মন্টি বৈষ্ণব
আজ ২০ জানুয়ারি, স্বজন হারানোর দিন। আজ থেকে ২১ বছর আগে ২০০১ সালের এই দিনে পল্টন ময়দানে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। সেদিন পল্টন ময়দানে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) মহাসমাবেশ ছিল। সমাবেশে সারা দেশের কৃষক-শ্রমিক-খেতমজুর-শ্রমজীবী মানুষ সমবেত হয়েছিলেন। মিছিলে মিছিলে লাল পতাকায় ছেয়ে গিয়েছিল সেদিনের পল্টন ময়দান। সমাবেশে দেশবরেণ্য বুদ্ধিজীবীরাও উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশে জনতার স্লোগানে প্রকম্পিত হয়েছিল পল্টন ময়দান। বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর গণসংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে শুরু হয় সমাবেশের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম। সমাবেশ চলাকালীন হঠাৎ বিকেলের দিকে মঞ্চের কিছু দূরে বিকট শব্দে পল্টন ময়দান কেঁপে ওঠে। যাঁরা সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন, তাঁরা এদিক-সেদিক ছুটতে থাকেন। বোমা বিস্ফোরণের ফলে মুহূর্তেই থেমে যায় খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার হিমাংশু মণ্ডল, রূপসার দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরির শ্রমিকনেতা আব্দুল মজিদ, ঢাকার ডেমরার লতিফ বাওয়ানী জুট মিলের শ্রমিকনেতা আবুল হাসেম ও মাদারীপুরের কর্মী মোক্তার হোসেনের প্রাণ। সেদিন সমাবেশে বোমার আঘাতে মারা গেলেও কমরেড হিমাংশু মণ্ডল কাস্তে-হাতুড়ি খচিত লাল পতাকা হাতছাড়া করেননি। লাল পতাকা হাতে নিয়েই মারা যান তিনি। সমাবেশস্থলে আহত খুলনা বিএল কলেজের ছাত্র ইউনিয়ন নেতা বিপ্রদাস রায় বোমা হামলার কয়েক দিন পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
পল্টনের বোমা হামলার শোক বইয়ে নারীনেত্রী হেনা দাস লিখেছিলেন, ‘যারা তোমাদের ছিনিয়ে নিয়ে গেছে আমাদের কাছ থেকে–সেই অমানুষ শত্রুরা নিপাত যাক।’
সেদিনের সমাবেশের মূল লক্ষ্য ছিল সাম্রাজ্যবাদ, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে মানবমুক্তির লড়াই। এতে প্রগতিবিরোধী শক্তি ভীত হয়ে বোমা হামলার ঘটনা ঘটায়। এ দেশের ইতিহাসে বোমা হামলার ঘটনা এর আগেও ঘটেছিল। সে সময়টিতে বোমা হামলা শুরু হয় ১৯৯৯ সালের ৬ মার্চে যশোরের উদীচীর জাতীয় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে। এরপর ২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল রমনার বটমূল, ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারা দেশে একযোগে সিরিজ বোমা হামলা, ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাজধানীর গুলশান এলাকায় হোলি আর্টিজান বেকারিতে নৃশংস হত্যার ঘটনাসহ বিভিন্ন সময়ে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে।
সেদিনের ঘটনার পরপরই সিপিবির তৎকালীন সভাপতি মনজুরুল আহসান খান মতিঝিল থানায় মামলা করেন। এর দুই বছর পর ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় পুলিশের পক্ষ থেকে চূড়ান্ত প্রতিবেদনে মামলা খারিজের আবেদন করা হয়। পরে দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গি হামলার সঙ্গে যোগসূত্র পেয়ে আদালতের আদেশে ২০০৫ সালে সিপিবির সমাবেশে বোমা হামলার মামলার তদন্তের কাজ পুনরায় শুরু হয়। ২০১৩ সালের ২৭ নভেম্বর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের কর্মকর্তা মৃণাল কান্তি সাহা ১৩ আসামির বিরুদ্ধে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি অভিযোগপত্র জমা দেন। সেই মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণও চলে কয়েক বছর। একপর্যায়ে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এই মামলার বিচার কার্যক্রম।
অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি পল্টন ময়দানের বোমা হামলার ঘটনায় ১০ জনের ফাঁসির রায় ও দুজনকে খালাস দেন আদালত। হরকাতুল জিহাদের শীর্ষ নেতা মুফতি আবদুল হান্নানও ছিলেন এই মামলায় অভিযুক্ত আসামি। অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় এই মামলার অভিযোগ থেকে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১০ আসামির মধ্যে মুফতি মঈন উদ্দিন শেখ, আরিফ হাসান সুমন, সাব্বির আহমেদ, শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ রায়ের সময় কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। আর জাহাঙ্গীর আলম বদর, মহিবুল মুত্তাকিন, আমিনুল মুরসালিন, মুফতি আব্দুল হাই, মুফতি শফিকুর রহমান ও নুর ইসলাম পলাতক ছিলেন।
বিচারের দীর্ঘসূত্রতার কারণে অপরাধীরা অপরাধ করার সাহস পায়। এতে ঘটতে থাকে একের পর এক ঘটনা। দীর্ঘ ১৯ বছর পর পল্টনে বোমা হামলার ফাঁসির রায় দেন আদালত। শুধু পল্টনের বোমা হামলার রায় নয়, বোমা হামলার সব ঘটনার বিচারের প্রয়োজন। তা না হলে একের পর এক খালি হতে থাকবে কোনো না কোনো মায়ের কোল। স্বজন হারানোর মিছিল বাড়তেই থাকবে।
লেখক: সাংবাদিক
আজ ২০ জানুয়ারি, স্বজন হারানোর দিন। আজ থেকে ২১ বছর আগে ২০০১ সালের এই দিনে পল্টন ময়দানে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। সেদিন পল্টন ময়দানে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) মহাসমাবেশ ছিল। সমাবেশে সারা দেশের কৃষক-শ্রমিক-খেতমজুর-শ্রমজীবী মানুষ সমবেত হয়েছিলেন। মিছিলে মিছিলে লাল পতাকায় ছেয়ে গিয়েছিল সেদিনের পল্টন ময়দান। সমাবেশে দেশবরেণ্য বুদ্ধিজীবীরাও উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশে জনতার স্লোগানে প্রকম্পিত হয়েছিল পল্টন ময়দান। বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর গণসংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে শুরু হয় সমাবেশের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম। সমাবেশ চলাকালীন হঠাৎ বিকেলের দিকে মঞ্চের কিছু দূরে বিকট শব্দে পল্টন ময়দান কেঁপে ওঠে। যাঁরা সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন, তাঁরা এদিক-সেদিক ছুটতে থাকেন। বোমা বিস্ফোরণের ফলে মুহূর্তেই থেমে যায় খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার হিমাংশু মণ্ডল, রূপসার দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরির শ্রমিকনেতা আব্দুল মজিদ, ঢাকার ডেমরার লতিফ বাওয়ানী জুট মিলের শ্রমিকনেতা আবুল হাসেম ও মাদারীপুরের কর্মী মোক্তার হোসেনের প্রাণ। সেদিন সমাবেশে বোমার আঘাতে মারা গেলেও কমরেড হিমাংশু মণ্ডল কাস্তে-হাতুড়ি খচিত লাল পতাকা হাতছাড়া করেননি। লাল পতাকা হাতে নিয়েই মারা যান তিনি। সমাবেশস্থলে আহত খুলনা বিএল কলেজের ছাত্র ইউনিয়ন নেতা বিপ্রদাস রায় বোমা হামলার কয়েক দিন পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
পল্টনের বোমা হামলার শোক বইয়ে নারীনেত্রী হেনা দাস লিখেছিলেন, ‘যারা তোমাদের ছিনিয়ে নিয়ে গেছে আমাদের কাছ থেকে–সেই অমানুষ শত্রুরা নিপাত যাক।’
সেদিনের সমাবেশের মূল লক্ষ্য ছিল সাম্রাজ্যবাদ, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে মানবমুক্তির লড়াই। এতে প্রগতিবিরোধী শক্তি ভীত হয়ে বোমা হামলার ঘটনা ঘটায়। এ দেশের ইতিহাসে বোমা হামলার ঘটনা এর আগেও ঘটেছিল। সে সময়টিতে বোমা হামলা শুরু হয় ১৯৯৯ সালের ৬ মার্চে যশোরের উদীচীর জাতীয় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে। এরপর ২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল রমনার বটমূল, ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারা দেশে একযোগে সিরিজ বোমা হামলা, ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাজধানীর গুলশান এলাকায় হোলি আর্টিজান বেকারিতে নৃশংস হত্যার ঘটনাসহ বিভিন্ন সময়ে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে।
সেদিনের ঘটনার পরপরই সিপিবির তৎকালীন সভাপতি মনজুরুল আহসান খান মতিঝিল থানায় মামলা করেন। এর দুই বছর পর ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় পুলিশের পক্ষ থেকে চূড়ান্ত প্রতিবেদনে মামলা খারিজের আবেদন করা হয়। পরে দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গি হামলার সঙ্গে যোগসূত্র পেয়ে আদালতের আদেশে ২০০৫ সালে সিপিবির সমাবেশে বোমা হামলার মামলার তদন্তের কাজ পুনরায় শুরু হয়। ২০১৩ সালের ২৭ নভেম্বর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের কর্মকর্তা মৃণাল কান্তি সাহা ১৩ আসামির বিরুদ্ধে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি অভিযোগপত্র জমা দেন। সেই মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণও চলে কয়েক বছর। একপর্যায়ে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এই মামলার বিচার কার্যক্রম।
অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি পল্টন ময়দানের বোমা হামলার ঘটনায় ১০ জনের ফাঁসির রায় ও দুজনকে খালাস দেন আদালত। হরকাতুল জিহাদের শীর্ষ নেতা মুফতি আবদুল হান্নানও ছিলেন এই মামলায় অভিযুক্ত আসামি। অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় এই মামলার অভিযোগ থেকে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১০ আসামির মধ্যে মুফতি মঈন উদ্দিন শেখ, আরিফ হাসান সুমন, সাব্বির আহমেদ, শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ রায়ের সময় কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। আর জাহাঙ্গীর আলম বদর, মহিবুল মুত্তাকিন, আমিনুল মুরসালিন, মুফতি আব্দুল হাই, মুফতি শফিকুর রহমান ও নুর ইসলাম পলাতক ছিলেন।
বিচারের দীর্ঘসূত্রতার কারণে অপরাধীরা অপরাধ করার সাহস পায়। এতে ঘটতে থাকে একের পর এক ঘটনা। দীর্ঘ ১৯ বছর পর পল্টনে বোমা হামলার ফাঁসির রায় দেন আদালত। শুধু পল্টনের বোমা হামলার রায় নয়, বোমা হামলার সব ঘটনার বিচারের প্রয়োজন। তা না হলে একের পর এক খালি হতে থাকবে কোনো না কোনো মায়ের কোল। স্বজন হারানোর মিছিল বাড়তেই থাকবে।
লেখক: সাংবাদিক
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে