ডা. মো. শামীম হায়দার তালুকদার
মরিয়ম রান্না করছিলেন। হঠাৎই মোবাইল ফোন বেজে ওঠে। প্রথমবারে বেজে বেজে থেমে যেতেই আবার বেজে ওঠে। এবার চুলার জ্বালটা কমিয়ে রেখে একরকম দৌড়ে এসে ফোনটা ধরেন। রাস্তার পাশে বাসা হওয়ায় একেবারে ভেতরের রুমে না গেলে ফোনের কথা পরিষ্কার শোনা যায় না। ভেতরের রুমে যেতে যেতে ফোনের রিসিভ বোতাম চেপে ফোন কানের কাছে ধরতেই জানতে পারেন অয়নের স্কুল থেকে ফোন করেছে। অয়নের শ্রেণিশিক্ষক দেখা করতে বলেছেন, জরুরি বিষয়ে কথা বলতে চান। হাতের কাজ শেষ করে মরিয়ম ছুটলেন অয়নের স্কুলে। শ্রেণিশিক্ষক জানালেন, অয়ন আজকাল বেশ অমনোযোগী হয়ে পড়েছে। ডাকলে সহজে সাড়া দেয় না। ক্লাসে পড়ানো বিষয়গুলো সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। বাসায় ফিরতে ফিরতে অয়ন মাকে জানায়, ও শিক্ষকের অধিকাংশ কথাই শুনতে পায় না। সন্ধ্যায় মা-বাবা অয়নকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে ডাক্তার পরীক্ষা করে জানান, অয়নের শ্রবণযন্ত্র ব্যবহার করতে হবে। ডাক্তার আরও জানান, বহুদিন ধরে উচ্চমাত্রার শব্দ শোনার কারণে এমন হতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, অত্যধিক শব্দ মানুষের স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি করে এবং স্কুলে, কর্মক্ষেত্রে, বাড়িতে ও অবসর সময়ে মানুষের দৈনন্দিন কাজকর্ম ব্যাহত করে। এটি ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে, হৃদ্রোগ ও মনোশারীরিক প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে, কর্মক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে এবং বিরক্তিকর প্রতিক্রিয়া ও সামাজিক আচরণে পরিবর্তন আনতে পারে।
শব্দদূষণ একটি অদৃশ্য বিপদ। এটি দেখা যায় না, তবে সব স্থানেই এর উপস্থিতি রয়েছে। শব্দদূষণকে কোনো অবাঞ্ছিত বা বিরক্তিকর শব্দ বলে মনে করা হয়, যা মানুষ এবং অন্যান্য জীবের স্বাস্থ্য ও সুস্থতাকে প্রভাবিত করে। শব্দ ডেসিবেলে পরিমাপ করা হয়। পরিবেশে অনেক শব্দ আছে। যদি ডেসিবেলে আমরা কিছু সাধারণ শব্দের পরিমাপ দেখি যেমন—ঝরে পড়া পাতা ২০ থেকে ৩০ ডেসিবেল, বজ্রপাত ১২০ ডেসিবেল, একটি সাইরেনের আওয়াজ ১২০ থেকে ১৪০ ডেসিবেল পর্যন্ত। ৮৫ ডেসিবেল বা তার বেশি মাত্রায় পৌঁছানো শব্দ একজন ব্যক্তির কানের ক্ষতি করতে পারে। এই সীমা অতিক্রম করে এমন শব্দের মধ্যে পরিচিত উৎসের একটি হলো রক কনসার্ট (১১০ থেকে ১২০ ডেসিবেল)।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব হেলথ সায়েন্সের এক গবেষণায় দেখা যায়, সড়কে কর্মরত ব্যক্তিদের ২৫ শতাংশ কানে কম শোনেন। এর মধ্যে রিকশাচালকদের ৪২ শতাংশ এবং ট্রাফিক পুলিশের ৩১ শতাংশ কানের সমস্যায় ভোগেন। ৭ শতাংশ মানুষকে শ্রবণসহায়ক যন্ত্র ব্যবহার করতে হয়। সিটি করপোরেশন এলাকায় সড়কে শব্দের মাত্রা ৮৪ থেকে ৯৯ ডেসিবেল। বাংলাদেশের দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা, ২০০৬ অনুযায়ী এলাকাভিত্তিক শব্দের মানমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এভাবে—নীরব এলাকায় দিনে ৫০ ডেসিবেল এবং রাতে ৪০ ডেসিবেল, আবাসিক এলাকায় দিনে ৫৫ ডেসিবেল এবং রাতে ৪৫ ডেসিবেল, মিশ্র এলাকায় দিনে ৬০ ডেসিবেল এবং রাতে ৫০ ডেসিবেল, বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে ৭০ ডেসিবেল এবং রাতে ৬০ ডেসিবেল, শিল্প এলাকায় দিনে ৭৫ ডেসিবেল এবং রাতে
৭০ ডেসিবেল।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের বেশির ভাগ শহরের সড়কের দুটি প্রধান সমস্যা শব্দদূষণ ও যানজট। ট্রাফিক জ্যাম, সেই সঙ্গে মিশ্র ট্রাফিক অবস্থা শহরের সড়কে শব্দদূষণের প্রধান কারণ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ঢাকা শহরে প্রতিবছর প্রচুর নতুন রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে, কিন্তু ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে বেশির ভাগ রাস্তা নির্মাণ করা হয়নি। শহরের জনসংখ্যা দ্রুত বেড়েছে এবং দেশও স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীলে রূপান্তরিত হয়েছে। ফলে ব্যক্তিগত গাড়ির চাহিদা বেড়েছে অনেক। সেই সঙ্গ পাল্লা দিয়ে বেড়েছে যানজটের সমস্যা। কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যের রাস্তায় সবুজ সংকেত পেতে, ট্রাফিক পুলিশের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য অনেকে অকারণে গাড়ির হর্ন বাজাতে থাকেন। সবুজ সংকেত শুরু হওয়ার পর চালকেরা তাঁদের গাড়ির হর্ন বাজিয়ে যান, যাতে কম গতির যানবাহনগুলো পাশ থেকে সরে যায়। বাইকাররা ক্রমাগত হাইড্রোলিক হর্ন টিপে দাবি জানাতে থাকেন রাস্তাজুড়ে যত্রতত্র যেন তাদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়।
শহরগুলোতে সব সময় চলছে ভবন নির্মাণের কাজ। ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে দেখা যায় পাইলিংয়ের কাজের শব্দ, ইট ভাঙার যন্ত্রের শব্দ, সিমেন্ট মিক্সচার যন্ত্রের শব্দে কান পাতা দায়। বাংলাদেশে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের অধীনে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা অনুযায়ী সন্ধ্যা ৭টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত নির্মাণকাজের এসব যন্ত্র চালানো যাবে না। তবু বড় শহরগুলোতে মধ্যরাত, এমনকি সারা রাতও নির্মাণকাজ চলে। কারও ঘুমের ব্যাঘাত, শিশুদের পড়াশোনার ক্ষতি, অসুস্থ ও বয়স্ক ব্যক্তিদের কষ্ট—কোনো কিছুই অসময়ে নির্মাণকাজ থামাতে পারে না। আইনে আছে, আবদ্ধ কোনো স্থানে শব্দ করলে নিশ্চিত করতে হবে শব্দ যেন বাইরে না যায়। কিন্তু শহরগুলোতে নিয়ম না মেনেই ভবনে যেকোনো ধরনের কাজ চলছে। বাংলাদেশে মাইক ও লাউড স্পিকারের ব্যবহার খুবই জনপ্রিয়। রাজনৈতিক সভা, বিয়ে, ওয়াজ মাহফিল, পিকনিক—সব ক্ষেত্রে মাইক ও লাউড স্পিকার বাজিয়ে চলছে শব্দদূষণের মহোৎসব।
অপ্রয়োজনীয় ও অতিরিক্ত শব্দের কারণে ব্যক্তির শারীরিক ও মানসিক স্বাভাবিক কার্যকলাপ ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। দীর্ঘ সময় অতিরিক্ত শব্দের মধ্যে থাকার কারণে উচ্চরক্তচাপ, আলসার, হৃদ্রোগ, মাথাব্যথা, স্মরণশক্তি হ্রাস, স্নায়ুর সমস্যা ও মানসিক চাপ তৈরি হতে পারে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় কান। নাক-কান-গলা রোগের বিশেষজ্ঞ ডা. মইনুল হাফিজের বরাত দিয়ে বিবিসি লিখেছে, অতিরিক্ত শব্দের মধ্যে দীর্ঘদিন কাটালে শ্রবণশক্তি ধীরে ধীরে কমে যাওয়া, এমনকি বধির হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি আরও বলছেন, ‘অতিরিক্ত শব্দের কারণে কানের নার্ভ ও রিসেপ্টর সেলগুলো নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে মানুষ ধীরে ধীরে শ্রবণশক্তি হারাতে থাকে। ১২০ ডেসিবেল শব্দ সঙ্গে সঙ্গেই কান নষ্ট করে দিতে পারে। প্রতিদিন দুই ঘণ্টা করে ৮৫ ডেসিবেল শব্দ যদি কোনো ব্যক্তির কানে প্রবেশ করে, তাহলে ধীরে ধীরে শ্রবণশক্তি নষ্ট হবে।’ আরও জানা যায়, মানুষ সাধারণত ৩০ থেকে ৪০ ডেসিবেল শব্দে কথা বলে। ৭০ ডেসিবেল পর্যন্ত মানুষের কান গ্রহণ করতে পারে। আশির ওপরে গেলেই ক্ষতি শুরু হয়।
প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ শব্দদূষণের ক্ষতির শিকার হয়। শব্দদূষণের কারণে সৃষ্ট স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো সব বয়সের মানুষকে প্রভাবিত করে, বিশেষ করে শিশুদের বেশি প্রভাবিত করে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, অনেক শিশু যারা কোলাহলপূর্ণ বিমানবন্দর বা রাস্তার কাছাকাছি থাকে, তাদের মানসিক চাপ এবং অন্যান্য সমস্যায় ভুগতে দেখা যায়।
শব্দদূষণ এখনই নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে দূষণের ভয়াবহতা থেকে আমরা কেউ রক্ষা পাব না। এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপ্রয়োজনীয় হর্ন বন্ধ করতে হবে। পরীক্ষামূলকভাবে কোনো এলাকাকে হর্নমুক্ত ঘোষণা করা যেতে পারে। অকারণে হর্ন বাজানো বন্ধে নীতিমালা বাস্তবায়ন ও জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোকে কঠোর অবস্থানে যেতে হবে। সঙ্গে শব্দদূষণের ভয়াবহতা সম্পর্কে গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে। বিভিন্ন গতির গাড়ি একই লেন ব্যবহার করার কারণে অন্য গাড়ির ধাক্কা থেকে বাঁচার জন্য অনেকে হর্ন বাজিয়ে থাকেন, তাই আলাদা লেনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। মোটরসাইকেলের ব্যবহার বেড়েছে, যা শব্দদূষণের অন্যতম প্রধান উৎস বলে মনে করেন বিজ্ঞজনেরা। ছোট গাড়ি ও মোটরসাইকেলের অনুমোদন সাময়িক বন্ধ রাখা যেতে পারে বলে তাঁরা মত দিয়েছেন। বাসগৃহের আশপাশে, বিদ্যালয় ও হাসপাতালের কাছে মাইক ও সাউন্ডবক্সের ব্যবহার না করতে সবাইকে উৎসাহিত করতে হবে। সবার মিলিত প্রচেষ্টায় শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে আসুক, রক্ষা পাক নগর জনস্বাস্থ্য—নগরের নাগরিক হিসেবে এই আমাদের প্রত্যাশা।
ডা. মো. শামীম হায়দার তালুকদার, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, এমিনেন্স অ্যাসোসিয়েট ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট
মরিয়ম রান্না করছিলেন। হঠাৎই মোবাইল ফোন বেজে ওঠে। প্রথমবারে বেজে বেজে থেমে যেতেই আবার বেজে ওঠে। এবার চুলার জ্বালটা কমিয়ে রেখে একরকম দৌড়ে এসে ফোনটা ধরেন। রাস্তার পাশে বাসা হওয়ায় একেবারে ভেতরের রুমে না গেলে ফোনের কথা পরিষ্কার শোনা যায় না। ভেতরের রুমে যেতে যেতে ফোনের রিসিভ বোতাম চেপে ফোন কানের কাছে ধরতেই জানতে পারেন অয়নের স্কুল থেকে ফোন করেছে। অয়নের শ্রেণিশিক্ষক দেখা করতে বলেছেন, জরুরি বিষয়ে কথা বলতে চান। হাতের কাজ শেষ করে মরিয়ম ছুটলেন অয়নের স্কুলে। শ্রেণিশিক্ষক জানালেন, অয়ন আজকাল বেশ অমনোযোগী হয়ে পড়েছে। ডাকলে সহজে সাড়া দেয় না। ক্লাসে পড়ানো বিষয়গুলো সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। বাসায় ফিরতে ফিরতে অয়ন মাকে জানায়, ও শিক্ষকের অধিকাংশ কথাই শুনতে পায় না। সন্ধ্যায় মা-বাবা অয়নকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে ডাক্তার পরীক্ষা করে জানান, অয়নের শ্রবণযন্ত্র ব্যবহার করতে হবে। ডাক্তার আরও জানান, বহুদিন ধরে উচ্চমাত্রার শব্দ শোনার কারণে এমন হতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, অত্যধিক শব্দ মানুষের স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি করে এবং স্কুলে, কর্মক্ষেত্রে, বাড়িতে ও অবসর সময়ে মানুষের দৈনন্দিন কাজকর্ম ব্যাহত করে। এটি ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে, হৃদ্রোগ ও মনোশারীরিক প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে, কর্মক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে এবং বিরক্তিকর প্রতিক্রিয়া ও সামাজিক আচরণে পরিবর্তন আনতে পারে।
শব্দদূষণ একটি অদৃশ্য বিপদ। এটি দেখা যায় না, তবে সব স্থানেই এর উপস্থিতি রয়েছে। শব্দদূষণকে কোনো অবাঞ্ছিত বা বিরক্তিকর শব্দ বলে মনে করা হয়, যা মানুষ এবং অন্যান্য জীবের স্বাস্থ্য ও সুস্থতাকে প্রভাবিত করে। শব্দ ডেসিবেলে পরিমাপ করা হয়। পরিবেশে অনেক শব্দ আছে। যদি ডেসিবেলে আমরা কিছু সাধারণ শব্দের পরিমাপ দেখি যেমন—ঝরে পড়া পাতা ২০ থেকে ৩০ ডেসিবেল, বজ্রপাত ১২০ ডেসিবেল, একটি সাইরেনের আওয়াজ ১২০ থেকে ১৪০ ডেসিবেল পর্যন্ত। ৮৫ ডেসিবেল বা তার বেশি মাত্রায় পৌঁছানো শব্দ একজন ব্যক্তির কানের ক্ষতি করতে পারে। এই সীমা অতিক্রম করে এমন শব্দের মধ্যে পরিচিত উৎসের একটি হলো রক কনসার্ট (১১০ থেকে ১২০ ডেসিবেল)।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব হেলথ সায়েন্সের এক গবেষণায় দেখা যায়, সড়কে কর্মরত ব্যক্তিদের ২৫ শতাংশ কানে কম শোনেন। এর মধ্যে রিকশাচালকদের ৪২ শতাংশ এবং ট্রাফিক পুলিশের ৩১ শতাংশ কানের সমস্যায় ভোগেন। ৭ শতাংশ মানুষকে শ্রবণসহায়ক যন্ত্র ব্যবহার করতে হয়। সিটি করপোরেশন এলাকায় সড়কে শব্দের মাত্রা ৮৪ থেকে ৯৯ ডেসিবেল। বাংলাদেশের দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা, ২০০৬ অনুযায়ী এলাকাভিত্তিক শব্দের মানমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এভাবে—নীরব এলাকায় দিনে ৫০ ডেসিবেল এবং রাতে ৪০ ডেসিবেল, আবাসিক এলাকায় দিনে ৫৫ ডেসিবেল এবং রাতে ৪৫ ডেসিবেল, মিশ্র এলাকায় দিনে ৬০ ডেসিবেল এবং রাতে ৫০ ডেসিবেল, বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে ৭০ ডেসিবেল এবং রাতে ৬০ ডেসিবেল, শিল্প এলাকায় দিনে ৭৫ ডেসিবেল এবং রাতে
৭০ ডেসিবেল।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের বেশির ভাগ শহরের সড়কের দুটি প্রধান সমস্যা শব্দদূষণ ও যানজট। ট্রাফিক জ্যাম, সেই সঙ্গে মিশ্র ট্রাফিক অবস্থা শহরের সড়কে শব্দদূষণের প্রধান কারণ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ঢাকা শহরে প্রতিবছর প্রচুর নতুন রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে, কিন্তু ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে বেশির ভাগ রাস্তা নির্মাণ করা হয়নি। শহরের জনসংখ্যা দ্রুত বেড়েছে এবং দেশও স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীলে রূপান্তরিত হয়েছে। ফলে ব্যক্তিগত গাড়ির চাহিদা বেড়েছে অনেক। সেই সঙ্গ পাল্লা দিয়ে বেড়েছে যানজটের সমস্যা। কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যের রাস্তায় সবুজ সংকেত পেতে, ট্রাফিক পুলিশের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য অনেকে অকারণে গাড়ির হর্ন বাজাতে থাকেন। সবুজ সংকেত শুরু হওয়ার পর চালকেরা তাঁদের গাড়ির হর্ন বাজিয়ে যান, যাতে কম গতির যানবাহনগুলো পাশ থেকে সরে যায়। বাইকাররা ক্রমাগত হাইড্রোলিক হর্ন টিপে দাবি জানাতে থাকেন রাস্তাজুড়ে যত্রতত্র যেন তাদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়।
শহরগুলোতে সব সময় চলছে ভবন নির্মাণের কাজ। ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে দেখা যায় পাইলিংয়ের কাজের শব্দ, ইট ভাঙার যন্ত্রের শব্দ, সিমেন্ট মিক্সচার যন্ত্রের শব্দে কান পাতা দায়। বাংলাদেশে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের অধীনে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা অনুযায়ী সন্ধ্যা ৭টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত নির্মাণকাজের এসব যন্ত্র চালানো যাবে না। তবু বড় শহরগুলোতে মধ্যরাত, এমনকি সারা রাতও নির্মাণকাজ চলে। কারও ঘুমের ব্যাঘাত, শিশুদের পড়াশোনার ক্ষতি, অসুস্থ ও বয়স্ক ব্যক্তিদের কষ্ট—কোনো কিছুই অসময়ে নির্মাণকাজ থামাতে পারে না। আইনে আছে, আবদ্ধ কোনো স্থানে শব্দ করলে নিশ্চিত করতে হবে শব্দ যেন বাইরে না যায়। কিন্তু শহরগুলোতে নিয়ম না মেনেই ভবনে যেকোনো ধরনের কাজ চলছে। বাংলাদেশে মাইক ও লাউড স্পিকারের ব্যবহার খুবই জনপ্রিয়। রাজনৈতিক সভা, বিয়ে, ওয়াজ মাহফিল, পিকনিক—সব ক্ষেত্রে মাইক ও লাউড স্পিকার বাজিয়ে চলছে শব্দদূষণের মহোৎসব।
অপ্রয়োজনীয় ও অতিরিক্ত শব্দের কারণে ব্যক্তির শারীরিক ও মানসিক স্বাভাবিক কার্যকলাপ ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। দীর্ঘ সময় অতিরিক্ত শব্দের মধ্যে থাকার কারণে উচ্চরক্তচাপ, আলসার, হৃদ্রোগ, মাথাব্যথা, স্মরণশক্তি হ্রাস, স্নায়ুর সমস্যা ও মানসিক চাপ তৈরি হতে পারে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় কান। নাক-কান-গলা রোগের বিশেষজ্ঞ ডা. মইনুল হাফিজের বরাত দিয়ে বিবিসি লিখেছে, অতিরিক্ত শব্দের মধ্যে দীর্ঘদিন কাটালে শ্রবণশক্তি ধীরে ধীরে কমে যাওয়া, এমনকি বধির হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি আরও বলছেন, ‘অতিরিক্ত শব্দের কারণে কানের নার্ভ ও রিসেপ্টর সেলগুলো নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে মানুষ ধীরে ধীরে শ্রবণশক্তি হারাতে থাকে। ১২০ ডেসিবেল শব্দ সঙ্গে সঙ্গেই কান নষ্ট করে দিতে পারে। প্রতিদিন দুই ঘণ্টা করে ৮৫ ডেসিবেল শব্দ যদি কোনো ব্যক্তির কানে প্রবেশ করে, তাহলে ধীরে ধীরে শ্রবণশক্তি নষ্ট হবে।’ আরও জানা যায়, মানুষ সাধারণত ৩০ থেকে ৪০ ডেসিবেল শব্দে কথা বলে। ৭০ ডেসিবেল পর্যন্ত মানুষের কান গ্রহণ করতে পারে। আশির ওপরে গেলেই ক্ষতি শুরু হয়।
প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ শব্দদূষণের ক্ষতির শিকার হয়। শব্দদূষণের কারণে সৃষ্ট স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো সব বয়সের মানুষকে প্রভাবিত করে, বিশেষ করে শিশুদের বেশি প্রভাবিত করে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, অনেক শিশু যারা কোলাহলপূর্ণ বিমানবন্দর বা রাস্তার কাছাকাছি থাকে, তাদের মানসিক চাপ এবং অন্যান্য সমস্যায় ভুগতে দেখা যায়।
শব্দদূষণ এখনই নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে দূষণের ভয়াবহতা থেকে আমরা কেউ রক্ষা পাব না। এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপ্রয়োজনীয় হর্ন বন্ধ করতে হবে। পরীক্ষামূলকভাবে কোনো এলাকাকে হর্নমুক্ত ঘোষণা করা যেতে পারে। অকারণে হর্ন বাজানো বন্ধে নীতিমালা বাস্তবায়ন ও জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোকে কঠোর অবস্থানে যেতে হবে। সঙ্গে শব্দদূষণের ভয়াবহতা সম্পর্কে গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে। বিভিন্ন গতির গাড়ি একই লেন ব্যবহার করার কারণে অন্য গাড়ির ধাক্কা থেকে বাঁচার জন্য অনেকে হর্ন বাজিয়ে থাকেন, তাই আলাদা লেনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। মোটরসাইকেলের ব্যবহার বেড়েছে, যা শব্দদূষণের অন্যতম প্রধান উৎস বলে মনে করেন বিজ্ঞজনেরা। ছোট গাড়ি ও মোটরসাইকেলের অনুমোদন সাময়িক বন্ধ রাখা যেতে পারে বলে তাঁরা মত দিয়েছেন। বাসগৃহের আশপাশে, বিদ্যালয় ও হাসপাতালের কাছে মাইক ও সাউন্ডবক্সের ব্যবহার না করতে সবাইকে উৎসাহিত করতে হবে। সবার মিলিত প্রচেষ্টায় শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে আসুক, রক্ষা পাক নগর জনস্বাস্থ্য—নগরের নাগরিক হিসেবে এই আমাদের প্রত্যাশা।
ডা. মো. শামীম হায়দার তালুকদার, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, এমিনেন্স অ্যাসোসিয়েট ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
১০ ঘণ্টা আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৪ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৪ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৪ দিন আগে