হেমাঙ্গ বিশ্বাস

Thumbnail image

হেমাঙ্গ বিশ্বাস ভারতীয় উপমহাদেশের গণসাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম ব্যক্তিত্ব। একই সঙ্গে সুরকার, সংগীতশিল্পী ও সাংস্কৃতিক সংগঠক ছিলেন তিনি। তিনি লোকসংগীতের ভাব, সুর ও ভাষাকে গণসংগীতে রূপ দিয়ে নতুন এক ধারা সৃষ্টি করেছিলেন। তিনি ছিলেন সুরেলা কণ্ঠের অধিকারী। সেই প্রবাহ হেমাঙ্গ বিশ্বাসকে গায়ক থেকে গণসংগীতের শীর্ষে অধিষ্ঠিত করে।

যুবক বয়সেই ব্রিটিশদের শোষণ ও নিপীড়ন তাঁর দ্রোহী চেতনার স্ফুরণ ঘটায়। ব্রিটিশ বিতাড়নের স্বপ্নে তিনি এতটাই সংকল্পবদ্ধ হন যে, শিক্ষাজীবনের ইতি টানতে কুণ্ঠাবোধ করেননি। এরপর পার্টির কাজে হাটে-মাঠে-ঘাটে ঘুরে বেড়িয়েছেন।

হাইস্কুলে পড়ার সময়ই ১৯৩০ সালে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আইন অমান্য আন্দোলনে যোগ দেন। ১৪৪ ধারা ভেঙে মিটিং করার অপরাধে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। আন্দোলন করতে গিয়ে ১৯৩২ সালে আবার গ্রেপ্তার হন তিনি। কারারুদ্ধ অবস্থায় কাটান দুই বছর ছয় মাস।

হেমাঙ্গ বিশ্বাসের বাবা ছিলেন হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের জমিদার। তাঁদের পরিবারে রক্ষণশীলতা ও জাতবিচারের প্রাবল্য ছিল। ১৯৪০ সালে কমিউনিস্ট মতাদর্শের জন্য বাবার সঙ্গে আদর্শগত বিরোধের কারণে বাড়ি থেকে বিতাড়িত হন। সেখান থেকে শিলং চলে যান। এরপর কমিউনিস্ট পার্টির জন্য গ্রামে সংগঠন গড়ার কাজে মনোনিবেশ করেন। শ্রমিক আন্দোলনের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন তিনি।

১৯৩৩ সালের ২০ জুন কলকাতায় অনুষ্ঠিত ফ্যাসিবাদবিরোধী লেখক ও শিল্পী সংঘের সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন তিনি। ১৯৩৮-৩৯ সালের দিকে বিনয় রায়, নিরঞ্জন সেন, দেবব্রত বিশ্বাস প্রমুখের সঙ্গে ভারতীয় গণনাট্য সংঘ গঠন করেন। পঞ্চাশের দশকের শেষ অবধি তিনি এই সংঘের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন। ১৯৪২ সালে রচনা করেন তাঁর বিখ্যাত গান ‘কাস্তেটারে দিও জোরে শান, কিষান ভাইরে...’।

তিনি শিল্পী ও কমিউনিস্ট হিসেবে কখনো অবসর গ্রহণ করেননি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাঁর জীবনের পথ ছিল চলমান। এই মহান শিল্পী ১৯৮৭ সালের ২২ নভেম্বর পৃথিবী ছেড়ে চলে যান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত