ন্যায্য দামে মিলছে না সার

আনোয়ার হোসেন, মনিরামপুর
প্রকাশ : ২৬ জানুয়ারি ২০২২, ০৭: ৩৮
আপডেট : ২৬ জানুয়ারি ২০২২, ১০: ২৪

যশোরের মনিরামপুরে সরকার নির্ধারিত দামে সার পাচ্ছেন না কৃষক। সব ধরনের সারের দাম কেজিপ্রতি ৪ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে বিক্রি করছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা।

বোরো মৌসুম ঘিরে চাহিদা বেশি থাকায় সংকটের দোহাই দিয়ে ব্যবসায়ীরা ইচ্ছে মতো দাম নিচ্ছেন বলে কৃষকেরা অভিযোগ করেছেন।

গত এক সপ্তাহ ধরে মনিরামপুরে সারের বিভিন্ন সাব-ডিলারের দোকান ঘুরে এবং কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে বাড়তি দামে বিক্রির তথ্য জানা গেছে। দোকানগুলোতে সরকার নির্ধারিত মূল্য তালিকা ঝোলানো থাকলেও কৃষকেরা এই দামে সার পাচ্ছেন না।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত দুই সপ্তাহ ধরে সারের দাম বেড়েই চলেছে। কৃষি অফিসের সঠিক তদারকি না থাকায় এমনি ঘটছে বলে অভিযোগ তাঁদের।

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, প্রতি কেজি ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি) ২২ টাকা, ইউরিয়া ১৬ টাকা, মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) ১৫ টাকা এবং ডায়ামনিয়াম ফসফেট (ড্যাপ) ১৬ টাকা নির্ধারণ করা রয়েছে।

সরেজমিন উপজেলার কালিবাড়ি, গোপালপুর, রাজগঞ্জ, খেদাপাড়া ও রোহিতাসহ বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি কেজি টিএসপি ২২ টাকার পরিবর্তে ৩০-৩২ টাকা, ইউরিয়া ১৬ টাকার পরিবর্তে ১৮-২২ টাকা এবং এমওপি ১৫ টাকার পরিবর্তে ১৯-২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে ডিএপি সার সরকার নির্ধারিত ১৬ টাকা দামেই বিক্রি হতে দেখা গেছে।

এ ছাড়া সালফারের দাম সরকার নির্ধারিত না থাকায় গত আমন মৌসুমের চেয়ে ১৪ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। সালফারের কেজি আমনের সময় বিক্রি হয়েছিল ২৬ টাকায়, এখন বোরো মৌসুমে বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়।

উপজেলার মোবারকপুর গ্রামের কৃষক মশিয়ার রহমান বলেন, ‘দেড় বিঘায় ইরি ধান চাষ করিছি। ইউরিয়ার কেজি ১৭ টাকা, টিএসপি ৩০ টাকা ও পটাশ ২০ টাকা দরে কিনিছি।’

মাহমুদকাটি গ্রামের কৃষক নূর ইসলাম বলেন, ‘সাড়ে ৫ বিঘা বোরো ধান চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছি। মনিরামপুর বাজার থেকে দেড় হাজার টাকা দরে টিএসপি ও ৮২০ টাকা করে ইউরিয়ার ৫০ কেজির বস্তা কিনে আনিছি। এবার সারের খুব দাম।’

কৃষকদের অভিযোগ, কৃষি অফিসের যাঁরা দায়িত্বে আছেন, তাঁরা বাজার তদারকি সঠিকভাবে করেন না।

সোমবার সরেজমিন দেখা গেছে, সারের এক সাব-ডিলারের ঘরে সরকারি মূল্য তালিকা ঝুলছে। ওই দোকানি টিএসপির কেজি ৩০, ইউরিয়া ১৭ টাকা, পটাশ ২০ টাকা ও সালফার ৪০ টাকা কেজি বিক্রি করছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই ডিলার বলেন, ‘আমি একজন সাব ডিলার হয়েও ন্যায্য দামে সার কিনতে পারছি না। সরকারি রেটে বেচব কি করে।’

তিনি বলেন, ‘৫০ কেজি ইউরিয়ার বস্তা আমার প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত ৭৭৫ টাকায় পৌঁছানোর কথা। কিন্তু ইউরিয়ার বস্তা আমাকে ৮২০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। তাহলে কৃষকেরা কীভাবে সরকারি দামে পাবেন।’

উপজেলার গোপালপুর বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টিএসপি ২৬-৩০ টাকা, ইউরিয়া ১৮-২২ টাকা ও পটাশ ১৮-২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দোকানিরা যাঁর কাছে যেমন পারছেন তেমন বিক্রি করছেন।

সূত্রটি বলছে, চলতি মাসে টিএসপির বরাদ্দ এসেছে ৪২৫ মেট্রিক টন, ইউরিয়া ২ হাজার ২০০ মেট্রিক টন ও পটাশ ৫৫৩ মেট্রিক টন।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, কৃষকেরা জমিতে যে পরিমাণ সার ব্যবহার করেন, তা কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের হিসাবের তুলনায় অনেক বেশি। এ জন্য চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ পাওয়া যায় না।

উপজেলার বাসুদেবপুর বাজারের সাব-ডিলার জামাল হোসেন বলেন, ‘এ মৌসুমে আমার ৪০০ বস্তা টিএসপির চাহিদা, পেয়েছি মাত্র ৭০ বস্তা। ইউরিয়া বরাদ্দ অনুযায়ী পেয়েছি। তবে পটাশের কোনো বরাদ্দ পাইনি।’

জামাল হোসেন বলেন, ‘মরক্কোর টিএসপির চাহিদা কম। এ সার ২৫ টাকা কেজি বেচতে হচ্ছে। তিউনিশিয়ার টিএসপির চাহিদা বেশি। এ সার আমাদের ১ হাজার ৫০০ টাকায় বস্তা কেনা পড়ছে। ৩২ টাকার নিচে কেজি বিক্রি করা যাচ্ছে না।’

রোহিতা ইউনিয়নের সার ডিলার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমরা সার উত্তোলন করে সঠিক দামে বিক্রি করছি। তবে আমদানিকারকদের কারসাজির কারণে সারের দাম বাজারে বাড়তি। তাঁরা বেশি দামে বাইরে সার বিক্রি করছেন।’

খেদাপাড়া ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগে ডিলারের কাছে খোঁজ নিয়েছি। সারের দাম ঠিক আছে। আমরা যখন ডিলারের ঘরে বসে থাকি তখন বেশি দামে বিক্রি করতে দেখি না।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবুল হাসান বলেন, ‘সারের দাম বাড়েনি। আমরা তদারকি করছি। ত্রুটি পেলে জরিমানা করা হচ্ছে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত