মামুনুর রশীদ
ঢাকা শহরটাকে এখন রিকশার শহর বলাই ভালো। পরিবহনের এই প্রাচীন যন্ত্রটির সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে এবং বাড়তে বাড়তে এমন একটি অবস্থায় পৌঁছাচ্ছে যে অনেক রিকশাতেই যাত্রী দেখা যায় না। তার মানে যাত্রীর সংখ্যার চেয়ে রিকশার সংখ্যাই বেড়ে গেছে! জেলা শহরগুলোতে যেমন ব্যাটারিচালিত বাইকের সংখ্যা এত বেড়ে গেছে, সেখানেও যাত্রীর চেয়ে বাইক বেশি।
কয়েক মাস আগে মোটরসাইকেলের সংখ্যাও এমন বেড়ে গিয়েছিল যে তা শহরের যানবাহন নিয়ন্ত্রণকে জটিল করে তুলেছিল। আসলে বাঙালি যখন যেখানে কাঁচা পয়সা দেখে, সেখানেই ঝাঁপিয়ে পড়ে। কৃষিতে কাজ করা শ্রমিকেরা সে কাজটি ফেলে রেখে ঢাকা শহরে রিকশা চালাতে চলে এসেছেন। কারণ, এখানে কাঁচা নগদ টাকা আছে এবং সেই সঙ্গে উপার্জনও অনেক বেশি।
আমি যখন ঢাকা শহরে আসি, তখন রিকশা ভাড়া দুই আনা, চার আনাও ছিল। এখন ন্যূনতম রিকশা ভাড়া কুড়ি টাকায় পৌঁছেছে। রিকশাওয়ালাদের সংখ্যা এত বেড়ে গেছে যে তাঁরা রাজপথকে নিয়ন্ত্রণ করছেন। অত্যন্ত ঔদ্ধত্যপূর্ণ ভাষায় তাঁরা যন্ত্রচালিত গাড়ির চালকদের নির্দেশ করে থাকেন। কখনো কখনো রিকশাওয়ালাদের দানবের মতো মনে হয়। অযৌক্তিক ভাড়া চেয়ে যাত্রীদের সঙ্গে বচসা একটা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বচসা থেকে হাতাহাতি, মারামারি এগুলোও নিয়মিত ঘটে। পৃথিবীর কোনো রাজপথে একসঙ্গে এত ধরনের যানবাহন চলতে দেখা যায় না আর রাজধানী বা বড় শহরগুলোতে তো নয়ই। বাস, ট্রাক, কনটেইনার, ঠেলাগাড়ি, ভ্যানগাড়ি, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, রিকশা—সবকিছু চলছে। যানজটে স্থবির হয়ে পড়ছে অসহায় ট্রাফিক পুলিশ, সামলাতে পারছে না অথবা সামলানোর চেষ্টাও করছে না। সাধারণ মানুষ এগুলোতে প্রায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। যথাসময়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর তাগিদও শিথিল হয়ে পড়ছে। সব জায়গায় একই জবাব, যানজটে দেরি হয়ে গেল।
আমরা যখন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছি, তখন খোদ ঢাকা শহরে যানবাহনের বিশৃঙ্খলা রাষ্ট্রীয় বিশৃঙ্খলারই একটা প্রতিফলন। শহরে গণপরিবহন সংখ্যায় অপ্রতুল। মধ্যবিত্ত, এমনকি নিম্নমধ্যবিত্তদের আয়েশি ভ্রমণের একটা বড় যানবাহন হচ্ছে রিকশা, যেহেতু বাসের সিট পাওয়া যাবে না, সিএনজি, ট্যাক্সির ভাড়া দেওয়ার সাধ্য নেই এবং কাছাকাছি কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন থাকলে রিকশাই একমাত্র সহায়। রিকশা অবশ্য এখন দূরপাল্লার যাত্রীও বহন করে। সে ক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্ত ভাড়া নেয়। যাত্রীরাও সেগুলো সহ্য করে।
ঢাকা শহরে বাসের ভাড়াও রিকশাওয়ালাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে। আসছে মেট্রোরেল, তার ভাড়াও কম নয়। মেট্রোরেল দিয়েও শহরের যাতায়াতের সংকট কমবে না। যানজট কমার তো বিন্দুমাত্র কারণ নেই। যদি পাতালরেল হতো, তাহলে যানজট এবং যাত্রীদের সংকট হয়তো অনেকাংশেই কমে যেত। পাশের দেশ ভারতের দিল্লি, মুম্বাই, কলকাতায় ব্যাপকভাবে যাত্রী পরিবহনের উপায় করে দিয়েছে পাতালরেল। আর মুম্বাই শহরের রেল বহু বছর আগে থেকেই যাত্রী সহায় ছিল। মুক্তিযুদ্ধের পরে সরকার রেলের ব্যাপারে একটা উদ্যোগ নিয়েছিল, কিন্তু সামরিক শাসন এলে রেলের জায়গা দখল করে বাস, ট্রাক, সঙ্গে আসে স্কুটার, সিএনজিচালিত অটোরিকশা এবং ঢাকা শহরের অলংকার রিকশা।
শুধু ঢাকা শহর নয়, অন্য জেলা শহরগুলোতেও রিকশা প্রবল প্রতাপে তার সংখ্যা বাড়িয়েছে। একবিংশ শতাব্দীতে একজনের ঘাড়ে করে দুজন যাত্রী কী আনন্দে যাতায়াত করছে, প্রেম-ভালোবাসার কথা বলছে আর তাদের সামনেই রিকশাওয়ালার গা থেকে পড়ছে ঘাম। কালক্রমে রিকশাভাড়া বেশি হয়ে গেছে, রিকশাওয়ালার ক্ষমতা বেড়েছে, যাত্রীদের সঙ্গে ব্যবহারের পরিবর্তন হয়েছে। ফলে এই চালকদের প্রতি যাত্রীদের মানবিক বোধটাও কমে গেছে। এই যে লাখ লাখ রিকশাওয়ালা, তাঁদের নিয়ে রাষ্ট্রের কোনো ভাবনাও দেখা যায় না।
ওদিকে কৃষিতে শ্রমিকের সংখ্যা কমে গেছে। ধান তোলার সময় হলে অনেক উচ্চমূল্যে শ্রমিকদের নিতে হয়। তাতে ফসলের যে দামটা বাড়ে, সেই দামে ফসল বিক্রি করা সম্ভব হয় না। রিকশা চলাচল হঠাৎ করে যে বন্ধ করে দেওয়া হবে, তারও উপায় নেই। কারণ তাঁদের জীবিকা কোথায়? নিশ্চয়ই এর একটা উপায় আছে, কিন্তু সে উপায় করবে কে? এই রিকশাওয়ালারা আবার একটা রাজনৈতিক শক্তি। রিকশার মালিকেরা একধরনের খুদে মালিকানা পরিচালনা করে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। সামনে ভোট আসছে, ভোটে রিকশাওয়ালাদের লাগবে। ভোট একটি মূল্যবান বিষয়।
কিন্তু এই রিকশাওয়ালারা যেমন পরিশ্রমী, তেমনি ব্যক্তিগত জীবনে অত্যন্ত স্বেচ্ছাচারী এবং সঞ্চয়হীন। নানা ধরনের বদভ্যাসে তাঁরা অভ্যস্ত। একাধিক বিবাহ, প্রতারণার সঙ্গেও কিছু কিছু রিকশাওয়ালা জড়িত থাকেন এবং বাংলা চলচ্চিত্রের প্রভাবে একটা ফ্যান্টাসির ঘোরে জীবন কাটান।
অনেক বৃদ্ধ রিকশাওয়ালাকেও দেখা যায়, যাঁরা জীবিকার জন্য মরণপণ করে রিকশা চালান। এইসব মানুষের জন্য রাষ্ট্রের সংবিধানে যেভাবে বর্ণিত আছে, সেভাবে সরকার কি ভেবেছে? হঠাৎ করে কোনো রাস্তাকে ভিআইপি আখ্যা দিয়ে রিকশা চলাচল বন্ধ করে দিলেও কিছু রিকশাকে হয়তো তুলে নিয়ে চালান দিয়ে দিল। কিন্তু দেখা গেল কিছুদিন পরেই আবার ওই রাস্তায়ই রিকশাগুলো চলতে শুরু করল। ভিআইপি রাস্তা বলে আর কিছু থাকল না। অবশ্য ঢাকা শহরটাই তো ভিআইপিদের শহর। যে শহরে আদিম ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা চলে, শহরে ট্রাফিক সিগন্যাল নেই, কিন্তু ভিআইপিদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা আছে! পৃথিবীর কোথাও কোনো রাজধানী খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে ট্রাফিক সিগন্যাল নেই। একমাত্র সুশৃঙ্খল ট্রাফিক সিগন্যাল আছে ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে, যেখানে কোনো যানজট নেই। কারণ সেখানে আইন কড়া। গতি লঙ্ঘন করলে, ট্রাফিক সিগন্যাল না মানলে, তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
ঢাকা শহরে সব জায়গায় ট্রাফিক পুলিশ প্রচুর পরিমাণে দৃশ্যমান। প্রাচীন পদ্ধতিতে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে একেবারেই অনভিজ্ঞ ট্রাফিক পুলিশ শহরের গাড়িঘোড়াকে নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে। বহু লেখালেখি, বহু দেনদরবার করেও এই পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয় না। সরকার সম্ভবত এই নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন চায় না। মাঝে মাঝে আমার মনে হয়, শহরের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনো সরকারি সংস্থা নেই। পুলিশের একটি বিভাগ এটি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। কিন্তু এর পেছনে কোনো সুদূরপ্রসারী ভাবনা নেই। প্রতিনিয়ত লক্ষকোটি মানুষের যে কষ্ট হচ্ছে, তা দেখারও কোনো লোক নেই। প্রতিদিন যেমন শত শত রিকশা নামছে, তেমনি নামছে বড় বড় গাড়ি। এই বড় বড় গাড়ি ছোট ছোট তিনটি গাড়ির সমান।
বিআরটিএ বলে একটা প্রতিষ্ঠান আছে, যারা গাড়ির লাইসেন্স, রুট পারমিট এগুলো দিয়ে থাকে। এদের বড় বড় অফিস আছে, কর্মকর্তা, কর্মচারী আছেন, কিন্তু কোনো আইনকানুন বা সুদূরপ্রসারী কোনো পরিকল্পনা নেই। একটি শহরে রাস্তার আয়তন কতটুকু এবং সেই আয়তনের মধ্যে কতগুলো গাড়ি চলতে পারে, তা তাদের চিন্তা করার প্রয়োজন নেই। গাড়ি কিনলেই রাস্তায় চলার অধিকার পাওয়া যায়। সরকার রাস্তা প্রশস্ত করছে। ফোর লেন, সিক্স লেন রাস্তা হচ্ছে বটে, কিন্তু দুটি লেন থেকে যাচ্ছে প্রভাবশালী ট্রাকমালিক, বাসমালিকদের গ্যারেজ হিসেবে। কয়েক দিন আগেও টঙ্গীতে অবৈধভাবে ট্রাকগুলো পার্কিং করার কারণে পুলিশ যখন ব্যবস্থা নিচ্ছিল, তখন ট্রাকশ্রমিকেরা পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে পুলিশকে আহত করেছে। খবর নিয়ে দেখা যাবে, ওই ট্রাকমালিকেরা সবাই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। বাস, ট্রাকের মালিকেরা গাড়ি কিনবেন কিন্তু তাঁদের গাড়ির গ্যারেজ নেই। রাজপথ দখল করাই তাঁদের একমাত্র উপায়।
যাকগে, রিকশাওয়ালাদের নিয়ে শুরু করেছিলাম। তাঁদের নিয়ে রাষ্ট্রের কিছু জরুরি ভাবনার প্রয়োজন। কারণ, এই জনগোষ্ঠীর পরিবার আছে, সন্তানসন্ততি আছে এবং যদি এভাবে স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে তাঁদের সংখ্যা বাড়তে থাকে, তাহলেও একটা বড় সমস্যা অচিরেই তৈরি হবে। দেশে অনেক এনজিও আছে, তারা বিভিন্ন ধরনের সামাজিক কাজে যুক্ত থাকে। কিছু এনজিওকে যদি রিকশাওয়ালাদের পুনর্বাসন কাজে নিয়োগ করা যায়, তাহলে হয়তো একটা পথ খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। সরকারের হাতে দিলে কিছু অসৎ লোকের জন্য তা প্রবল দুর্নীতিতে এবং সময়ক্ষেপণে নিঃশেষিত হয়ে যেতে পারে।
ঢাকা শহরটাকে এখন রিকশার শহর বলাই ভালো। পরিবহনের এই প্রাচীন যন্ত্রটির সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে এবং বাড়তে বাড়তে এমন একটি অবস্থায় পৌঁছাচ্ছে যে অনেক রিকশাতেই যাত্রী দেখা যায় না। তার মানে যাত্রীর সংখ্যার চেয়ে রিকশার সংখ্যাই বেড়ে গেছে! জেলা শহরগুলোতে যেমন ব্যাটারিচালিত বাইকের সংখ্যা এত বেড়ে গেছে, সেখানেও যাত্রীর চেয়ে বাইক বেশি।
কয়েক মাস আগে মোটরসাইকেলের সংখ্যাও এমন বেড়ে গিয়েছিল যে তা শহরের যানবাহন নিয়ন্ত্রণকে জটিল করে তুলেছিল। আসলে বাঙালি যখন যেখানে কাঁচা পয়সা দেখে, সেখানেই ঝাঁপিয়ে পড়ে। কৃষিতে কাজ করা শ্রমিকেরা সে কাজটি ফেলে রেখে ঢাকা শহরে রিকশা চালাতে চলে এসেছেন। কারণ, এখানে কাঁচা নগদ টাকা আছে এবং সেই সঙ্গে উপার্জনও অনেক বেশি।
আমি যখন ঢাকা শহরে আসি, তখন রিকশা ভাড়া দুই আনা, চার আনাও ছিল। এখন ন্যূনতম রিকশা ভাড়া কুড়ি টাকায় পৌঁছেছে। রিকশাওয়ালাদের সংখ্যা এত বেড়ে গেছে যে তাঁরা রাজপথকে নিয়ন্ত্রণ করছেন। অত্যন্ত ঔদ্ধত্যপূর্ণ ভাষায় তাঁরা যন্ত্রচালিত গাড়ির চালকদের নির্দেশ করে থাকেন। কখনো কখনো রিকশাওয়ালাদের দানবের মতো মনে হয়। অযৌক্তিক ভাড়া চেয়ে যাত্রীদের সঙ্গে বচসা একটা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বচসা থেকে হাতাহাতি, মারামারি এগুলোও নিয়মিত ঘটে। পৃথিবীর কোনো রাজপথে একসঙ্গে এত ধরনের যানবাহন চলতে দেখা যায় না আর রাজধানী বা বড় শহরগুলোতে তো নয়ই। বাস, ট্রাক, কনটেইনার, ঠেলাগাড়ি, ভ্যানগাড়ি, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, রিকশা—সবকিছু চলছে। যানজটে স্থবির হয়ে পড়ছে অসহায় ট্রাফিক পুলিশ, সামলাতে পারছে না অথবা সামলানোর চেষ্টাও করছে না। সাধারণ মানুষ এগুলোতে প্রায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। যথাসময়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর তাগিদও শিথিল হয়ে পড়ছে। সব জায়গায় একই জবাব, যানজটে দেরি হয়ে গেল।
আমরা যখন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছি, তখন খোদ ঢাকা শহরে যানবাহনের বিশৃঙ্খলা রাষ্ট্রীয় বিশৃঙ্খলারই একটা প্রতিফলন। শহরে গণপরিবহন সংখ্যায় অপ্রতুল। মধ্যবিত্ত, এমনকি নিম্নমধ্যবিত্তদের আয়েশি ভ্রমণের একটা বড় যানবাহন হচ্ছে রিকশা, যেহেতু বাসের সিট পাওয়া যাবে না, সিএনজি, ট্যাক্সির ভাড়া দেওয়ার সাধ্য নেই এবং কাছাকাছি কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন থাকলে রিকশাই একমাত্র সহায়। রিকশা অবশ্য এখন দূরপাল্লার যাত্রীও বহন করে। সে ক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্ত ভাড়া নেয়। যাত্রীরাও সেগুলো সহ্য করে।
ঢাকা শহরে বাসের ভাড়াও রিকশাওয়ালাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে। আসছে মেট্রোরেল, তার ভাড়াও কম নয়। মেট্রোরেল দিয়েও শহরের যাতায়াতের সংকট কমবে না। যানজট কমার তো বিন্দুমাত্র কারণ নেই। যদি পাতালরেল হতো, তাহলে যানজট এবং যাত্রীদের সংকট হয়তো অনেকাংশেই কমে যেত। পাশের দেশ ভারতের দিল্লি, মুম্বাই, কলকাতায় ব্যাপকভাবে যাত্রী পরিবহনের উপায় করে দিয়েছে পাতালরেল। আর মুম্বাই শহরের রেল বহু বছর আগে থেকেই যাত্রী সহায় ছিল। মুক্তিযুদ্ধের পরে সরকার রেলের ব্যাপারে একটা উদ্যোগ নিয়েছিল, কিন্তু সামরিক শাসন এলে রেলের জায়গা দখল করে বাস, ট্রাক, সঙ্গে আসে স্কুটার, সিএনজিচালিত অটোরিকশা এবং ঢাকা শহরের অলংকার রিকশা।
শুধু ঢাকা শহর নয়, অন্য জেলা শহরগুলোতেও রিকশা প্রবল প্রতাপে তার সংখ্যা বাড়িয়েছে। একবিংশ শতাব্দীতে একজনের ঘাড়ে করে দুজন যাত্রী কী আনন্দে যাতায়াত করছে, প্রেম-ভালোবাসার কথা বলছে আর তাদের সামনেই রিকশাওয়ালার গা থেকে পড়ছে ঘাম। কালক্রমে রিকশাভাড়া বেশি হয়ে গেছে, রিকশাওয়ালার ক্ষমতা বেড়েছে, যাত্রীদের সঙ্গে ব্যবহারের পরিবর্তন হয়েছে। ফলে এই চালকদের প্রতি যাত্রীদের মানবিক বোধটাও কমে গেছে। এই যে লাখ লাখ রিকশাওয়ালা, তাঁদের নিয়ে রাষ্ট্রের কোনো ভাবনাও দেখা যায় না।
ওদিকে কৃষিতে শ্রমিকের সংখ্যা কমে গেছে। ধান তোলার সময় হলে অনেক উচ্চমূল্যে শ্রমিকদের নিতে হয়। তাতে ফসলের যে দামটা বাড়ে, সেই দামে ফসল বিক্রি করা সম্ভব হয় না। রিকশা চলাচল হঠাৎ করে যে বন্ধ করে দেওয়া হবে, তারও উপায় নেই। কারণ তাঁদের জীবিকা কোথায়? নিশ্চয়ই এর একটা উপায় আছে, কিন্তু সে উপায় করবে কে? এই রিকশাওয়ালারা আবার একটা রাজনৈতিক শক্তি। রিকশার মালিকেরা একধরনের খুদে মালিকানা পরিচালনা করে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। সামনে ভোট আসছে, ভোটে রিকশাওয়ালাদের লাগবে। ভোট একটি মূল্যবান বিষয়।
কিন্তু এই রিকশাওয়ালারা যেমন পরিশ্রমী, তেমনি ব্যক্তিগত জীবনে অত্যন্ত স্বেচ্ছাচারী এবং সঞ্চয়হীন। নানা ধরনের বদভ্যাসে তাঁরা অভ্যস্ত। একাধিক বিবাহ, প্রতারণার সঙ্গেও কিছু কিছু রিকশাওয়ালা জড়িত থাকেন এবং বাংলা চলচ্চিত্রের প্রভাবে একটা ফ্যান্টাসির ঘোরে জীবন কাটান।
অনেক বৃদ্ধ রিকশাওয়ালাকেও দেখা যায়, যাঁরা জীবিকার জন্য মরণপণ করে রিকশা চালান। এইসব মানুষের জন্য রাষ্ট্রের সংবিধানে যেভাবে বর্ণিত আছে, সেভাবে সরকার কি ভেবেছে? হঠাৎ করে কোনো রাস্তাকে ভিআইপি আখ্যা দিয়ে রিকশা চলাচল বন্ধ করে দিলেও কিছু রিকশাকে হয়তো তুলে নিয়ে চালান দিয়ে দিল। কিন্তু দেখা গেল কিছুদিন পরেই আবার ওই রাস্তায়ই রিকশাগুলো চলতে শুরু করল। ভিআইপি রাস্তা বলে আর কিছু থাকল না। অবশ্য ঢাকা শহরটাই তো ভিআইপিদের শহর। যে শহরে আদিম ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা চলে, শহরে ট্রাফিক সিগন্যাল নেই, কিন্তু ভিআইপিদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা আছে! পৃথিবীর কোথাও কোনো রাজধানী খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে ট্রাফিক সিগন্যাল নেই। একমাত্র সুশৃঙ্খল ট্রাফিক সিগন্যাল আছে ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে, যেখানে কোনো যানজট নেই। কারণ সেখানে আইন কড়া। গতি লঙ্ঘন করলে, ট্রাফিক সিগন্যাল না মানলে, তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
ঢাকা শহরে সব জায়গায় ট্রাফিক পুলিশ প্রচুর পরিমাণে দৃশ্যমান। প্রাচীন পদ্ধতিতে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে একেবারেই অনভিজ্ঞ ট্রাফিক পুলিশ শহরের গাড়িঘোড়াকে নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে। বহু লেখালেখি, বহু দেনদরবার করেও এই পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয় না। সরকার সম্ভবত এই নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন চায় না। মাঝে মাঝে আমার মনে হয়, শহরের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনো সরকারি সংস্থা নেই। পুলিশের একটি বিভাগ এটি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। কিন্তু এর পেছনে কোনো সুদূরপ্রসারী ভাবনা নেই। প্রতিনিয়ত লক্ষকোটি মানুষের যে কষ্ট হচ্ছে, তা দেখারও কোনো লোক নেই। প্রতিদিন যেমন শত শত রিকশা নামছে, তেমনি নামছে বড় বড় গাড়ি। এই বড় বড় গাড়ি ছোট ছোট তিনটি গাড়ির সমান।
বিআরটিএ বলে একটা প্রতিষ্ঠান আছে, যারা গাড়ির লাইসেন্স, রুট পারমিট এগুলো দিয়ে থাকে। এদের বড় বড় অফিস আছে, কর্মকর্তা, কর্মচারী আছেন, কিন্তু কোনো আইনকানুন বা সুদূরপ্রসারী কোনো পরিকল্পনা নেই। একটি শহরে রাস্তার আয়তন কতটুকু এবং সেই আয়তনের মধ্যে কতগুলো গাড়ি চলতে পারে, তা তাদের চিন্তা করার প্রয়োজন নেই। গাড়ি কিনলেই রাস্তায় চলার অধিকার পাওয়া যায়। সরকার রাস্তা প্রশস্ত করছে। ফোর লেন, সিক্স লেন রাস্তা হচ্ছে বটে, কিন্তু দুটি লেন থেকে যাচ্ছে প্রভাবশালী ট্রাকমালিক, বাসমালিকদের গ্যারেজ হিসেবে। কয়েক দিন আগেও টঙ্গীতে অবৈধভাবে ট্রাকগুলো পার্কিং করার কারণে পুলিশ যখন ব্যবস্থা নিচ্ছিল, তখন ট্রাকশ্রমিকেরা পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে পুলিশকে আহত করেছে। খবর নিয়ে দেখা যাবে, ওই ট্রাকমালিকেরা সবাই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। বাস, ট্রাকের মালিকেরা গাড়ি কিনবেন কিন্তু তাঁদের গাড়ির গ্যারেজ নেই। রাজপথ দখল করাই তাঁদের একমাত্র উপায়।
যাকগে, রিকশাওয়ালাদের নিয়ে শুরু করেছিলাম। তাঁদের নিয়ে রাষ্ট্রের কিছু জরুরি ভাবনার প্রয়োজন। কারণ, এই জনগোষ্ঠীর পরিবার আছে, সন্তানসন্ততি আছে এবং যদি এভাবে স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে তাঁদের সংখ্যা বাড়তে থাকে, তাহলেও একটা বড় সমস্যা অচিরেই তৈরি হবে। দেশে অনেক এনজিও আছে, তারা বিভিন্ন ধরনের সামাজিক কাজে যুক্ত থাকে। কিছু এনজিওকে যদি রিকশাওয়ালাদের পুনর্বাসন কাজে নিয়োগ করা যায়, তাহলে হয়তো একটা পথ খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। সরকারের হাতে দিলে কিছু অসৎ লোকের জন্য তা প্রবল দুর্নীতিতে এবং সময়ক্ষেপণে নিঃশেষিত হয়ে যেতে পারে।
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে