‘হর হর মহাদেব’ ধ্বনিতে মুখর চন্দ্রনাথ ধাম

সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০২ মার্চ ২০২২, ০৬: ৩৪
আপডেট : ০২ মার্চ ২০২২, ১৭: ৫১

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে শিবচতুর্দশী মেলার দ্বিতীয় দিন গতকাল মঙ্গলবার লাখো পুণ্যার্থীর আগমনে মুখর হয়ে ওঠে চন্দ্রনাথ ধাম। জাগতিক পাপমোচন ও পুণ্য সঞ্চয়ের আশায় মেলায় আগত পুণ্যার্থীরা শিবচতুর্দশী তিথিতে ব্যাসকুণ্ডে পুণ্যস্নান করেছেন। স্নান শেষে পুণ্যার্থীরা হেঁটে ছুটছেন সমতল ভূমি থেকে ১ হাজার ২০০ ফুট ওপরে অবস্থিত চন্দ্রনাথ ধাম মন্দিরে। এ সময় দল বেঁধে ওঠা লাখো ভক্তের ‘হর হর মহাদেব’ ধ্বনিতে মুখর হয়ে ওঠে চন্দ্রনাথ ধাম মন্দির এলাকা।

শিবচতুর্দশী মেলার আয়োজকেরা জানান, সোমবার রাত ২টা ৫০ মিনিটে শিবচতুর্দশী তিথি শুরু হওয়ার পর সীতাকুণ্ডে লাখো পুণ্যার্থীর ঢল নামে। দেশ-বিদেশ থেকে আসা তীর্থযাত্রীতে চন্দ্রনাথ ধামের পাদদেশ পর্যন্ত লোকে-লোকারণ্য ছিল। গতকাল সকাল থেকে দ্বিগুণ গতিতে বাড়তে থাকে সনাতনী পুণ্যার্থীর আগমন।

মঙ্গলবার দুপুরে শিবচতুর্দশী মেলা ঘুরে দেখা গেছে, আগত তীর্থযাত্রীরা ব্যাসকুণ্ডে পুণ্যস্নান শেষে গয়াকুণ্ডে পিণ্ডদান করছেন। আবার অধিকাংশ তীর্থযাত্রী স্নান শেষে ছুটছেন চন্দ্রনাথ মন্দির দর্শনে। তবে মেলা ঘিরে চন্দ্রনাথ ধামে ওঠার রাস্তা ও সিঁড়ির যথাযথ সংস্কার না হওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে সরু পথ ও ভাঙা সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠছেন পুণ্যার্থীরা। এতে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে তাঁদের। পাশাপাশি অধিকাংশ তীর্থযাত্রী চন্দ্রনাথ ধাম দর্শন শেষে ছুটছেন বাড়বকুণ্ডের অগ্নিকুণ্ড (বাড়বানল) ও ছোট দারোগারহাটের লবণাক্ষ মন্দির দর্শনে।

কলেজ রোড়ের মুখ থেকে ব্যাসকুণ্ড এলাকা পর্যন্ত তীর্থযাত্রীদের ছিল দীর্ঘ সারি। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর সেখানে গিয়ে দেখা যায়, চন্দ্রনাথ ধামের পোশাকপরিহিত বেশ কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবক তীর্থযাত্রীদের ভিড়ের মধ্যে হুড়োহুড়ি করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছেন। এতে বৃদ্ধ, অল্প বয়সী মহিলাসহ অনেক পুণ্যার্থী বিড়ম্বনার শিকার হন।

মেলায় রংপুর থেকে আসা বয়োবৃদ্ধ পুণ্যার্থী নারায়ণ বর্মণ (৭৫) জানান, দেবাদিদেবের সান্নিধ্য পেতে তিনি সপরিবার মেলায় এসেছিলেন। কিন্তু তীর্থযাত্রীর ভিড়ের কারণে চন্দ্রনাথ ধামে উঠতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

সিলেট থেকে বাস ভাড়া নিয়ে প্রায় ৫০ জন প্রতিবেশীসহ চন্দ্রনাথ ধাম মন্দির পরিদর্শনে এসেছেন সমীরণ দাস ও বিপুল দাস। তাঁরা জানান, শিবচতুর্দশী তিথিতে ব্যাসকুণ্ডে পুণ্যস্নান করেছেন। স্নান শেষে চন্দ্রনাথ মন্দিরে উঠেছেন। তাঁরা শিবরাত্রির উপবাস রেখে শিবের মাথায় জল ঢেলেছেন। তাঁদের বিশ্বাস, পূর্ণ তিথিতে শিবচতুর্দশীতে ব্যাসকুণ্ডে স্নান-তর্পণ, গয়াকুণ্ডে পিণ্ডদান, চন্দ্রনাথ ধামে শিবপূজা এবং ধর্মগ্রন্থ পাঠ বা শ্রবণ করলে ‘জাগতিক পাপ’ মুছে গিয়ে পুণ্যের সঞ্চার হয়।

স্বয়ংভূনাথ মন্দিরের পূজারি দীপক চক্রবর্তী জানান, শিবমহাপুরাণ অনুসারে এই তিথি রাত্রেই শিব সৃষ্টি, স্থিতি ও মহাপ্রলয়ের তাণ্ডব নৃত্য করেছিলেন। এই রাত্রেই শিব ও পার্বতীর বিবাহ হয়েছিল। এই মহাশিবরাত্রিতে শিব তাঁর প্রতীক লিঙ্গ তথা শিবলিঙ্গ রূপে প্রকাশিত হয়ে জীবের পাপনাশ ও মুক্তির পথ দেখিয়েছিলেন।

মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক পলাশ চৌধুরী বলেন, শিবচতুর্দশী মেলার দ্বিতীয় দিনে প্রায় ১৫ লাখ পুণ্যার্থীর আগমন ঘটেছে চন্দ্রনাথ ধামে, যা গতবারের দ্বিগুণ। মেলায় আগত সনাতনী পুণ্যার্থীদের সুবিধার্থে আলোকসজ্জা, পানীয়জল সরবরাহ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

পলাশ চৌধুরী আরও জানান, এবার চন্দ্রনাথ ধামে উঠতে গিয়ে ভিড়ের চাপে বেশ কিছু তীর্থযাত্রী অসুস্থ হলেও আহত কিংবা নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেনি। তবে ভিড়ের চাপে ছিনতাইকারী ও পকেটমারের খপ্পরে পড়ে টাকা ও মোবাইল ফোন হারিয়েছেন কয়েকজন তীর্থযাত্রী।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নুর উদ্দিন জানান, মেলার দ্বিতীয় দিনে ভিড়ের চাপে পড়ে অসুস্থতা বোধ করা প্রায় সাড়ে ৩০০ জন পুণ্যার্থীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

সীতাকুণ্ড মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুমন বণিক জানান, মেলায় আসা পুণ্যার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ৫৫০ সদস্য সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত