নূরে আলম সিদ্দিকী
৭ মার্চ সকাল ১০ টা। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসায় চরম উত্তেজনা। এটা কোনো সংঘর্ষের রূপ লাভের উত্তেজনা ছিল না। উত্তেজনা ছিল বঙ্গবন্ধু আজ তাঁর বক্তৃতায় কী বলবেন, তা নিয়ে। জনান্তিকে বলে রাখি, বাংলাদেশের সমগ্র জনগোষ্ঠীই স্বাধীনতার প্রত্যয়ে সুদৃঢ় থাকলেও মূল রাজনীতির স্রোতধারায় তিনটি অভিমত তখনো কমবেশি সক্রিয় ছিল।
আওয়ামী লীগের একটি ভাগ তখনো ধারণা পোষণ করত, ২৩ বছর পর সরকার গঠনের সুযোগ যখন পেয়েছি, তখন সরকার গঠনের পর সব শোষণের হিসাব পাই পাই করে বুঝে নিয়ে ওদের আমরা নিজেরাই খোদা হাফেজ বলে দেব। এই চিন্তাটি উৎসারিত হয় দৈনিক ইত্তেফাকের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার কাছ থেকে। তাঁরই সহকর্মী ও চেতনার উত্তরসূরি, বঙ্গবন্ধুর বাল্যবন্ধু সিরাজুদ্দীন হোসেন এই ধারণাটির সরব প্রবক্তা ছিলেন। প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব খুব সম্ভবত ক্ষমতার প্রলোভনের আঙ্গিকে নয়, প্রত্যয়ের অংশ হিসেবেই ওই কথাটি বিশ্বাস করতেন। তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া ও সিরাজুদ্দীন হোসেনকে অনেকের সঙ্গে আমরাও সাংবাদিক হিসেবে নয়, বরং ভাবতাম আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক চেতনার দার্শনিক।
আরেক দল, যারা কোনো অবস্থাতেই গণতান্ত্রিক ধারার আন্দোলন সফলতার সৈকতে পৌঁছাতে পারে এই চেতনাটিতে বিশ্বাস করত না বরং’ ৭০-এর নির্বাচনের ম্যান্ডেট আদায়ের প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠে আওয়াজ তুলত। তাঁরা বলতেন, ‘ভোটের কথা বলে যারা, এহিয়া খানের দালাল তারা’, ‘বাংলার অপর নাম, ভিয়েতনাম ভিয়েতনাম’, ‘মুক্তির একই পথ, সশস্ত্র বিপ্লব’, ‘ভোটের বাক্সে লাথি মারো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’, ‘নির্বাচন নির্বাচন, প্রহসন প্রহসন’। তাঁরা চেয়েছিলেন, ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধু একতরফাভাবে জন-গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের নাম ঘোষণা করবেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তা করেননি।
তৃতীয় দলে ছিলাম আমরা। যারা বন্দুকের নলকে শক্তির উৎস হিসেবে কোনো দিনই বিশ্বাস করিনি। আমরা আমাদের শক্তির উৎস হিসেবে পেন্টাগন, ক্রেমলিন অথবা দিল্লির দুর্গকে কোনো দিনই ভাবিনি। মানুষের বুক-নিঃসৃত সমর্থনই আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের মূল শক্তি মনে করেছি। মানুষের হৃদয়-নিংড়ানো আশীর্বাদই আমাদের’ ৭০-এর নির্বাচনের সপক্ষে ম্যান্ডেট এনে দিতে পারবে—এই প্রত্যয়ে উজ্জীবিত ছিলাম।
উল্লিখিত তিনটি শক্তিকেই বঙ্গবন্ধু অত্যন্ত সুকৌশলে পোষ মানিয়ে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও আমাদের বিশ্বাস ও প্রতীতির প্রতি তাঁর নিরঙ্কুশ আস্থা ছিল। তাঁর সমস্ত সত্তায় বাংলার মানুষের হৃদয় অনুরণিত হতো। এ কারণেই স্বাধীনতা-পূর্বকালে সব ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে তিনি বাংলার মানুষকে একটি অদৃশ্য ঐক্যের রাখিবন্ধনে বাঁধতে পারলেন। এই তিন মতের সমর্থকেরাই উপস্থিত ছিলেন ৩২ নম্বরে।
মানিক মিয়ার চিন্তার উত্তরাধিকারী হিসেবে সিরাজুদ্দীন হোসেনসহ আওয়ামী লীগের বেশ কিছু প্রবীণ নেতা বঙ্গবন্ধুকে বুঝিয়েছিলেন, ক্ষমতার পথ ব্যবহার করাই হচ্ছে বাংলার কল্যাণের ও শোষণের প্রতিশোধের একমাত্র উপায়। জন-গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ ঘোষণা এবং সশস্ত্র বিপ্লবের প্রতি যাঁদের প্রতীতি ও প্রত্যয় ছিল অবিচল, তাঁদের মধ্যে প্রধান ছিলেন সিরাজুল আলম খান। আমাদের চেতনার আঙ্গিকে যাঁরা আমার অগ্রজ শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, এনায়েতুর রহমান, সৈয়দ মাজহারুল হক বাকী, আবদুর রাজ্জাক প্রমুখ ছিলেন। তাঁরা বিশ্বাস করতেন, ম্যান্ডেটের পর আঘাত হানলে জীবনের বিনিময়ে হলেও শুধু প্রতিরোধই নয়, প্রত্যাঘাতও করা হবে।
৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন, পাকিস্তানিদের কূটকৌশলগুলো বিবেচনায় রেখেই তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে স্বাধীনতার প্রত্যয়দীপ্ত ঘোষণা না দিলে আন্দোলন মুখ থুবড়ে পড়বে। ওরাও আমাদের ওপর হিংস্র হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়বে। এখানে আত্মপ্রচারের স্বার্থে নয়, ইতিহাসের দায় মোচনের জন্যই বলতে হচ্ছে, আমাদের মতটির প্রতিনিধিত্ব আমাকেই করতে হতো। এটা অন্য কোনো কারণে নয়, আমার প্রতি বঙ্গবন্ধুর অপত্যস্নেহ, কারাগারে দীর্ঘ ১৭ মাস তাঁর সান্নিধ্যে তাঁর মানসিকতাকে উপলব্ধি করার একটা বিরল সৌভাগ্যের অধিকারী ছিলাম আমি।
৩২ নম্বর থেকে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আমরা চারজন, সিরাজুল আলম খান এবং খুব সম্ভবত তোফায়েল আহমেদ একই গাড়িতে রেসকোর্স ময়দানে পৌঁছাই। আমরা মঞ্চে উঠে গেলাম (সিরাজ ভাই তাঁর স্বভাবগত বৈশিষ্ট্যে মঞ্চে ওঠেননি)। আমরা মাইকের দখল নিলাম। এই বিশাল জনসমুদ্রকে স্লোগানে স্লোগানে শুধু মুখর করিনি, মানুষকে উদ্বেলিত করেছি, উচ্ছ্বসিত করেছি। মানুষের প্রত্যয় ও প্রতীতিকে শাণিত করেছি স্লোগানে স্লোগানে।
আমি বিনীতভাবে জানাতে চাই, বঙ্গবন্ধু যখন ধীর পদক্ষেপে মঞ্চের সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠছিলেন, তখন বঙ্গবন্ধুকে শুনিয়েই আমি রেসকোর্সের উদ্বেলিত জনতাকে বললাম, ‘বঙ্গবন্ধু আমাদের কাছে জানতে চেয়েছেন, তোমরা তো স্বাধীনতা অর্জনের প্রতিজ্ঞায় উজ্জীবিত; প্রদীপ্ত সূর্যরশ্মির মতো ভাস্বর। তোমাদের শক্তি কোথায়। সামর্থ্য কতটুকু। আমরা বঙ্গবন্ধুকে বলেছি, আমাদের শক্তির উৎস এই উদ্বেলিত জনতা। একেই আমরা গণসমুদ্রের ফেনিল চূড়ায় ভিসুভিয়াসের মতো জ্বালাব। একেই আমরা আগ্নেয়গিরির গলিত লাভার মতো বিস্ফোরিত করে ওদের সব ষড়যন্ত্রকে ছিন্নভিন্ন করে স্বাধীনতার প্রদীপ্ত সূর্যকে ছিনিয়ে আনব।’ তাঁকে দুহাত তুলে দেখিয়ে বললাম, ‘ওই যে বঙ্গবন্ধু মঞ্চে উঠছেন। তাঁর নির্দেশে স্বাধীনতার জন্য বুকের শেষ রক্তবিন্দু প্রদান করতে আপনারা প্রস্তুত আছেন কি না।’
রেসকোর্স ময়দান ভরা জনতা দুহাত উত্তোলন করে বজ্রনির্ঘোষে গর্জে উঠল, ‘জয় বাংলা’। বঙ্গবন্ধু ধীর পদক্ষেপে এসে মাইকের সামনে দাঁড়ালেন। তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণটি শুরু করলেন।
ভাষণটি ছিল বাংলার মানুষের হৃদয়ের অনুরণন। ভাষাশৈলী, প্রকাশভঙ্গি, শব্দচয়ন, অভিব্যক্তির বহিঃপ্রকাশ—সবকিছু মিলে একটা অদ্ভুত রাজনৈতিক কৌশলের মাধ্যমে স্বাধীনতার পূর্ণ ঘোষণাই দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অতি সতর্কতার সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শব্দচয়নের যে কুশলী পারদর্শিতা দেখিয়েছেন, তাতে বিচ্ছিন্নতার অভিযোগে অভিযুক্ত করার কোনো সুযোগ তিনি রাখেননি। আমি তাঁর শতাধিক ভাষণ নিজ কানে শোনার সৌভাগ্যের অধিকারী। রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে তো বটেই, নির্দেশ-নির্দেশনাকে উপলব্ধি ও মননশীলতায় পরিণত করার জন্য এবং তাঁর বাগ্মিতাকে জ্ঞানপিপাসু ঋষি-বালকের মতো অনুশীলন করার জন্য আমি একান্ত চিত্তে তাঁর বক্তৃতা শুধু শ্রবণ করিনি, অনুধাবন করেছি, উপলব্ধি করেছি, আত্মস্থ করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টাও চালিয়েছি। সত্যতার খাতিরে এ বাধ্যবাধকতাকে স্বীকার করতেই হবে, তাঁর নিজের দেওয়া কোনো ভাষণের তুলনা ৭ মার্চের ভাষণের সঙ্গে হতে পারে না।
লেখক: নূরে আলম সিদ্দিকী, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি
৭ মার্চ সকাল ১০ টা। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসায় চরম উত্তেজনা। এটা কোনো সংঘর্ষের রূপ লাভের উত্তেজনা ছিল না। উত্তেজনা ছিল বঙ্গবন্ধু আজ তাঁর বক্তৃতায় কী বলবেন, তা নিয়ে। জনান্তিকে বলে রাখি, বাংলাদেশের সমগ্র জনগোষ্ঠীই স্বাধীনতার প্রত্যয়ে সুদৃঢ় থাকলেও মূল রাজনীতির স্রোতধারায় তিনটি অভিমত তখনো কমবেশি সক্রিয় ছিল।
আওয়ামী লীগের একটি ভাগ তখনো ধারণা পোষণ করত, ২৩ বছর পর সরকার গঠনের সুযোগ যখন পেয়েছি, তখন সরকার গঠনের পর সব শোষণের হিসাব পাই পাই করে বুঝে নিয়ে ওদের আমরা নিজেরাই খোদা হাফেজ বলে দেব। এই চিন্তাটি উৎসারিত হয় দৈনিক ইত্তেফাকের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার কাছ থেকে। তাঁরই সহকর্মী ও চেতনার উত্তরসূরি, বঙ্গবন্ধুর বাল্যবন্ধু সিরাজুদ্দীন হোসেন এই ধারণাটির সরব প্রবক্তা ছিলেন। প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব খুব সম্ভবত ক্ষমতার প্রলোভনের আঙ্গিকে নয়, প্রত্যয়ের অংশ হিসেবেই ওই কথাটি বিশ্বাস করতেন। তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া ও সিরাজুদ্দীন হোসেনকে অনেকের সঙ্গে আমরাও সাংবাদিক হিসেবে নয়, বরং ভাবতাম আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক চেতনার দার্শনিক।
আরেক দল, যারা কোনো অবস্থাতেই গণতান্ত্রিক ধারার আন্দোলন সফলতার সৈকতে পৌঁছাতে পারে এই চেতনাটিতে বিশ্বাস করত না বরং’ ৭০-এর নির্বাচনের ম্যান্ডেট আদায়ের প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠে আওয়াজ তুলত। তাঁরা বলতেন, ‘ভোটের কথা বলে যারা, এহিয়া খানের দালাল তারা’, ‘বাংলার অপর নাম, ভিয়েতনাম ভিয়েতনাম’, ‘মুক্তির একই পথ, সশস্ত্র বিপ্লব’, ‘ভোটের বাক্সে লাথি মারো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’, ‘নির্বাচন নির্বাচন, প্রহসন প্রহসন’। তাঁরা চেয়েছিলেন, ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধু একতরফাভাবে জন-গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের নাম ঘোষণা করবেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তা করেননি।
তৃতীয় দলে ছিলাম আমরা। যারা বন্দুকের নলকে শক্তির উৎস হিসেবে কোনো দিনই বিশ্বাস করিনি। আমরা আমাদের শক্তির উৎস হিসেবে পেন্টাগন, ক্রেমলিন অথবা দিল্লির দুর্গকে কোনো দিনই ভাবিনি। মানুষের বুক-নিঃসৃত সমর্থনই আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের মূল শক্তি মনে করেছি। মানুষের হৃদয়-নিংড়ানো আশীর্বাদই আমাদের’ ৭০-এর নির্বাচনের সপক্ষে ম্যান্ডেট এনে দিতে পারবে—এই প্রত্যয়ে উজ্জীবিত ছিলাম।
উল্লিখিত তিনটি শক্তিকেই বঙ্গবন্ধু অত্যন্ত সুকৌশলে পোষ মানিয়ে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও আমাদের বিশ্বাস ও প্রতীতির প্রতি তাঁর নিরঙ্কুশ আস্থা ছিল। তাঁর সমস্ত সত্তায় বাংলার মানুষের হৃদয় অনুরণিত হতো। এ কারণেই স্বাধীনতা-পূর্বকালে সব ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে তিনি বাংলার মানুষকে একটি অদৃশ্য ঐক্যের রাখিবন্ধনে বাঁধতে পারলেন। এই তিন মতের সমর্থকেরাই উপস্থিত ছিলেন ৩২ নম্বরে।
মানিক মিয়ার চিন্তার উত্তরাধিকারী হিসেবে সিরাজুদ্দীন হোসেনসহ আওয়ামী লীগের বেশ কিছু প্রবীণ নেতা বঙ্গবন্ধুকে বুঝিয়েছিলেন, ক্ষমতার পথ ব্যবহার করাই হচ্ছে বাংলার কল্যাণের ও শোষণের প্রতিশোধের একমাত্র উপায়। জন-গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ ঘোষণা এবং সশস্ত্র বিপ্লবের প্রতি যাঁদের প্রতীতি ও প্রত্যয় ছিল অবিচল, তাঁদের মধ্যে প্রধান ছিলেন সিরাজুল আলম খান। আমাদের চেতনার আঙ্গিকে যাঁরা আমার অগ্রজ শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, এনায়েতুর রহমান, সৈয়দ মাজহারুল হক বাকী, আবদুর রাজ্জাক প্রমুখ ছিলেন। তাঁরা বিশ্বাস করতেন, ম্যান্ডেটের পর আঘাত হানলে জীবনের বিনিময়ে হলেও শুধু প্রতিরোধই নয়, প্রত্যাঘাতও করা হবে।
৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন, পাকিস্তানিদের কূটকৌশলগুলো বিবেচনায় রেখেই তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে স্বাধীনতার প্রত্যয়দীপ্ত ঘোষণা না দিলে আন্দোলন মুখ থুবড়ে পড়বে। ওরাও আমাদের ওপর হিংস্র হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়বে। এখানে আত্মপ্রচারের স্বার্থে নয়, ইতিহাসের দায় মোচনের জন্যই বলতে হচ্ছে, আমাদের মতটির প্রতিনিধিত্ব আমাকেই করতে হতো। এটা অন্য কোনো কারণে নয়, আমার প্রতি বঙ্গবন্ধুর অপত্যস্নেহ, কারাগারে দীর্ঘ ১৭ মাস তাঁর সান্নিধ্যে তাঁর মানসিকতাকে উপলব্ধি করার একটা বিরল সৌভাগ্যের অধিকারী ছিলাম আমি।
৩২ নম্বর থেকে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আমরা চারজন, সিরাজুল আলম খান এবং খুব সম্ভবত তোফায়েল আহমেদ একই গাড়িতে রেসকোর্স ময়দানে পৌঁছাই। আমরা মঞ্চে উঠে গেলাম (সিরাজ ভাই তাঁর স্বভাবগত বৈশিষ্ট্যে মঞ্চে ওঠেননি)। আমরা মাইকের দখল নিলাম। এই বিশাল জনসমুদ্রকে স্লোগানে স্লোগানে শুধু মুখর করিনি, মানুষকে উদ্বেলিত করেছি, উচ্ছ্বসিত করেছি। মানুষের প্রত্যয় ও প্রতীতিকে শাণিত করেছি স্লোগানে স্লোগানে।
আমি বিনীতভাবে জানাতে চাই, বঙ্গবন্ধু যখন ধীর পদক্ষেপে মঞ্চের সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠছিলেন, তখন বঙ্গবন্ধুকে শুনিয়েই আমি রেসকোর্সের উদ্বেলিত জনতাকে বললাম, ‘বঙ্গবন্ধু আমাদের কাছে জানতে চেয়েছেন, তোমরা তো স্বাধীনতা অর্জনের প্রতিজ্ঞায় উজ্জীবিত; প্রদীপ্ত সূর্যরশ্মির মতো ভাস্বর। তোমাদের শক্তি কোথায়। সামর্থ্য কতটুকু। আমরা বঙ্গবন্ধুকে বলেছি, আমাদের শক্তির উৎস এই উদ্বেলিত জনতা। একেই আমরা গণসমুদ্রের ফেনিল চূড়ায় ভিসুভিয়াসের মতো জ্বালাব। একেই আমরা আগ্নেয়গিরির গলিত লাভার মতো বিস্ফোরিত করে ওদের সব ষড়যন্ত্রকে ছিন্নভিন্ন করে স্বাধীনতার প্রদীপ্ত সূর্যকে ছিনিয়ে আনব।’ তাঁকে দুহাত তুলে দেখিয়ে বললাম, ‘ওই যে বঙ্গবন্ধু মঞ্চে উঠছেন। তাঁর নির্দেশে স্বাধীনতার জন্য বুকের শেষ রক্তবিন্দু প্রদান করতে আপনারা প্রস্তুত আছেন কি না।’
রেসকোর্স ময়দান ভরা জনতা দুহাত উত্তোলন করে বজ্রনির্ঘোষে গর্জে উঠল, ‘জয় বাংলা’। বঙ্গবন্ধু ধীর পদক্ষেপে এসে মাইকের সামনে দাঁড়ালেন। তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণটি শুরু করলেন।
ভাষণটি ছিল বাংলার মানুষের হৃদয়ের অনুরণন। ভাষাশৈলী, প্রকাশভঙ্গি, শব্দচয়ন, অভিব্যক্তির বহিঃপ্রকাশ—সবকিছু মিলে একটা অদ্ভুত রাজনৈতিক কৌশলের মাধ্যমে স্বাধীনতার পূর্ণ ঘোষণাই দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অতি সতর্কতার সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শব্দচয়নের যে কুশলী পারদর্শিতা দেখিয়েছেন, তাতে বিচ্ছিন্নতার অভিযোগে অভিযুক্ত করার কোনো সুযোগ তিনি রাখেননি। আমি তাঁর শতাধিক ভাষণ নিজ কানে শোনার সৌভাগ্যের অধিকারী। রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে তো বটেই, নির্দেশ-নির্দেশনাকে উপলব্ধি ও মননশীলতায় পরিণত করার জন্য এবং তাঁর বাগ্মিতাকে জ্ঞানপিপাসু ঋষি-বালকের মতো অনুশীলন করার জন্য আমি একান্ত চিত্তে তাঁর বক্তৃতা শুধু শ্রবণ করিনি, অনুধাবন করেছি, উপলব্ধি করেছি, আত্মস্থ করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টাও চালিয়েছি। সত্যতার খাতিরে এ বাধ্যবাধকতাকে স্বীকার করতেই হবে, তাঁর নিজের দেওয়া কোনো ভাষণের তুলনা ৭ মার্চের ভাষণের সঙ্গে হতে পারে না।
লেখক: নূরে আলম সিদ্দিকী, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি
পর্দার নায়িকারা নিজেদের বয়স আড়ালে রাখা পছন্দ করেন। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম আজমেরী হক বাঁধন। প্রতিবছর নিজের জন্মদিনে জানান দেন তাঁর বয়স। গতকাল ছিল বাঁধনের ৪১তম জন্মদিন। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেই জানালেন এই তথ্য।
২ দিন আগে১০ বছরের বেশি সময় ধরে শোবিজে কাজ করছেন অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া। নাটকের পাশাপাশি ওটিটিতে দেখা গেছে তাঁকে। সরকারি অনুদানের ‘দেবী’ নামের একটি সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন। প্রশংসিত হলেও সিনেমায় আর দেখা মেলেনি তাঁর। ছোট পর্দাতেও অনেক দিন ধরে অনিয়মিত তিনি। এবার শবনম ফারিয়া হাজির হচ্ছেন নতুন পরিচয়ে। কমেডি রিয়েলিটি
২ দিন আগেআমাদের লোকসংস্কৃতির অন্যতম ঐতিহ্য যাত্রাপালা। গণমানুষের সংস্কৃতি হিসেবে বিবেচিত এই যাত্রাপালা নিয়ে শিল্পকলা একাডেমি আয়োজন করছে ‘যাত্রা উৎসব-২০২৪’। আগামী ১ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে শুরু হবে ৭ দিনব্যাপী এই উৎসব।
২ দিন আগে‘বঙ্গবন্ধু’ পদবি বিলীন হবে না। হতে পারে না। যেমনটি ‘দেশবন্ধু’ চিত্তরঞ্জন দাশের পদবি বিলীন হয়নি। ইতিহাসে এসব পদবি অম্লান ও অক্ষয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিত্ব ছিল অনন্যসাধারণ। আপনজনকে তো অবশ্যই, শত্রুপক্ষের লোকেরাও ব্যক্তিগত পর্যায়ে তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হতেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর উচ্চপদের
২ দিন আগে