জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলায় অবাধে চলছে নম্বরবিহীন যান মাহিন্দ্রা ও ট্রাক্টর। এসব যানের বেশির ভাগ চালক অদক্ষ। বেপরোয়া গতিতে এসব যানবাহন চলাচলের কারণে প্রতিনিয়তই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।

জানা গেছে, পৌরশহরসহ উপজেলার বিভিন্ন সড়ক ও জনপদে চলাচল করছে এসব মাহিন্দ্র ও ট্রাক্টর। সাধারণত এসব যান দিয়ে ইট, বালু বা সিমেন্ট পরিবহন করা হয়। বেপরোয়া গতিতে ওইসব যান চলাচলের কারণে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জনপদে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি।

ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সড়কে বেশির ভাগ দুর্ঘটনার পেছনে রয়েছে অবৈধ গাড়ি। অটোরিকশার মতো অবৈধ ভটভটির সঙ্গে এখন সড়কে যুক্ত হয়েছে বালুর মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টরের আতঙ্ক। তবে চালকদের দাবি, একান্তই উপায় না থাকায় অনেকেই অবৈধ যান চালাতে বাধ্য হচ্ছেন।

বালু-মাটি বহনে ব্যবহার করা হচ্ছে মাহিন্দ্রা। এ ছাড়া ব্যবহৃত হচ্ছে ট্রাক্টর বা পাওয়ার টিলার চালিত যান। এই যান দিয়ে সাধারণত ইটভাটার ইট, বালু বা মাটি পরিবহন করা হয়। অথচ ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলার—দুটোই মাঠে কৃষিকাজের জন্য অনুমোদিত। সড়ক ও মহাসড়কে পণ্য বা অন্য সামগ্রী বহনের অনুমতি নেই। বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই এসব যান চলছে। প্রশাসনেরও এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। এসব অবৈধ যান চলাচল বন্ধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তাঁরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, পৌরশহরের হাসপাতাল সড়ক দিয়ে প্রতিদিন শতাধিক ট্রাক্টর-মাহিন্দ্র চলাচল করে। এসব যানবাহনচালকের ন্যূনতম প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা নেই বলে দাবি স্থানীয় সূত্রগুলোর। অর্থের লোভে অদক্ষ চালকেরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছার চেষ্টা করে বলেই দুর্ঘটনা ঘটে।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে এক্সকাভেটর মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু তুলে নিয়ে মাহিন্দ্রা ও ট্রাক্টর গাড়িযোগে বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করছে একটি চক্র। যাদের কোনো সরকারি অনুমোদন নেই। আবার এসব যান অপেক্ষাকৃত কম দামে কিনে অদক্ষ চালকেরা ইট-বালু ও ভারী মালামাল পরিবহনের কাজে নেমে পড়েন। ফলে প্রতিদিনই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। প্রতিদিন দুর্ঘটনার খবর পাওয়া গেলেও গণমাধ্যমে সব খবর আসে না।

উপজেলার গাইবান্ধা ইউনিয়নের নাপিতেরচর গ্রামের মাহিন্দ্রাচালক সবুজ আলী বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে মোটা অঙ্কের টাকা দরকার। মাহিন্দ্র গাড়ি চালিয়ে কোনোমতে সংসার চালাচ্ছি।’

নোয়ারপাড়া ইউনিয়নের উলিয়া মোড় এলাকার বাসিন্দা ও ট্রাক্টরচালক বেলাল মিয়া বলেন, ‘সরকার ট্রাক্টরের লাইসেন্স দেয় না। ট্রাক্টরে বালু বহনে যা টাকাপয়সা পাই, তা দিয়ে সংসার চলে। ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে টাকা পাব কই?’

গোয়ালেরচর ইউনিয়নের সভারচর গ্রামের বাসিন্দা মাহিন্দ্রচালক ফিরোজ শেখ বলেন, ‘ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। দৈনিক মজুরিতে গাড়ি চালাই। মাহিন্দ্র গাড়ির লাইসেন্স দেয় না সরকার।’

ইসলামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজেদুর রহমান বলেন, ‘দ্রুতগতিতে ছোট যানবাহনগুলো চলাচলের কারণে কিছুটা অসুবিধা হয়। তবে আইন না মেনে চালানো যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।’

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এস এম জামাল আব্দুন নাছের বাবুল বলেন, অদক্ষ চালক যাতে যানবাহন চালাতে না পারে, সে জন্য উপজেলা প্রশাসন সজাগ রয়েছে। অবৈধ পন্থায় বালুও যাতে কেউ না তুলতে পারে, সে ব্যাপারেও প্রশাসনের লোকজনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মু. তানভীর হাসান রুমান বলেন, ‘এই উপজেলায় আমি সদ্য যোগদান করেছি। বালু উত্তোলনসহ অবৈধ যানবাহনের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’