রামদায় শাণ দিয়ে তাঁরা ছাত্রলীগের নেতৃত্বে

তাসনীম হাসান ও মিনহাজ তুহিন
প্রকাশ : ০২ আগস্ট ২০২২, ০৬: ৪২
আপডেট : ০২ আগস্ট ২০২২, ১৬: ০৮

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের একপর্যায়ে রামদায় শাণ দিচ্ছিলেন দুই তরুণ। ওই দৃশ্য ধরা পড়ে ক্যামেরায়। সাত বছর আগে সেই ছবি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে দেশজুড়ে দুজনকে নিয়ে শুরু হয় চর্চা। তাতে নড়েচড়ে বসে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘বিব্রতকর’ পরিস্থিতিতে ফেলার অভিযোগে তখন দুজনকে এক বছরের জন্য বহিষ্কারও করা হয়।

বিতর্কিত সেই দুজনকেই এবার বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগে সহসভাপতি পদ দিয়ে ‘পুরস্কৃত’ করা হয়েছে। দুজন হলেন মোফাজ্জল হায়দার ইবনে হোসাইন মোফা ও মিজানুর রহমান খান শ্রাবণ। তাঁরা দুজনই ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপুর অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত।

দুই সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণার তিন বছরের বেশি সময় পর গত রোববার মধ্যরাতে প্রায় ৪০০ সদস্যের ঢাউস কমিটি দিয়েছে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি। সেই কমিটিতে বিতর্কিত, বিবাহিত, চাকরিজীবী, অছাত্র, ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত থাকায় অভিযুক্তসহ অনেকের জায়গা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের ২ নভেম্বর ভর্তি-ইচ্ছুক পরীক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানানোকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার তখনকার সভাপতি আলমগীর টিপু ও সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বীর পক্ষের নেতা-কর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। সংঘর্ষের সময় শাহজালাল হলের তৃতীয় তলার বারান্দার দেয়ালে রামদায় শাণ দিতে দেখা যায় মোফাজ্জল হায়দার ইবনে হোসাইন মোফা ও মিজানুর রহমান খান শ্রাবণকে। পরদিন তাঁদের রামদায় শাণ দেওয়ার ছবি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। সমালোচনা শুরু হলে একই বছরের ৪ নভেম্বর বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের তখনকার উপাচার্য ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী তাঁর নির্বাহী ক্ষমতা বলে এই দুজনকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করেন। পরে সেই বহিষ্কারাদেশ এক বছরে বহাল করা হয়।

গণমাধ্যমে দুজনের ছবি প্রকাশের দিন সন্ধ্যায় অবশ্য আলমগীর টিপু ও ফজলে রাব্বী নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে একসঙ্গে সংবাদ সম্মেলন করেন। সেই সংবাদ সম্মেলনে রামদায় শাণ দেওয়া দুই তরুণের পরিচয় জানতে চাইলে ফজলে রাব্বী বলেন, ‘ছাত্রলীগ বড় সংগঠন। এতে ছাত্রশিবিরের এজেন্টরাও ঢুকে যেতে পারে। ওই দুজনও হয়তো শিবিরের এজেন্ট।’ সেই তাঁরাই এখন সংগঠনটির সহসভাপতি।

ছাত্রলীগ সূত্র জানায়, সেই ছবি প্রকাশের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র মিজান অনেকটা আড়ালে চলে গেলেও একই বর্ষের চারুকলা ইনস্টিটিউটের মোফা আরও সরব হন। বহিষ্কারাদেশের কারণে মোফাকে ২০১৬ সালের ৪ এপ্রিল দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষায় অনুমতি দেয়নি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওই দিন সকালে ক্যাম্পাস থেকে ৪০-৫০ জন ছাত্রলীগের কর্মীকে নগরীতে অবস্থিত চারুকলা ইনস্টিটিউটে নিয়ে এসে পরীক্ষার দুটি হলে তালা ঝুলিয়ে দেন। এ কারণে পরীক্ষা স্থগিত করতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। ক্যাম্পাসে অনেকে তাঁকে চেনেন টাইগার মোফা হিসেবে।

ছাত্রলীগের আগের কমিটিতে শীর্ষ পদে থাকা তিনজন নেতা আজকের পত্রিকা’কে বলেছেন, ‘রামদায় শাণ দেওয়ার ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ায় বিতর্ক এড়াতে দুজনকে ২০১৬ সালের ১৭ জুলাই ঘোষিত পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে কোনো পদ দেওয়া হয়নি। কিন্তু এবার তাঁরা পদ বাগিয়ে নিলেন। অথচ অনেক ত্যাগী কর্মীর পদ মেলেনি।’

অছাত্র, বিবাহিত, চাকরিজীবীতে সয়লাব
পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে অর্ধশতাধিক অছাত্র, বিবাহিত, বিতর্কিত ও চাকরিজীবী স্থান পেয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তাঁদের মধ্যে অন্তত পাঁচজন বিবাহিত বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর মধ্যে সহসভাপতি পদ প্রাপ্ত মাহমুদুল হাসান রুপক এক সন্তানের জনক। সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় তাঁকে এক বছরের জন্য বহিষ্কারও করা হয়।

সহসভাপতি পদ পাওয়া এস এম জাহিদুল আউয়াল চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাজু মুন্সী গত ৪ এপ্রিল নকল ধরায় এক শিক্ষককে মারধর করার হুমকি দেন। এ ছাড়া বেশ কয়েকজন বহিষ্কৃত, সাংবাদিক হেনস্তাকারীও এই কমিটিতে স্থান পেয়েছেন। এক বিএনপির নেত্রীর ছেলেও কমিটিতে স্থান পেয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে।

বিতর্কিতদের কমিটিতে স্থান পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অছাত্র, বিতর্কিত, বিবাহিত, চাকরিজীবীদের কমিটিতে আসার সুযোগ নেই। এরপরও যদি এমন কারও নাম এসে থাকে, আমরা খতিয়ে দেখব।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক ইন্দ্রনীল দেব শর্মা রনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এই বিষয় মন্তব্য করতে নিষেধ আছে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত