মৃত্যুঞ্জয় রায়
পরিবেশদূষণে বছরে এ দেশে প্রায় পৌনে ৩ লাখ লোক মরছে। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ঘরের ভেতরের ও বাইরের দূষণে সবচেয়ে বেশি লোক মরছে, যার পরিমাণ প্রায় দেড় লাখ। অন্যান্য দূষণের মধ্যে রয়েছে সুপেয় পানির ঘাটতি এবং পয়োনিষ্কাশনজনিত দূষণে মৃত্যু, আর্সেনিক ও সিসার দূষণে মৃত্যু। এমনিতেই জলবায়ু পরিবর্তনে এ দেশে সব সময় নানা রকম দুর্যোগ লেগে আছে। তার ওপর নানা রকম পরিবেশদূষণে এভাবে এত প্রাণ হারানো অত্যন্ত দুঃখজনক।
কিছুদিন আগে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বিশ্বব্যাংকের ‘দ্য বাংলাদেশ কান্ট্রি এনভায়রনমেন্ট অ্যানালাইসিস (সিইএ) ২০২৩’ প্রতিবেদনের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘সমস্যা যে নেই, তা আমরা কখনোই বলব না। আমরা স্বীকার করছি, অবশ্যই পরিবেশের নানা সমস্যা আছে। কিন্তু ক্ষতির পরিমাণ এতটা কি না, তা আমাদের নিজেদের মূল্যায়ন করতে হবে।
আমাদের অর্থের সমস্যা আছে, দক্ষতার সমস্যা আছে। পরিবেশগত সমস্যা নিরসনে অর্থ ও দক্ষতা দুটোই দরকার।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘বাংলাদেশে জলবায়ু খাতে যে অর্থায়ন হয়েছে, তার ৪০ শতাংশ এসেছে ঋণ হিসেবে। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। বড় বড় দেশ যারা জলবায়ু পরিবর্তনে ভূমিকা রাখে, তাদের কোনো দায় নেই, কিন্তু দায়টা আমাদের নিতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের হয় অনুদান নিতে হচ্ছে অথবা সহজ শর্তে ঋণ নিতে হচ্ছে।’
তার মানে, পরিবেশদূষণ কমাতে আমাদের জরুরিভাবে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, সেগুলো নিতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। সেই অর্থের জোগান সুনিশ্চিত ও সহজলভ্য না হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই দূষণ হ্রাসে নেওয়া পরিকল্পনায় কাটছাঁট করতে হয়। তা ছাড়া পরিবেশদূষণ রোধে যেসব পরিকল্পনা ও কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়, সেগুলোও অনেক সময় দক্ষতার অভাবে আমরা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারি না। এতে পরিবেশদূষণ তাৎপর্যপূর্ণভাবে আসলে কমে না। তাই পরিবেশদূষণ রোধে একদিকে যেমন দরকার দক্ষতার, সঙ্গে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও কার্যক্রম গ্রহণ, অন্যদিকে দরকার সেগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন। এরপর দরকার হয় বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ। অর্থের উৎস হিসেবে সরকারের রাজস্ব তহবিল থেকে প্রতিবছরই এই খাতে কিছু অর্থের সংস্থান রাখা হয়। তবে তা পর্যাপ্ত না হওয়ায় প্রতিবছরই সরকারকে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে অনুদান বা সহজ শর্তে ঋণ নিতে হয়, যা উন্নয়ন বাজেটের ওপর চাপ সৃষ্টি করে।
সে জন্য পৃথিবীর অনেক দেশেই এখন পরিবেশ দূষণকারীদের ওপর পরিবেশ কর বা ইকোট্যাক্স ও শুল্ক আরোপ করে পরিবেশ সংরক্ষণের তহবিল গঠন করা হয়। পরিবেশ দূষণকারীদের পাপমোচনের রাস্তা হলো পরিবেশ কর বা শুল্ক প্রদান করে দায়মুক্তি। এসব তহবিল পরিবেশ সংরক্ষণে খরচ করা হয়, তখন অনুদান বা ঋণ গ্রহণের কোনো দরকার পড়ে না।
পৃথিবীর অনেক দেশেই পরিবেশ সংরক্ষণে পরিবেশদূষণের মতো গর্হিত কাজ থেকে দূষণকারীদের নিরুৎসাহিত ও নিবৃত্ত করার জন্য পরিবেশ কর ও শুল্ক আরোপের ব্যবস্থা রয়েছে। দৃষ্টান্ত হিসেবে বিশ্বের কয়েকটি দেশে এ-সম্পর্কিত গৃহীত কিছু পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করা যায়। আয়ারল্যান্ডে ২০০১ সালের মার্চে প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহারের ওপর শুল্ক আরোপ করা হয়। প্লাস্টিক পণ্য বিক্রির স্থানে শুল্ক আরোপ করা হয় ০.১৫ ইউরো, ২০০৭ সালে তা নির্ধারণ করা হয় ০.২২ ইউরো। এর মানে, খুচরা বিক্রেতার কাছ থেকে কেউ একটি প্লাস্টিক ব্যাগ কিনলে তাঁকে শুল্ক হিসেবে সেই ব্যাগের দামের সঙ্গে অতিরিক্ত শুল্ক পরিশোধ করতে হয় ০.২২ ইউরো। এতে সে দেশে সে সময় থেকে ২০১৫ সালে এসে প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার ৫ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়ায় ০.১৩ শতাংশ এবং এর দ্বারা সে দেশে সেই ১২ বছরে প্রায় ২০০ মিলিয়ন ইউরো তহবিল গঠিত হয়।
আর এক ধরনের উদাহরণ দেখি ফিনল্যান্ডে। সে দেশে ১৯৫০ সালে কোমল পানীয় ব্যবহারের বোতলের ওপর শুল্ক বা প্রণোদনা আরোপ করা হয়। এক বোতল কোমল পানীয় কেনার সময় একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ক্রেতাকে দোকানে জমা রাখতে হতো। কিনে পান করার পর তার খালি বোতল দোকানিকে ফেরত দিলে সে তার জামানতের অর্থ ফেরত পেত। পরে একই নিয়ম চালু করা হয় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে। এরূপ প্রণোদনায় সেসব দেশে তা বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ও রিসাইক্লিংয়ের মাধ্যমে পরিবেশ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
যুক্তরাজ্যে ১৯৯৬ সালে ভূমি ভরাট কর প্রবর্তন করা হয়। কেউ যদি বিভিন্ন বর্জ্য ব্যবহারে ভূমি ভরাট করে, তবে তাকে ভূমি ভরাট কর সরকারকে দিতে হয়। এতে বর্জ্য ব্যবহার করে ভূমি ভরাট হ্রাস পায় এবং বর্জ্য পুনঃ চক্রায়নে বা রিসাইক্লিংয়ে মানুষ উৎসাহিত হয়। ফলে ২০০১ সালের তুলনায় ২০১৫ সালে ভূমি ভরাটে বর্জ্য ব্যবহারের পরিমাণ ৫০ মিলিয়ন টন থেকে ১২ মিলিয়ন টনে নেমে আসে। ১৯৯২ সালে সুইডেনে বায়ুমণ্ডলে নাইট্রোজেন গ্যাস নিঃসারণের ওপর করা আরোপ করা হয়। এতে সে দেশে নাইট্রোজেন নিঃসারণ কমে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ এবং এতে ২০১৬ সালে রাজস্ব আয় হয় প্রায় ১ বিলিয়ন ইউরো।
ডেনমার্কে ১৯৯২ সালে চালু হয়েছে কার্বন ট্যাক্স ও জলবায়ু নীতি। তারা দেখেছে যে সে দেশে বছরে যে পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ ঘটে, তার প্রায় ৩৫ শতাংশ ঘটে জ্বালানি খাত থেকে। জ্বালানি মূলত বেশি ব্যবহৃত হয় যানবাহন ও শিল্প কলকারখানায়। এসব স্থান থেকে প্রতি টন কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের জন্য ডেনমার্কে শুল্ক ধার্য করা হয়েছে ২৪ ইউরো। এসব খাত থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ আরও কমানোর জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন এমিশন ট্রেডিং সিস্টেম বা ইইউ ইটিএসভুক্ত দেশগুলো আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ এই শুল্কের পরিমাণ প্রতি টন কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের জন্য ১০০ ইউরো ধার্য করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ডেনমার্ক তাদের ভূ-সীমানার মধ্যে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার ও গ্রিনহাউস গ্রাস কমাতে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। সে দেশে এখন প্রায় অর্ধেক বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় বায়ুচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদনব্যবস্থায়, ২৫ শতাংশ আসে বায়ো-এনার্জি বা জৈব জ্বালানি থেকে। তাদের জলবায়ু নীতি ও কার্বন ট্যাক্স এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ভারতেও রয়েছে ইকো ট্যাক্স ও পরিবেশ কর প্রথা।
এসব দেশের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আমরাও কি আমাদের দেশের জন্য একটি যুগোপযোগী জলবায়ুনীতি তৈরি করতে পারি না, যাতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে পরিবেশ কর ও শুল্ক আরোপের ধারণা? যে বা যারা পরিবেশ দূষণ করছে, কার্বন নিঃসরণ ঘটাচ্ছে, সেই অপরাধের কোনো শাস্তি হবে না, তা তো হতে পারে না। এই চাপ থাকলে নিজেরাই সেই শুল্ক বা কর পরিশোধের দায় থেকে নিষ্কৃতি পেতে পরিবেশদূষণ কমাবে, পক্ষান্তরে এ ধরনের কর আরোপের ফলে আহরিত রাজস্ব থেকে পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যয় নির্বাহের সুযোগ বাড়বে।
মৃত্যুঞ্জয় রায়, কৃষিবিদ ও প্রকৃতিবিষয়ক লেখক
পরিবেশদূষণে বছরে এ দেশে প্রায় পৌনে ৩ লাখ লোক মরছে। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ঘরের ভেতরের ও বাইরের দূষণে সবচেয়ে বেশি লোক মরছে, যার পরিমাণ প্রায় দেড় লাখ। অন্যান্য দূষণের মধ্যে রয়েছে সুপেয় পানির ঘাটতি এবং পয়োনিষ্কাশনজনিত দূষণে মৃত্যু, আর্সেনিক ও সিসার দূষণে মৃত্যু। এমনিতেই জলবায়ু পরিবর্তনে এ দেশে সব সময় নানা রকম দুর্যোগ লেগে আছে। তার ওপর নানা রকম পরিবেশদূষণে এভাবে এত প্রাণ হারানো অত্যন্ত দুঃখজনক।
কিছুদিন আগে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বিশ্বব্যাংকের ‘দ্য বাংলাদেশ কান্ট্রি এনভায়রনমেন্ট অ্যানালাইসিস (সিইএ) ২০২৩’ প্রতিবেদনের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘সমস্যা যে নেই, তা আমরা কখনোই বলব না। আমরা স্বীকার করছি, অবশ্যই পরিবেশের নানা সমস্যা আছে। কিন্তু ক্ষতির পরিমাণ এতটা কি না, তা আমাদের নিজেদের মূল্যায়ন করতে হবে।
আমাদের অর্থের সমস্যা আছে, দক্ষতার সমস্যা আছে। পরিবেশগত সমস্যা নিরসনে অর্থ ও দক্ষতা দুটোই দরকার।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘বাংলাদেশে জলবায়ু খাতে যে অর্থায়ন হয়েছে, তার ৪০ শতাংশ এসেছে ঋণ হিসেবে। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। বড় বড় দেশ যারা জলবায়ু পরিবর্তনে ভূমিকা রাখে, তাদের কোনো দায় নেই, কিন্তু দায়টা আমাদের নিতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের হয় অনুদান নিতে হচ্ছে অথবা সহজ শর্তে ঋণ নিতে হচ্ছে।’
তার মানে, পরিবেশদূষণ কমাতে আমাদের জরুরিভাবে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, সেগুলো নিতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। সেই অর্থের জোগান সুনিশ্চিত ও সহজলভ্য না হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই দূষণ হ্রাসে নেওয়া পরিকল্পনায় কাটছাঁট করতে হয়। তা ছাড়া পরিবেশদূষণ রোধে যেসব পরিকল্পনা ও কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়, সেগুলোও অনেক সময় দক্ষতার অভাবে আমরা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারি না। এতে পরিবেশদূষণ তাৎপর্যপূর্ণভাবে আসলে কমে না। তাই পরিবেশদূষণ রোধে একদিকে যেমন দরকার দক্ষতার, সঙ্গে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও কার্যক্রম গ্রহণ, অন্যদিকে দরকার সেগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন। এরপর দরকার হয় বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ। অর্থের উৎস হিসেবে সরকারের রাজস্ব তহবিল থেকে প্রতিবছরই এই খাতে কিছু অর্থের সংস্থান রাখা হয়। তবে তা পর্যাপ্ত না হওয়ায় প্রতিবছরই সরকারকে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে অনুদান বা সহজ শর্তে ঋণ নিতে হয়, যা উন্নয়ন বাজেটের ওপর চাপ সৃষ্টি করে।
সে জন্য পৃথিবীর অনেক দেশেই এখন পরিবেশ দূষণকারীদের ওপর পরিবেশ কর বা ইকোট্যাক্স ও শুল্ক আরোপ করে পরিবেশ সংরক্ষণের তহবিল গঠন করা হয়। পরিবেশ দূষণকারীদের পাপমোচনের রাস্তা হলো পরিবেশ কর বা শুল্ক প্রদান করে দায়মুক্তি। এসব তহবিল পরিবেশ সংরক্ষণে খরচ করা হয়, তখন অনুদান বা ঋণ গ্রহণের কোনো দরকার পড়ে না।
পৃথিবীর অনেক দেশেই পরিবেশ সংরক্ষণে পরিবেশদূষণের মতো গর্হিত কাজ থেকে দূষণকারীদের নিরুৎসাহিত ও নিবৃত্ত করার জন্য পরিবেশ কর ও শুল্ক আরোপের ব্যবস্থা রয়েছে। দৃষ্টান্ত হিসেবে বিশ্বের কয়েকটি দেশে এ-সম্পর্কিত গৃহীত কিছু পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করা যায়। আয়ারল্যান্ডে ২০০১ সালের মার্চে প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহারের ওপর শুল্ক আরোপ করা হয়। প্লাস্টিক পণ্য বিক্রির স্থানে শুল্ক আরোপ করা হয় ০.১৫ ইউরো, ২০০৭ সালে তা নির্ধারণ করা হয় ০.২২ ইউরো। এর মানে, খুচরা বিক্রেতার কাছ থেকে কেউ একটি প্লাস্টিক ব্যাগ কিনলে তাঁকে শুল্ক হিসেবে সেই ব্যাগের দামের সঙ্গে অতিরিক্ত শুল্ক পরিশোধ করতে হয় ০.২২ ইউরো। এতে সে দেশে সে সময় থেকে ২০১৫ সালে এসে প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার ৫ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়ায় ০.১৩ শতাংশ এবং এর দ্বারা সে দেশে সেই ১২ বছরে প্রায় ২০০ মিলিয়ন ইউরো তহবিল গঠিত হয়।
আর এক ধরনের উদাহরণ দেখি ফিনল্যান্ডে। সে দেশে ১৯৫০ সালে কোমল পানীয় ব্যবহারের বোতলের ওপর শুল্ক বা প্রণোদনা আরোপ করা হয়। এক বোতল কোমল পানীয় কেনার সময় একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ক্রেতাকে দোকানে জমা রাখতে হতো। কিনে পান করার পর তার খালি বোতল দোকানিকে ফেরত দিলে সে তার জামানতের অর্থ ফেরত পেত। পরে একই নিয়ম চালু করা হয় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে। এরূপ প্রণোদনায় সেসব দেশে তা বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ও রিসাইক্লিংয়ের মাধ্যমে পরিবেশ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
যুক্তরাজ্যে ১৯৯৬ সালে ভূমি ভরাট কর প্রবর্তন করা হয়। কেউ যদি বিভিন্ন বর্জ্য ব্যবহারে ভূমি ভরাট করে, তবে তাকে ভূমি ভরাট কর সরকারকে দিতে হয়। এতে বর্জ্য ব্যবহার করে ভূমি ভরাট হ্রাস পায় এবং বর্জ্য পুনঃ চক্রায়নে বা রিসাইক্লিংয়ে মানুষ উৎসাহিত হয়। ফলে ২০০১ সালের তুলনায় ২০১৫ সালে ভূমি ভরাটে বর্জ্য ব্যবহারের পরিমাণ ৫০ মিলিয়ন টন থেকে ১২ মিলিয়ন টনে নেমে আসে। ১৯৯২ সালে সুইডেনে বায়ুমণ্ডলে নাইট্রোজেন গ্যাস নিঃসারণের ওপর করা আরোপ করা হয়। এতে সে দেশে নাইট্রোজেন নিঃসারণ কমে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ এবং এতে ২০১৬ সালে রাজস্ব আয় হয় প্রায় ১ বিলিয়ন ইউরো।
ডেনমার্কে ১৯৯২ সালে চালু হয়েছে কার্বন ট্যাক্স ও জলবায়ু নীতি। তারা দেখেছে যে সে দেশে বছরে যে পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ ঘটে, তার প্রায় ৩৫ শতাংশ ঘটে জ্বালানি খাত থেকে। জ্বালানি মূলত বেশি ব্যবহৃত হয় যানবাহন ও শিল্প কলকারখানায়। এসব স্থান থেকে প্রতি টন কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের জন্য ডেনমার্কে শুল্ক ধার্য করা হয়েছে ২৪ ইউরো। এসব খাত থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ আরও কমানোর জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন এমিশন ট্রেডিং সিস্টেম বা ইইউ ইটিএসভুক্ত দেশগুলো আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ এই শুল্কের পরিমাণ প্রতি টন কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের জন্য ১০০ ইউরো ধার্য করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ডেনমার্ক তাদের ভূ-সীমানার মধ্যে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার ও গ্রিনহাউস গ্রাস কমাতে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। সে দেশে এখন প্রায় অর্ধেক বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় বায়ুচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদনব্যবস্থায়, ২৫ শতাংশ আসে বায়ো-এনার্জি বা জৈব জ্বালানি থেকে। তাদের জলবায়ু নীতি ও কার্বন ট্যাক্স এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ভারতেও রয়েছে ইকো ট্যাক্স ও পরিবেশ কর প্রথা।
এসব দেশের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আমরাও কি আমাদের দেশের জন্য একটি যুগোপযোগী জলবায়ুনীতি তৈরি করতে পারি না, যাতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে পরিবেশ কর ও শুল্ক আরোপের ধারণা? যে বা যারা পরিবেশ দূষণ করছে, কার্বন নিঃসরণ ঘটাচ্ছে, সেই অপরাধের কোনো শাস্তি হবে না, তা তো হতে পারে না। এই চাপ থাকলে নিজেরাই সেই শুল্ক বা কর পরিশোধের দায় থেকে নিষ্কৃতি পেতে পরিবেশদূষণ কমাবে, পক্ষান্তরে এ ধরনের কর আরোপের ফলে আহরিত রাজস্ব থেকে পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যয় নির্বাহের সুযোগ বাড়বে।
মৃত্যুঞ্জয় রায়, কৃষিবিদ ও প্রকৃতিবিষয়ক লেখক
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
২ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
২ দিন আগে