নোয়াখালী খালে পাকা সেতুর দাবি

নোয়াখালী প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১২ অক্টোবর ২০২১, ০৭: ১০
আপডেট : ১২ অক্টোবর ২০২১, ১২: ২৫

আবদুর রহমান সায়েদের বাড়ি ঘেঁষে বয়ে গেছে নোয়াখালী খাল। কিন্তু খালের ওপর স্থায়ী কোনো সেতু না থাকায় স্থানীয়দের প্রচেষ্টায় প্রথমে তৈরি করা হয় একটি বাঁশের ও পরে একটি কাঠের সাঁকো। এই সাঁকোই কাল হয় আবদুর রহমান সায়েদের। ২০১৯ সালের শেষদিকে কাঠের ভাঙা সাঁকো পার হতে গিয়ে পানিতে পড়ে মারা যায় তাঁর তিন বছর বয়সী ছেলে আবির হোসেন।

শুধু আবদুর রহমানের ছেলে আবির নয়, নোয়াখালীর কবিরহাটের এ সাঁকো পার হতে গিয়ে পানিতে পড়ে মারা গেছে একই গ্রামের আলমগীরের ছেলে মনির হোসেন (৪) এবং কামাল উদ্দিনের ছেলে মোহন (৩)। বিভিন্ন সময় আহত হয়েছে স্কুল শিক্ষার্থীসহ অর্ধশতাধিক স্থানীয় বাসিন্দা। একটি স্থায়ী সেতুর অভাবে দুর্ভোগে পড়েছেন ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের দুই গ্রামের অন্তত ২০ হাজার মানুষ। সেতু না থাকায় পাশের বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিক উল্যাহ সড়কটি ব্যবহার করতে পারছে না স্থানীয়রা।

স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল্লাহ বলেন, প্রতিদিন ভয় আর আতঙ্ক নিয়ে ভাঙা ঝুঁকিপূর্ণ কাঠের সাঁকো দিয়ে পারাপার করতে হয় প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের প্রায় ৩ হাজার শিক্ষার্থীসহ প্রায় ২০ হাজার মানুষকে। শুষ্ক মৌসুমে যাতায়াত কিছুটা সহজ হলেও বর্ষায় অনেকটাই একঘরে হয়ে পড়ে এখানকার বাসিন্দারা। অতি প্রয়োজনে তখন যাতায়াতের মাধ্যম হয় নৌকা ও কলাগাছের ভেলা। ভাঙা সাঁকো পার হতে গিয়ে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় গর্ভবতী নারীসহ অসুস্থ রোগীদের নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়।

স্থানীয় আবদুর রহিম বলেন, দুই দশকের বেশি সময় ধরে রফিক উল্যাহ সড়কের নোয়াখালী খালের ওপরে নির্মিত প্রায় ৩০০ ফুটের এ সাঁকো দিয়েই যাতায়াত করছে লোকজন। সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নির্বাচনী এলাকা হলেও উন্নত সুবিধা থেকে বঞ্চিত এ অঞ্চলের মানুষ।

নলুয়া ভুইয়ারহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী ফাহিমা আক্তার বলে, ভাঙা সেতু পার হতে গিয়ে পা পিছলে একাধিক দিন তার হাত থেকে বই-খাতা পানিতে পড়ে নষ্ট হয়েছে। করোনার আগে বিদ্যালয় থেকে ফেরার পথে সেতু ভেঙে তিনজন ছাত্রী পানিতে পড়ে আহত হয়।

ধানসিঁড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান নুর আলম পারভেজ বলেন, বছরে দুই থেকে তিনবার সাঁকোটি ভেঙে পড়ে। এটি মেরামত করতে স্থানীয়ভাবে চাঁদা তুলতে হয়। গত দুই বছরে স্থানীয় সাংসদ ও উপজেলা চেয়ারম্যান তিন ধাপে ২ লাখ টাকা দিয়েছেন। গত সেপ্টেম্বরে সাঁকোটির একাংশ আবারও ভেঙে পড়ে। কাঠের সাঁকোটি বারবার এত টাকা দিয়ে মেরামত না করে সরকারিভাবে একটি পাকা সেতু নির্মাণের দাবি জানান তিনি।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কবিরহাট উপজেলা প্রকৌশলী হরষিত কুমার সাহা বলেন, ‘সেতুর স্থানটি আমরা সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। কাঠের সাঁকোর স্থলে একটি সেতু নির্মাণ করা জরুরি। তাই উপজেলার ইউনিয়ন ও গ্রামের অনূর্ধ্ব ১০০ মিটার যে সেতু প্রকল্প রয়েছে, এটি সেই প্রকল্পের তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ প্রকল্পটির অনুমোদন দিলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্মাণকাজ শুরু করা সম্ভব।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত