চেনা দিকেই পাঠকের চোখ

কাশফিয়া আলম ঝিলিক, ঢাকা
প্রকাশ : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৮: ৩২

পদে পদে মৃত্যুর হাতছানি, বিপদ, শত্রু আর ভয়!

স্কটল্যান্ডে ছুটি কাটিয়ে খুশিমনে ফ্রান্সে ফেরার পথে রানার পরিচয় হয় এক প্রৌঢ়ার সঙ্গে। ভালো করে সব বুঝে ওঠার আগেই সে জড়িয়ে পড়ে এক ফাঁদে! প্রেমিকা জেসিকাকে বাঁচাতে হলে রানার খুন করতে হবে পরিচিত একজনকে। ছুটি কাটাতে গিয়ে এই ফাঁদে পড়ে রহস্যের কিনারা করতে চরকির মতো ঘুরছে রানা। এভাবেই এগিয়েছে কাজী মায়মুর হোসেনের ‘কিলিং মিশন’ নামের বইটির গল্প। এর নায়ক চিরচেনা রানা—মাসুদ রানা।

এই বই হাতে নিয়ে হয়তো পড়ার লোভ সামলাতে পারেননি আসাদুজ্জামান। পেশায় তিনি একজন চিকিৎসক। সেবা প্রকাশনীর বুকলিস্ট দেখে খুব বেছে বেছে বই কিনলেন তিনি। এগুলোর মধ্যে নতুন আসা ‘কিলিং মিশন’ বইটা বেশ কিছুক্ষণ পড়ে নিলেন স্টলের সামনে দাঁড়িয়েই। কী বই কিনলেন—বই কেনার এক ফাঁকে জানতে চাইলাম। আসাদুজ্জামান জানালেন, বেশির ভাগ অনুবাদ কিনেছেন। সেগুলোর মধ্যে হেনরি রাইডারের বই কিনেছেন দুটি, সঙ্গে একটি কিশোর থ্রিলার। নিজেও পড়বেন, বাসায় ছেলেমেয়েরা আছে, তাদেরও পড়তে দেবেন।

মধ্য ত্রিশের অনেকের মতো আসাদুজ্জামান সেবা প্রকাশনীর প্রাঞ্জল অনুবাদের টান ছাড়তে পারেননি এখনো। বললেন, ‘আমরা যারা কিশোর বয়স থেকে সেবা প্রকাশনীর বই পড়ে আসছি, তারা আসলে সব সময়ই সেবাকে ভালোবাসব।’

সেবার স্টলে আসা বেশির ভাগ পাঠকই কিনছেন অনুবাদ বইগুলো। এই পাঠকদের বেশির ভাগের বয়স পঁয়ত্রিশের ওপরে।

সেবা প্রকাশনী থেকে এবার বেশি বিক্রি হচ্ছে ‘কিলিং মিশন’ ও ‘ডিক স্যাণ্ড’ নামের বই দুটি। এ ছাড়া ‘তিন গোয়েন্দার ভলিউম ১৫৯’, ‘দ্য ওয়ে অব দ্য স্পিরিট’, ‘কুয়াশা ২’ বইগুলোও বেশ ভালো বিক্রি হচ্ছে বলে জানান সেবা প্রকাশনীর বিক্রেতারা। স্টলের দায়িত্বে থাকা আবদুস সালাম জানিয়েছেন, এবার বেশি বিক্রি হচ্ছে অনুবাদ বই। আর কিশোরেরা তিন গোয়েন্দা বেশি পছন্দ করছে। দীর্ঘ অভিজ্ঞতা হাতড়ে তিনি জানালেন, বড়রাই বেশি কিনছেন সেবার বই।

সেবা প্রকাশনীর ভিড় ঠেলে বেরিয়ে আসি তাম্রলিপি প্রকাশনীর ২১ নম্বর স্টলে। এখানে তরুণ পাঠকদের সমাগম চোখে পড়ার মতো। স্টলের দায়িত্বে থাকা একজন জানালেন, তাঁদের স্টল থেকে এবার বেশি বিক্রি হচ্ছে মুহম্মদ জাফর ইকবালের কিশোর উপন্যাস ‘ফেরা’। এ ছাড়া অন্তিক মাহমুদের ‘দুইশো পঞ্চাশ’ এবং যোবায়েদ আহসানের উপন্যাস ‘মায়াবন বিহারিণী’ও আছে বিক্রির তালিকায় ওপরের দিকে। তরুণদের আগ্রহ বেশি আছে এ দুই লেখকের বইয়ের প্রতি।
ধীরে ধীরে মেলায় লোকসমাগম বাড়ছে। ধাক্কা খেতে খেতে উপস্থিত হই অ্যাডর্ন পাবলিকেশনের স্টলের সামনে। প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্বপূর্ণ বই ‘শাহ আবদুল করিম’। বাউলসাধক ও শিল্পী শাহ আবদুল করিমের ৫০টি গানের ইংরেজি অনুবাদ এবং বাংলা মূল গান দিয়ে সাজানো হয়েছে বইটি।

স্টলের দায়িত্বে থাকা নাজির হোসেন জানান, ভ্রমণ উপন্যাস ‘ইস্তাম্বুল’ ও ‘ঝিলাম নদীর দেশ’ বেশ সাড়া পাচ্ছে পাঠকদের মধ্যে। এ ছাড়া ‘আমি তিলোত্তমা’ উপন্যাসটিও বিক্রি হচ্ছে ভালো। তবে উল্লেখযোগ্যভাবে বিক্রি হচ্ছে ‘টি অ্যান্ড বিসকিটস’ বইটি। নাজির হোসেন বলেন, ‘আমাদের স্টলে যত বিদেশি ক্রেতা এসেছেন, সবাই বইটি কিনেছেন। এটি ৬টি উপন্যাসের অনুবাদ নিয়ে সাজানো হয়েছে।’

সন্ধ্যা নামে। বারোতম দিনের মেলা গমগম করতে থাকে। সন্ধানী পাঠকের চোখ খুঁজে ফেরে দিক, চেনা জগৎ, চেনা বাক্য—শব্দ।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত