আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খরচে লাগাম

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা
প্রকাশ : ১৪ মার্চ ২০২২, ০৬: ৪৩
আপডেট : ১৪ মার্চ ২০২২, ১০: ০৫

আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খরচের লাগাম টানতে কড়াকড়ি আরোপ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কমিশন, উন্নয়ন ব্যয়, ব্যবসা উন্নয়ন ব্যয়ের আড়ালে কোনো ধরনের খরচই আর মানবে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এসব বন্ধে কড়াকড়ি আরোপ করে গতকাল এক সার্কুলার জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বাজার বিভাগ। সার্কুলারটি দেশের সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের কাছে পাঠানো হয়েছে।

জানা যায়, বর্তমানে দেশে ৩৫টি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) রয়েছে। এদের মাত্র কয়েকটি এনবিএফআই ঠিকমতো তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বেশির ভাগই নানান অনিয়মে জড়িয়ে পুরো আর্থিক খাতে বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছে। ঋণ দেওয়া, আমানতের যথাযথ ব্যবহার না করাসহ নানা কেলেঙ্কারি সম্ভাবনাময় এ খাতকে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে কিছু কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের কাছ থেকে আমানত গ্রহণের নামে নানান উপায়ে প্রতিষ্ঠানের খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে। এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরে এসেছে। তারই ধারাবাহিকতায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন এ সার্কুলার জারি করে। এতে বলা হয়, সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে কতিপয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান আমানত সংগ্রহের লক্ষ্যে কমিশন, উন্নয়ন ব্যয়, ব্যবসা উন্নয়ন খরচ ইত্যাদি বিভিন্ন খাতে বা শিরোনামে অর্থ ব্যয় করছে, যা অনৈতিক ও অগ্রহণযোগ্য। বর্ণিত কার্যক্রমের মাধ্যমে আর্থিক প্রতিষ্ঠান অযৌক্তিকভাবে তহবিল ব্যয় বৃদ্ধি করছে, যা প্রতিষ্ঠানসমূহের ঋণ কিংবা বিনিয়োগের সুদ ও মুনাফার হারকে বাড়িয়ে দিচ্ছে।

এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করে, এটা চলতে পারে না। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আমানত আহরণে তাদের ঘোষিত সুদ ও মুনাফার হারের বাইরে আর কোনো প্রকার প্রচ্ছন্ন ব্যয়, যেমন কমিশন, ব্যবসা উন্নয়ন খরচ, উন্নয়ন ব্যয়ের নামে কোনো বাড়তি খরচ দেখাতে পারবে না। এ নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর করা হবে বলেও সার্কুলারে বলা হয়। একই সঙ্গে ওই সার্কুলারে সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে তাদের সুদ বা মুনাফার হার-সংক্রান্ত হালনাগাদ তথ্য নিয়মিতভাবে নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশ করারও নির্দেশ দেওয়া হয়।

এই সার্কুলার জারির পর থেকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানত গ্রহণ করতে গিয়ে বেপরোয়া খরচে একটা শৃঙ্খলা আসবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান। এ বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নানা বাহানায় খরচের খাত বড় করছিল। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এটা কিছুদিন ধরে বেশ মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়ে যাচ্ছিল। এ জন্য বাংলাদেশ তাদের এ অনিয়ম ও অবৈধ কর্মকাণ্ড বন্ধে তাদের খরচে লাগাম টানার সিদ্ধান্ত নেয়। বিষয়টি ঠিকমত তারা মানছে কি না, তা-ও নজরদারি করা হবে বলেও জানান।

আর্থিক খাত বিশেষজ্ঞরা জানান, কয়েক বছর ধরে এমনিতেই আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সার্বিক মান নেমে গেছে। শুধু আমানত গ্রহণই নয়, বরং ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রেও পুকুরচুরি ধরা পড়ে এ খাতে। এরই মধ্যে তালিকাভুক্ত পিপলস লিজিং গত কয়েক বছরে তার আর্থিক অবস্থার পতনের কারণে বর্তমানে এর লিকুইডেশনে বা অবসায়নে রয়েছে। ব্যাংকের তুলনায় এনবিএফআই সেক্টরটি নতুন ও ছোট, লিকুইডেশনের ঘটনা এ সেক্টরে প্রথম, যা সেক্টরটিকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। আরও অনেক এনবিএফআই ইতিমধ্যে ঝুঁকিতে রয়েছে, যা সামনের দিনগুলোতে লিকুইডেশন বা এ রকম অবসায়নের কবলে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।

জানা যায়, এ খাতে গত এক বছরে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ বেড়েছে। অথচ কমেছে মুনাফা। এতগুলো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে হাতে গোনা মাত্র চার-পাঁচটি প্রতিষ্ঠান ভালো করছে। বাকিরা নাজুক অবস্থায় রয়েছে। এদের কারও কারও অবস্থা এতই নাজুক যে তারা গ্রাহকের আমানতের টাকা পর্যন্ত ফেরত দিতে পারছে না। অত্যন্ত নাজুক এ প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনোটিকে এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করে বিশেষ নজরদারিতে রেখেছে। অধিকাংশ নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণ বিতরণে রাজনৈতিকসহ নানা ধরনের প্রভাব, ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়ম, সুশাসনের অভাবের অভিযোগ রয়েছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত