নিজে সফল হয়েছেন, একই সঙ্গে শত নারীকে স্বাবলম্বী করেছেন। তিনি জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার নাসিমা খানম। উপজেলার পুনটের মাদাই গ্রামের বেলাল হোসেনের স্ত্রী তিনি।

নাসিমা খানম ২০১৮ সালে জাতীয় যুব পুরস্কারে ভূষিত হন। এ ছাড়া তৃণমূল সংগ্রামী নারীদের আত্মশক্তিতে অনুপ্রাণিত ও সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখায় ২০১৭ সালে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর থেকে তাঁকে শ্রেষ্ঠ জয়িতা হিসেবে সম্মাননা দেওয়া হয়।

গত সোমবার দেখা যায়, কয়েকজন নারীকে নকশিকাঁথা তৈরির কাজ শেখাচ্ছেন নাসিমা। সেই নকশিকাঁথায় নিজেদের হাতে ফুটিয়ে তুলছেন বাহারি নকশা। আবার কেউ ক্রিস্টাল পুঁতি-পাথরে বিভিন্ন ধরনের শৌখিন জিনিস তৈরির ওপর প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।

নাসিমা খানম নিজ বাড়িতে পোশাক তৈরির ওপর গ্রামের গৃহিণী, অসহায়, নারীদের প্রশিক্ষণ দেন। এ সব নারী প্রশিক্ষণ নিয়ে তাঁরা নিজেরাই নিজেদের ভাগ্য বদলেছেন, হয়েছেন স্বাবলম্বী।

নাসিমা খানম উপজেলা ছাড়িয়ে পার্শ্ববর্তী ক্ষেতলাল উপজেলার নারীদের পোশাক তৈরির প্রশিক্ষণ দেন। কেউ আবার শখের বশেও তাঁর কাছ থেকে পোশাক তৈরির ওপর প্রশিক্ষণ নেন।

নাসিমা শুধু এ কাজেই থেমে থাকেননি। নিজে বাল্যবিবাহের শিকার হওয়ায় গ্রামে গ্রামে গিয়ে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি বাল্যবিবাহ রোধকরণে উঠান বৈঠক, মাদকের অপব্যবহারসহ নারী নির্যাতন প্রতিরোধ নিয়ে আলোচনা করেন।

নাসিমা খানম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ছোটবেলা থেকেই শখ ছিল নিজেই কিছু করার, নিজের পরিচয়ে বাঁচার। প্রথমে জয়পুরহাট জেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে পোশাক তৈরির ওপরে প্রশিক্ষণ নেন। এরপর তিনি নিজেই মাদাই নূর মহিলা উন্নয়ন সংস্থা গড়ে তোলেন। সেই সমিতির মাধ্যমে গ্রামের গৃহিণী, অসচ্ছল নারীদের পোশাক তৈরির ওপর প্রশিক্ষণ দেন। প্রশিক্ষণ নিয়ে তাঁরা নিজেরা নিজেদের বাড়িতে পোশাক তৈরির কাজ করেন। পোশাক তৈরির পাশাপাশি আবার সমিতির মাধ্যমে গ্রামের মেয়েদের পশুপাখি পালন করাতেন। এভাবে সমিতির অসচ্ছল মেয়েরা স্বাবলম্বী হতে থাকেন।

নাসিমা খানম আরও বলেন, তাঁর কাছ থেকে প্রায় তিন হাজার নারী বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এর মধ্যে অসচ্ছল প্রায় ৩০০-৪০০ নারী প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। এ ছাড়া প্রায় ৫০ জন যুবক তাঁর পরামর্শ নিয়ে সফলতা পেয়েছেন। এতে একদিকে ঘুচেছে বেকারত্ব, অন্যদিকে সৃষ্টি হয়েছে কর্মসংস্থানের।

পুনটের গৃহবধূ মিনারা বেগম। তাঁর স্বামী ঋণগ্রস্ত হয়ে পালিয়ে ছিলেন। অভাবের সংসারে দায়িত্ব পড়ে মিনারা বেগমের ওপর। তিনি বলেন, ‘যখন আমি সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলাম, সে সময় নাসিমা খানম আপার কাছে তিন মাসের পোশাক তৈরির প্রশিক্ষণ নিই। এরপর প্রথমে অন্যের দোকানে কাজ করে সেই টাকায় সংসার চালাতাম। এখন নিজেই নিজের বাড়িতে পোশাক তৈরির কাজ করি।’

আরেক প্রশিক্ষণার্থীর নাম সারেজাহান শিপন। তিনি বলেন, ঋণ করে স্বামীকে বিদেশে পাঠালে সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে পড়ে। এ সময় তিনি পোশাক তৈরির ওপর প্রশিক্ষণ নেন নাসিমা খানমের কাছে। প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজের বাড়িতে পোশাক তৈরির কাজ শুরু করেন। সেই কাজ করেই তিনি নিজেই হয়েছেন সচ্ছল।

জানতে চাইলে কালাই উপজেলার যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা রওশন আলম বলেন, ‘নাসিমা খানম একজন শ্রেষ্ঠ আত্মকর্মী হিসেবে ২০১৮ সালে পুরস্কার পেয়েছেন ও রাজশাহী বিভাগে প্রথম হয়েছিলেন। বর্তমানে তাঁর সার্বিক দিক বিবেচনা করে বলা যায় তিনি এখন শ্রেষ্ঠ যুব সংগঠকের পুরস্কার পাওয়ার যোগ্যতা রাখেন বলে আমি মনে করি।’