সেতুর কাছ থেকেই বালু উত্তোলন, তীরে ভাঙন

অভিজিৎ সাহা, নালিতাবাড়ী (শেরপুর)
প্রকাশ : ০৭ জানুয়ারি ২০২২, ০৭: ১৩
আপডেট : ০৭ জানুয়ারি ২০২২, ১০: ১৫

শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার নাকুগাঁও সেতুর কাছ থেকে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। সেতুর ১০০ থেকে ৪০০ মিটারের মধ্যে ৩০টির বেশি শ্যালো মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে ঝুঁকির মুখে পড়েছে সেতুটি। ভাঙন দেখা দিয়েছে ভোগাই নদের তীরে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানা গেছে, নাকুগাঁও সেতুর কাছ শ্যালো মেশিন বসিয়ে সারা দিন বালু তোলায় নদের পাড় ও নাকুগাঁও সেতুটি হুমকির মুখে পড়েছে। বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ অনুযায়ী, সেতু, কালভার্ট, সড়কসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু তোলা যাবে না।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সেতুর নিচের দুটি পিলারের কাছ থেকে দুই ফুট করে মাটি সরে গেছে। সেতুর পূর্ব পাশে রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নের কালাকুমা এলাকায় ২৬টি আর পশ্চিম পাশে নয়াবিল ইউনিয়নের হাতিপাগাড় এলাকায় ৭টি শ্যালো মেশিনসহ মোট ৩৩টি মেশিন বসিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। পাইপ দিয়ে তা নদের পাড়ে ফেলা হচ্ছে। সেই বালু ট্রাকে তুলে বিক্রির জন্য পাঠানো হচ্ছে। শতাধিক শ্রমিক এ কাজে ব্যস্ত। সেতুর এক কিলোমিটারের মধ্যে শ্যালো মেশিনগুলো বসানো হয়েছে।

বালু উত্তোলনকারী একজন শ্রমিক হাবিবুর রহমান বলেন, এখন দিনের পাশাপাশি রাতেও বালু তোলা হয়। প্রতিদিন অর্ধশতাধিক ট্রাকে বালু বিক্রি করে পাঠানো হয়।

এ বিষয়ে স্থানীয় বালু ব্যবসায়ী নুর আলম বলেন, সেতুর নিচ থেকে সবাই বালু তুলছেন। তাই তিনিও বালু তুলছেন।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালে নয়াবিলের সঙ্গে রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নের মধ্যে যাতায়াত স্থাপনের জন্য ১৫০ মিটার লম্বা নাকুগাঁও সেতু নির্মাণ করা হয়। গত বৈশাখ মাসে বালু তোলার জন্য ভোগাই নদের চারটি মৌজা ৯০ লাখ টাকায় ইজারা দেওয়া হয়। ইজারা পায় মা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। ইজারাদারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৩ নভেম্বর জেলা প্রশাসন বালু উত্তোলনের মৌজার পরিধি বাড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে নাকুগাঁও সেতুর উজান ও ভাটির দেড় কিলোমিটার মধ্যে বালু তোলার অনুমতি দেওয়া হয়।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, নয়াবিল ও রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নের ১৫ থেকে ২০ জন বালু ব্যবসায়ী এক সপ্তাহ ধরে সেতুর ১০০ থেকে ৪০০ মিটারে মধ্যে দিন-রাত বালু উত্তোলন করছেন। বালু তোলার ফলে সেতুটি এখন ঝুঁকির মধ্যে আছে। তাঁরা সেতুরক্ষায় বালু উত্তোলন বন্ধের দাবি জানান।

নাকুগাঁও গ্রামের এক গৃহিণী বলেন, শ্যালো মেশিন বসিয়ে দিন-রাত বালু তোলায় বিকট শব্দ হচ্ছে। এখন ঘরে থাকাটা মুশকিল হয়ে পড়েছে। রাতেও ঘুমাতে পারি না। বাচ্চাদের পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে। তিনি বালু উত্তোলন বন্ধের দাবি জানান।

অভিযোগের বিষয়ে মা এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. জোবায়ের আহমেদ বলেন, নির্ধারিত জায়গা থেকে বালু ব্যবসায়ীরা বালু উত্তোলন করছেন। পরে বালু বিক্রির সময় তাঁদের (ইজারাদারের) লোকজন টাকা আদায় করে থাকেন। ১০ চাকার ট্রাকে ২ হাজার ৫০০ ও ৬ চাকার ট্রাকে ১ হাজার করে টাকা আদায় করা হয়।

নালিতাবাড়ী উপজেলার নয়াবিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আমজাদ হোসেন বলেন, সারা দিন বালু তোলায় শ্যালোমেশিনের শব্দে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ। মেশিনের বিকট শব্দে মাথা ধরে যায়। ভোগাই নদের পাড়ের বাসিন্দারা বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। দিন-রাত বালু তোলায় ভোগাই নদের পাড় ও নাকুগাঁও সেতুটি হুমকির মুখে পড়েছে। যা আমাদের এলাকার জন্য হুমকি স্বরূপ। এ ব্যাপারে প্রশাসনের উদ্যোগ নেওয়াটা জরুরি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হেলেনা পারভীন বলেন, নাকুগাঁও সেতুর উজান ও ভাটির দেড় কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলনের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। দ্রুত অভিযান চালিয়ে অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত