জাহীদ রেজা নূর, ঢাকা
কত না বিচিত্র সম্ভার নিয়ে ঋদ্ধ হয়েছে বাংলা ভাষা!
বাংলার আদি অধিবাসীদের পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ার ভাষাই ছিল বাংলা। তারা বাংলা ভিন্ন অন্য কোনো ভাষায় কথা বলতেন না। অন্য যে ভাষাগুলো পরে দাপটের সঙ্গে রাজত্ব করেছে, এর কোনোটাই বাঙালির মুখের ভাষা ছিল না। শিল্পী আবদুল লতিফ যখন ভাষা আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে গাইলেন ‘ওরা আমার মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চায়’, তখন স্পষ্টতই তিনি বুঝিয়ে দিলেন ‘আমার মুখের ভাষা’ কোনটি।
একটি লোকগোষ্ঠীর প্রধান পরিচয় তার ভাষায়। আমরা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর কথা শুনেছি। ভাষাতত্ত্বে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা আছে। কী করে প্রাকৃত ভাষা থেকে এ যুগের ভারতীয় ভাষাগুলোর জন্ম হয়েছে, সে কথাও আর অজানা নয়। তাই ভাষা আন্দোলন নিয়ে কথা বলতে গেলে বলতে হবে, এই ভূখণ্ডে যে নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীগুলো একদা বসবাস করেছে কিংবা পরে তাদের কেউ কেউ সংমিশ্রণের মাধ্যমে পরিণত হয়েছে এক জাতিতে, তাদের ভাষা-সংস্কৃতির মধ্যেই খুঁজতে হবে বাংলা ভাষার উপাদান। এরা সবাই মায়ের মতোই শিশু বাংলা ভাষাকে আগলে রেখেছিল। তাই ইন্দো-আর্য ভাষাগোষ্ঠীর পাশাপাশি অস্ট্রিক, মঙ্গোলীয় ও দ্রাবিড় উপাদান দেখতে পাওয়া যাবে বাংলা ভাষায়। বাংলার নদী-গ্রামগুলোর নামের দিকে তাকান। কিংবা হাট-বাজার, গঞ্জের নামগুলো কত-না বিচিত্র! কিংবা করাত, দা, পগার, বরজ, বাখারি, কানি—এই শব্দগুলোর উৎস খুঁজতে গেলেই আমরা অতীত যুগের স্মৃতিচিহ্নের সঙ্গে পরিচিত হব। আমাদের অতীত—প্রাচীন কাল তাতে মূর্ত হয়ে ওঠে।
গাঙ্গেয় বদ্বীপ এলাকার ভূবৈশিষ্ট্য ও প্রকৃতি এখানকার মানুষের সামাজিক জীবন ও অর্থনীতিকে স্বতন্ত্র করে তুলেছিল। ধীরে ধীরে দূরের মানুষেরা কাছে এসেছে। এবং ইতিহাস বলে, এই মানুষদের কাছাকাছি আনার ক্ষেত্রে বড় অবদান রেখেছে সুলতানি আমলের রাষ্ট্রনীতি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা। আমরা চৌদ্দ শতকের মাঝামাঝিতে চোখ রাখব। সে সময় ইলিয়াসশাহি শাসনের শুরুতে রাঢ়, বরেন্দ্র, গৌড়, সমতট, লখনৌতি, সোনারগাঁ, বঙ্গ অঞ্চলগুলো একই শাসনব্যবস্থার অন্তর্গত হয়েছিল। সে সময়ই এই পুরো অঞ্চল বাঙ্গালা নামে পরিচিত হতে শুরু করেছিল। এই সময়টিতে বাংলা ভাষা হয়ে উঠেছিল সর্ববঙ্গীয়। অর্থাৎ একটা ভূখণ্ড, তার পরিণত ভাষা, সাহিত্যে তার প্রকাশের ক্ষেত্র তৈরি হয়ে গেল। লোকগোষ্ঠী গঠন শুরু হয়েছিল পাল আমলে। চৌদ্দ-পনেরো শতকে এসে ধীরে ধীরে তা পরিণত হতে থাকল।
মনে রাখতে হবে, দ্বাদশ শতাব্দীতে দেশীয় ভাষায় শাস্ত্রচর্চা করা নিষেধ ছিল। এমনও বলা হতো, কেউ যদি দেশীয় ভাষা, এ ক্ষেত্রে বাংলায় শাস্ত্রচর্চা করে, তবে সে মৃত্যুর পর রৌরব নামের নরকে যাবে। রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে ও সামাজিক বলয়ে ব্রাহ্মণের দাপট তখন চরমে। তাই ‘দেবভাষা’ সংস্কৃতের জয়জয়কার।
শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ ১৩৯০ সালের দিকে বাংলায় স্বাধীন সুলতানি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সে সময় রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং স্থানীয় সামন্তপ্রভুদের প্রেরণায় স্থানীয় ভাষা বাংলায় সাহিত্যচর্চা উৎসাহিত হয়েছিল। কিন্তু তারপর? মোগল শাসনক্ষেত্র যত বিস্তৃত হতে থাকল, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য ততই হয়ে পড়ল ম্রিয়মাণ। ওই সময় যাদের হাতে ক্ষমতা ছিল, যারা হয়ে উঠেছিল ক্ষমতাধর শ্রেণি, তারা দেশীয় মানুষের মাতৃভাষাকে সুদৃষ্টিতে দেখেনি। শুধু কি তাই? বাংলা ভাষায় কাব্য রচনা করায় কবি সৈয়দ সুলতানকে (১৫৫০ খ্রি.-১৬৪৮ খ্রি.) ‘মোনাফেক’ আখ্যায়িত করা হয়েছিল। সে সময় বাংলা ভাষা নিয়ে যে টানাপোড়েন চলছিল, তার প্রমাণও পাওয়া যায় কবি আবদুল হাকিমের সেই অতি চেনা শব্দাবলিতে: ‘যে সবে বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী/ সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি।’ একদিকে নিষেধাজ্ঞা, অন্যদিকে প্রতিবাদ চলছিল সে সময়টায়। এ নিয়েই কথা বলব এরপর। এবং বলার চেষ্টা করব, কেন বাংলা সংস্কৃতের দুহিতা নয়, সে কথা। প্রাকৃত থেকে বাংলায় পরিণত হওয়ার গল্পটাও তো আসতে হবে ভাষা আন্দোলনের আলোচনায়।
কত না বিচিত্র সম্ভার নিয়ে ঋদ্ধ হয়েছে বাংলা ভাষা!
বাংলার আদি অধিবাসীদের পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ার ভাষাই ছিল বাংলা। তারা বাংলা ভিন্ন অন্য কোনো ভাষায় কথা বলতেন না। অন্য যে ভাষাগুলো পরে দাপটের সঙ্গে রাজত্ব করেছে, এর কোনোটাই বাঙালির মুখের ভাষা ছিল না। শিল্পী আবদুল লতিফ যখন ভাষা আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে গাইলেন ‘ওরা আমার মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চায়’, তখন স্পষ্টতই তিনি বুঝিয়ে দিলেন ‘আমার মুখের ভাষা’ কোনটি।
একটি লোকগোষ্ঠীর প্রধান পরিচয় তার ভাষায়। আমরা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর কথা শুনেছি। ভাষাতত্ত্বে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা আছে। কী করে প্রাকৃত ভাষা থেকে এ যুগের ভারতীয় ভাষাগুলোর জন্ম হয়েছে, সে কথাও আর অজানা নয়। তাই ভাষা আন্দোলন নিয়ে কথা বলতে গেলে বলতে হবে, এই ভূখণ্ডে যে নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীগুলো একদা বসবাস করেছে কিংবা পরে তাদের কেউ কেউ সংমিশ্রণের মাধ্যমে পরিণত হয়েছে এক জাতিতে, তাদের ভাষা-সংস্কৃতির মধ্যেই খুঁজতে হবে বাংলা ভাষার উপাদান। এরা সবাই মায়ের মতোই শিশু বাংলা ভাষাকে আগলে রেখেছিল। তাই ইন্দো-আর্য ভাষাগোষ্ঠীর পাশাপাশি অস্ট্রিক, মঙ্গোলীয় ও দ্রাবিড় উপাদান দেখতে পাওয়া যাবে বাংলা ভাষায়। বাংলার নদী-গ্রামগুলোর নামের দিকে তাকান। কিংবা হাট-বাজার, গঞ্জের নামগুলো কত-না বিচিত্র! কিংবা করাত, দা, পগার, বরজ, বাখারি, কানি—এই শব্দগুলোর উৎস খুঁজতে গেলেই আমরা অতীত যুগের স্মৃতিচিহ্নের সঙ্গে পরিচিত হব। আমাদের অতীত—প্রাচীন কাল তাতে মূর্ত হয়ে ওঠে।
গাঙ্গেয় বদ্বীপ এলাকার ভূবৈশিষ্ট্য ও প্রকৃতি এখানকার মানুষের সামাজিক জীবন ও অর্থনীতিকে স্বতন্ত্র করে তুলেছিল। ধীরে ধীরে দূরের মানুষেরা কাছে এসেছে। এবং ইতিহাস বলে, এই মানুষদের কাছাকাছি আনার ক্ষেত্রে বড় অবদান রেখেছে সুলতানি আমলের রাষ্ট্রনীতি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা। আমরা চৌদ্দ শতকের মাঝামাঝিতে চোখ রাখব। সে সময় ইলিয়াসশাহি শাসনের শুরুতে রাঢ়, বরেন্দ্র, গৌড়, সমতট, লখনৌতি, সোনারগাঁ, বঙ্গ অঞ্চলগুলো একই শাসনব্যবস্থার অন্তর্গত হয়েছিল। সে সময়ই এই পুরো অঞ্চল বাঙ্গালা নামে পরিচিত হতে শুরু করেছিল। এই সময়টিতে বাংলা ভাষা হয়ে উঠেছিল সর্ববঙ্গীয়। অর্থাৎ একটা ভূখণ্ড, তার পরিণত ভাষা, সাহিত্যে তার প্রকাশের ক্ষেত্র তৈরি হয়ে গেল। লোকগোষ্ঠী গঠন শুরু হয়েছিল পাল আমলে। চৌদ্দ-পনেরো শতকে এসে ধীরে ধীরে তা পরিণত হতে থাকল।
মনে রাখতে হবে, দ্বাদশ শতাব্দীতে দেশীয় ভাষায় শাস্ত্রচর্চা করা নিষেধ ছিল। এমনও বলা হতো, কেউ যদি দেশীয় ভাষা, এ ক্ষেত্রে বাংলায় শাস্ত্রচর্চা করে, তবে সে মৃত্যুর পর রৌরব নামের নরকে যাবে। রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে ও সামাজিক বলয়ে ব্রাহ্মণের দাপট তখন চরমে। তাই ‘দেবভাষা’ সংস্কৃতের জয়জয়কার।
শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ ১৩৯০ সালের দিকে বাংলায় স্বাধীন সুলতানি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সে সময় রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং স্থানীয় সামন্তপ্রভুদের প্রেরণায় স্থানীয় ভাষা বাংলায় সাহিত্যচর্চা উৎসাহিত হয়েছিল। কিন্তু তারপর? মোগল শাসনক্ষেত্র যত বিস্তৃত হতে থাকল, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য ততই হয়ে পড়ল ম্রিয়মাণ। ওই সময় যাদের হাতে ক্ষমতা ছিল, যারা হয়ে উঠেছিল ক্ষমতাধর শ্রেণি, তারা দেশীয় মানুষের মাতৃভাষাকে সুদৃষ্টিতে দেখেনি। শুধু কি তাই? বাংলা ভাষায় কাব্য রচনা করায় কবি সৈয়দ সুলতানকে (১৫৫০ খ্রি.-১৬৪৮ খ্রি.) ‘মোনাফেক’ আখ্যায়িত করা হয়েছিল। সে সময় বাংলা ভাষা নিয়ে যে টানাপোড়েন চলছিল, তার প্রমাণও পাওয়া যায় কবি আবদুল হাকিমের সেই অতি চেনা শব্দাবলিতে: ‘যে সবে বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী/ সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি।’ একদিকে নিষেধাজ্ঞা, অন্যদিকে প্রতিবাদ চলছিল সে সময়টায়। এ নিয়েই কথা বলব এরপর। এবং বলার চেষ্টা করব, কেন বাংলা সংস্কৃতের দুহিতা নয়, সে কথা। প্রাকৃত থেকে বাংলায় পরিণত হওয়ার গল্পটাও তো আসতে হবে ভাষা আন্দোলনের আলোচনায়।
পর্দার নায়িকারা নিজেদের বয়স আড়ালে রাখা পছন্দ করেন। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম আজমেরী হক বাঁধন। প্রতিবছর নিজের জন্মদিনে জানান দেন তাঁর বয়স। গতকাল ছিল বাঁধনের ৪১তম জন্মদিন। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেই জানালেন এই তথ্য।
২ দিন আগে১০ বছরের বেশি সময় ধরে শোবিজে কাজ করছেন অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া। নাটকের পাশাপাশি ওটিটিতে দেখা গেছে তাঁকে। সরকারি অনুদানের ‘দেবী’ নামের একটি সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন। প্রশংসিত হলেও সিনেমায় আর দেখা মেলেনি তাঁর। ছোট পর্দাতেও অনেক দিন ধরে অনিয়মিত তিনি। এবার শবনম ফারিয়া হাজির হচ্ছেন নতুন পরিচয়ে। কমেডি রিয়েলিটি
২ দিন আগেআমাদের লোকসংস্কৃতির অন্যতম ঐতিহ্য যাত্রাপালা। গণমানুষের সংস্কৃতি হিসেবে বিবেচিত এই যাত্রাপালা নিয়ে শিল্পকলা একাডেমি আয়োজন করছে ‘যাত্রা উৎসব-২০২৪’। আগামী ১ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে শুরু হবে ৭ দিনব্যাপী এই উৎসব।
২ দিন আগে‘বঙ্গবন্ধু’ পদবি বিলীন হবে না। হতে পারে না। যেমনটি ‘দেশবন্ধু’ চিত্তরঞ্জন দাশের পদবি বিলীন হয়নি। ইতিহাসে এসব পদবি অম্লান ও অক্ষয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিত্ব ছিল অনন্যসাধারণ। আপনজনকে তো অবশ্যই, শত্রুপক্ষের লোকেরাও ব্যক্তিগত পর্যায়ে তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হতেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর উচ্চপদের
২ দিন আগে