দরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, দক্ষিণ পতেঙ্গা মৌজায় সাগরপাড়ে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের ২৭ একরের বেশি জায়গা রয়েছে। এর মধ্যে ১২ একর সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেডের দখলে, বাকি জায়গাগুলোর বেশির ভাগ আরও একাধিক ব্যক্তি ও গ্রুপের দখলে চলে গেছে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আলমগীর বলেন, ‘আমি চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে নতুন পরিচালক হিসেবে বদলি হয়ে এসেছি। শুনেছি, বিমানবন্দরের বেশ কিছু জায়গা বেদখল রয়েছে। কোনো সরকারি জায়গা বেদখল হয়ে থাকলে তা উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত