চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন: অনিয়মে আলোচিত কর্মকর্তাকে ফেরাতে মেয়রের চিঠি

সোহেল মারমা, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৮: ৩৭

দুর্নীতিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে আলোচিত প্রকৌশলী সুদীপ বসাককে আবারও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে (চসিক) ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন খোদ প্রতিষ্ঠানটির প্রধান। তাঁকে ফেরাতে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের কাছে একটি অনুরোধপত্র পাঠিয়েছেন চসিকের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী।

চসিকের নথিসূত্রে জানা গেছে, গত ২০ জানুয়ারি চসিক মেয়র ডিও লেটারের মাধ্যমে (ডিও পত্র নম্বর: ৪৬.১১. ১৬০০.০০১. ১৬.২০২৪-০৩) এই অনুরোধ জানিয়েছেন। মন্ত্রীর কাছে পাঠানো এ অনুরোধপত্রে মেয়রের স্বাক্ষর রয়েছে।

চসিকে এক ময়ের আলোচিত নাম সুদীপ বসাক। বর্তমানে তিনি গাজীপুর সিটি করপোরেশনে যান্ত্রিক শাখায় তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত। ২০০৬ সালে চসিকের প্রয়াত মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর আমলে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই দৈনিক চুক্তির ভিত্তিতে যান্ত্রিক শাখায় উপসহকারী প্রকৌশলী পদে যোগদান করেন এই কর্মকর্তা। পরে ২০০৯ সালে তাঁর চাকরি নিয়মিত করা হয়। এর পর থেকেই বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। ২০১৯ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গণশুনানিতেও সহকর্মী ও জনসাধারণের অভিযোগ ছিল এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। একাধিক তদন্ত হলেও বারবার রহস্যজনক কারণে ছাড়া পেয়ে যান আলোচিত এই কর্মকর্তা। শাস্তি তো দূরের কথা, উল্টো একের পর এক পদোন্নতি পেয়েছেন তিনি।

এই কর্মকর্তাকে ফিরিয়ে আনতে মন্ত্রীকে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, বর্তমানে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে চসিকে রয়েছেন আকবর আলী। তিনি ২০২৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর পিআরএল ছুটিতে যাবেন। বিধিমতে, এক বছর আগে তাঁকে নিজ বিভাগ এলজিইডিতে ফেরত যেতে হবে। এ ছাড়া চসিকে কর্মরত যান্ত্রিক শাখার একজন নির্বাহী প্রকৌশলী ইতিমধ্যে পিআরএল ছুটিতে আছেন এবং আরেকজন নির্বাহী প্রকৌশলী এ বছর পিআরএল ছুটিতে যাবেন।

অনুরোধপত্রে বলা হয়, ‘নাগরিক সেবা প্রদান, পরিচ্ছন্ন আধুনিক নগরী গঠন ও সেবা প্রদানে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করতে চসিকের যান্ত্রিক শাখায় তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পদে সুদীপ বসাককে পুনরায় পদায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।’

যদিও চসিকে থাকাকালীন সুদীপ বসাকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন যন্ত্রপাতির ভাড়া আত্মসাৎ এবং বেআইনিভাবে দোকান বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ওই ঘটনায় ২০২২ সালে ১৫ মার্চ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সাত কার্যদিবসের মধ্যে ওই তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার কথা থাকলেও ১৮ মাসেও প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি কমিটি। তাঁকে কী কারণে চসিকে আনা হবে, জানতে চসিকের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি। পরে হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠিয়ে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

পরে এ বিষয়ে জানতে মেয়রের একান্ত সচিব আবুল হাসেমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, ‘পিআরও (জনসংযোগ কর্মকর্তা) সাহেবের মেয়র মহোদয়ের সঙ্গে আলাপ করে কথা বলার জন্য অফিশিয়াল নির্দেশ আছে।’

জনসংযোগ কর্মকর্তা আজিজ আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ ধরনের সরকারের চিঠিপত্র মেয়র মহোদয়ের পিএস আবুল হাসেম সাহেব জানেন। আমি এসবের বিষয়ে কিছু জানি না।’

জানতে চাইলে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মেয়র মহোদয় ডিও লেটার পাঠাতে পারেন। এটা তাঁর এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে। তবে ওই ডিও লেটারের বিষয়ে আমি অবগত নই। তাই এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারছি না।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত