ইমান আলহাজ আলি
গত ২৯ জুলাই ফিলিস্তিনের শিক্ষা ও উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয় যখন তাওজিহি উচ্চবিদ্যালয়ের সাধারণ ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করে, তখন সারা কেঁদে ফেলে। ১৮ বছর বয়সী এই মেয়েটি সোশ্যাল মিডিয়ায় অধিকৃত পশ্চিম তীরের অন্যান্য শিক্ষার্থীর আনন্দ উদ্যাপন দেখেছে, যারা তাদের কৃতিত্বে আনন্দে উদ্বেলিত ছিল।
গাজায় তার তাঁবু পরিদর্শনে গেলে দেখতে পাই সারা কাঁদছে। অশ্রুসিক্ত নয়নে সে আমাকে বলে, ‘আমারও তো এই সময়ে আনন্দ করার কথা ছিল, স্কুলের পড়ালেখা শেষ করে উদ্যাপন করার কথা ছিল, কিন্তু তা আর হলো না। আমি সেরা শিক্ষার্থীদের মধ্যে থাকা এবং এ জন্য আমার সাক্ষাৎকার নেওয়া হচ্ছে এমন স্বপ্ন দেখেছিলাম।’
সারা গাজা শহরের জাহরাত আল-মাদাইন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছিল এবং ভবিষ্যতে একজন চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখছিল। ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা দেওয়ার জন্য সে কয়েক মাস ধরে কঠোর পরিশ্রম করেছে। কারণ পরীক্ষায় ভালো ফল করলে সে একটি মেডিকেল ফ্যাকাল্টিতে পড়ার জন্য আবেদন করার অনুমতি পেত। এই পরীক্ষার স্কোর হলো ফিলিস্তিনের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রধান মাপকাঠি।
এখন এসবের পরিবর্তে সারা হতাশা নিয়ে তার সময় কাটাচ্ছে। কারণ ইসরায়েলি বোমাবর্ষণ তাদের বাড়ি ধ্বংস করার পাশাপাশি তার উন্নত ভবিষ্যতের স্বপ্নও ধ্বংস করেছে। সারা গাজার ৩৯ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর একজন, যাদের এ বছর ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু পারেনি। তবে সারা হলো সেই সব ‘ভাগ্যবান’-এর একজন, যারা বোমা হামলায় এখনো মারা যায়নি। ফিলিস্তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতে, যাদের এ বছর ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল, তাদের মধ্যে অন্তত ৪৫০ জন নিহত হয়েছে। গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যামূলক আগ্রাসনে ২৬০ জনের বেশি শিক্ষকসহ বিভিন্ন গ্রেডের ৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী মারা গেছে।
গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের আশ্রয়কেন্দ্রে পরিণত হওয়া স্কুলগুলোয় সম্ভবত এই উচ্চবিদ্যালয়ের অনেক সিনিয়র শিক্ষার্থীকে হত্যা করা হয়েছে। পরিহাসের বিষয়, গাজায় শিক্ষা ও জ্ঞানার্জনের স্থানগুলোকে মৃত্যুস্থানে পরিণত করা হয়েছে।
জুলাই মাস থেকে গাজার বিভিন্ন স্কুলে ২১ বার বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল এবং এসব হামলায় ব্যাপক হতাহত হয়েছে। সর্বশেষ হামলায় গাজা শহরের আল-তাবিন স্কুলটি ১০০ জনের বেশি লোকের কবরস্থানে পরিণত হয়েছে, যাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় হচ্ছে, বাবা-মায়েরা তাঁদের সন্তানদের শনাক্ত করতে পারেননি, কারণ বোমা তাদের দেহ টুকরা টুকরা করে ফেলেছিল।
জাতিসংঘের মতে, গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে গাজার ৫৬০টি স্কুলের ৯৩ শতাংশ হয় ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় ৩৪০টি হামলা ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সরাসরি চালিয়েছে। এর মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি স্কুলের পাশাপাশি জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুলগুলো রয়েছে। এখন পর্যন্ত এটা স্পষ্ট যে ইসরায়েল পরিকল্পিতভাবে গাজার স্কুলগুলো টার্গেট করছে এবং এর পেছনে একটা কারণ আছে।
ফিলিস্তিনিদের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ঐতিহাসিকভাবে শিক্ষা, বিপ্লবী কর্মকাণ্ড, সাংস্কৃতিক সংরক্ষণ এবং ইসরায়েলি উপনিবেশের দ্বারা একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন ফিলিস্তিনি ভূমির মধ্যে সম্পর্ক সংরক্ষণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করেছে। ফিলিস্তিনি জনগণের মুক্তির জন্য ক্ষমতায়ন এবং আন্দোলনে স্কুলগুলো সব সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। অন্য কথায়, ১৯৪৮ সালের নাকবা থেকে ফিলিস্তিনি জনগণকে মুছে ফেলার জন্য ইসরায়েলি প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে শিক্ষা ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের একটি রূপ। যখন ইহুদি মিলিশিয়া বাহিনী জাতিগতভাবে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ ফিলিস্তিনিকে তাদের মাতৃভূমি থেকে নির্মূল ও বহিষ্কার করেছিল, তখন তারা প্রথম যে কাজটি করেছিল তা হচ্ছে, যেসব শরণার্থীশিবিরে বসতি স্থাপন করা হয়েছিল, সেখানে তাদের সন্তানদের জন্য স্কুল খুলেছিল। শিক্ষাকে একটি জাতীয় মূল্যবোধে উন্নীত করা হয়েছিল। এটি ফিলিস্তিনের শিক্ষা খাতের উন্নয়নকে এমন স্থানে নিয়ে যায়, যেখানে এটি বিশ্বের সর্বোচ্চ সাক্ষরতার হারের মধ্যে একটিতে পরিণত হয়েছে।
এটি কোনো কাকতালীয় ঘটনা নয় যে একটি দরিদ্র, অবরুদ্ধ এবং নিয়মিত বোমাবর্ষণের শিকার হওয়া গাজা উপত্যকা ঐতিহ্যগতভাবে তাওজিহি পরীক্ষায় শীর্ষ স্কোর পাওয়া বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর আবাসস্থল। নিয়মিত ব্ল্যাকআউটের সময় তেলের প্রদীপ বা মোবাইল ফোনের আলোয় পড়ালেখা করে গাজার শিক্ষার্থীদের উচ্চ স্কোর অর্জনের গল্প প্রচুর। সব ধরনের প্রতিকূলতার মধ্যেও পড়ালেখায় এই উৎকর্ষসাধন প্রতিরোধের একটি রূপ—গাজার তরুণেরা এটি সম্পর্কে সচেতন হোক বা না হোক।
ইসরায়েল এখন যা করছে তা হচ্ছে, পদ্ধতিগতভাবে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের এই রূপকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছে। ফিলিস্তিনিদের সংস্কৃতি, জ্ঞান, ইতিহাস, পরিচয় এবং মূল্যবোধ প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে সংরক্ষণ এবং ভাগ করে নেওয়ার উপায়গুলো নির্মূল করার জন্য শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে দিচ্ছে। ইসরায়েলের গাজার স্কুল ধ্বংস করার অর্থ হলো শিক্ষার মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধের চেতনা নস্যাৎ করা।
শিক্ষাক্ষেত্রের ধ্বংস ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীদের ওপর একটি বিধ্বংসী প্রভাব ফেলছে। শিক্ষা অনেকের জন্য এই আশাও দিয়েছে যে তাদের জীবন আরও ভালো হতে পারে, তারা কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তাদের পরিবারকে দারিদ্র্য থেকে বের করে আনতে পারে। কিন্তু এখন তারা আর এই আশা করছে না।
আমি গাজার শিশু এবং যুবকদের মধ্যে হতাশা বিস্তারের কথা ভেবেছিলাম যখন আমি ১৮ বছর বয়সী ইহসানকে দেইর এল-বালাহ শহরের একটি ধুলোময় রাস্তায় প্রচন্ড রোদে হাতে তৈরি মিষ্টি বিক্রি করতে দেখেছিলাম। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম কেন সে গরমের মধ্যে এ কাজটি করছে। সে আমাকে বলেছিল, সে তার পরিবারকে বাঁচাতে এটা করেছে। যদিও এতে খুব সামান্য অর্থই উপার্জন হয়।
‘আমি আমার স্বপ্ন হারিয়েছি। আমি প্রকৌশলী হওয়ার, নিজের ব্যবসা খোলার, একটি কোম্পানিতে চাকরি করার স্বপ্ন দেখেছিলাম, কিন্তু আমার সব স্বপ্ন এখন ছাই হয়ে গেছে।’ হতাশার সুরে বলেছিল ইহসান। সারার মতো ইহসানেরও এবার তাওজিহি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল এবং সে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য উন্মুখ ছিল।
আমি গাজায় সারা এবং ইহসানের মতো অনেক উজ্জ্বল ছেলেমেয়েকে দেখতে পাচ্ছি, যারা তাদের উচ্চবিদ্যালয়ের কৃতিত্বগুলো উদ্যাপন করার অপেক্ষায় ছিল। এখন তারা স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ার কষ্টে কাঁদছে। ইসরায়েল তাদের সব স্বপ্ন কেড়ে নিয়েছে। যারা গাজার ভবিষ্যৎ ডাক্তার ও প্রকৌশলী হতে পারত, তারা এখন মৃত্যুর আতঙ্কের মধ্যে বেঁচে থাকার জন্য খাবার এবং পানি খুঁজে পেতে লড়াই করে দিন কাটাচ্ছে।
কিন্তু প্রতিরোধ করার সব পথ ধ্বংস হয়ে যায়নি। ধ্বংসপ্রাপ্ত গাজায় ফিলিস্তিনিদের মধ্যে শিক্ষার আকাঙ্ক্ষা মরে যায়নি। যখন আমি ছয় বছর বয়সী মাসা এবং তার পরিবারকে দেইর এল-বালাহে তাদের তাঁবুতে দেখতে গিয়েছিলাম, তখন আমার সেই কথা মনে পড়ে গিয়েছিল। আমি তার মায়ের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। তিনি আমাকে বলছিলেন যে তাঁর মেয়ে স্কুলে যেতে না পারার কারণে প্রতিবার কাঁদলে তাঁর হৃদয় কেমন ব্যথা করে। মাসা বারবার তার মায়ের কাছে অনুনয় করতে থাকে: ‘মা, আমি স্কুলে যেতে চাই। চলো, বাজারে যাই আর আমাকে একটা ব্যাগ আর একটা স্কুল ইউনিফর্ম কিনে দাও।’ আগামী সেপ্টেম্বর মাসে মাসার প্রথম শ্রেণির ক্লাস শুরু করার কথা ছিল। কিন্তু ইসরায়েলের অব্যাহত হামলার কারণে তা বোধ হয় আর সম্ভব হবে না।
আজ ফিলিস্তিনি শিশুদের স্কুলে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা অনেক অভিভাবকের হৃদয়কে বিদার করছে। শিক্ষার এই তৃষ্ণা আগামীকাল যখন ইসরায়েলের এই গণহত্যার তাণ্ডব শেষ হবে, তখন গাজার শিক্ষাক্ষেত্রের পুনর্গঠনকে চালিত করবে।
সম্প্রতি একটি খোলা চিঠিতে গাজার শত শত পণ্ডিত এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাফ বলেছেন, ‘গাজার একাডেমিক প্রতিষ্ঠানের পুনর্গঠন শুধু শিক্ষার বিষয় নয়; এটি আমাদের স্থিতিস্থাপকতা, সংকল্প এবং আগামী প্রজন্মের জন্য একটি ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার জন্য অটল অঙ্গীকারের প্রমাণ।’
ইমান আলহাজ আলি, গাজাভিত্তিক ফিলিস্তিনি লেখক
(আল জাজিরায় প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত)
গত ২৯ জুলাই ফিলিস্তিনের শিক্ষা ও উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয় যখন তাওজিহি উচ্চবিদ্যালয়ের সাধারণ ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করে, তখন সারা কেঁদে ফেলে। ১৮ বছর বয়সী এই মেয়েটি সোশ্যাল মিডিয়ায় অধিকৃত পশ্চিম তীরের অন্যান্য শিক্ষার্থীর আনন্দ উদ্যাপন দেখেছে, যারা তাদের কৃতিত্বে আনন্দে উদ্বেলিত ছিল।
গাজায় তার তাঁবু পরিদর্শনে গেলে দেখতে পাই সারা কাঁদছে। অশ্রুসিক্ত নয়নে সে আমাকে বলে, ‘আমারও তো এই সময়ে আনন্দ করার কথা ছিল, স্কুলের পড়ালেখা শেষ করে উদ্যাপন করার কথা ছিল, কিন্তু তা আর হলো না। আমি সেরা শিক্ষার্থীদের মধ্যে থাকা এবং এ জন্য আমার সাক্ষাৎকার নেওয়া হচ্ছে এমন স্বপ্ন দেখেছিলাম।’
সারা গাজা শহরের জাহরাত আল-মাদাইন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছিল এবং ভবিষ্যতে একজন চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখছিল। ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা দেওয়ার জন্য সে কয়েক মাস ধরে কঠোর পরিশ্রম করেছে। কারণ পরীক্ষায় ভালো ফল করলে সে একটি মেডিকেল ফ্যাকাল্টিতে পড়ার জন্য আবেদন করার অনুমতি পেত। এই পরীক্ষার স্কোর হলো ফিলিস্তিনের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রধান মাপকাঠি।
এখন এসবের পরিবর্তে সারা হতাশা নিয়ে তার সময় কাটাচ্ছে। কারণ ইসরায়েলি বোমাবর্ষণ তাদের বাড়ি ধ্বংস করার পাশাপাশি তার উন্নত ভবিষ্যতের স্বপ্নও ধ্বংস করেছে। সারা গাজার ৩৯ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর একজন, যাদের এ বছর ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু পারেনি। তবে সারা হলো সেই সব ‘ভাগ্যবান’-এর একজন, যারা বোমা হামলায় এখনো মারা যায়নি। ফিলিস্তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতে, যাদের এ বছর ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল, তাদের মধ্যে অন্তত ৪৫০ জন নিহত হয়েছে। গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যামূলক আগ্রাসনে ২৬০ জনের বেশি শিক্ষকসহ বিভিন্ন গ্রেডের ৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী মারা গেছে।
গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের আশ্রয়কেন্দ্রে পরিণত হওয়া স্কুলগুলোয় সম্ভবত এই উচ্চবিদ্যালয়ের অনেক সিনিয়র শিক্ষার্থীকে হত্যা করা হয়েছে। পরিহাসের বিষয়, গাজায় শিক্ষা ও জ্ঞানার্জনের স্থানগুলোকে মৃত্যুস্থানে পরিণত করা হয়েছে।
জুলাই মাস থেকে গাজার বিভিন্ন স্কুলে ২১ বার বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল এবং এসব হামলায় ব্যাপক হতাহত হয়েছে। সর্বশেষ হামলায় গাজা শহরের আল-তাবিন স্কুলটি ১০০ জনের বেশি লোকের কবরস্থানে পরিণত হয়েছে, যাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় হচ্ছে, বাবা-মায়েরা তাঁদের সন্তানদের শনাক্ত করতে পারেননি, কারণ বোমা তাদের দেহ টুকরা টুকরা করে ফেলেছিল।
জাতিসংঘের মতে, গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে গাজার ৫৬০টি স্কুলের ৯৩ শতাংশ হয় ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় ৩৪০টি হামলা ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সরাসরি চালিয়েছে। এর মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি স্কুলের পাশাপাশি জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুলগুলো রয়েছে। এখন পর্যন্ত এটা স্পষ্ট যে ইসরায়েল পরিকল্পিতভাবে গাজার স্কুলগুলো টার্গেট করছে এবং এর পেছনে একটা কারণ আছে।
ফিলিস্তিনিদের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ঐতিহাসিকভাবে শিক্ষা, বিপ্লবী কর্মকাণ্ড, সাংস্কৃতিক সংরক্ষণ এবং ইসরায়েলি উপনিবেশের দ্বারা একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন ফিলিস্তিনি ভূমির মধ্যে সম্পর্ক সংরক্ষণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করেছে। ফিলিস্তিনি জনগণের মুক্তির জন্য ক্ষমতায়ন এবং আন্দোলনে স্কুলগুলো সব সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। অন্য কথায়, ১৯৪৮ সালের নাকবা থেকে ফিলিস্তিনি জনগণকে মুছে ফেলার জন্য ইসরায়েলি প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে শিক্ষা ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের একটি রূপ। যখন ইহুদি মিলিশিয়া বাহিনী জাতিগতভাবে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ ফিলিস্তিনিকে তাদের মাতৃভূমি থেকে নির্মূল ও বহিষ্কার করেছিল, তখন তারা প্রথম যে কাজটি করেছিল তা হচ্ছে, যেসব শরণার্থীশিবিরে বসতি স্থাপন করা হয়েছিল, সেখানে তাদের সন্তানদের জন্য স্কুল খুলেছিল। শিক্ষাকে একটি জাতীয় মূল্যবোধে উন্নীত করা হয়েছিল। এটি ফিলিস্তিনের শিক্ষা খাতের উন্নয়নকে এমন স্থানে নিয়ে যায়, যেখানে এটি বিশ্বের সর্বোচ্চ সাক্ষরতার হারের মধ্যে একটিতে পরিণত হয়েছে।
এটি কোনো কাকতালীয় ঘটনা নয় যে একটি দরিদ্র, অবরুদ্ধ এবং নিয়মিত বোমাবর্ষণের শিকার হওয়া গাজা উপত্যকা ঐতিহ্যগতভাবে তাওজিহি পরীক্ষায় শীর্ষ স্কোর পাওয়া বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর আবাসস্থল। নিয়মিত ব্ল্যাকআউটের সময় তেলের প্রদীপ বা মোবাইল ফোনের আলোয় পড়ালেখা করে গাজার শিক্ষার্থীদের উচ্চ স্কোর অর্জনের গল্প প্রচুর। সব ধরনের প্রতিকূলতার মধ্যেও পড়ালেখায় এই উৎকর্ষসাধন প্রতিরোধের একটি রূপ—গাজার তরুণেরা এটি সম্পর্কে সচেতন হোক বা না হোক।
ইসরায়েল এখন যা করছে তা হচ্ছে, পদ্ধতিগতভাবে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের এই রূপকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছে। ফিলিস্তিনিদের সংস্কৃতি, জ্ঞান, ইতিহাস, পরিচয় এবং মূল্যবোধ প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে সংরক্ষণ এবং ভাগ করে নেওয়ার উপায়গুলো নির্মূল করার জন্য শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে দিচ্ছে। ইসরায়েলের গাজার স্কুল ধ্বংস করার অর্থ হলো শিক্ষার মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধের চেতনা নস্যাৎ করা।
শিক্ষাক্ষেত্রের ধ্বংস ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীদের ওপর একটি বিধ্বংসী প্রভাব ফেলছে। শিক্ষা অনেকের জন্য এই আশাও দিয়েছে যে তাদের জীবন আরও ভালো হতে পারে, তারা কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তাদের পরিবারকে দারিদ্র্য থেকে বের করে আনতে পারে। কিন্তু এখন তারা আর এই আশা করছে না।
আমি গাজার শিশু এবং যুবকদের মধ্যে হতাশা বিস্তারের কথা ভেবেছিলাম যখন আমি ১৮ বছর বয়সী ইহসানকে দেইর এল-বালাহ শহরের একটি ধুলোময় রাস্তায় প্রচন্ড রোদে হাতে তৈরি মিষ্টি বিক্রি করতে দেখেছিলাম। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম কেন সে গরমের মধ্যে এ কাজটি করছে। সে আমাকে বলেছিল, সে তার পরিবারকে বাঁচাতে এটা করেছে। যদিও এতে খুব সামান্য অর্থই উপার্জন হয়।
‘আমি আমার স্বপ্ন হারিয়েছি। আমি প্রকৌশলী হওয়ার, নিজের ব্যবসা খোলার, একটি কোম্পানিতে চাকরি করার স্বপ্ন দেখেছিলাম, কিন্তু আমার সব স্বপ্ন এখন ছাই হয়ে গেছে।’ হতাশার সুরে বলেছিল ইহসান। সারার মতো ইহসানেরও এবার তাওজিহি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল এবং সে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য উন্মুখ ছিল।
আমি গাজায় সারা এবং ইহসানের মতো অনেক উজ্জ্বল ছেলেমেয়েকে দেখতে পাচ্ছি, যারা তাদের উচ্চবিদ্যালয়ের কৃতিত্বগুলো উদ্যাপন করার অপেক্ষায় ছিল। এখন তারা স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ার কষ্টে কাঁদছে। ইসরায়েল তাদের সব স্বপ্ন কেড়ে নিয়েছে। যারা গাজার ভবিষ্যৎ ডাক্তার ও প্রকৌশলী হতে পারত, তারা এখন মৃত্যুর আতঙ্কের মধ্যে বেঁচে থাকার জন্য খাবার এবং পানি খুঁজে পেতে লড়াই করে দিন কাটাচ্ছে।
কিন্তু প্রতিরোধ করার সব পথ ধ্বংস হয়ে যায়নি। ধ্বংসপ্রাপ্ত গাজায় ফিলিস্তিনিদের মধ্যে শিক্ষার আকাঙ্ক্ষা মরে যায়নি। যখন আমি ছয় বছর বয়সী মাসা এবং তার পরিবারকে দেইর এল-বালাহে তাদের তাঁবুতে দেখতে গিয়েছিলাম, তখন আমার সেই কথা মনে পড়ে গিয়েছিল। আমি তার মায়ের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। তিনি আমাকে বলছিলেন যে তাঁর মেয়ে স্কুলে যেতে না পারার কারণে প্রতিবার কাঁদলে তাঁর হৃদয় কেমন ব্যথা করে। মাসা বারবার তার মায়ের কাছে অনুনয় করতে থাকে: ‘মা, আমি স্কুলে যেতে চাই। চলো, বাজারে যাই আর আমাকে একটা ব্যাগ আর একটা স্কুল ইউনিফর্ম কিনে দাও।’ আগামী সেপ্টেম্বর মাসে মাসার প্রথম শ্রেণির ক্লাস শুরু করার কথা ছিল। কিন্তু ইসরায়েলের অব্যাহত হামলার কারণে তা বোধ হয় আর সম্ভব হবে না।
আজ ফিলিস্তিনি শিশুদের স্কুলে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা অনেক অভিভাবকের হৃদয়কে বিদার করছে। শিক্ষার এই তৃষ্ণা আগামীকাল যখন ইসরায়েলের এই গণহত্যার তাণ্ডব শেষ হবে, তখন গাজার শিক্ষাক্ষেত্রের পুনর্গঠনকে চালিত করবে।
সম্প্রতি একটি খোলা চিঠিতে গাজার শত শত পণ্ডিত এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাফ বলেছেন, ‘গাজার একাডেমিক প্রতিষ্ঠানের পুনর্গঠন শুধু শিক্ষার বিষয় নয়; এটি আমাদের স্থিতিস্থাপকতা, সংকল্প এবং আগামী প্রজন্মের জন্য একটি ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার জন্য অটল অঙ্গীকারের প্রমাণ।’
ইমান আলহাজ আলি, গাজাভিত্তিক ফিলিস্তিনি লেখক
(আল জাজিরায় প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত)
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
৩ দিন আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৭ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৭ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৭ দিন আগে