শেরপুর-৩: আ.লীগে কোন্দল, গোছানো বিএনপি

জুবাইদুল ইসলাম, শেরপুর ও ফরিদ আহম্মেদ রুবেল, শ্রীবরদী
প্রকাশ : ২৯ মে ২০২৩, ১২: ৩৫

একসময় ছিলেন আমলা। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য হন প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল হক। শেরপুর-৩ (শ্রীবরদী ও ঝিনাইগাতী) আসনে এরপর আরও দুই নির্বাচনে তাঁকেই বেছে নেয় আওয়ামী লীগ। তিনিও নৌকাকে জয়ী করেছেন। তবে এবার পথটা কঠিন হতে পারে এমপি ফজলুল হকের। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা-কর্মী বলছেন, এবার দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে ত্যাগী অন্য নেতাদের বিবেচনা করা হতে পারে। এ নিয়ে দলটিতে কোন্দল দৃশ্যমান। অন্যদিকে এক নেতার নেতৃত্বে বেশ গোছালোই মনে হচ্ছে বিএনপিকে।

বর্তমান সংসদ সদস্য ফজলুল হক ছাড়া আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন ঝিনাইগাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম আব্দুল্লাহেল ওয়ারেজ নাইম, শ্রীবরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহারুল ইসলাম লিটন, শ্রীবরদী পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ আলী লাল, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের সাবেক কমান্ডার আবু ছালেহ নুরুল ইসলাম হিরু, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি ইফতেখার হোসেন কাফী জুবেরী, প্রয়াত এমপি এম এ বারীর ছেলে মহসীনুল বারী রুমি, শ্রীবরদী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক এ ডি এম শহিদুল ইসলাম, জেলা মহিলা লীগের সম্পাদিকা নাছরিন বেগম ফাতেমা, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মিজানুর রহমান রাজা।

তবে মাঠে নির্বাচনী তৎপরতায় না থাকলেও রাজনৈতিক অঙ্গনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে যে নামটি সর্বাগ্রে শোনা যাচ্ছে, তিনি হচ্ছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্সের সিনিয়র সচিব, বাংলাদেশের সমুদ্র জয়ের নায়ক রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম। পরিচিতি ও ক্লিন ইমেজের কারণে তাঁর রয়েছে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা।

বিএনপি থেকে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আছেন জেলা কমিটির সভাপতি সাবেক এমপি মাহমুদুল হক রুবেল। তবে মনোনয়ন চাইতে পারেন বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা, শ্রীবরদীর সন্তান চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট এ কে এম আমিনুল হক ওরফে আবুল খায়ের এবং ঝিনাইগাতী উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও দুইবারের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাদশা। এ ছাড়া শ্রীবরদী উপজেলা জামায়াতের আমির নুরুজ্জামান বাদল দলগত না হলেও জোট থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন।

জাতীয় পার্টি থেকে কেন্দ্রীয় যুব সংহতি নেতা আবু নাসের বাদল, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সাত্তার মনোনয়ন চাইবেন।

তিনবার এমপি থাকায় ফজলুল হকের হাত ধরে এলাকার রাস্তাঘাট, সেতু, কালভার্ট নির্মাণ এবং স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার উন্নয়ন হয়েছে। তবে সেটি প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি বলে দাবি করেছেন দলটির একাধিক নেতা-কর্মী ও সাধারণ ভোটাররা। এ ছাড়া অভিযোগ রয়েছে, দল ও দলের দায়িত্বশীল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তাঁর কোনো সমন্বয় নেই। যে কারণে দুটি উপজেলাতেই এমপি গ্রুপ ও এমপি বিরোধী গ্রুপের প্রকাশ্য অবস্থান রয়েছে।

নির্বাচনী ভাবনা জানতে চাইলে এমপি ফজলুল হক বলেন, ‘এলাকায় উন্নয়ন অনেক করেছি। দলীয় হাইকমান্ড মনোনয়ন দিলে আমি আবার এমপি নির্বাচিত হব বলে আশাবাদী।’ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বিরোধের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আগে একটু বিরোধ বা দূরত্ব ছিল, তবে এখন কোনো দূরত্ব নেই। সবাই একসঙ্গে কাজ করছেন।’

এ ব্যাপারে এস এম আব্দুল্লাহেল ওয়ারেজ নাইম বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫২ বছরেও শেরপুর-৩ আসনে ঝিনাইগাতী উপজেলা থেকে আওয়ামী লীগের কেউ মনোনয়ন পাননি। এ জন্য আমরা কিছুটা হলেও বৈষম্যের শিকার। এবার মনোনয়ন পেলে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করব ইনশা আল্লাহ।’

এই আসনে বিএনপির প্রার্থিতা নিয়ে কোনো সংকট নেই। নিজের নির্বাচনী এলাকা গুছিয়ে রেখেছেন সাবেক এমপি রুবেল। আর আগামী নির্বাচনে তিনি কেবল সম্ভাব্য প্রার্থী নন, বলা যায় একক প্রার্থী হিসেবেই এখন পর্যন্ত মাঠে তৎপর। তিনি বলেন, ‘আমরা নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে নির্বাচনে কোনোক্রমেই যাব না।’

সাধারণ ভোটারদের দাবি একটাই, তাঁরা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে চান। দুই দলের ব্যাপারে জানতে চাইলে বেশ কয়েকজন ভোটার বলেন, বিএনপি নির্বাচনে এলে এবং আওয়ামী লীগ প্রার্থী নির্বাচনে ভুল করলে এবার বিএনপি জিতেও যেতে পারে। তবে বিএনপি নির্বাচনে আসবে কি না, এ নিয়ে রয়েছে সংশয়। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত