Ajker Patrika

গর্ভকালীন সেবায় অনাগ্রহ

আবদুল মান্নান, মানিকছড়ি (খাগড়াছড়ি)
আপডেট : ১৩ মার্চ ২০২২, ১৩: ২৮
গর্ভকালীন সেবায় অনাগ্রহ

খাগড়াছড়ির মানিকছড়ির মারমা জনগোষ্ঠীর অনেক পরিবার এখনো গর্ভকালীন করণীয় ও জন্মনিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে উদাসীন। উপজেলার সদর ইউনিয়নের দুটি পাড়ার শতাধিক পরিবারে নারী, কিশোরীরা এই সেবা নিচ্ছেন না। একই সঙ্গে ‘সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি’ (ইপিআই) থেকে পিছিয়ে রয়েছে পাড়ার শিশুরা।

পাড়া ও পরিবারপ্রধানেরা বলছেন, গ্রামে সুযোগ না থাকায় নারী ও শিশুরা দূরের কেন্দ্রে গিয়ে এই সেবা নিতে আগ্রহী না। এমনকি কিশোরীরা সেবা নিতে আগ্রহ দেখালেও অভিভাবকদের অনাগ্রহে তাতে ভাটা পড়ছে।

উপজেলার সদর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর ডলু চাইহ্লাপ্রু ও মেমং কার্বারিপাড়ার শতাধিক পরিবারের নারী, কিশোরীরা পরিবার-পরিকল্পনাসেবা নিচ্ছেন না। এমনকি নবজাতকেরা ইপিআই সেবা থেকে পিছিয়ে রয়েছে। পরিবার কল্যাণসহকারী মাঠ পরিদর্শনে গেলেও সেবাগ্রহীতাদের আশানুরূপ সাড়া মিলছে না। বিশেষ করে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ ও সামগ্রী ব্যবহারে নারীরা অনিচ্ছুক।

পাড়াপ্রধান, পরিবারপ্রধান ও পাড়ার কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চাইহ্লাপ্রু কার্বারি ও মেমং কার্বারিপাড়া দুটি থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে সুইজাই কার্বারিপাড়ার পাড়াকেন্দ্রে ইপিআই কার্যক্রম, পরিবার পরিকল্পনাসেবা স্বাভাবিক চলছে। তবে দূরত্বের অজুহাতে মারমা জনগোষ্ঠীর ওই পাড়া দুটির প্রায় ৯০ শতাংশ নারী সেবা নিতে যান না। এ ছাড়া পাড়া দুটির তিন কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণে গবামারায় কমিউনিটি ক্লিনিক (সিসি) রয়েছে। সেখানে নিয়মিত ইপিআই, ১৪ থেকে ৪৯ বছর বয়সী নারীর টিটি টিকা ও পরিবার পরিকল্পনাসেবা কার্যক্রম থাকলেও সেখানে মারমা নারী, শিশু, কিশোর-কিশোরী সেবাগ্রহীতার উপস্থিতি কম।

গবামারা সিসির দায়িত্বে থাকা কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) ফাতেমা আক্তার বলেন, ‘বাঙালি পরিবারের তুলনায় মারমা জনগোষ্ঠীর নারী, কিশোর-কিশোরীদের সেবাগ্রহণে আগ্রহ খুবই কম। সচেতনতা নেই, ফলে তাঁদের সন্তানেরা আয়রনের ঘাটতিতে ভোগে।’

চাইহ্লাপ্রু কার্বারিপাড়া কেন্দ্রের কর্মী আথুইবাই মারমা বলেন, ‘প্রথমত মারমা জনগোষ্ঠী পরিবারে স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতার অভাব আছে। দূরে বলে কেউই সেবা নিতে যেতে চায় না। শুধু হামের টিকার সময় পাড়ায় ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসা টিম আসার কারণে শিশুরা টিকা পেয়েছে। পরিবার পরিকল্পনাসেবা ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে পাড়াকেন্দ্রে নিয়মিত কাজ করেও জনসচেতনতা বাড়াতে পারছি না।’

পাড়াপ্রধান চাইহ্লাপ্রু কার্বারি বলেন, ‘আমার এই পাড়া ও মেমং কার্বারিপাড়ায় ১০০ পরিবারে অর্ধশতাধিক ১ থেকে ১০ বছরের শিশু রয়েছে। পাড়ায় টিকাকেন্দ্র না থাকায় ৯৫ শতাংশ শিশু ইপিআই সেবা নেয়নি। নারীরা পরিবার পরিকল্পনাসেবা থেকে বঞ্চিত। এ ছাড়া জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি, কনডম ও পিল ব্যবহারে আগ্রহ নেই। প্রতিটি পরিবারে জন্মহার বাড়ছে। এইদুই পাড়ায় টিকাকেন্দ্র হলে আমাদের শিশু, কিশোর-কিশোরী ও গর্ভবতীরা সেবা ও ওষুধ পেত।’

চাইহ্লাপ্রু কার্বারিপাড়ার নিচাবাই মারমা বলেন, ‘আমার ১৮ মাস বয়সী সন্তান উগ্যজাই মারমাকে এখনো ইপিআই দেওয়া হয়নি। আমি আবারও অন্তঃসত্ত্বা। আগে-পরে আমিও টিকা নিইনি। মানচিং মারমার ৫ মাস ও মিলি মারমার ২০ মাস বয়সী সন্তানও ইপিআই সেবা পায়নি। এমনকি তাঁদের মায়েরাও পরিবার পরিকল্পনাসেবা নেয়নি। অনেক দূরে টিকাকেন্দ্র, কখন স্বাস্থ্যকর্মীরা টিকা দিতে আসেন, আমরা খবর পাই না।’

উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. হাফিজ উদ্দীন বলেন, ‘এই জনপদে সেবাগ্রহীতার তুলনায় পরিবার পরিকল্পনা সহকারী কম। তা সত্ত্বেও গর্ভবতী নারী, কিশোর-কিশোরী ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে সিসি এবং ইপিআই কেন্দ্রে নিয়মিত কার্যক্রম চলছে। মান্ধাতার আমলের ধ্যানধারণার কারণে অনেকে সেবা গ্রহণে অনাগ্রহ দেখায়। আমরা সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত