বিভুরঞ্জন সরকার
নানা আয়োজনে, উৎসাহে, উদ্দীপনায় বিজয়ের ৫০ বছর পালন করলাম আমরা। ৫০ বছর একটি জাতির জীবনে খুব বেশি সময় নয়, আবার একেবারে কমও নয়। এই ৫০ বছরে আমরা পেয়েছি অনেক। আবার না পাওয়ার তালিকাও ছোট নয়। কেউ যদি বলেন, ৫০ বছরে কোনোই প্রাপ্তি নেই, বাংলাদেশ এগিয়ে যায়নি, তাহলে আসলে তিনি ডাহা মিথ্যা বলছেন। আবার যদি কেউ বলেন, ৫০ বছরে বাংলাদেশ সব পেয়েছির দেশ হয়ে উঠেছে, তাহলে তিনিও ঠিক বলছেন না। আমরা এগিয়েছি অবশ্যই। তবে আরও এগিয়ে যেতে হবে। যেসব অপ্রাপ্তি ও অপূর্ণতা রয়েছে, সেসব পাওয়ার পথ সুগম করতে হবে।
রাজনীতি একটি দেশের মূল চালিকাশক্তি। দেশের সব মানুষ রাজনীতি করেন না, অধিকাংশ মানুষই রাজনৈতিক দলের বাইরে থাকেন। আবার যাঁরা রাজনীতি করেন, রাজনীতিসচেতন তাঁরা সবাই একটি রাজনৈতিক দলের সদস্য হন না। মানুষ নানা মত ও নানা পথে বিভক্ত। আর এই ভিন্নতার মধ্যেও একসঙ্গে চলার ঐক্যসূত্র যে রাজনীতি, সেই রাজনীতিই মূলত জনকল্যাণমুখী, বেশি মানুষ তেমন রাজনীতির ওপরই ভরসা রাখেন। ইতিহাসের দীর্ঘ পথে না হেঁটে সংক্ষেপে বলার কথা এটাই যে, একটি গৌরবোজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পাকিস্তান ছিল অগণতান্ত্রিক, সাম্প্রদায়িক ও বৈষম্যমূলক রাষ্ট্র। এসবের বিরুদ্ধে লড়েই যেহেতু বাংলাদেশের অভ্যুদয়, সেহেতু বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও বৈষম্যবিরোধী হবে–এটাই ছিল সাধারণ জনপ্রত্যাশা।
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে শুরুটা সে রকমই হয়েছিল। কিন্তু তাঁকে হত্যার মধ্য দিয়ে ছন্দপতন হলো। তারপর আবার লড়াই, সংগ্রাম। একপর্যায়ে হত্যা কিংবা বন্দুকের নল দেখিয়ে ক্ষমতা দখলের ধারা বদল হলেও রাজনীতির ভেতর ঢুকে গেছে কতগুলো খারাপ প্রবণতা। একসময় বলা হতো ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে বড় দেশ। কিন্তু এখন দেশের চেয়ে দল বড়, আবার ক্ষেত্রবিশেষে দলের চেয়েও বড় হয়ে ওঠেন ব্যক্তি। একসময় রাজনৈতিক নেতারা নীতির প্রতি অনমনীয় থেকে কৌশলের ক্ষেত্রে নমনীয়তা দেখাতেন। এখন কৌশল ও নীতির প্রশ্নে নমনীয়তা দেখান অনেকেই।
দুঃশাসকদের পরাজিত করার বড় লক্ষ্য অর্জনের জন্য পূর্ব বাংলায় বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে উঠেছিল ১৯৫৪ সালের নির্বাচনের সময় হক-ভাসানী-সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে। নির্বাচনে জয়ী হওয়া ছাড়া যুক্তফ্রন্টের অন্য অভিজ্ঞতা সুখকর হয়নি। ফলে পরবর্তী সময়ে সে ধরনের নির্বাচনী জোট আর গড়ে ওঠেনি। সত্তরের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগ নিয়ে একাই লড়েছেন এবং অভূতপূর্ব জয় পেয়েছেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় সর্বদলীয় ঐক্য গঠনের দাবিও আওয়ামী লীগ গ্রাহ্য করেনি। স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগ না চাইলেও ন্যাপ ও সিপিবি ঐক্যের নীতি নিয়ে অগ্রসর হয়েছে। স্বাধীন দেশের রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনার জন্য শুধু সরকারের বিরোধিতা নয়, গঠনমূলক সমালোচনা, অর্থাৎ ঐক্য ও সংগ্রামের নীতি নিয়েছিল ন্যাপ-সিপিবি। মানুষ অবশ্য ঐক্যটাই দেখেছে, সংগ্রাম সেভাবে দেখেনি। এতে সাংগঠনিকভাবে তারা ক্ষতিগ্রস্ত, না লাভবান হয়েছিল, তার কোনো বস্তুনিষ্ঠ মূল্যায়ন সম্ভবত করা হয়নি। ন্যাপ-সিপিবিকে আওয়ামী লীগের বি-টিম বা দালাল বলে খোঁটা দেওয়া হলেও, সিপিবি কিন্তু সে সময় সাংগঠনিক শক্তিসামর্থ্য বাড়াতে ও দৃশ্যমান করে তুলতে পেরেছিল।
এরশাদের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনের সময় দেশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জোট গড়ে তোলার যে ধারা তৈরি হয়, তা পরে আরও সংহত হয়েছে। দেশে রাজনৈতিক দলের সংখ্যা অনেক। তবে মানুষ মূলত দুই ধারায় বিভক্ত। একটা আওয়ামী লীগের ধারা, অন্যটি আওয়ামী লীগবিরোধী তথা বিএনপি-জামায়াত ধারা। রাজনৈতিক জোটও আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির নেতৃত্বেই গঠিত। ভোটের রাজনীতিতে ছোট দলগুলোর উল্লেখযোগ্য কোনো অবস্থান নেই। তাই তারা আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপির সঙ্গে থেকে ক্ষমতার হিস্যা নিতে চায়। দেশে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আছে ১৪-দলীয় জোট এবং বিএনপির নেতৃত্বে ২০-দলীয় জোট। আওয়ামী লীগ টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় আছে। এটা বাংলাদেশের জন্য একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা। আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি এই সময়জুড়েই ক্ষমতার বাইরে আছে। ক্ষমতার পেটে থেকে জন্ম নেওয়া রাজনৈতিক দলটি এত দীর্ঘ সময় ক্ষমতার বাইরে থেকেও টিকে আছে, এটাও এক বড় ঘটনা।
২০০৯ ও ২০১৪ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠনের সময় আওয়ামী লীগ জোটসঙ্গীদের ‘মূল্যায়ন’ করলেও, অর্থাৎ মন্ত্রিত্বের ভাগ দিলেও ২০১৮ সালে মন্ত্রিসভায় জোটের অংশীদারত্ব নেই। আনুষ্ঠানিকভাবে জোট ভেঙে দেওয়া না হলেও জোটের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নৈকট্য কমেছে। জাতীয় পার্টি একসময় মন্ত্রিসভায়ও ছিল আবার সংসদে বিরোধী দলের দায়িত্বও পালন করেছে। এখন জাতীয় পার্টি মন্ত্রিসভায় না থাকলেও সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করছে। জোটের রাজনীতি নিয়ে জোটসঙ্গীদের মধ্যে ক্ষোভ-অসন্তোষের বিষয়টি আর গোপন থাকছে না।
এরশাদের তৈরি জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু গত ২৭ নভেম্বর জাতীয় সংসদে এক বক্তৃতায় বলেছেন, ‘সরকারের কথা বলতে গিয়ে এমন অবস্থা হয়েছে, জনগণ এখন আমাদের আওয়ামী লীগের দালাল বলে। আমরা এখন দালালি নামটা মুছতে চাই। তারপরও যদি আপনাদের মন না ভরে, তাহলে তো কিছু করার নেই।’
‘দালালি’ নাম মোছার জন্য আগামী নির্বাচনে যদি আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনো ধরনের আসন সমঝোতা না হয়, তাহলে জাতীয় পার্টি কি খুব ভালো ফল করবে? গণ-আন্দোলনের মুখে এরশাদের পতনের পরও রংপুরসহ দেশের কিছু এলাকায় জাতীয় পার্টির যে জনপ্রিয়তা ছিল, এত বছর পর তা আর নেই। এককভাবে নির্বাচন করে জাপা কয়টি আসনে জিততে পারবে, তা নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করার মতো রাজনৈতিক জ্যোতিষী দেশে আছে বলে মনে হয় না।
১৪-দলের অন্যতম শরিক দল ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের মুখেও সম্প্রতি আক্ষেপের কথা শোনা গেছে। ১৫ ডিসেম্বর এক সভায় মেনন বলেছেন, ‘জনগণ আমাদের ক্ষমতার উচ্ছিষ্টভোগী বলে। ১৪-দলকে সেভাবে গড়ে তুলতে পারিনি। আওয়ামী লীগ আমাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ঐক্যের কথা বলেছে। সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের স্বার্থে আমরা ঐক্য করেছিলাম। কিন্তু সেই ঐক্যের প্রতিফলন আমরা পাইনি।’
ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য জোটের প্রয়োজন থাকলেও ক্ষমতায় যাওয়ার পর জোট নিয়ে আর তেমন আগ্রহ থাকে না। তারপরও রাশেদ খান মেনন মন্ত্রী হয়েছেন। এখনো সাংসদ আছেন। এগুলো তো ঐক্যের সুফল। আওয়ামী লীগ দয়া না করলে কি এসব হতো? রাজনীতিটা এখন আসলে পাওয়ারই জায়গা হয়ে উঠেছে। পাওয়ার সুযোগ ও সম্ভাবনা না থাকলে আর দল কেন, জোট কেন, রাজনীতি কেন? রাজনীতির কারণেই তো কতজন নেতা হয়েছেন, ক্ষমতার স্বাদও পেয়েছেন। মানুষ দালাল কিংবা উচ্ছিষ্টভোগী বললেই ক্ষতি কী? ভোগ করতে তো সমস্যা হয়নি, হচ্ছে না। তবে ক্ষমতা তো কারোর জন্যই চিরস্থায়ী নয়। তাই দালাল হওয়া কিংবা উচ্ছিষ্টভোগী হওয়াও চিরকালের বিষয় হতে পারে না।
আগামী নির্বাচনের এখনো দেরি আছে। কেমন হবে আগামী নির্বাচন, তা এখনই বলা মুশকিল। জোট থাকবে, নাকি একক শক্তিতে মাঠে নামবে আওয়ামী লীগ—তা-ও পরিষ্কার নয়। আওয়ামী লীগ ঐক্য নিয়ে খুব চিন্তিত বলেও মনে হয় না। রাজনীতি এখন পুরোপুরি আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে। কেউ জোট থেকে বেরিয়ে গেলে আওয়ামী লীগ অথই পানিতে ভাসবে, তা নয়। আওয়ামী লীগ মনে করে ভাত ছিটালে কাকের অভাব হয় না। দেশে যেমন রাজনৈতিক ‘কাউয়া’ বা কাকের অভাব নেই, তেমনি আওয়ামী লীগেরও এখন ভাতের অভাব নেই। পুরোনো দালাল ও উচ্ছিষ্টভোগীর বদলে নতুন দালাল ও উচ্ছিষ্টভোগী জুটে যাবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৃহস্পতি এখন তুঙ্গে। আওয়ামী লীগই শুধু এখন হাসিনানির্ভর নয়, দেশও মোটামুটি হাসিনানির্ভর। শেখ হাসিনা দীর্ঘ সময় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হয়েছেন, হয়েছেন আত্মবিশ্বাসী। উত্তরাধিকারের রাজনীতি নিয়ে যে সমালোচনা, তার বৃত্ত তিনি ভেঙেছেন। ইতিবাচক পথে হেঁটে তিনি মানুষের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাস তৈরিতে সক্ষম হয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, একা তিনি আর কত টানবেন? রাজনীতির ম্যাকানিজম নাকি তাঁর নিয়ন্ত্রণে। সবাইকে তাক লাগিয়ে দেওয়ার জন্য তিনি তাঁর ঝুলিতে পরবর্তী কী ম্যাকানিজম নিয়ে বসে আছেন, সেটাই দেখার অপেক্ষা।
নানা আয়োজনে, উৎসাহে, উদ্দীপনায় বিজয়ের ৫০ বছর পালন করলাম আমরা। ৫০ বছর একটি জাতির জীবনে খুব বেশি সময় নয়, আবার একেবারে কমও নয়। এই ৫০ বছরে আমরা পেয়েছি অনেক। আবার না পাওয়ার তালিকাও ছোট নয়। কেউ যদি বলেন, ৫০ বছরে কোনোই প্রাপ্তি নেই, বাংলাদেশ এগিয়ে যায়নি, তাহলে আসলে তিনি ডাহা মিথ্যা বলছেন। আবার যদি কেউ বলেন, ৫০ বছরে বাংলাদেশ সব পেয়েছির দেশ হয়ে উঠেছে, তাহলে তিনিও ঠিক বলছেন না। আমরা এগিয়েছি অবশ্যই। তবে আরও এগিয়ে যেতে হবে। যেসব অপ্রাপ্তি ও অপূর্ণতা রয়েছে, সেসব পাওয়ার পথ সুগম করতে হবে।
রাজনীতি একটি দেশের মূল চালিকাশক্তি। দেশের সব মানুষ রাজনীতি করেন না, অধিকাংশ মানুষই রাজনৈতিক দলের বাইরে থাকেন। আবার যাঁরা রাজনীতি করেন, রাজনীতিসচেতন তাঁরা সবাই একটি রাজনৈতিক দলের সদস্য হন না। মানুষ নানা মত ও নানা পথে বিভক্ত। আর এই ভিন্নতার মধ্যেও একসঙ্গে চলার ঐক্যসূত্র যে রাজনীতি, সেই রাজনীতিই মূলত জনকল্যাণমুখী, বেশি মানুষ তেমন রাজনীতির ওপরই ভরসা রাখেন। ইতিহাসের দীর্ঘ পথে না হেঁটে সংক্ষেপে বলার কথা এটাই যে, একটি গৌরবোজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পাকিস্তান ছিল অগণতান্ত্রিক, সাম্প্রদায়িক ও বৈষম্যমূলক রাষ্ট্র। এসবের বিরুদ্ধে লড়েই যেহেতু বাংলাদেশের অভ্যুদয়, সেহেতু বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও বৈষম্যবিরোধী হবে–এটাই ছিল সাধারণ জনপ্রত্যাশা।
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে শুরুটা সে রকমই হয়েছিল। কিন্তু তাঁকে হত্যার মধ্য দিয়ে ছন্দপতন হলো। তারপর আবার লড়াই, সংগ্রাম। একপর্যায়ে হত্যা কিংবা বন্দুকের নল দেখিয়ে ক্ষমতা দখলের ধারা বদল হলেও রাজনীতির ভেতর ঢুকে গেছে কতগুলো খারাপ প্রবণতা। একসময় বলা হতো ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে বড় দেশ। কিন্তু এখন দেশের চেয়ে দল বড়, আবার ক্ষেত্রবিশেষে দলের চেয়েও বড় হয়ে ওঠেন ব্যক্তি। একসময় রাজনৈতিক নেতারা নীতির প্রতি অনমনীয় থেকে কৌশলের ক্ষেত্রে নমনীয়তা দেখাতেন। এখন কৌশল ও নীতির প্রশ্নে নমনীয়তা দেখান অনেকেই।
দুঃশাসকদের পরাজিত করার বড় লক্ষ্য অর্জনের জন্য পূর্ব বাংলায় বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে উঠেছিল ১৯৫৪ সালের নির্বাচনের সময় হক-ভাসানী-সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে। নির্বাচনে জয়ী হওয়া ছাড়া যুক্তফ্রন্টের অন্য অভিজ্ঞতা সুখকর হয়নি। ফলে পরবর্তী সময়ে সে ধরনের নির্বাচনী জোট আর গড়ে ওঠেনি। সত্তরের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগ নিয়ে একাই লড়েছেন এবং অভূতপূর্ব জয় পেয়েছেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় সর্বদলীয় ঐক্য গঠনের দাবিও আওয়ামী লীগ গ্রাহ্য করেনি। স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগ না চাইলেও ন্যাপ ও সিপিবি ঐক্যের নীতি নিয়ে অগ্রসর হয়েছে। স্বাধীন দেশের রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনার জন্য শুধু সরকারের বিরোধিতা নয়, গঠনমূলক সমালোচনা, অর্থাৎ ঐক্য ও সংগ্রামের নীতি নিয়েছিল ন্যাপ-সিপিবি। মানুষ অবশ্য ঐক্যটাই দেখেছে, সংগ্রাম সেভাবে দেখেনি। এতে সাংগঠনিকভাবে তারা ক্ষতিগ্রস্ত, না লাভবান হয়েছিল, তার কোনো বস্তুনিষ্ঠ মূল্যায়ন সম্ভবত করা হয়নি। ন্যাপ-সিপিবিকে আওয়ামী লীগের বি-টিম বা দালাল বলে খোঁটা দেওয়া হলেও, সিপিবি কিন্তু সে সময় সাংগঠনিক শক্তিসামর্থ্য বাড়াতে ও দৃশ্যমান করে তুলতে পেরেছিল।
এরশাদের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনের সময় দেশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জোট গড়ে তোলার যে ধারা তৈরি হয়, তা পরে আরও সংহত হয়েছে। দেশে রাজনৈতিক দলের সংখ্যা অনেক। তবে মানুষ মূলত দুই ধারায় বিভক্ত। একটা আওয়ামী লীগের ধারা, অন্যটি আওয়ামী লীগবিরোধী তথা বিএনপি-জামায়াত ধারা। রাজনৈতিক জোটও আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির নেতৃত্বেই গঠিত। ভোটের রাজনীতিতে ছোট দলগুলোর উল্লেখযোগ্য কোনো অবস্থান নেই। তাই তারা আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপির সঙ্গে থেকে ক্ষমতার হিস্যা নিতে চায়। দেশে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আছে ১৪-দলীয় জোট এবং বিএনপির নেতৃত্বে ২০-দলীয় জোট। আওয়ামী লীগ টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় আছে। এটা বাংলাদেশের জন্য একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা। আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি এই সময়জুড়েই ক্ষমতার বাইরে আছে। ক্ষমতার পেটে থেকে জন্ম নেওয়া রাজনৈতিক দলটি এত দীর্ঘ সময় ক্ষমতার বাইরে থেকেও টিকে আছে, এটাও এক বড় ঘটনা।
২০০৯ ও ২০১৪ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠনের সময় আওয়ামী লীগ জোটসঙ্গীদের ‘মূল্যায়ন’ করলেও, অর্থাৎ মন্ত্রিত্বের ভাগ দিলেও ২০১৮ সালে মন্ত্রিসভায় জোটের অংশীদারত্ব নেই। আনুষ্ঠানিকভাবে জোট ভেঙে দেওয়া না হলেও জোটের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নৈকট্য কমেছে। জাতীয় পার্টি একসময় মন্ত্রিসভায়ও ছিল আবার সংসদে বিরোধী দলের দায়িত্বও পালন করেছে। এখন জাতীয় পার্টি মন্ত্রিসভায় না থাকলেও সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করছে। জোটের রাজনীতি নিয়ে জোটসঙ্গীদের মধ্যে ক্ষোভ-অসন্তোষের বিষয়টি আর গোপন থাকছে না।
এরশাদের তৈরি জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু গত ২৭ নভেম্বর জাতীয় সংসদে এক বক্তৃতায় বলেছেন, ‘সরকারের কথা বলতে গিয়ে এমন অবস্থা হয়েছে, জনগণ এখন আমাদের আওয়ামী লীগের দালাল বলে। আমরা এখন দালালি নামটা মুছতে চাই। তারপরও যদি আপনাদের মন না ভরে, তাহলে তো কিছু করার নেই।’
‘দালালি’ নাম মোছার জন্য আগামী নির্বাচনে যদি আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনো ধরনের আসন সমঝোতা না হয়, তাহলে জাতীয় পার্টি কি খুব ভালো ফল করবে? গণ-আন্দোলনের মুখে এরশাদের পতনের পরও রংপুরসহ দেশের কিছু এলাকায় জাতীয় পার্টির যে জনপ্রিয়তা ছিল, এত বছর পর তা আর নেই। এককভাবে নির্বাচন করে জাপা কয়টি আসনে জিততে পারবে, তা নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করার মতো রাজনৈতিক জ্যোতিষী দেশে আছে বলে মনে হয় না।
১৪-দলের অন্যতম শরিক দল ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের মুখেও সম্প্রতি আক্ষেপের কথা শোনা গেছে। ১৫ ডিসেম্বর এক সভায় মেনন বলেছেন, ‘জনগণ আমাদের ক্ষমতার উচ্ছিষ্টভোগী বলে। ১৪-দলকে সেভাবে গড়ে তুলতে পারিনি। আওয়ামী লীগ আমাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ঐক্যের কথা বলেছে। সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের স্বার্থে আমরা ঐক্য করেছিলাম। কিন্তু সেই ঐক্যের প্রতিফলন আমরা পাইনি।’
ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য জোটের প্রয়োজন থাকলেও ক্ষমতায় যাওয়ার পর জোট নিয়ে আর তেমন আগ্রহ থাকে না। তারপরও রাশেদ খান মেনন মন্ত্রী হয়েছেন। এখনো সাংসদ আছেন। এগুলো তো ঐক্যের সুফল। আওয়ামী লীগ দয়া না করলে কি এসব হতো? রাজনীতিটা এখন আসলে পাওয়ারই জায়গা হয়ে উঠেছে। পাওয়ার সুযোগ ও সম্ভাবনা না থাকলে আর দল কেন, জোট কেন, রাজনীতি কেন? রাজনীতির কারণেই তো কতজন নেতা হয়েছেন, ক্ষমতার স্বাদও পেয়েছেন। মানুষ দালাল কিংবা উচ্ছিষ্টভোগী বললেই ক্ষতি কী? ভোগ করতে তো সমস্যা হয়নি, হচ্ছে না। তবে ক্ষমতা তো কারোর জন্যই চিরস্থায়ী নয়। তাই দালাল হওয়া কিংবা উচ্ছিষ্টভোগী হওয়াও চিরকালের বিষয় হতে পারে না।
আগামী নির্বাচনের এখনো দেরি আছে। কেমন হবে আগামী নির্বাচন, তা এখনই বলা মুশকিল। জোট থাকবে, নাকি একক শক্তিতে মাঠে নামবে আওয়ামী লীগ—তা-ও পরিষ্কার নয়। আওয়ামী লীগ ঐক্য নিয়ে খুব চিন্তিত বলেও মনে হয় না। রাজনীতি এখন পুরোপুরি আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে। কেউ জোট থেকে বেরিয়ে গেলে আওয়ামী লীগ অথই পানিতে ভাসবে, তা নয়। আওয়ামী লীগ মনে করে ভাত ছিটালে কাকের অভাব হয় না। দেশে যেমন রাজনৈতিক ‘কাউয়া’ বা কাকের অভাব নেই, তেমনি আওয়ামী লীগেরও এখন ভাতের অভাব নেই। পুরোনো দালাল ও উচ্ছিষ্টভোগীর বদলে নতুন দালাল ও উচ্ছিষ্টভোগী জুটে যাবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৃহস্পতি এখন তুঙ্গে। আওয়ামী লীগই শুধু এখন হাসিনানির্ভর নয়, দেশও মোটামুটি হাসিনানির্ভর। শেখ হাসিনা দীর্ঘ সময় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হয়েছেন, হয়েছেন আত্মবিশ্বাসী। উত্তরাধিকারের রাজনীতি নিয়ে যে সমালোচনা, তার বৃত্ত তিনি ভেঙেছেন। ইতিবাচক পথে হেঁটে তিনি মানুষের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাস তৈরিতে সক্ষম হয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, একা তিনি আর কত টানবেন? রাজনীতির ম্যাকানিজম নাকি তাঁর নিয়ন্ত্রণে। সবাইকে তাক লাগিয়ে দেওয়ার জন্য তিনি তাঁর ঝুলিতে পরবর্তী কী ম্যাকানিজম নিয়ে বসে আছেন, সেটাই দেখার অপেক্ষা।
পর্দার নায়িকারা নিজেদের বয়স আড়ালে রাখা পছন্দ করেন। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম আজমেরী হক বাঁধন। প্রতিবছর নিজের জন্মদিনে জানান দেন তাঁর বয়স। গতকাল ছিল বাঁধনের ৪১তম জন্মদিন। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেই জানালেন এই তথ্য।
২ দিন আগে১০ বছরের বেশি সময় ধরে শোবিজে কাজ করছেন অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া। নাটকের পাশাপাশি ওটিটিতে দেখা গেছে তাঁকে। সরকারি অনুদানের ‘দেবী’ নামের একটি সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন। প্রশংসিত হলেও সিনেমায় আর দেখা মেলেনি তাঁর। ছোট পর্দাতেও অনেক দিন ধরে অনিয়মিত তিনি। এবার শবনম ফারিয়া হাজির হচ্ছেন নতুন পরিচয়ে। কমেডি রিয়েলিটি
২ দিন আগেআমাদের লোকসংস্কৃতির অন্যতম ঐতিহ্য যাত্রাপালা। গণমানুষের সংস্কৃতি হিসেবে বিবেচিত এই যাত্রাপালা নিয়ে শিল্পকলা একাডেমি আয়োজন করছে ‘যাত্রা উৎসব-২০২৪’। আগামী ১ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে শুরু হবে ৭ দিনব্যাপী এই উৎসব।
২ দিন আগে‘বঙ্গবন্ধু’ পদবি বিলীন হবে না। হতে পারে না। যেমনটি ‘দেশবন্ধু’ চিত্তরঞ্জন দাশের পদবি বিলীন হয়নি। ইতিহাসে এসব পদবি অম্লান ও অক্ষয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিত্ব ছিল অনন্যসাধারণ। আপনজনকে তো অবশ্যই, শত্রুপক্ষের লোকেরাও ব্যক্তিগত পর্যায়ে তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হতেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর উচ্চপদের
২ দিন আগে