আসাদ সরকার
আব্দুর গফুর কাজী এভাবে তাঁর একান্ত ব্যক্তিগত বিষয় জানাবেন বুঝতে পারিনি। কারও ব্যক্তিগত বিষয় জানতে চাওয়া ভদ্রতার মধ্যে পড়ে না বলেই প্রশ্নটা করতে পারছিলাম না। হয়তো তিনি আমার চোখের ভাষা বুঝতে পেরেছিলেন। আর তাই আপন মনে বলতে শুরু করলেন তাঁর না বলা সব কথা।
বাঁশিওয়ালা গফুর গাজীর বয়স এখন ৬০ বছর। রাস্তায় রাস্তায় বাঁশের বাঁশি বিক্রি করেন। কাঁধে একটা কাপড়ের ব্যাগ, তার ভেতর নিজ হাতে তৈরি গোটা পঞ্চাশেক বাঁশের বাঁশি নিয়ে রোজ বেরিয়ে পড়েন। রাস্তায় নেমে একটা বাঁশি ঠোঁটে নিয়ে সুর তোলেন ‘আমার সোনার ময়না পাখি’ গানটার। তারপর একে একে অন্যান্য গান। প্রতিদিনের রুটিন যেন এটা। বাঁশির সুরে হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো তাঁর পিছু পিছু ছুটতে থাকে শিশু-কিশোরেরা। তিনি আপন মনে বাজিয়ে চলতেই থাকেন। তারপর কোনো গাছতলা বা ছোটখাটো বাজার পেলে বসে পড়েন। এরপর তাঁকে ঘিরে ধরে পেছন পেছন ছুটে আসা শিশুগুলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই জড়ো হয় সব বয়সের মানুষ। বাঁশির সুরে তাঁরাও মুগ্ধ হন। তারপর যাওয়ার বেলায় কেউ বাঁশি শেখার আশায়, কেউ শিশুদের দিতে, আবার কেউ এমনিই বাঁশির সুর ভালোবেসে দু-একটা বাঁশি কেনেন। বাঁশি বিক্রির এই অর্থ দিয়েই চলে গফুর গাজীর সংসার। ৪০ বছর ধরে এভাবেই চলছে।
এবার বলি গফুর গাজীর গোপন গল্পটা। কেন তিনি রোজ বাঁশিতে ‘সোনার ময়না পাখি’ গানের সুর তুলেই যাত্রা শুরু করেন? এই প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে গফুর গাজীর চোখের কোণে অশ্রু গড়ায়। তাঁর বর্তমান স্ত্রীর নাম জমিলা। এই সংসারে তাঁর তিন ছেলে। বেশ সুখের সংসার। গফুর গাজীর দুঃখ অন্য জায়গায়। তাঁর প্রথম স্ত্রীর নাম মোর্শেদা বেগম। পাগলের মতো ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন তাঁকে। সেই সংসারে তাঁর একটা ছেলে আছে। সেই স্ত্রী-সন্তানসহ শ্বশুরবাড়িতে ঘরজামাই থাকতেন তিনি। কিন্তু ঘরজামাই থাকাটা পরিবার কিংবা এলাকার মানুষ ভালোভাবে নেয়নি। সব সময় তাচ্ছিল্য করত, টিপ্পনী কাটত তাঁকে। একপর্যায়ে বিষয়টা সহ্যসীমা অতিক্রম করে যায়। গফুর গাজী মোর্শেদাকে জানান, তিনি আর ঘরজামাই থাকবেন না। তাঁর এই সিদ্ধান্তে মোর্শেদা সংকটে পড়েন। অসুস্থ মা-বাবার একমাত্র অবলম্বন তিনি। কোনোভাবেই মা-বাবাকে ফেলে স্বামীর সঙ্গে অন্য জায়গায় সংসার পাতার সুযোগ তাঁর আপাতত নেই। আবার স্বামীকেও ছাড়তে পারবেন না। ঠিক এই সময় রাগের মাথায় অবিবেচকের মতো কাজ করে বসেন গফুর। মোর্শেদাকে তালাক দিয়ে জমিলাকে বিয়ে করেন।
ওই ঘটনার কয়েক দিনের মধ্যেই গফুর বুঝতে পারেন, মোর্শেদার সঙ্গে অন্যায় করেছেন তিনি। কিন্তু তত দিনে যা সর্বনাশ হওয়ার, তা হয়ে গেছে। মানসিক যন্ত্রণা ঢাকতে হাতে তুলে নেন বাঁশি। সেই বাঁশিই একসময় পেশায় পরিণত হয়। এদিকে জমিলাকে নিয়ে গফুর নতুন সংসার সাজালেও মোর্শেদা তা করেননি। একমাত্র সন্তানকে আগলে ধরে ভালোবাসার পরীক্ষা দিয়ে চলেছেন এখনো। এই বিষয়টি যখন মনে পড়ে, গফুরের যন্ত্রণাটা তখন কয়েক গুণ বেড়ে যায়।
নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার দাউদপুর গ্রামের গফুর গাজীর দিকে তাকিয়ে আমি যেন শুনছিলাম কোনো এক সিনেমার গল্প। সত্যিই, জীবনের গল্প কখনো কখনো সিনেমাকেও হার মানায়।
লেখক: নাট্যকার ও নির্মাতা
আব্দুর গফুর কাজী এভাবে তাঁর একান্ত ব্যক্তিগত বিষয় জানাবেন বুঝতে পারিনি। কারও ব্যক্তিগত বিষয় জানতে চাওয়া ভদ্রতার মধ্যে পড়ে না বলেই প্রশ্নটা করতে পারছিলাম না। হয়তো তিনি আমার চোখের ভাষা বুঝতে পেরেছিলেন। আর তাই আপন মনে বলতে শুরু করলেন তাঁর না বলা সব কথা।
বাঁশিওয়ালা গফুর গাজীর বয়স এখন ৬০ বছর। রাস্তায় রাস্তায় বাঁশের বাঁশি বিক্রি করেন। কাঁধে একটা কাপড়ের ব্যাগ, তার ভেতর নিজ হাতে তৈরি গোটা পঞ্চাশেক বাঁশের বাঁশি নিয়ে রোজ বেরিয়ে পড়েন। রাস্তায় নেমে একটা বাঁশি ঠোঁটে নিয়ে সুর তোলেন ‘আমার সোনার ময়না পাখি’ গানটার। তারপর একে একে অন্যান্য গান। প্রতিদিনের রুটিন যেন এটা। বাঁশির সুরে হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো তাঁর পিছু পিছু ছুটতে থাকে শিশু-কিশোরেরা। তিনি আপন মনে বাজিয়ে চলতেই থাকেন। তারপর কোনো গাছতলা বা ছোটখাটো বাজার পেলে বসে পড়েন। এরপর তাঁকে ঘিরে ধরে পেছন পেছন ছুটে আসা শিশুগুলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই জড়ো হয় সব বয়সের মানুষ। বাঁশির সুরে তাঁরাও মুগ্ধ হন। তারপর যাওয়ার বেলায় কেউ বাঁশি শেখার আশায়, কেউ শিশুদের দিতে, আবার কেউ এমনিই বাঁশির সুর ভালোবেসে দু-একটা বাঁশি কেনেন। বাঁশি বিক্রির এই অর্থ দিয়েই চলে গফুর গাজীর সংসার। ৪০ বছর ধরে এভাবেই চলছে।
এবার বলি গফুর গাজীর গোপন গল্পটা। কেন তিনি রোজ বাঁশিতে ‘সোনার ময়না পাখি’ গানের সুর তুলেই যাত্রা শুরু করেন? এই প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে গফুর গাজীর চোখের কোণে অশ্রু গড়ায়। তাঁর বর্তমান স্ত্রীর নাম জমিলা। এই সংসারে তাঁর তিন ছেলে। বেশ সুখের সংসার। গফুর গাজীর দুঃখ অন্য জায়গায়। তাঁর প্রথম স্ত্রীর নাম মোর্শেদা বেগম। পাগলের মতো ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন তাঁকে। সেই সংসারে তাঁর একটা ছেলে আছে। সেই স্ত্রী-সন্তানসহ শ্বশুরবাড়িতে ঘরজামাই থাকতেন তিনি। কিন্তু ঘরজামাই থাকাটা পরিবার কিংবা এলাকার মানুষ ভালোভাবে নেয়নি। সব সময় তাচ্ছিল্য করত, টিপ্পনী কাটত তাঁকে। একপর্যায়ে বিষয়টা সহ্যসীমা অতিক্রম করে যায়। গফুর গাজী মোর্শেদাকে জানান, তিনি আর ঘরজামাই থাকবেন না। তাঁর এই সিদ্ধান্তে মোর্শেদা সংকটে পড়েন। অসুস্থ মা-বাবার একমাত্র অবলম্বন তিনি। কোনোভাবেই মা-বাবাকে ফেলে স্বামীর সঙ্গে অন্য জায়গায় সংসার পাতার সুযোগ তাঁর আপাতত নেই। আবার স্বামীকেও ছাড়তে পারবেন না। ঠিক এই সময় রাগের মাথায় অবিবেচকের মতো কাজ করে বসেন গফুর। মোর্শেদাকে তালাক দিয়ে জমিলাকে বিয়ে করেন।
ওই ঘটনার কয়েক দিনের মধ্যেই গফুর বুঝতে পারেন, মোর্শেদার সঙ্গে অন্যায় করেছেন তিনি। কিন্তু তত দিনে যা সর্বনাশ হওয়ার, তা হয়ে গেছে। মানসিক যন্ত্রণা ঢাকতে হাতে তুলে নেন বাঁশি। সেই বাঁশিই একসময় পেশায় পরিণত হয়। এদিকে জমিলাকে নিয়ে গফুর নতুন সংসার সাজালেও মোর্শেদা তা করেননি। একমাত্র সন্তানকে আগলে ধরে ভালোবাসার পরীক্ষা দিয়ে চলেছেন এখনো। এই বিষয়টি যখন মনে পড়ে, গফুরের যন্ত্রণাটা তখন কয়েক গুণ বেড়ে যায়।
নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার দাউদপুর গ্রামের গফুর গাজীর দিকে তাকিয়ে আমি যেন শুনছিলাম কোনো এক সিনেমার গল্প। সত্যিই, জীবনের গল্প কখনো কখনো সিনেমাকেও হার মানায়।
লেখক: নাট্যকার ও নির্মাতা
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
২ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
২ দিন আগে