হবিগঞ্জ-২: মনোনয়নপ্রত্যাশীর ছড়াছড়ি আ.লীগে

সহিবুর রহমান, হবিগঞ্জ
প্রকাশ : ২৩ মার্চ ২০২৩, ১৪: ৫৮

পৃথিবীর বৃহত্তম গ্রাম বানিয়াচং ও হাওরাঞ্চল আজমিরীগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত হবিগঞ্জ-২ আসন। পর্যটন খাতে সম্ভাবনাময়, কৃষি ও মৎস্যজীবী-অধ্যুষিত আসনটি বরাবরই আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। কিন্তু নির্বাচন এলেই আওয়ামী লীগের মৌসুমি মনোনয়নপ্রত্যাশীরা মাঠে ভিড় শুরু করেন। মাঠে সম্ভাব্য ৪-৫ জনের সরব উপস্থিতি থাকলেও নির্বাচন ঘনিয়ে এলে এ সংখ্যা ডজন ছাড়িয়ে যায়। তাঁদের মধ্যে এমন অনেক মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন, যাঁদের দলের নেতা-কর্মীরাই চেনেন না। এদিকে মাঠে সরব উপস্থিতি না থাকলেও প্রার্থী নিয়ে অনেকটাই সুবিধাজনক অবস্থানে বিএনপি ও জাতীয় পার্টি (জাপা)। 
এলাকার বহু ভোটারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ আসন থেকে পরপর তিনবার নির্বাচিত বর্তমান সংসদ সদস্য মো. আব্দুল মজিদ খান আগামী নির্বাচনেও দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। এখনই বিভিন্ন সভা-সমাবেশে ভোট চাওয়া শুরু করেছেন তিনি। তবে তিন মেয়াদে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করলেও দলের ভেতরে কোন্দল সৃষ্টির অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পেলেও দলীয় কোন্দল হতে পারে তাঁর পথের কাঁটা।

এ ছাড়া আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন উপজেলার প্রবীণ রাজনীতিবিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আমীর হোসেন, হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক আইনবিষয়ক সম্পাদক ময়েজ উদ্দিন শরীফ রুয়েল, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লুৎফুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আবু বকর সিদ্দিকী, সমাজসেবক বিধান কৃষ্ণ দাস সরকার, সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাছুম বিল্লাহ চৌধুরী, কবি ছাদিকুর রহমান পরাগ, ব্যারিস্টার এনামুল হক, জেলা কৃষক লীগের সভাপতি হুমায়ুন কবীর রেজা, ড. মো. শাহনেওয়াজ, অ্যাডভোকেট মাহফুজা বেগম সাঈদাসহ অনেকে।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন সিলেট বিভাগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মঞ্জুর উদ্দিন আহমেদ শাহীন এবং আহমদ আলী মুকিব আবদুল্লাহ। জাপা (এরশাদ) থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির সমবায়বিষয়ক সম্পাদক শংকর পাল, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় কমিটির নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ ও ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন জেলা শাখার প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক মাওলানা লুৎফুর রহমান চৌধুরী আজাদ দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন।
নির্বাচনী ভাবনা জানতে চাইলে সংসদ সদস্য আব্দুল মজিদ খান বলেন, ‘আমি নির্বাচিত হওয়ার পর এলাকায় প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করেছি। আশা করি সবকিছু বিবেচনা করে দল আমাকেই আবার মনোনয়ন দেবে।’

দীর্ঘদিন ধরে এলাকাবাসীর সুখ-দুঃখে পাশে থেকেছেন বলে দাবি করছেন মনোনয়নপ্রত্যাশী আমীর হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমার পক্ষে কাজ করে যাচ্ছে পুরো তৃণমূল। এলাকার যেকোনো সমস্যায় নিজের জীবন বাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। ছাত্রজীবন থেকে শেখ মুজিবের আদর্শে রাজনীতি করে যাচ্ছি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে নেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে পরবর্তী নির্বাচনের জন্য বিবেচনা করা হবে বলে আশ্বস্ত করেছিলেন।’

বর্তমান সংসদ সদস্যের ব্যাপারে আমীর হোসেন বলেন, আব্দুল মজিদ খানকে আবারও মনোনয়ন দেওয়া হলে আসনটি হারাতে পারে আওয়ামী লীগ। কারণ, দলের ভেতরে কোন্দল সৃষ্টি করে রাখা হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো বিভক্ত এবং তিনি সে বিভক্তি জিইয়ে রেখেছেন। যে কারণে তৃণমূল আওয়ামী লীগ তাঁর প্রতি ক্ষুব্ধ। এ আসনে প্রায় ৫০ হাজার লোক মৎস্যজীবী। কিন্তু জলমহালগুলো সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রকৃত মৎস্যজীবীরা। এতে ক্ষুব্ধ মৎস্যজীবী সম্প্রদায়। লুৎফুর রহমান, বিধান কৃষ্ণ দাস সরকারসহ আরও অনেকে প্রায় একই কথা বলেছেন।  

তরুণ নেতা ময়েজ উদ্দিন শরীফ রুয়েল বলেন, ‘এলাকায় সাধারণ মানুষের সঙ্গে বেশ কয়েক বছর ধরেই কাজ করছি। আশা করছি, মনোনয়ন পেলে আওয়ামী লীগের এ আসন আমি ধরে রাখতে সক্ষম হব।’

জোট-সংক্রান্ত জটিলতায় না পড়লে এবার সাখাওয়াত হাসান জীবনই বিএনপি থেকে মনোনয়ন পাবেন বলে জানিয়েছেন দলটির একাধিক নেতা-কর্মী। সাখাওয়াত বলেন, ‘এবার বিএনপি দলীয়ভাবে শক্ত অবস্থানে রয়েছে। কোথাও কোনো গ্রুপিং নেই। গত উপজেলা নির্বাচনে বানিয়াচংয়ে বিএনপির প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। এতেই প্রমাণ হয় বিএনপিকে জনগণ চায়। সবকিছু মিলিয়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এই আসনে আমি জয়ী হব।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত