অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া লালমনিরহাটের অর্থনীতিকে চাঙা করতে ২০১৮ সালে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইপিজেড) গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর কেটে গেছে দীর্ঘ প্রায় ছয় বছর। কিন্তু কোনো অগ্রগতি নেই ইপিজেড গড়ে তোলার কার্যক্রমে। মাঝে শুধু কয়েক দফা চিঠি চালাচালি এবং জরিপ হয়েছে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির পর ইপিজেড গড়ে তুলতে লালমনিরহাট সদরের মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের ৫৭০ একর জমি চিহ্নিত করে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। এটি দ্রুত বাস্তবায়নে কয়েক দফা চিঠি পাঠান লালমনিরহাট-৩ (সদর) আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের। ভূমি মন্ত্রণালয়ের একটি দল দীর্ঘ সময় ধরে পরিমাপ করে। এর অগ্রগতি জানতে ২০১৯ সালের ২০ অক্টোবর বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উপসচিব আবু হেনা মুস্তাফা কামাল স্বাক্ষরিত একটি চিঠি জেলা প্রশাসককে পাঠানো হয়। সেই থেকে চিঠি চালাচালিতে আটকে আছে ইপিজেড।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, লালমনিরহাটে ইপিজেড গড়ে উঠলে এখানকার অর্থনীতি চাঙা হওয়ার পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ভাগ্যবদলের নিয়ামক হবে এ অর্থনৈতিক অঞ্চল। 

জানা গেছে, এ জেলায় ভারত, ভুটান ও নেপালের সঙ্গে বাংলাদেশের ত্রিদেশীয় একমাত্র বাণিজ্যকেন্দ্র বুড়িমারী স্থলবন্দর। সদর উপজেলায় রয়েছে মোগলহাট স্থলবন্দর, যা এখন পরিত্যক্ত। বিমানবন্দরটিও পরিত্যক্ত পড়ে রয়েছে। একে ঘিরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এয়ার অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে। যদিও প্রধানমন্ত্রী পরিত্যক্ত বিমানবন্দরটি বিমান মেরামত কারখানা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। 

এদিকে জমি জরিপের পরও ইপিজেড গড়ে তোলায় কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় হতাশ জেলাবাসী। মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের সাতপাটকি গ্রামের সুজন বলেন, ‘এলাকায় কোনো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই। কাজের খোঁজে ঢাকা-চট্টগ্রাম যেতে হয়। কয়েক বছর ধরে শুনছি, এখানে ইপিজেড হবে। লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। বাড়ি থেকে মিল-কারখানায় কাজ করতে পারব।’ 

সমাজকর্মী হেলাল হোসেন কবির বলেন, ‘ইপিজেড গড়তে যেসব সুযোগ-সুবিধা প্রয়োজন, সবই মহেন্দ্রনগর এলাকায় রয়েছে। সড়ক, রেল, আকাশপথে যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ ত্রিদেশীয় বাণিজ্যিক সুযোগ রয়েছে এ জেলায়। জরিপও করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সার্ভে টিম। কিন্তু কোনো অগ্রগতি নেই। আমরা চাই প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির ইপিজেড দ্রুত বাস্তবায়ন হোক।’ 

সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান সুজন বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের সরকারদলীয় এমপি রয়েছেন এখানে। আশা করছি, দ্রুতই মহেন্দ্রনগরে ইপিজেড গড়ে উঠবে।’ 

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সিরাজুল হক বলেন, ‘ইপিজেডটি গড়ে উঠলে জেলার বঞ্চিত বেকার জনশক্তি দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারবে।’ 

লালমনিরহাট-৩ আসনের সংসদ সদস্য মতিয়ার রহমান বলেন, ‘শেখ হাসিনা যে প্রতিশ্রুতি দেন, তা বাস্তবায়ন করেন। লালমনিরহাটে ইপিজেড করার ঘোষণা দিয়েছেন। মহেন্দ্রনগরে ৫৭০ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য জরিপ করা হয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবেও চেষ্টা করছি। দ্রুতই লালমনিরহাটে ইপিজেড গড়ে উঠবে।’ 

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সব দিক বিবেচনায় মহেন্দ্রনগরে ইপিজেড গড়ে তোলার অপার সম্ভাবনা রয়েছে। বিষয়টির খোঁজখবর নিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে কথা বলব।’