জীর্ণ ভবনে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস

কাঠালিয়া (ঝালকাঠি) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২১ ডিসেম্বর ২০২১, ০৮: ৩২
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২১, ১২: ২২

কাঠালিয়া উপজেলা পরিষদ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের থাকার জন্য ৫টি আবাসিক ভবনের সবগুলোই বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। তবুও ঝুঁকি নিয়ে ওই সব ভবনে বসবাস করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিবার। সরকারি আবাসিক ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় প্রথম শ্রেণির একাধিক কর্মকর্তার পরিবার নিয়ে আবাসিক এলাকার বাইরে ভাড়া বাসায় থাকেন। আবার অনেক কর্মকর্তা স্ত্রী-সন্তান গ্রামের বাড়ি রেখে নিজেরা থাকেন ব্যাচেলর বাসায়। আবাসিক ভবন বসবাসের অযোগ্য হওয়ার কথা শুনে অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী বদলি হয়ে কাঠালিয়া উপজেলায় আসতে চান না। আবার নতুন যারা আসছেন, তাদের অনেকেই একই সমস্যার কথা চিন্তা করে যোগদান না করে বদলির তদবিরে ব্যস্ত থাকেন।

উপজেলার সবগুলোই আবাসিক ভবন ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি ভবনের দেয়াল ও ছাদ থেকে খসে পড়ছে পলেস্তারা। দেয়ালে ছোট-বড় একাধিক ফাটল। বৃষ্টি হলে ছাদ চুঁইয়ে পড়ে পানি। বিবর্ণ দেয়ালে জমেছে শেওলা। দীর্ঘদিন পরিষ্কার না করায় ভবনগুলোর ছাদে ও কার্নিশে লতা-পাতা ও আগাছা জন্ম নিয়েছে। এ ছাড়া ভবনের দরজা-জানালা ভাঙাচোরা হওয়ায় সারাক্ষণ চুরির আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের। অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার পরও পরিবার-পরিজন নিয়ে হাতে গোনা কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী বসবাস করছেন এসব ভবনে। বেশির ভাগ ভবনেই প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তারা না থাকলেও রয়েছেন দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে চতুর্থ শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। কয়েকটি ভবনতো পরিত্যক্ত হয়েই পড়ে রয়েছে। যাতে কয়েক বছর ধরে ভয়ে মানুষ প্রবেশই করেন না।

উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৪ সালে উপজেলা পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের থাকার জন্য নদী তীরবর্তী এই উপজেলায় পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, করতোয়া ও তিস্তা নামে ৫টি ভবন নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে একটি ভবন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাদের জন্য। পুরুষ ও নারী কর্মকর্তাদের থাকার জন্য আলাদা দুটি আবাসিক ভবন। এ ছাড়া কর্মচারীদের অস্থায়ীভাবে থাকার জন্য বাকি দুটি ভবন (ডরমিটরি ভবন)। এ ছাড়া নির্বাহী কর্মকর্তা পৃথক একটি বাস ভবন রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাদের থাকার ভবনটি মেরামত করা হলে থাকার উপযোগী হলেও বাকি ভবনগুলো বাসযোগ্য নয় বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

অপরদিকে, বর্ষার সময়ে বিষখালী নদীর স্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায় উপজেলা পরিষদের মাঠ ও রাস্তাঘাট। এতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাস ভবন নিচ তলায় পানি প্রবেশ করায় তাঁকে ভোগান্তি পোহাতে হয়। ভবনটি নিচু করে নির্মাণ করায় এই সমস্যা হচ্ছে।

এদিকে, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের বাস ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এরপর ২০২০ সালের প্রথম দিকে পরিত্যক্ত এই বাস ভবনটি নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়। নতুন করে বাস ভবন করার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। যা এখন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। বাস ভবন না থাকায় উপজেলা চেয়ারম্যানকে থাকতে হয় ১০ কিলোমিটার দূরে ভাড়ার বাসায়। এতে অফিস করতে তাঁকে বাড়তি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

উপজেলা বনায়ন কর্মকর্তা আসরাফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘বাইরে বাসাভাড়া তুলনামূলক বেশি এবং অফিস থেকে অনেক দূরে হওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে কোয়ার্টারে থাকতে হচ্ছে। সেখানে বৃষ্টি হলে ছাদ দিয়ে পানি পড়ে। দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ছে। যে কারণে পরিবার নিয়ে আসতে সাহস পাচ্ছি না।’

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উপজেলা প্রকৌশলী জগলুল ফারুক বলেন, ‘ইতিমধ্যে বিষয়টি উপজেলা মাসিক সভায় প্রস্তাব (রেজুলেশন) করা হয়েছে। উপজেলা পরিষদে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের থাকার জন্য প্রতিটি ভবনই বর্তমানে পরিত্যক্ত বলা চলে। এরপরও কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী কষ্ট করে এতে বসবাস করছেন।’ তিনি বলেন, ‘শুধু মাত্র প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাদের থাকার ভবনটি মেরামত করা হলে থাকার উপযোগী হবে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুফল চন্দ্র গোলদার বলেন, ‘ভবনগুলোর অবস্থা এতই খারাপ যে সেখানে থাকার মতো কোনো পরিবেশ নেই। আমার বাসভবনের ছাদ দিয়ে পানি পড়ে, আবার স্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে আশপাশের রাস্তাঘাট ও ভবনের নিচতলা তলিয়ে যায়। এ ব্যাপারে উপজেলা পরিষদের সভায় প্রস্তাব করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। যেগুলো সংস্কার করা যায় সেগুলো সংস্কার করা হবে। বাকিগুলো নতুন ভবন চেয়ে মন্ত্রণালয় চিঠি পাঠানো হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত